ফর্দো পারমাণবিক কেন্দ্র কেন গুরুত্বপূর্ণ
Published: 23rd, June 2025 GMT
নানা জল্পনা–কল্পনার অবসান ঘটিয়ে গত শনিবার রাতে ইরানের ফর্দো, নাতাঞ্জ ও ইস্পাহান পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালায় যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নিজেই তাঁর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে দেওয়া এক পোস্টে বিষয়টি নিশ্চিত করেন। পরে ইরানের গণমাধ্যমও হামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে।
ইরান পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করছে। এমন অভিযোগ এনে ১৩ জুন ইরানে হামলা চালায় ইসরায়েল। এরপর পাল্টা হামলা চালায় ইরানও। তখন থেকে দুই দেশের মধ্যে পাল্টাপাল্টি হামলা চলছে। এর মধ্যে গতকাল চলমান সংঘাতে ইসরায়েলের পক্ষ হয়ে জড়িয়ে পড়ে তার ঘনিষ্ঠ মিত্র যুক্তরাষ্ট্র। এই হামলায় ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি আলোচিত ফর্দো পারমাণবিক কেন্দ্র।
আরও পড়ুনযুক্তরাষ্ট্রের হামলা চালানো ইরানের সেই ৩ পারমাণবিক স্থাপনা কোথায়, কী আছে ২২ জুন ২০২৫ফর্দো স্থাপনাটি সম্পর্কে এখনো অনেক তথ্য অজানা। পাহাড়ের গভীরে নির্মিত একটি সুরক্ষিত ও গোপন স্থাপনা আছে এখানে। অ্যান্টি-এয়ারক্রাফট ব্যাটারির মাধ্যমে সুরক্ষিত হওয়ায় পারমাণবিক জ্বালানি সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্রটিতে ইসরায়েলের পক্ষে বিমান হামলা করা সম্ভব ছিল না বলে মনে করা হতো। গতকাল ‘বাংকার বাস্টার’ বোমা ফেলে এটিকে অকার্যকর করে দেওয়া হয়েছে বলে দাবি করেছে যুক্তরাষ্ট্র।
৩০ হাজার পাউন্ড ওজনের বাংকারবিধ্বংসী বোমা জিবিইউ-৫৭ ব্যবহার করে এ হামলা চালায় যুক্তরাষ্ট্র। দীর্ঘদিন ধরেই ট্রাম্প প্রশাসনের কাছে বাংকারবিধ্বংসী বোমা ব্যবহারের দাবি জানিয়ে আসছিল ইসরায়েল। বিশাল ওজন ও তীব্র গতিশক্তির মাধ্যমে ভূগর্ভের লক্ষ্যবস্তুতে পৌঁছে বিস্ফোরণ ঘটাতে সক্ষম এই বোমা। এটি শুধু যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্রভান্ডারে থাকা বি-২ স্টেলথ বোমারু বিমানের মাধ্যমেই নিক্ষেপ করা সম্ভব। বাংকার বাস্টার বোমা মাটির নিচে প্রায় ২০০ ফুট (৬১ মিটার) গভীরে ঢুকে বিস্ফোরণ ঘটাতে সক্ষম বলে ধারণা করা হয়।
ফর্দোকে অকার্যকর করে দেওয়ার মাধ্যমে ইরানকে পারমাণবিক অস্ত্রের মালিক হওয়া থেকে বিরত রাখতে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে। আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থার তথ্য অনুযায়ী সেখানে ৮৩ দশমিক ৭ শতাংশ পর্যন্ত ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করার প্রমাণ পাওয়া গেছে। যা পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির জন্য ৯০ শতাংশের একেবারে কাছাকাছি।
এক মার্কিন কর্মকর্তা রয়টার্সকে জানিয়েছেন, ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোর ওপর চালানো হামলায় বি-২ বোমারু বিমান ব্যবহার করা হয়েছিল। ফক্স নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প বলেন, ফর্দো পারমাণিবক স্থাপনায় ছয়টি ‘বাংকারবিধ্বংসী’ বোমা নিক্ষেপ করা হয়। ইরান বারবার দাবি করে এসেছে, তাদের পারমাণবিক কর্মসূচি সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ উদ্দেশ্যে পরিচালিত হচ্ছে। অপর দিকে যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর আগের মূল্যায়ন অনুযায়ী, তেহরান সক্রিয়ভাবে পারমাণবিক বোমা তৈরির চেষ্টা করছে না।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: য ক তর ষ ট র ইসর য় ল
এছাড়াও পড়ুন:
ট্রাম্পবিরোধী জনমত আগের চেয়ে শক্তিশালী হচ্ছে
ট্রাম্পবিরোধী জনমত আগের চেয়ে বেড়ে গেছে। এত দিন তা বিভিন্ন জরিপে উঠে এসেছিল; কিন্তু গত মঙ্গলবার নিউইয়র্কের মেয়র, নিউ জার্সি ও ভার্জিনিয়ার গভর্নর নির্বাচনের ফল সে চিত্রই তুলে ধরেছে। বিষয়টি রিপাবলিকান পার্টির নেতা ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বুঝতে পেরেছেন। তিনি এখন এসব নির্বাচনে নিজের ভূমিকা খাটো করে দেখাচ্ছেন।
তিন নির্বাচনে ডেমোক্রেটিক পার্টির তিন প্রার্থীর কাছে হার রিপাবলিকান পার্টির জন্য দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে উঠেছে। গত শুক্রবার হোয়াইট হাউসে ট্রাম্প বলেন, ‘আমি নির্বাচনটা দেখেছি। তবে এসব ব্যাপারে আমি তেমনভাবে জড়িত ছিলাম না।’ নির্বাচনে প্রার্থীদের সমর্থন করার কথাও অস্বীকার করেছেন তিনি। ট্রাম্প বলেন, ‘আমি ভার্জিনিয়ার গভর্নর প্রার্থীকে সমর্থন করিনি। নিউ জার্সির প্রার্থীকেও খুব একটা সহায়তা করিনি। নিউইয়র্ক সিটির মেয়র প্রার্থী অ্যান্ড্রু কুমো সম্পর্কে আমাকে প্রশ্ন করা হলে আমি বলেছিলাম—আপনি কি একজন “ঠগ” চান, নাকি একজন “বামপন্থী”?’
ট্রাম্প নিজেকে যতই দূরে রাখার চেষ্টা করুন না কেন, মঙ্গলবারের নির্বাচনে জনগণ আসলে তাঁর বিরুদ্ধেই ভোট দিয়েছেন। বলা চলে, ভোটের ব্যালটে ট্রাম্পের নাম না থাকলেও এর আগে কখনো কোনো নির্বাচনে এতটা স্পষ্টভাবে তাঁর বিরুদ্ধে ভোট দিতে দেখা যায়নি।
ট্রাম্পপন্থী ভোট কমেছেএ সপ্তাহে সবচেয়ে বড় লক্ষণীয় বিষয় হলো, ট্রাম্পবিরোধী ভোট আগের চেয়ে শক্তিশালী হয়েছে এবং ট্রাম্পপন্থী ভোট আগের চেয়ে কমেছে। নির্বাচনের আগেই গত সোমবার সিএনএনের করা এক সমীক্ষায় বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে উঠেছিল। ওই সমীক্ষায় দেখা যায়, নিবন্ধিত ভোটারদের ৪১ শতাংশ কংগ্রেস নির্বাচন হলে ট্রাম্পের বিরোধিতা জানানোর জন্য ভোট দেওয়ার কথা বলেন। অপর দিকে মাত্র ২১ শতাংশ ভোটার ট্রাম্পকে সমর্থনের কথা বলেন; অর্থাৎ ট্রাম্পবিরোধী ভোট প্রায় দ্বিগুণ। এটা স্বাভাবিক নয়। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে অজনপ্রিয় প্রেসিডেন্টরা এ রকম পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছেন। কিন্তু সিএনএনের সমীক্ষা অনুযায়ী, গত প্রায় ২০ বছরে এ রকম বড় ফারাক আর দেখা যায়নি।
এর আগে ২০০৬ সালে প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশের বিরুদ্ধে ভোট দেওয়ার কথা বলেছিলেন ৩৬ শতাংশ মানুষ আর মাত্র ১৫ শতাংশ বলেছিলেন তাঁর পক্ষে। ২০১৮ সালের ট্রাম্পের প্রথম মধ্যবর্তী নির্বাচনের আগেও এই ব্যবধান এতটা বড় ছিল না। তখন ট্রাম্পবিরোধী ছিলেন ৩৮ শতাংশ। ট্রাম্পপন্থী ছিলেন ২৫ শতাংশ।
এত দিন সমীক্ষায় ট্রাম্পবিরোধী ভোট বাড়ার কথা বলা হলেও গত মঙ্গলবারের নির্বাচনের ফলও সেটা প্রমাণ করেছে। সারা দেশে ভোট না হলেও, ভার্জিনিয়া ও নিউ জার্সির বুথফেরত জরিপের তথ্য বলছে, ট্রাম্পবিরোধী ভোটের ব্যবধান বেড়েছে।
২০১৭ সালে ভার্জিনিয়ায় ট্রাম্পবিরোধী ও ট্রাম্পপন্থী ভোটের ব্যবধান ছিল ১৭ পয়েন্ট (৩৪%-১৭%), এবার তা বেড়ে ২২ পয়েন্টে (৩৮%-১৬%) দাঁড়িয়েছে। নিউ জার্সিতে ব্যবধান আরও বেড়েছে। ২০১৭ সালে ট্রাম্পবিরোধী ও ট্রাম্পপন্থী ভোটের ব্যবধান ছিল ১৭ পয়েন্ট (২৮%-১১%)। এবার ২৮ পয়েন্টে (৪১%-১৩%) পৌঁছেছে।
‘নো কিংস’ট্রাম্পবিরোধী ভোট বেড়ে যাওয়ার দুটি কারণ উঠে এসেছে। একটি হচ্ছে ‘নো কিংস’ আন্দোলন। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নীতি ও কর্তৃত্ববাদী আচরণের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে গত মাসে এ আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে। এ আন্দোলন ঘিরে যে সমাবেশ হয়েছিল সেগুলো নিছক কাকতালীয় ছিল না। এসব ট্রাম্পবিরোধী আন্দোলন এখনো আগের মতোই শক্তিশালী, আশাব্যঞ্জক এবং সক্রিয়। এই আন্দোলনের সদস্যরা হয়তো এখন ডেমোক্রেটিক পার্টিতে খুব আস্থাশীল নন, কিন্তু তাঁরা রাজনীতি থেকে দূরে সরে যাননি; বরং ভোট দিতে প্রস্তুত।
দ্বিতীয় বিষয় হলো, ট্রাম্পের রাজনৈতিক আধিপত্য থাকা সত্ত্বেও তাঁর মূল ভোটারগোষ্ঠী এখন তেমন উৎসাহী নন।