পুরুষের মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করেন যারা
Published: 21st, June 2025 GMT
মেনস মেন্টাল হেলথ মান্থ বা পুরুষদের মানসিক স্বাস্থ্য মাস হিসেবে বিশ্বজুড়ে পালিত হয় জুন মাস। কিন্তু এখনও আমাদের সমাজে বিশেষ করে পুরুষদের মানসিক স্বাস্থ্যের বিষয়ে আলোচনা যেন এক ধরনের সামাজিক ট্যাবু। এই চিত্র বদলে দেওয়ার জন্য নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে বাংলাদেশের একটি তরুণপ্রজন্মের সংগঠন টিম বিবিএস।
২০১৯ সালে সংগঠনটির জন্ম হলেও এর পেছনে যিনি রয়েছেন তিনি মিফতাহ্ রহমান, তখন ছিলেন একজন স্কুলশিক্ষার্থী। শরীয়তপুরের এক প্রত্যন্ত গ্রামে বেড়ে ওঠা এই তরুণ তখন থেকেই উপলব্ধি করেন সমাজে দরিদ্রতা ও অবহেলার কারণে শিক্ষার্থীরা যেমন পিছিয়ে পড়ে, ঠিক তেমনিভাবে মানসিক সমস্যাও চাপা পড়ে থাকে নিঃশব্দে। বিশেষ করে ছেলেরা যাদের কাঁদা বা দুর্বলতা প্রকাশ করাকে অযোগ্যতা হিসেবে দেখা হয়।
এই উপলব্ধি থেকে তিনি এবং তাঁর বন্ধুদের নিয়ে গড়ে তোলেন টিম বিবিএস। সংস্থাটি বর্তমানে দেশের ২৫টির বেশি জেলায় স্কুল-কলেজ পর্যায়ে মানসিক স্বাস্থ্য সচেতনতা তৈরি করছে। বিশেষ করে ছেলেদের জন্য সাইকোথেরাপি, আত্মহত্যা প্রতিরোধে সেমিনার এবং কাউন্সেলিং প্রোগ্রাম আয়োজন করে থাকে সংগঠনটি।
এই উদ্যোগের অন্যতম একটি ডিজিটাল হাতিয়ার হলো Hello-02 একটি মোবাইল অ্যাপ, যা শিক্ষার্থীদের জন্য সম্পূর্ণ বিনামূল্যে মানসিক স্বাস্থ্য পরীক্ষা করার সুযোগ দেয়। গুগল প্লে স্টোরে থাকা অ্যাপটি দিয়ে একজন ব্যবহারকারী নিজের মানসিক অবস্থা যাচাই করতে পারেন এবং মানসিক সুস্থতার জন্য নানা গুরুত্বপূর্ণ টিপস পেতে পারেন।
মিফতাহ্ রহমান বলেন, ‘আমরা এমন একটা সময় পার করছি, যেখানে প্রতিদিন পুরুষ আত্মহত্যার হার বাড়ছে। অথচ তারা সহায়তা চাইতে ভয় পায়। Hello-02 দিয়ে আমরা সেই ভয়কে একটু একটু করে ভাঙার চেষ্টা করছি। এখন পর্যন্ত প্রায় ৩৫ হাজার মানসিক স্বাস্থ্য পরীক্ষা এবং ১৭০০ এর বেশি কাউন্সেলিং সেবা দিতে পেরেছি।’
পুরুষদের মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ে এই উদ্যোগকে কেন্দ্র করে প্রতি বছর জুন মাসে বিশেষ ক্যাম্পেইন চালায় টিম বিবিএস। এ বছরও বিশেষ ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে ছেলেদের উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে নিজের অনুভূতি প্রকাশে।
এই অভিযাত্রায় টিম বিবিএস কেবল মানসিক স্বাস্থ্য নিয়েই নয়, বরং শিশু অধিকার এবং আত্মমর্যাদাবোধ তৈরির ক্ষেত্রেও কাজ করছে। যেমন স্বপ্ন স্টোর নামক আরেকটি প্রকল্পের মাধ্যমে দরিদ্র শিক্ষার্থীদের দুই টাকার প্রতীকি মূল্যে শিক্ষা উপকরণ সরবরাহ করে। যেন তারা সহানুভূতির নয়, নিজের সম্মানের জায়গা থেকে এগিয়ে যেতে শেখে।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা জানতে চাইলে মিফতাহ্ বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য ২০২৫ সালের মধ্যে প্রতিটি জেলায় ছেলেদের মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে কাজ শুরু করা এবং আত্মহত্যার সংখ্যা কমিয়ে আনা। আমরা চাই আর কোনো শিক্ষার্থী শুধু ব্যর্থতার কারণে নিজের জীবন শেষ না করুক।’
টিম বিবিএস এবং Hello-02 অ্যাপের মতো উদ্যোগগুলো প্রমাণ করে, পরিবর্তনের জন্য অনেক বড় প্রতিষ্ঠান বা প্রচুর অর্থ নয়, দরকার কেবল একটি সাহসী চিন্তা এবং মানুষের পাশে দাঁড়ানোর মানসিকতা। u
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ট ম ব ব এস র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
ঢাবিতে বিক্ষোভে মেয়েদের ভিডিও করার সময় কলেজছাত্র আটক
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধে দণ্ডিত ব্যক্তিদের ছবি প্রদর্শনের প্রতিবাদ চলাকালে মেয়েদের ভিডিও করার অভিযোগে এক কলেজছাত্রকে আটক করেছেন শিক্ষার্থীরা। পরে তাঁকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল টিমের কাছে সোপর্দ করা হয়। কবি নজরুল সরকারি কলেজের ওই শিক্ষার্থীকে আটকের সময় ছাত্রশিবিরের কর্মীরা বাধা দেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র (টিএসসি) চত্বরে এ ঘটনা ঘটে। প্রক্টরের উপস্থিতিতে ওই কলেজছাত্রের মুঠোফোন ও ফেসবুক অ্যাকাউন্ট পর্যালোচনা করে দেখা যায়, তিনি উসামা বিন লাদেনসহ কয়েকজন বিতর্কিত ব্যক্তির পোস্ট শেয়ার করেছেন। ফেসবুক মেসেঞ্জারে ‘ইসলামী ছাত্রশিবির, চৌমুহনী কচুয়া’ নামের একটি গ্রুপের সক্রিয় সদস্য।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রক্তবীজ অর্ক বলেন, ‘সন্ধ্যার দিকে টিএসসিতে হাঁটতে গিয়ে হঠাৎ দেখি এক লোক মেয়েদের দিকে মোবাইল তাক করে জুম করে ইনঅ্যাপ্রোপিয়েট (অশোভন) ভিডিও করছে। আশপাশে উপস্থিত শিক্ষার্থীরা এ বিষয়ে জিজ্ঞাসা করতেই লোকটি দৌড় দিয়ে সোজা টিএসসির ভেতরে ঢুকে পড়েন। আমরাও পেছনে যেতে চাই। কিন্তু পরে দেখি, সেখানে গুপ্ত সংগঠনের কিছু ছোট ছোট টিম আমাদের টিএসসির ভেতর ঢুকতে দিচ্ছে না।’
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অর্ক লিখেন, ‘প্রায় ৪ ঘণ্টার জিজ্ঞাসাবাদে ওই ব্যক্তি মোট ৬ বার নিজের নাম বদলায়, ৪টিরও বেশি ফেসবুক আইডি দেখায়।’
ছাত্রশিবিরের কর্মীদের বিরুদ্ধে ওই কলেজছাত্রকে আড়াল করার অভিযোগ তুলে অর্ক তাঁর পোস্টে আরও লিখেন, ‘প্রক্টর স্যার ওই ব্যক্তির মেসেঞ্জারে দেখলেন, “ইসলামী ছাত্রশিবির- চৌমুহনী কচুয়া” গ্রুপে সে একেবারে অ্যাকটিভ সদস্য। ঘটনাস্থলে থাকা ছাত্রশিবিরের লোকজন তাকে আড়াল করতে গেল কেন?’
এ ঘটনায় মঙ্গলবার রাতে বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের যুগ্ম সদস্যসচিব নাহিয়ান ফারুক ফেসবুক পোস্টে লিখেন, ‘নারী নিপীড়কদের শেল্টার (আশ্রয়) দেয় কারা? টিএসসিতে যুদ্ধাপরাধীদের ছবি প্রদর্শনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ হয়। এই প্রতিবাদের বিপরীতে টিএসসির গেইটের মুখে শিবিরেরাও স্লোগান দিতে থাকে। এমন এক মুহূর্তে শিবিরের এক কর্মী আমাদের প্রতিবাদের ভেতর চলে এসে নারীদের আপত্তিকর ভিডিও নিতে শুরু করে। ধরা পড়ার পর সে জোরপূর্বক পালিয়ে যায়। পালিয়ে শিবিরের মিছিলে ঢুকে পড়ে এবং টিএসসির ভেতর শেল্টার নেয়।’
ওই ব্যক্তিকে আটক করতে গেলে ছাত্রশিবিরের কর্মীরা বাধা দেন অভিযোগ করে নাহিয়ান ফারুক আরও লিখেন, ‘একজন অপরাধীকে তারা টিএসসিতে ঢুকতে দিলেও, আমাদেরকে টিএসসিতে ঢুকতে বারবার বাধা দেয়। আমরা জোরপূর্বক ভেতরে যাই এবং প্রক্টরসহ শিবিরের ফরহাদের (ছাত্রশিবিরের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি এস এম ফরহাদ) সাথে কথা হয়। ঐ ঘটনার পর সেই হ্যারাসার (নিপীড়ক) ধরা পড়ে।’
প্রক্টর সাইফুদ্দিন আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘ছেলেটা কবি নজরুল কলেজে পড়ে, চাঁদপুরে বাড়ি। আমার কাছে একটু বেকুব টাইপের মনে হয়েছে। তবে ইসলামিক এটা বোঝা যায়। আমি তখন ছাত্রসংগঠনগুলোর নেতাদেরকেও বলেছি, আমার কাছে দুটো অপশন— হয় পুলিশে দেওয়া, না হয় অভিভাবকসহ মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দেওয়া।’
প্রক্টর আরও জানান, ‘পরে ওর দুজন মামাতো ভাই ও একজন ছোটবেলার বন্ধু আসে। আমরা প্রাথমিকভাবে মুচলেকা নিয়েছি। ওর ছবি নিয়েছি আর ফোন রেখে দিয়েছি। ওর মুচলেকার কপি চাঁদপুর, শাহবাগ ও চকবাজারের (সে যেখানে থাকে) থানায় পাঠাব এবং জিডি (সাধারণ ডায়েরি) করা হবে। পরে যদি এমন কোনো কিছু করে, তাহলে তাঁর বিরুদ্ধে পুলিশ সরাসরি ব্যবস্থা নেবে।’ তাঁর পরিবারের সদস্যরা এসে তাঁকে নিয়ে গেছেন বলেও জানান প্রক্টর।