ফৌজদারি কার্যবিধি আইনের প্রস্তুতির জন্য করণীয়
Published: 25th, June 2025 GMT
বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের আইনজীবী তালিকাভুক্তির লিখিত পরীক্ষা ২৮ জুন অনুষ্ঠিত হবে। প্রার্থীদের সুবিধার জন্য লিখিত পরীক্ষার প্রস্তুতির পরামর্শ প্রকাশ করা হচ্ছে। আজ শেষ পর্বে থাকছে ফৌজদারি কার্যবিধি ১৮৯৮ বিষয়ে প্রস্তুতির পরামর্শ। পরামর্শ দিয়েছেন ঢাকা জজকোর্টের আইনজীবী রিয়াজুর রহমান।
ফৌজদারি কার্যবিধি ১৮৯৮ আইনটি অনেক দিক দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ। বরাবরের মতো এবারও এই বিষয় থেকে দুটি প্রশ্ন আসতে পারে। এর মধ্যে একটি প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে। প্রশ্নের মান থাকবে ১৫ নম্বর।
আইনটি পদ্ধতিগত আইন। অর্থাৎ দণ্ডবিধিসহ অন্যান্য ফৌজদারি আইনের আওতায় বিচার করার পদ্ধতি সম্পর্কে বলা হয়েছে। ফৌজদারি আদালতকে শ্রেণিবিভাগ করা হয়েছে এই আইনের মাধ্যমে। একই সঙ্গে প্রতিটি আদালতের এখতিয়ার বা বিচার করার ক্ষমতা সম্পর্কেও বিস্তর আলোচনা করা হয়েছে। সহজ করে বলতে গেলে ফৌজদারি কার্যবিধি আইনে ফৌজদারি আদালতের কর্মপদ্ধতি ও বিচারের প্রক্রিয়া বলা হয়েছে। কার্যত এই আইন আইনজীবী তালিকাভুক্তি লিখিত পরীক্ষা এবং পেশাগত জীবনেও প্রয়োজনীয়।
ফৌজদারি কার্যবিধি আইনটি বেশ বড় হওয়ায় সব ধারা পড়ে মনে রাখা বেশ কষ্টসাধ্য। ফলে গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি ধারার ওপর বেশি জোর দেওয়া উচিত। বিশেষ করে যেসব ধারা থেকে নিয়মিত প্রশ্ন আসে, সেসব ধারা সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা নিয়েই পরীক্ষার হলে প্রবেশ করা উচিত। যেমন ফৌজদারি আদালতগুলো, আটক, গ্রেপ্তারি পরোয়ানা, অপরাধ দমন, ধারা ১৪৪-১৪৬, এফআইআর, আমলযোগ্য মামলা, আমলঅযোগ্য মামলা অর্থাৎ ধারা ১৫৪-১৭৬ থেকে নিয়মিত প্রশ্ন আসে। ফলে এসব ধারা বা বিষয় থেকে সমস্যামূলক ও রচনামূলক প্রশ্ন অনুশীলন করতে হবে। আমলযোগ্য ও আমলঅযোগ্য মামলার মধ্যে পার্থক্য সম্পর্কেও জানতে হবে। অনেক সময় এগুলো নিয়ে রচনামূলক বা সরলবাক্যে প্রশ্নে আসে।
ফৌজদারি মামলা আমলে নেওয়ার পদ্ধতি, চার্জ গঠন ধারা ২২১-২৪০, ফৌজদারি মামলার বিচার ধারা ২৪১-২৪৫ ও ২৬৫এ-২৬৫এল, এবারের পরীক্ষার্থীদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অনেকেই ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ও দায়রা আদালতের বিচার প্রক্রিয়া লিখতে গিয়ে গুলিয়ে ফেলেন। এ বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে।
ফৌজদারি কার্যবিধি আইনের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ আপিল ও রিভিশন। ফৌজদারি আইনের এই দুই অংশে তামাদি আইনের প্রয়োগ রয়েছে। ফলে কৌশলী প্রশ্নে তামাদিসংক্রান্ত বিষয় যুক্ত করে প্রশ্ন হতে পারে। তাই সচেতনভাবে আপিল ও রিভিশন পড়তে হবে।
সিআরপিসি বা ফৌজদারি কার্যবিধি আইনের সবচেয়ে জনপ্রিয় বিষয় জামিন বা বেইল। কোন ক্ষেত্রে একজন আসামি জামিন পেতে পারেন, কোন কোন ক্ষেত্রে জামিন পাবেন না, সে বিষয়ে বিস্তর পড়তে হবে। জামিন অংশ থেকে মাঝেমধ্যেই প্রশ্ন আসে। ফৌজদারি আইনের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ধারা ৫৬১ক। এই ধারা থেকেও প্রশ্ন হতে পারে।
এ ছাড়া গ্রেপ্তার করা ব্যক্তিকে ফৌজদারি আইন অনুসারে সর্বোচ্চ কত ঘণ্টা আটক রাখা যায়, ১৪৪ ও ১৪৫ ধারায় কী বলা আছে, আসামির দোষ স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি গ্রহণের পদ্ধতি, তদন্ত ও অনুসন্ধানের মধ্যে পার্থক্য, ফৌজদারি মামলার তদন্তের ব্যাপারে পুলিশকে ক্ষমতা, অপরাধ, নালিশ, তদন্ত, স্পেশাল ম্যাজিস্ট্রেট, তল্লাশি পরোয়ানা, হুলিয়া ও ক্রোক, নিবাহী ম্যাজিস্ট্রেট, নারাজি, পুলিশ ডায়েরি, আমলযোগ্য অপরাধ, আমলঅযোগ্য অপরাধ, অধিকতর তদন্ত, ফাইনাল রিপোর্ট, আসামির ব্যক্তিগত হাজিরা থেকে রেহাই, সংক্ষিপ্ত বিচার, চার্জে ভুলের পরিণতি, অব্যাহতি ও খালাসসংক্রান্ত বিষয়গুলো পড়তে হবে। এসব বিষয় থেকে শর্ট নোট বা টিকাও আসতে পারে।
সমস্যামূলক প্রশ্নের উত্তর লেখার সময় নির্দিষ্ট ফরমেট অর্থাৎ ঘটনা, বিচার্য বিষয়, সিদ্ধান্ত ও ব্যাখ্যা ক্রমান্বয়ে লিখতে হবে। রচনামূলক প্রশ্নের ক্ষেত্রে বুলেট পয়েন্ট আকারে উত্তরগুলো গুছিয়ে লিখতে হবে। তবে ব্যাখ্যামূলক প্রশ্নের ক্ষেত্রে আইনের যথাযথ ধারা, কেইস রেফারেন্স ও উদাহরণ ব্যবহার করতে হবে। এতে ভালো নম্বর তোলা সম্ভব।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: পর ক ষ সব ধ র তদন ত আইন র অপর ধ
এছাড়াও পড়ুন:
ভাইকে বাঁচাতে বান্ধবীকে ফাঁসানোর অভিযোগ
পাবনার ভাঙ্গুড়ায় ঘুমন্ত অবস্থায় বান্ধবীর ছবি তুলেছিলেন ভাই। বিষয়টি নিয়ে আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার কথা জানালে ভাইকে বাঁচাতে উল্টো বান্ধবীর নামে মিথ্যা চুরির মামলা দিয়ে হয়রানির অভিযোগ উঠেছে তানিয়া হক নামের এক নারীর বিরুদ্ধে।
এছাড়াও চুরির ঘটনার কোনো তদন্ত ছাড়াই মামলা নেওয়ারও অভিযোগ উঠেছে থানা পুলিশের বিরুদ্ধে।
মঙ্গলবার (৩০ সেপ্টেম্বর) দুপুরে পাবনা জেলা জজকোর্টের সামনে গণমাধ্যমকে এসব কথা বলেন ভুক্তভোগী নারী ইফফাত মোকাররমার আইনজীবী অ্যাডভোকেট আব্দুল্লাহ আল মামুন রাসেল।
পাবনা সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ আখতারুজ্জামানের আদালত ভুক্তভোগী নারী ইফফাত মোকাররমা সানিমুনকে জামিন দিয়েছেন।
অ্যাডভোকেট আব্দুল্লাহ আল মামুন রাসেল বলেন, “আমার মক্কেল ইফফাত মোকাররমা দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষকতায় পেশায় নিয়োজিত। তিনি একজন সম্মানিত লোক। মামলার বাদীর সঙ্গে তার দীর্ঘদিন বন্ধুত্বের সম্পর্ক। সেই সম্পর্কের কারণে তার বান্ধবীর বাসায় গিয়েছিলেন এবং একসঙ্গে ঘোরাঘুরির পর যখন রাত্রীযাপন করছিলেন সেই সময়ে বাদীর ভাই ইফফাত মোকাররমার ছবি তুলেছিলেন। বিষয়টি টের পেয়ে তিনি তাৎক্ষণিক প্রতিবাদ জানান এবং ছবিগুলো দেখানোর জন্য অনুরোধ করেন। এ নিয়ে তাদের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। পরেরদিন সকালে আইনী পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলে ইফফাত মোকাররমা ঢাকায় চলে যান এবং সেখানে জিডি করেন। কিন্তু এই ঘটনা ধামাচাপা দিতে উল্টো ইফফাত মোকাররমার বিরুদ্ধে মিথ্যা চুরির মামলা দায়ের করেন তার বান্ধবী।”
তিনি আরো বলেন, “বাদী তানিয়া হক উল্লেখ করেছেন ২৬ লাখ টাকার স্বর্ণালঙ্কার চুরি হয়েছে যা তিনি তার শরীরে পড়ে তার বান্ধবীর সঙ্গে ঘুড়ে বেড়িয়েছিলেন। কিন্তু ওইদিনের ঘোরাঘুরির ছবিতে তার শরীরে কোনো স্বর্ণালঙ্কার ছিল না। এছাড়াও ঘটনার দুইদিনের মাথায় যেভাবে মামলা গ্রহণ করা হয়েছে তাতে বোঝা যায় কোনো তদন্ত ছাড়াই থানা কোনো পক্ষ থেকে প্রভাবিত হয়ে মামলা গ্রহণ করেছেন।”
ভুক্তভোগী নারী ইফফাত মোকাররমা বলেন, “এই মামলার নূন্যতম প্রমাণ নেই। আমি যে একজন শিক্ষক হিসেবে আমার ছাত্রদের সামনে দাঁড়াবো সেই অবস্থাও তারা আমাকে রাখেনি। আমার সন্তানসহ পুরো পরিবার সামাজিকভাবে হেয় পতিপন্ন হচ্ছে। আমি চাই ঘটনার সুষ্ঠ তদন্ত করে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হোক।”
এ বিষয়ে মামলার বাদীর তানিয়া হকের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করে ফোন রিসিভ না করায় মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
তবে ভাঙ্গুড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শফিকুল ইসলাম বলেন, “উনি (আইনজীবী) উনার মক্কেলের জন্য এসব কথা বলতেই পারেন। উনার মক্কেলকে সুবিধা দেওয়ার জন্য এসব অভিযোগ করেছেন। কিন্তু ঘটনার তদন্ত করে এবং আইনানুগভাবেই মামলা দায়ের হয়েছে, যা এখনও তদন্ত চলছে।”
ঢাকা/শাহীন/এস