পটুয়াখালীতে আদালতের এজলাসে আইনজীবীদের মধ্যে হাতাহাতি, আসামিদের মারধর
Published: 25th, June 2025 GMT
পটুয়াখালী চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের এজলাসে বিচারিক কার্যক্রম চলাকালে আইনজীবীদের দুই পক্ষের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটেছে। এ সময় আসামিদেরও মারধর করা হয়। আজ বুধবার দুপুরে আদালতের এজলাসে হওয়া ঘটনা আদালত চত্বরে ছড়িয়ে পড়লে উত্তেজনা তৈরি হয়।
এ ঘটনার প্রতিবাদে আদালত চত্বরে বিক্ষোভ মিছিল করেছে জেলা জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের একটি অংশ। এ ছাড়া ঘটনার পর আইনজীবী সমিতি জরুরি সভা ডেকে কয়েকজন আইনজীবীকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের পেশকার মো.
জেলা যুবদলের সাবেক দপ্তর সম্পাদক ও আসামিপক্ষের আইনজীবী আবদুল্লাহ আল নোমান জানান, স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলামসহ বিএনপির ২১ জন নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে শাহীন নামের এক ব্যক্তি একটি মামলা করেছেন। আজ দুপুরে চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলাটির জামিন শুনানি চলছিল। এ সময় বিচারক বাদী ও আসামিপক্ষের আইনজীবীর বক্তব্য শুনে আসামিদের জামিন মঞ্জুর করেন। তাঁর ভাষ্যমতে, জামিন মঞ্জুর হওয়ার পর বাদীপক্ষের আইনজীবী ও জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক শরীফ মোহাম্মদ সালাউদ্দিন এজলাসের ভেতরে আইনজীবী শাহিন সেরনিয়াবাতকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেন। প্রতিবাদ করলে তাঁকেও মারধর করা হয়। একপর্যায়ে শরীফ সালাহউদ্দিন ও তাঁর ঘনিষ্ঠ আইনজীবীরা জামিন পাওয়া আসামিদের মারধর করেন।
মামলার আসামি স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা আমিনুল ইসলাম বলেন, একটি রাজনৈতিক মামলায় তাঁকেসহ কলাপাড়া উপজেলার ২১ জন নেতা-কর্মীকে আসামি করা হয়। ওই মামলায় হাজিরা দিতে তাঁরা আজ আদালতে আসেন। বিচারক জামিন মঞ্জুর করেন। এতে বাদীপক্ষের আইনজীবী শরীফ মোহাম্মদ সালাহউদ্দিনসহ তাঁর ঘনিষ্ঠ আইনজীবীরা ক্ষুব্ধ হয়ে এজলাসের ভেতর বাগ্বিতণ্ডায় লিপ্ত হয়ে তাঁদের মারধর করেন। পরে আদালতের করিডরে অবস্থানকালে তাঁরা তাঁদের (আসামি) অকথ্য ভাষায় গালমন্দ করেন।
বাদীপক্ষের আইনজীবী ও জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক শরীফ মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, এজলাসে একটি মামলার শুনানি চলছিল। শুনানিতে আসামিপক্ষের আইনজীবী হিসেবে আবদুল্লাহ আল নোমানসহ কয়েকজন আইনজীবী অংশ নেন এবং বাদীপক্ষে তিনিসহ কয়েকজন অংশ নেন। বিচারক শুনানি শেষে আসামিদের জামিন মঞ্জুর করেন। এতে বাদী ও আসামিপক্ষের আইনজীবীদের মধ্যে বাগ্বিতণ্ডার একপর্যায়ে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। তিনি আরও বলেন, আইনজীবী আবদুল্লাহ আল নোমান মামলার বাদী শাহিন মৃধাকে আওয়ামী লীগ তকমা দিয়ে আদালত চত্বরে স্লোগান দিয়ে বহিরাগত ব্যক্তিদের ডেকে উত্তেজনা ছড়ান। এরপর তাঁর লোকজন আইনজীবী সমিতির প্রধান ফটকে গিয়ে ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করেন, যা জেলা আইনজীবী সমিতির সম্মানহানির শামিল। এ জন্য জেলা আইনজীবী সমিতি বিকেলে জরুরি সভা ডেকে আইনজীবী নোমানসহ জড়িত ব্যক্তিদের কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
পটুয়াখালী আদালত পুলিশের পরিদর্শক মো. কামাল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, আজ আদালতের বিচার কার্যক্রম চলাকালে আইনজীবীদের মধ্যে বাগ্বিতণ্ডা ও হাতাহাতির ঘটনা শুনেছেন। পরে বিষয়টি নিশ্চিত হয়ে তিনি পুলিশ সুপারকে জানিয়েছেন।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ ও প্রশাসন) মো. সাজেদুল ইসলাম বলেন, দুপুরে আদালতে আইনজীবীদের মধ্যে একটি অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার তথ্য পেয়েছেন। তবে এ বিষয়ে কোনো পক্ষ পুলিশের কাছে কোনো অভিযোগ করেনি।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: আস ম দ র এজল স র ও আস ম র কর ন র ঘটন
এছাড়াও পড়ুন:
ভাইকে বাঁচাতে বান্ধবীকে ফাঁসানোর অভিযোগ
পাবনার ভাঙ্গুড়ায় ঘুমন্ত অবস্থায় বান্ধবীর ছবি তুলেছিলেন ভাই। বিষয়টি নিয়ে আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার কথা জানালে ভাইকে বাঁচাতে উল্টো বান্ধবীর নামে মিথ্যা চুরির মামলা দিয়ে হয়রানির অভিযোগ উঠেছে তানিয়া হক নামের এক নারীর বিরুদ্ধে।
এছাড়াও চুরির ঘটনার কোনো তদন্ত ছাড়াই মামলা নেওয়ারও অভিযোগ উঠেছে থানা পুলিশের বিরুদ্ধে।
মঙ্গলবার (৩০ সেপ্টেম্বর) দুপুরে পাবনা জেলা জজকোর্টের সামনে গণমাধ্যমকে এসব কথা বলেন ভুক্তভোগী নারী ইফফাত মোকাররমার আইনজীবী অ্যাডভোকেট আব্দুল্লাহ আল মামুন রাসেল।
পাবনা সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ আখতারুজ্জামানের আদালত ভুক্তভোগী নারী ইফফাত মোকাররমা সানিমুনকে জামিন দিয়েছেন।
অ্যাডভোকেট আব্দুল্লাহ আল মামুন রাসেল বলেন, “আমার মক্কেল ইফফাত মোকাররমা দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষকতায় পেশায় নিয়োজিত। তিনি একজন সম্মানিত লোক। মামলার বাদীর সঙ্গে তার দীর্ঘদিন বন্ধুত্বের সম্পর্ক। সেই সম্পর্কের কারণে তার বান্ধবীর বাসায় গিয়েছিলেন এবং একসঙ্গে ঘোরাঘুরির পর যখন রাত্রীযাপন করছিলেন সেই সময়ে বাদীর ভাই ইফফাত মোকাররমার ছবি তুলেছিলেন। বিষয়টি টের পেয়ে তিনি তাৎক্ষণিক প্রতিবাদ জানান এবং ছবিগুলো দেখানোর জন্য অনুরোধ করেন। এ নিয়ে তাদের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। পরেরদিন সকালে আইনী পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলে ইফফাত মোকাররমা ঢাকায় চলে যান এবং সেখানে জিডি করেন। কিন্তু এই ঘটনা ধামাচাপা দিতে উল্টো ইফফাত মোকাররমার বিরুদ্ধে মিথ্যা চুরির মামলা দায়ের করেন তার বান্ধবী।”
তিনি আরো বলেন, “বাদী তানিয়া হক উল্লেখ করেছেন ২৬ লাখ টাকার স্বর্ণালঙ্কার চুরি হয়েছে যা তিনি তার শরীরে পড়ে তার বান্ধবীর সঙ্গে ঘুড়ে বেড়িয়েছিলেন। কিন্তু ওইদিনের ঘোরাঘুরির ছবিতে তার শরীরে কোনো স্বর্ণালঙ্কার ছিল না। এছাড়াও ঘটনার দুইদিনের মাথায় যেভাবে মামলা গ্রহণ করা হয়েছে তাতে বোঝা যায় কোনো তদন্ত ছাড়াই থানা কোনো পক্ষ থেকে প্রভাবিত হয়ে মামলা গ্রহণ করেছেন।”
ভুক্তভোগী নারী ইফফাত মোকাররমা বলেন, “এই মামলার নূন্যতম প্রমাণ নেই। আমি যে একজন শিক্ষক হিসেবে আমার ছাত্রদের সামনে দাঁড়াবো সেই অবস্থাও তারা আমাকে রাখেনি। আমার সন্তানসহ পুরো পরিবার সামাজিকভাবে হেয় পতিপন্ন হচ্ছে। আমি চাই ঘটনার সুষ্ঠ তদন্ত করে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হোক।”
এ বিষয়ে মামলার বাদীর তানিয়া হকের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করে ফোন রিসিভ না করায় মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
তবে ভাঙ্গুড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শফিকুল ইসলাম বলেন, “উনি (আইনজীবী) উনার মক্কেলের জন্য এসব কথা বলতেই পারেন। উনার মক্কেলকে সুবিধা দেওয়ার জন্য এসব অভিযোগ করেছেন। কিন্তু ঘটনার তদন্ত করে এবং আইনানুগভাবেই মামলা দায়ের হয়েছে, যা এখনও তদন্ত চলছে।”
ঢাকা/শাহীন/এস