জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর পরিকল্পনা নেই: ফাওজুল কবির
Published: 25th, June 2025 GMT
ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধের ওপর নজর রাখা হচ্ছে জানিয়ে জ্বালানি উপদেষ্টা ড. ফাওজুল কবির খান বলেছেন, বর্তমানে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর কোনো পরিকল্পনা নেই।
মঙ্গলবার ঢাকায় বিদ্যুৎ ভবনে এক অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি একথা বলেন। অনুষ্ঠানে লাফার্জহোলসিম এবং জালালাবাদ গ্যাস কোম্পানির মধ্যে ১০ বছর মেয়াদি গ্যাস সরবরাহ চুক্তি সই করা হয়। চুক্তি অনুযায়ী জালালাবাদ লাফার্জহোলসিমকে আগামী দশ বছরে দৈনিক ১৬ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করবে, যা আগামী বছরের ১৮ জানুয়ারি থেকে কার্যকর হবে। বিইআরসি ঘোষিত নতুন দর ৪০ টাকা (শিল্প) এবং ৪২ টাকা (ক্যাপটিভ) ঘনমিটার হিসেবে চুক্তি স্বাক্ষর করা হয়েছে। লাফার্জের সঙ্গে ২০০৩ সালের ১৯ জানুয়ারি ২০ বছর মেয়াদি গ্যাস সরবরাহ চুক্তি করা হয়।
অনুষ্ঠানে উপদেষ্টা বলেন, যুদ্ধের মধ্যে একটি তেলের জাহাজ বন্দরে এসেছে, বাংলাদেশে পর্যাপ্ত মজুদ হাতে রয়েছে। আমাদের সুবিধা হচ্ছে সরবরাহকারীরা বিভিন্ন জায়গা থেকে তেল আনেন। মূল উৎস মধ্যপ্রাচ্য হলেও অনেক সরবরাহকারী সিঙ্গাপুর থেকে, মালয়েশিয়ার মার্কেট থেকে তেল আনেন। সে কারণে তেলের সরবরাহ নিয়ে কোনো শঙ্কা নেই। তবুও আমরা যুদ্ধের ওপর নজর রাখছি।
ভর্তুকিও বাড়াবে না আবার দাম বাড়াবে না বলা হচ্ছে। তাহলে ঘাটতি সমন্বয় হবে কীভাবে? এমন প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, আমাদের কিছু কৌশল রয়েছে। বিপিসির কাছে কিছু অর্থ রয়েছে, প্রয়োজন হলে সেখান থেকে সমন্বয় করা হবে। তিনি আরও বলেন, গ্যাস খাতে অনেক ভর্তুকি রয়েছে। আমরা আর ভর্তুকি বাড়াতে পারবো না। লাফার্জহোলসিমের সঙ্গে চুক্তি প্রসঙ্গে বলেন, এখানে একটি সুবিধা রয়েছে, অন্য সব কোম্পানি ঢাকায়, যেখানে গ্যাসের সরবরাহে ঘাটতি রয়েছে। আর লাফার্জের অবস্থান হচ্ছে সিলেট অঞ্চলে।যেখানে গ্যাসের অভাব নেই।
নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন বলেন, আমরা নতুন বিনিয়োগের পাশাপাশি পুরাতন বিনিয়োগকে ধরে রাখতে কাজ করছি। এই চুক্তির মাধ্যমে একটি বার্তা পৌঁছে দেওয়া। বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশ সম্পর্কে ভালো ধারণা পাবে। তাদের ফিডব্যাক থেকে অনেকেই আগ্রহী হবেন বলে মনে করি।
জ্বালানি সচিব সাইফুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশে নিযুক্ত সুইজারল্যান্ডের রাষ্ট্রদূত রেতো সিজফ্রিয়েড রেঙ্গলি, ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) রাষ্ট্রদূত মাইকেল মিলার লাফার্জহোলসিম বাংলাদেশ সিইও ইকবাল চৌধুরী, বাংলাদেশে নিযুক্ত স্পেনের রাষ্ট্রদূত গ্যাব্রিয়েল মারিয়া সিস্তিয়াগা ওচোয়া, পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান প্রকৌশলী রেজানুর রহমান, জালালাবাদ গ্যাসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (অতিরিক্ত দায়িত্ব) প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম প্রমুখ।
হোলসিম সুইজারল্যান্ড ও লাফার্জ প্যারিসভিত্তিক কোম্পানি। লাফার্জের বিশ্বের ৬৪টি দেশে, ৭০টি দেশেহোলসিমের কার্যক্রম ছিল। কোম্পানি দু’টি ২০১৪ সালে একীভূত হয় লাফার্জহোলসিম নাম ধারণ করে। বাংলাদেশে সিলেটের ছাতকে লাফার্জহোলসিমের সিমেন্ট কারখানা রয়েছে। এছাড়া কোম্পানিটির নারায়ণগঞ্জের মেঘনাঘাটে দুটি ও খুলনার মোংলায় একটি গ্রাইন্ডিং স্টেশন রয়েছে।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: জ ব ল ন উপদ ষ ট অন ষ ঠ ন সরবর হ হ লস ম
এছাড়াও পড়ুন:
থাইল্যান্ডে চালের দাম ১৫ বছরে সর্বনিম্ন, বিশ্ববাজারে এ বছর কমেছে ১৪%
এশিয়াসহ বিশ্বের চালের বাজারে নিম্নমুখী প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। এশিয়ায় চালের অন্যতম বৃহৎ সরবরাহকারী থাইল্যান্ডে চালের দাম ১৫ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে এসেছে। মূলত বাজারে চালের সরবরাহ বেড়ে যাওয়ায় এ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে।
থাইল্যান্ডসহ চালের অন্যান্য বড় উৎপাদনকারী দেশ ভারত ও মিয়ানমারে উৎপাদন বেড়ে যাওয়ায় বিশ্ববাজারেও চালের দাম কমছে। বিশ্ব খাদ্য সংস্থার খাদ্যসূচক অনুযায়ী, চলতি বছর চালের দাম কমেছে ১৩ দশমিক ৪০ শতাংশ। এমনকি বিশ্ববাজার চালের দাম আগস্ট মাসে আট বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে আসে। খবর দ্য নেশনের
থাইল্যান্ডে চালের দামের এই নিম্নমুখী প্রবণতা একদম নতুন কিছু নয়, বেশ কয়েক মাস ধরেই এ প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে দেশটির কৃষিবিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, দীর্ঘ সময় ধরে চালের দাম কম থাকায় দেশটির কৃষকেরা ধানের আবাদ কমিয়ে দিতে পারেন।
থাইল্যান্ডে গত বৃহস্পতিবার ৫ শতাংশ খুদযুক্ত চালের দাম দাঁড়ায় টনপ্রতি ৩৩৫ ডলার। আগের সপ্তাহে যা ছিল ৩৩৮ ডলার। থাইল্যান্ডের কৃষি খাত–সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, গত ১৪ বছরে থাই সরকারের জনতুষ্টিমূলক নীতির কারণে এ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। সরকার কৃষকদের সন্তুষ্ট করতে বিভিন্ন ধরনের নিশ্চয়তা দিয়েছে। এসব কর্মসূচিতে প্রায় ৪০ বিালিয়ন বা ৪ হাজার কোটি ডলার ব্যয় হলেও একধরনের নীতিগত ফাঁদ তৈরি হয়েছে। ফলে কৃষকেরা প্রযুক্তি উন্নয়ন, দক্ষতা বাড়ানো কিংবা বৈশ্বিক প্রতিযোগিতার সঙ্গে খাপ খাওয়ানো থেকে নিরুৎসাহিত হয়েছেন।
সেই সঙ্গে থাইল্যান্ডের ব্যবসায়ীরা জানান, বর্ষা মৌসুমের শেষ দিকে বাজারে নতুন চালের সরবরাহ এসেছে। এটাও দাম কমে যাওয়ার অন্যতম কারণ। অন্যদিকে ভারত ও মিয়ানমারের মতো প্রতিযোগী দেশগুলো চালের গুণগত মানের উন্নতি করেছে। আধুনিকতা এনেছে উৎপাদনব্যবস্থায়। ফলে তারা কম খরচে ভালো মানের চাল রপ্তানি করতে পারছে। কিন্তু থাইল্যান্ড এখনো ভর্তুকিনির্ভর ব্যবস্থায় আটকে আছে। এ পরিস্থিতিতে দেশটির কৃষকেরা ক্ষতির মুখে পড়ছেন বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।
এফএওর সূচক কমেছেপ্রতি মাসেই খাদ্যমূল্যসূচক করে থাকে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও)। তাতে দেখা যাচ্ছে, চলতি বছর বিশ্ববাজারে চালের দাম কেমেছে ১৩ দশমিক ৪০ শতাংশ। গত অক্টোবর মাসে চালের মূল্যসূচক নেমে এসেছে ৯৮ দশমিক ৪–এ। চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে তা ছিল ১১৩ দশমিক ৬। সেই সঙ্গে ২০২৪ সালের অক্টোবর মাসে চালের মূল্যসূচক ছিল ১২৫ দশমিক ৭। সেই হিসাবে এক বছরে চালের দাম কমেছে ২১ দশমিক ৭ শতাংশ।
চালের দামের এই পতন শুরু হয় ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে। বিশ্বের সর্ববৃহৎ চাল রপ্তানিকারক দেশ ভারত ধাপে ধাপে রপ্তানি–নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতে শুরু করে তখন। এ ঘটনা চালের বাজারে বড় প্রভাব ফেলে। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, এ বছর সব ধরনের চালের মূল্যসূচক ১৩ শতাংশ কমেছে। খবর ফাইন্যান্সিয়াল টাইমসের
অথচ ২০২৪ সালের শুরুতে এর উল্টো চিত্র দেখা গেছে। তখন ভারত একের পর এক রপ্তানি সীমাবদ্ধতা জারি করলে ২০০৮ সালের পর চালের দাম সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছায়। বিশ্বজুড়ে ভোক্তাদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়। মানুষের মধ্যে মজুতের প্রবণতা তৈরি হয়। অন্যান্য উৎপাদক দেশেও সুরক্ষাবাদী পদক্ষেপ নেওয়া হয়। এর পর থেকে চালের দাম কমতে শুরু করে।