কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলায় ডাকাত দলের গুলিতে নুরুল আমিন ওরফে বাবুল (৪০) নামের একজন নিহত হয়েছেন। গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হয়েছেন তাঁর ছোট ভাই মোহাম্মদ হাসান (৩৫)। তাঁরা দুজনই উপজেলার জালিয়াপালং ইউনিয়নের পূর্ব নূরারডেইল এলাকার মৃত ইসহাক আহমদের ছেলে।

গতকাল সোমবার রাত সাড়ে আটটার দিকে জালিয়াপালং ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের পাহাড়ি এলাকায় ডাকাতির ঘটনা ঘটে। এ সময় ডাকাতেরা স্বর্ণালঙ্কার ও টাকা লুট করে নিয়ে গেছে বলে দাবি করেছেন ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যরা।

নিহত নুরুল আমিনের স্ত্রী আছিনা খাতুন বলেন, গতকাল রাতে বাড়িতে স্বামী নুরুল আমিনসহ পরিবারের সদস্যরা একসঙ্গে মিলে নিজের বরজ থেকে তুলে আনা পান গুছিয়ে রাখছিলেন। তিনি কাজের প্রায় শেষ পর্যায়ে স্বামীকে বাজার থেকে মাছ কিনে আনার কথা জানান। পরে ছোট ভাই মোহাম্মদ হাসানকে সঙ্গে নিয়ে তাঁর স্বামী স্থানীয় স্টেশনে মাছ কিনতে বের হন। তাঁরা মাছ কিনতে বের হওয়ার ২০ থেকে ২৫ মিনিট পর মুখোশ পরা ১০ থেকে ১২ জনের একটি দল বাড়িতে হানা দেয়। ডাকাতদের হাতে দেশি লম্বা বন্দুক, লম্বা কিরিচ ও ছোরা ছিল। বাড়িতে ঢুকেই ডাকাতেরা অস্ত্রের মুখে সবাইকে জিম্মি করে। পরে মারধরের একপর্যায়ে তাঁর ও মেয়ের স্বর্ণালঙ্কার এবং কোরবানির সময় গরু বিক্রির দুই লাখ টাকা লুট করে নিয়ে যায়।

আছিনা খাতুন বলেন, ‘চলে যাওয়ার সময় পথিমধ্যে আমার স্বামী ও দেবর ডাকাত দলের সামনে পড়েন। দেখা মাত্রই তাঁদের লক্ষ্য করে ডাকাতেরা গুলি ছোড়ে। পরে কুপিয়ে তাঁদের ফেলে রেখে পালিয়ে যায়। খবর পেয়ে স্বজনেরা তাঁদের উদ্ধার করে কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে চিকিৎসক আমার স্বামীকে মৃত ঘোষণা করেন।’ ডাকাতেরা চলে যাওয়ার সময় মেয়েকে তুলে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে বলে জানান আছিনা খাতুন।

এ বিষয়ে উখিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ আরিফ হোছাইন বলেন, ডাকাতির খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। তবে এর আগেই আহত দুই ভাইকে স্বজনেরা হাসপাতালে নিয়ে যান। ডাকাতি না পূর্বশত্রুতার জেরে এ ঘটনা ঘটেছে, এ বিষয়ে নিশ্চিত নন জানিয়ে ওসি বলেন, বাড়ি ফেরার পথে দুই ভাই দুর্বৃত্তদের হামলার শিকার হয়েছেন। তাই ঘটনাটি ডাকাতি, না অন্য কোনো বিরোধের জেরে ঘটেছে, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। জড়িত ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে গ্রেপ্তারে পুলিশের অভিযান চলছে। নিহত ব্যক্তির লাশ ময়নাতদন্তের জন্য কক্সবাজার সদর হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে। এ বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

কর কমাতে বিনিয়োগ করুন ৩০ জুনের মধ্যে

ধরা যাক, মাহবুব তাঁর নিয়োগকর্তার কাছ থেকে বছরে মোট ১৫ লাখ টাকা বেতন পান। এর বাইরে তিনি স্থায়ী আমানত বা ফিক্সড ডিপোজিট থেকে বছরে সুদ বাবদ দুই লাখ টাকা পান। এ ছাড়া সঞ্চয়পত্র থেকে বছরে মুনাফা বাবদ পান আরও এক লাখ টাকা। সুদ বাবদ প্রাপ্ত আয়কে আর্থিক পরিসম্পদ থেকে আয় হিসাবে বিবেচনা করা হয়। আর স্থায়ী আমানত থেকে প্রাপ্ত আয় ন্যূনতম করের উৎস হতে আয় এবং সঞ্চয়পত্র থেকে প্রাপ্ত আয় চূড়ান্ত করের উৎস হতে আয় হিসাবে বিবেচিত।

এখন দেখা যাক, এক করবর্ষে মাহবুবের আয় কত ছিল। প্রাপ্ত হিসাবে দেখা যাচ্ছে মাহবুব এক করবর্ষে মোট আয় করেছে ১৮ লাখ টাকা। ধরা যাক, এই আয় তিনি করেছেন ২০২৪-২৫ করবর্ষে। এই করবর্ষে বেতনখাতে তাঁর কর অব্যাহতি প্রাপ্ত আয়সীমা ছিল সাড়ে ৪ লাখ টাকা। সেই হিসাবে মাহবুবের মোট করযোগ্য আয় দাঁড়ায় সাড়ে ১৩ লাখ টাকা। ২০২৫-২৬ করবর্ষে মাহবুবের আয় যদি একই থাকে, তাহলে তাঁর মোট করযোগ্য আয় দাঁড়াবে ১৩ লাখ টাকায়। কারণ, করমুক্ত আয়ের সীমা সাড়ে ৪ লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৫ লাখ টাকা করা হয়েছে। আগামী ২০২৫–২৬ অর্থবছরের বাজেট ঘোষণাকালে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ বেতনখাতে করমুক্ত আয়সীমা ৫০ হাজার টাকা বাড়ানোর কথা জানিয়েছেন।

নিয়ম অনুযায়ী, মাহবুব চূড়ান্ত করের উৎস হতে আয় বাদে ন্যূনতম করের উৎস থেকে আয়সহ মোট আয়ের ওপর কর রেয়াত দাবি করার যোগ্য হবেন, যা পূর্ববর্তী করবর্ষে রেয়াতযোগ্য ছিল না। এর অর্থ হলো গত বছর ১০ লাখ ৫০ হাজার টাকার ওপর ৩ শতাংশ কর রেয়াত দাবি করা যেত। কিন্তু এই করবর্ষে ১২ লাখ টাকার ওপর ৩ শতাংশ কর রেয়াত দাবি করা যাবে। অতিরিক্ত কর রেয়াত এখন সাড়ে ৪ হাজার টাকা হবে। এই ধরনের কর রেয়াত দাবি করার জন্য মাহবুবকে আয়কর আইন অনুযায়ী বিনিয়োগযোগ্য ক্ষেত্রগুলোতে অন্তত ২ লাখ ৪০ হাজার টাকা বিনিয়োগ করতে হবে। জনপ্রিয় বিনিয়োগ ক্ষেত্রগুলোর মধ্যে ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত যেকোনো সরকারি সিকিউরিটিজ (সঞ্চয়পত্র, ট্রেজারি বিল, বন্ড), জীবন বিমা প্রিমিয়াম, সম্পদ ব্যবস্থাপক বা অ্যাসেট ম্যানেজার পরিচালিত ইউনিট সার্টিফিকেট এবং মিউচুয়াল ফান্ডে ৫ লাখ টাকা বিনিয়োগ, অনুমোদিত প্রভিডেন্ট ফান্ডে করদাতা এবং প্রতিষ্ঠানের চাঁদা, তালিকাভুক্ত সিকিউরিটিজে বিনিয়োগ ইত্যাদি। সুতরাং করভার কমাতে হলে ৩০ জুনের মধ্যে বিনিয়োগযোগ্য ক্ষেত্রগুলোতে বিনিয়োগ করতে হবে। ৩০ জুনের পর বিনিয়োগ করলে এই করবর্ষে বিনিয়োগের বিপরীতে রেয়াতি সুবিধা পাওয়া যাবে না।

ব্যক্তি করদাতারা এক লাখ টাকার ওপর ৫ শতাংশ করহার ২০২৫-২৬ করবর্ষে আরোপ করার সুযোগ পাবেন। কারণ, এই করবর্ষের করহার ২০২৪ সালের অর্থ আইন দিয়ে নির্ধারিত ছিল। তবে ১ জুলাই ২০২৫ থেকে শুরু হওয়া আয়বর্ষ থেকে অর্থাৎ ২০২৬-২৭ করবর্ষ থেকে এই এক লাখ টাকার ওপর ৫ শতাংশের এই হার আর থাকবে না।

স্নেহাশীষ বড়ুয়া, কর পরামর্শক

 লেখক: এসএমএসি অ্যাডভাইজরি সার্ভিসেসের পরিচালক ও সনদপ্রাপ্ত হিসাববিদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ