ইরানে বিক্ষোভে ফুঁসে উঠেছে জনগণ, অংশ নিলেন প্রেসিডেন্টও
Published: 23rd, June 2025 GMT
ইরানের তেহরানে যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক বিমান হামলার প্রতিবাদে হাজারো মানুষ রাস্তায় নেমে এসেছেন। দেশটির রাজধানীজুড়ে রোববার সকাল থেকেই বিভিন্ন প্রান্তে বিক্ষোভ কর্মসূচি শুরু হয়। পরে সেখানে যোগ দেন প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান।
বিক্ষোভ ‘আমেরিকার আগ্রাসনের জবাব চাই’, ‘আমেরিকা নিপাত যাক’, ‘ইসরায়েল ধ্বংস হোক’- ইত্যাদি নানা স্লোগান দিতে দেখা যায়।
প্রতিবাদকারীদের হাতে ছিল ইরানি পতাকা, নিহতদের ছবি এবং ট্রাম্প ও ইসরায়েলি নেতাদের কুশপুতুল। অনেকে হাতে ধরে রেখেছিলেন ব্যানার যাতে লেখা ছিল:
‘আমরা প্রতিরোধ করবো, আত্মসমর্পণ নয়’, ‘হামলা হলে জবাব আসবেই’, ‘পারমাণবিক বিজ্ঞানীদের রক্ত বৃথা যাবে না’
বিক্ষোভে অংশ নেওয়া একজন শিক্ষার্থী বলেন, ‘এই হামলা কেবল ইরানের নয়, সমস্ত মুসলিম বিশ্বের ওপর আঘাত। আমেরিকা জানে না, ইরান কখনও মাথানত করে না।’
ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন এবং স্থানীয় সংবাদমাধ্যমগুলো বিক্ষোভের লাইভ সম্প্রচার করে। অনেক জায়গায় ধর্মীয় নেতারা উপস্থিত থেকে জনগণকে উদ্বুদ্ধ করেন প্রতিরোধে সক্রিয় থাকতে।
তেহরানের আজাদি স্কয়ার, ফার্দৌসি স্কয়ার, ইমাম হোমেইনি মসজিদের সামনে এবং পার্লামেন্ট ভবনের সামনে ছিল প্রধান বিক্ষোভস্থল। তবে দেশটির বিভিন্ন স্থানেও ছোটখাটো করে বিক্ষোভ হয়। তেহরানের আজাদি স্কয়ারে আসেন প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান। পরে তিনি বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে অংশ নেন।
বিশ্লেষকদের মতে, এই বিক্ষোভগুলো শুধু সরকার সমর্থিত নয়—বিশেষ করে ইরানে পারমাণবিক বিজ্ঞানীদের ওপর হামলার পর সাধারণ জনগণের মধ্যেও জাতীয় ঐক্য ও ক্ষোভ উভয়ই দৃশ্যমান।
প্রসঙ্গত, যুক্তরাষ্ট্রের ‘অপারেশন মিডনাইট হ্যামার’ নামে সামরিক অভিযানে ইরানের ফোর্দো, নাতাঞ্জ ও ইস্পাহান পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালানো হয়। এর পরই দেশজুড়ে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
যেকোনো মূল্যে নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে: তারেক
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, ‘‘যেকোনো মূল্যে দলের নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। কেউ যেন দলের নাম ভাঙিয়ে ব্যক্তিস্বার্থ চরিতার্থ করতে না পারে, সেদিকে সবাইকে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে। আর দলীয় সিদ্ধান্ত সবাইকে মেনে নিতে হবে।’’
শনিবার (২০ সেপ্টেম্বর) বিকেলে কিশোরগঞ্জে বিএনপির ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে লন্ডন থেকে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে তারেক রহমান এ সব কথা বলেন।
আরো পড়ুন:
বিএনপি উড়ে এসে জুড়ে বসেনি: মির্জা ফখরুল
পিআর পদ্ধতি চাইলে জনগণের কাছে যান: ডা. জাহিদ
অন্তর্বর্তী সরকারের বিভিন্ন সংস্কার উদ্যোগের বিষয়ে মন্তব্য করতে গিয়ে তারেক রহমান বলেন, ‘‘এ সব সংস্কার বা আগামী দিনগুলোতে দেশ কীভাবে চলবে, তার সব প্রস্তবনা বিএনপি ৩১ দফা কর্মসূচিতে অনেক আগেই দিয়ে রেখেছে। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রস্তাবনাগুলোর ৯৫ ভাগই আমাদের দলের ৩১ দফায় রয়েছে।’’
তিনি বলেন, ‘‘স্বৈরাচার বিদায় নিয়েছে, সামনে এগিয়ে যেতে হবে। বাংলাদেশের মানুষের রাজনৈতিক অধিকার, ভোটের অধিকার, বেঁচে থাকার অধিকার, কর্মসংস্থানের অধিকার, নারী অধিকার, শিক্ষা-চিকিৎসার অধিকার এবং কৃষক ও শ্রমিকের অধিকার নিশ্চিত করতে হলে জনগণের রায়ের ভিত্তিতে গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠা করা প্রয়োজন।’’
দুপুরে শহরের পুরাতন স্টেডিয়ামে সম্মেলন উদ্বোধন করেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এ সময় জাতীয় পতাকা ও জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। মহাসচিব বেলুন ও পায়রা উড়িয়ে সম্মেলন উদ্বোধন করেন।
আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় নেতাকর্মীদের করণীয় প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ‘‘ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হবে। সেই নির্বাচনে ৩১ দফার ভিত্তিতে জনরায় নিয়ে আসতে হবে। এ জন্য ধানের শীষের প্রতিটি কর্মী, জাতীয়বাদের প্রতিটি সমর্থককে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার এই মহান সংগ্রামকে এগিয়ে নিতে হলে আমাদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই।’’
নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তারেক রহমান বলেন, ‘‘সবাইকে সচেতন থাকতে হবে। কেউ যেন আমাদের নাম ব্যবহার করে, বিএনপির নাম ব্যবহার করে ব্যক্তি স্বার্থ চরিতার্থ করতে না পারে। দলের ভেতরে বিভ্রান্তি ছড়াতে না পারে। জনগণের পাশে থেকে, জনগণকে সঙ্গে নিয়ে জনসেবার মনোভাব সবাইকে রাখতে হবে। তবেই জনরায় আমাদের পক্ষে আসবে।’’
তারেক রহমান নেতাকর্মীদের দুটি বিষয়ে প্রতিজ্ঞা করতে বলেন। একটি হলো দলীয় সিদ্ধান্তের ব্যাপারে ঐক্যবদ্ধ থাকা। আরেকটি হলো দলের নামে কেউ যেন ব্যক্তি স্বার্থ হাসিল করতে না পারে, দলের বিরুদ্ধে চক্রান্ত করতে না পারে। তখন তার দুটি প্রতিজ্ঞার প্রতি উপস্থিত নেতাকর্মীরা দু-হাত তুলে সমর্থন জানান।
সম্মেলনে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুস সালাম, যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী খান সোহেল, এমরান সালেহ প্রিন্স, কেন্দ্রীয় কমিটির কোষাধ্যক্ষ এম. রশিদুজ্জামান মিল্লাত, সহসাংগঠনিক সম্পাদক শাহ মো. ওয়ারেছ আল মামুন, আবু ওয়াহাব আকন্দ, সদস্য লায়লা বেগম, শেখ মজিবুর রহমান ইকবাল। এতে সভাপতিত্ব করেন জেলা বিএনপির সভাপতি শরীফুল আলম। সভা পরিচালনা করেন জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মো. মাজহারুল ইসলাম।
দীর্ঘ ৯ বছর পর কিশোরগঞ্জ জেলা বিএনপির ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এর আগে ২০১৬ সালে সম্মেলন হয়েছিল।
সম্মেলন উপলক্ষে অনুষ্ঠানস্থলে সুবিশাল মঞ্চ তৈরি করা হয়। শহরের সড়কে কেন্দ্রীয় নেতাদের শুভেচ্ছা জানিয়ে শতাধিক তোরণ নির্মাণ করা হয়। দলীয় নেতাদের ছবি সম্বলিত ব্যানার ফেস্টুনে ছেয়ে যায় অনুষ্ঠানস্থলসহ জেলা শহরের অলিগলি।
প্রায় এক দশক পর সম্মেলনকে কেন্দ্র করে নেতাকর্মীদের মাঝে উৎসাহ-উদ্দীপনা বিরাজ করছে। আয়োজকেরা জানিয়েছেন, ১৩টি উপজেলা ও ৮টি পৌরসভা মিলিয়ে জেলা বিএনপির মোট ২১টি ইউনিটের ২ হাজার ৯০ জন কাউন্সিলর সম্মেলনের দ্বিতীয় অধিবেশনে নেতৃত্ব নির্বাচনে ভোট দেবেন।
ঢাকা/রুমন/বকুল