কলম্বো টেস্টের প্রথম দিনেই ব্যাকফুটে বাংলাদেশ। টস জিতে ব্যাটিং করতে নেমে ৮ উইকেটে ২২০ রানে প্রথম দিনের খেলা শেষ করেছে বাংলাদেশ। অস্বস্তিতে দিন পার করেছে সফরকারীরা। উল্টো অবস্থা স্বাগতিক শিবিরে। বাংলাদেশকে চাপে রেখে হাসি ফুটেছে শ্রীলঙ্কার ড্রেসিংরুমে।
ব্যাটিং ব্যর্থতায় প্রথম দিনেই প্রবল চাপে বাংলাদেশ। আউট হওয়া আট ব্যাটসম্যানের মধ্যে কেউই ফিফটির ছোঁয়া পাননি। চল্লিশের ঘরে যেতে পেরেছেন কেবল সাদমান ইসলাম। এছাড়া ত্রিশে গিয়ে আটকে গিয়েছেন মুশফিকুর রহিম, লিটন দাস ও মেহেদী হাসান মিরাজ।
টপ ও মিডল অর্ডার থেকে বড় স্কোর না আসায় ব্যাটিংয়ে দিনটা একদমই বাজে গেছে বাংলাদেশের। তাইজুল ইসলাম ৯ ও ইবাদত হোসেন ৫ রানে অপরাজিত থেকে দিন শেষ করেছেন।
আরো পড়ুন:
মিরপুরে বাংলাদেশ-পাকিস্তান তিন টি-টোয়েন্টি
নিজেকে খুবই ভাগ্যবান ভাবেন আমিনুল
উইকেট গলের মতো ব্যাটিং বান্ধব নয়। বল টার্ন করেছে। পেসারদের জন্য সুইং ছিল। বোলাররা উইকেট থেকে সুবিধা আদায় করতে পারছেন।
নতুন বলে শ্রীলঙ্কা শুরুতেই সাফল্য পায়। ১০ বল খেলে কোনো রান না করে বোল্ড হন এনামুল হক বিজয়। সিরিজে এটি তার দ্বিতীয় ডাক। এরপর মুমিনুল ও সাদমান দলকে এগিয়ে নিয়ে যেতে থাকেন। তবে বেশিদূর যেতে পারেননি। আলগা শটে ধনাঞ্জয়ার বলে কাভারে ক্যাচ দেন মুমিনুল। ২১ রানে ফেরেন তিনি। ভালো করেননি গলে জোড়া সেঞ্চুরির দেখা পাওয়া অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত। বিশ্ব ফার্নান্দোর বলে খোঁচা মেরে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন ৮ রানে।
সাদমান একপ্রান্ত আগলে এগিয়ে যাচ্ছিলেন। ফিফটি ছোঁয়ার পথেই ছিলেন। কিন্তু ৪ রান দূরে থাকতে নিজের উইকেট বিলিয়ে আসেন। ৯৩ বলে ৭ চারে ৪৬ রানের ইনিংসটি সাজান তিনি। এরপর মুশফিকুর রহিম ও লিটন দাসের লড়াই শুরু হয়। ইনিংসের শুরুতে দুজনই জীবন পেয়েছিলেন। কিন্তু কাজে লাগাতে পারেননি। তাদের জুটিও তেমন বড় হয়নি। লিটন ব্যক্তিগত ৩৪ রানে ধানুশার বলে মেন্ডিসের হাতে ক্যাচ দেন। সঙ্গী হারানোর পর মুশফিকুর ৩৫ রানে একই বোলারের বলে আউট হন।
পরে লড়াই করেন মিরাজ ও নাঈম। তাদের দুজনের ব্যাটে দুইশ অতিক্রম করার পথে ছিল বাংলাদেশ। কিন্তু দলীয় ১৯৭ রানে মিরাজ ৩১ রানে আউট হলে ব্যাকফুটে চলে যায় বাংলাদেশ। ভরসা হয়ে আশা দেখাচ্ছিলেন নাঈম। কিন্তু ২৫ রানে তাকে বোল্ড করেন আসিথা ফার্নান্দো।
বোলারদের নৈপূণ্যে শ্রীলঙ্কা কলম্বোর এসএসি মাঠে প্রথম দিন দাপট দেখিয়েছে। বাংলাদেশ আড়াইশ রান করতে পারলে কিছুটা আত্মবিশ্বাস পাবে। লেজের ব্যাটসম্যানদের সুবাদে সেই লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারে কিনা সেটাই দেখার।
ঢাকা/ইয়াসিন/আমিনুল
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর প রথম দ ন উইক ট
এছাড়াও পড়ুন:
বিরল নেপালি খুদে ছাতারে
ওকে প্রথম দেখি মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার মুরাছড়া ইকোপার্কের বাঁশঝাড় ও ডুমুরগাছের আড়ালে ৫ নভেম্বর ২০২১ সকালে। কিন্তু অতি চঞ্চল পাখিটির ছটফটানির কারণে ঠিকমতো ক্যামেরার ফ্রেমে আনতে পারছিলাম না। কিন্তু অনেক কষ্টে যখন ফ্রেমে পেয়ে ফোকাস করতে যাচ্ছি, তখনই চঞ্চল পাখিটি ঝোপের মধ্যে হারিয়ে গেল। ফলে জীবনে প্রথমবার দেখেও পাখিটির ছবি তুলতে পারলাম না। ১৫ মিনিট অপেক্ষা করেও যখন দ্বিতীয়বার ওকে আসতে দেখলাম না, তখন উঁচু-নিচু টিলার সর্পিল পথ ধরে সাগরনাল চা-বাগানের দিকে এগোতে থাকলাম। মিনিট দশেক হাঁটার পর ছোট্ট পাখিদের কিচিরমিচির শব্দে থামলাম। আশপাশটা ভালো করে খুঁজে তিন প্রজাতির খুদে পাখির দেখা পেলাম, কিন্তু কিছুক্ষণ আগে ক্যামেরার ফ্রেম থেকে ফসকে যাওয়া পাখিটির দেখা মিলল না।
এরপর প্রায় দুই কিলোমিটার টিলাময় সর্পিল পথ পার হয়ে সাগরনাল চা-বাগানে পৌঁছালাম। ওখানে ঘণ্টাখানেক বিভিন্ন প্রজাতির পাখির ছবি তুলে ফিরতি পর ধরলাম। প্রায় আড়াই কিলোমিটার পথ হেঁটে আবারও মুরাছড়া ইকোপার্কের সেই ঝোপের সামনে ১৫ থেকে ২০ মিনিট পজিশন নিয়ে বসে থাকলাম। কিন্তু অধরা পাখিটির দেখা পেলাম না। হাঁটুতে ব্যথা, তাই উঁচু-নিচু সর্পিল টিলায় হাঁটতে কষ্ট হচ্ছিল। সে কারণে দ্বিতীয় দিন আবারও মুরাছড়া ও সাগরনাল যাওয়ার চিন্তা বাদ দিলাম। হোটেলে ফিরে ব্যাগ গুছিয়ে শ্রীমঙ্গলের দিকে রওনা হয়ে গেলাম।
পরদিন ভোরে শ্রীমঙ্গল থেকে কমলগঞ্জের রাজকান্দি সংরক্ষিত বনের দিকে রওনা হলাম। ঠিক পাঁচ বছর পর এখানে এলাম। প্রায় দুই কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে একটি উল্লুক পরিবারের দেখা পেলাম। ওদের ছবি তুলে কিছুটা এগিয়ে ছড়ায় নেমে পড়লাম। ছড়ার এই অংশ যেন পাখি ও প্রজাপতির স্বর্গরাজ্য। ভ্রমণসঙ্গী খুকন থুনাউজামকে নিয়ে চুপিচুপি টিলার ওপরে উঠে কিছুটা আড়াল ও ছদ্মবেশ নিয়ে বসে পড়লাম। নানা প্রজাতির পাখির দেখা পেলাম। তবে যাদের সন্ধানে এসেছি, ওদের হদিস মিলল না। ঘণ্টাখানেক ওখানে থেকে ছড়ায় নেমে এলাম।
এরপর একটি ঝোপে পাখির আনাগোনা দেখে সেদিকে ক্যামেরা তাক করলাম। একটি পাহাড়ি দুধরাজের দেখা পেলাম। ওর ছবি তুলতে তুলতেই ক্ষুদ্র একটি পাখি এসে ঝোপের একটি ডালে বসল। আরে, এ যে দেখছি মুরাছড়ার সেই খুদে পাখিটি। যে চঞ্চল পাখি, কাজেই একমুহূর্ত সময় নষ্ট না করে শাটারে ক্লিক করলাম। মাত্র কটি ক্লিক করতেই চঞ্চল পাখিটি হাওয়া হয়ে গেল। আর ফিরে এল না। তবে আমাদের প্রত্যাশা পূরণ হলো। ঠিক ৯ মাস ২০ দিন পর আবারও পাখিটির দেখা মিলল আদমপুর সংরক্ষিত বনাঞ্চলে। এবার পেলাম মাটিতে।
মৌলভীবাজারের মুরাছড়া ও আদমপুরে দেখা খুদে পাখিটি এ দেশের এক বিরল আবাসিক পাখি নেপালি খুদে ছাতারে। পাখিটির কোনো প্রচলিত বাংলা নাম নেই। ইংরেজি নাম নেপাল ফুলভেত্তা। প্রাণিবিজ্ঞানী রেজা খানের বইয়ে নেপালের ছোট ছাতারে বলে উল্লেখ করা হয়েছে, যা একটি অনুবাদ নামমাত্র। তবে আমি নেপালি খুদে ছাতারে বলতেই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি। Leiotrichidae গোত্রের শাখাচারী পাখিটির বৈজ্ঞানিক নাম Alcippe nipalensis। হিমালয়জুড়ে, নেপালের পূর্বাঞ্চল থেকে শুরু করে ইউনান প্রদেশ পর্যন্ত, উত্তর–পূর্ব ভারতের পাহাড়, বাংলাদেশের পূর্বাঞ্চল এবং উত্তর ও পশ্চিম মিয়ানমারে বিস্তৃত।
এটি চড়ুই আকারের পাখি; দৈর্ঘ্য মাত্র ১২ থেকে ১৩ সেন্টিমিটার। ওজন ৯ থেকে ১৪ গ্রাম। পালকের রং বাদামি। মাথা, ঘাড় ও গাল কালচে-ধূসর। গলা, বুক ও পেটের রং সাদাটে। চোখের মণি বাদামি-ধূসর; চোখের চারদিকে সুস্পষ্ট সাদা বলয় রয়েছে। একটি লম্বা কালো দাগ চোখের ওপর থেকে ঘাড়ের পেছন পর্যন্ত চলে গেছে। চঞ্চু মেটে, যার গোড়া হলুদ। পা, পায়ের পাতা ও নখ মেটে বাদামি। স্ত্রী-পুরুষ দেখতে একই রকম। অপ্রাপ্তবয়স্ক পাখির পিঠ হলদে, বগল ও লেজতল ঢাকনি বেশি হলদে।
ওরা মূলত বড় পাতার স্যাঁতসেঁতে পাতাঝরা ও মিশ্র চিরসবুজ বনের বাসিন্দা। সচরাচর বৃক্ষতলে জন্মানো গুল্মলতা, বাঁশকুঞ্জ, ঝোপঝাড় ও চা-বাগানে বিচরণ করে। এরা অত্যন্ত লাজুক। সচরাচর ছোট ছোট পতঙ্গভুক পাখির মিশ্র দলে থাকে। ছোট গাছের পাতায় হেঁটে খাবার খোঁজে, মাঝেমধ্যে মাটিতেও নামে। পোকামাকড়, রসালো ফল ও ফুলের মধু পছন্দ। প্রায়ই তীব্র কণ্ঠে ‘পি-পি-পি-পি-পি-পি...’ বা ‘দ্জী-দ্জী-দ্জী-দ্জী...’ শব্দে ডাকে।
মার্চ থেকে জুলাই প্রজননকাল। এ সময় ভূমির কাছে বাঁশঝাড় কিংবা ঝোপঝাড়ের দ্বিধাবিভক্ত ডালে ঘাস, বাঁশপাতা, ফার্ন, শিকড়-বাকড় ইত্যাদি দিয়ে বাটির মতো গোলগাল বাসা বানায়। তাতে স্ত্রী লালচে-বাদামি ঘন ছিটছোপসহ সাদা বা হালকা গোলাপি রঙের তিন থেকে পাঁচটি ডিম পাড়ে, যা ১২ দিনে ফোটে। আয়ুষ্কাল পাঁচ থেকে সাত বছর।
আ ন ম আমিনুর রহমান, পাখি ও বন্য প্রাণী প্রজনন ও চিকিৎসাবিশেষজ্ঞ, গাজীপুর কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়