নির্বাচনের আগেই শাপলা-জুলাইসহ সব গণহত্যার বিচার চায় হেফাজত
Published: 26th, June 2025 GMT
নির্বাচনের আগেই শাপলা চত্বর ও জুলাই গণহত্যাসহ প্রতিটি হত্যাযজ্ঞের বিচার সম্পন্নের দাবি করেছেন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব আজিজুল হক ইসলামাবাদী। গতকাল বুধবার দলের দপ্তর সম্পাদক আফসার মাহমুদ স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে তিনি এ দাবি করেন।
এতে বলা হয়েছে, ইসলামবিদ্বেষী, ফ্যাসিবাদ ও আধিপত্যবাদবিরোধী চেতনা সংরক্ষণ, রাষ্ট্র-সংস্কারের গণআকাঙ্ক্ষা সুসংহতকরণ এবং জাতীয় ঐকমত্য গঠনকল্পে অবিলম্বে জুলাই ঘোষণাপত্র প্রকাশ করতে হবে। সেই সঙ্গে নির্বাচনের আগেই শাপলা চত্বরে আলেম-ওলামা হত্যাকাণ্ড এবং জুলাই গণহত্যাসহ ফ্যাসিস্ট হাসিনার প্রতিটি হত্যাযজ্ঞের বিচার সম্পন্ন করতে হবে। এর অন্যথা হলে অন্তর্বর্তী সরকারকে ছাত্র-জনতা ক্ষমা করবে না।
বিবৃতিতে আজিজুল হক বলেন, শাপলা চত্বরের রক্তাক্ত ইতিহাসের পথ বেয়ে জুলাই বিপ্লব আমাদের জাতীয় জীবনে হাজির হয়েছে। জুলাই বিপ্লব চলমান প্রক্রিয়া। জুলাইকে বিস্মৃত হতে দেওয়া যাবে না। এ দেশে যারাই ভারতীয় আধিপত্যবাদের গোলামি করবে, দেশের স্বার্থ জলাঞ্জলি দেবে, মাফিয়াতন্ত্র জারি রাখবে, মানবাধিকার লঙ্ঘন করে ক্ষমতা ধরে রাখতে চাইবে, তাদের বিরুদ্ধে জুলাইয়ের গণপ্রতিরোধের চেতনা বারবার ফিরে আসবে।
তিনি আরও বলেন, গণহত্যার বিচার ও সংস্কার প্রশ্নে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না। প্রধান উপদেষ্টা ড.
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
ইসরায়েলের হামলায় নিহত ফিলিস্তিনি ফুটবলের ‘পেলে’
ফিলিস্তিন জাতীয় দলের সাবেক ফরোয়ার্ড সুলেইমান আল–ওবেইদ ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর হামলায় নিহত হয়েছেন। গাজার দক্ষিণাঞ্চলে মানবিক সাহায্য পেতে অপেক্ষমাণ ফিলিস্তিনি জনতার ওপর ইসরায়েলি বাহিনী হামলা চালালে প্রাণ হারান ৪১ বছর বয়সী এই ফুটবলার। ফিলিস্তিন ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন (পিএএফ) গতকাল তাদের ওয়েবসাইটে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সুলেইমানের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছে।
আরও পড়ুনবন্ধু সুয়ারেজ ও ‘দেহরক্ষী’ দি পলে কোয়ার্টার ফাইনালে মেসির মায়ামি৫ ঘণ্টা আগেপিএএফের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘গাজা উপত্যকার দক্ষিণাঞ্চলে মানবিক সাহায্যের জন্য অপেক্ষমাণ মানুষের ওপর ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় শহীদ হয়েছেন জাতীয় দলের সাবেক খেলোয়াড় ও বিচ সার্ভিসেস দলের তারকা সুলেইমান আল–ওবেইদ। ফিলিস্তিন ফুটবলে সুলেইমান “দ্য গ্যাজেল (হরিণ)”, “দ্য ব্লাক পার্ল (কালো মুক্তা)”, “হেনরি অব প্যালেস্টাইন” এবং “পেলে অব প্যালেস্টাইন ফুটবল” নামে পরিচিত ছিলেন। পাঁচ সন্তান রেখে মারা গেছেন ফিলিস্তিন ফুটবলের এই পেলে।’
গাজায় জন্ম নেওয়া সুলেইমান সার্ভিসেস বিচ ক্লাবের হয়ে ক্যারিয়ার শুরু করেন। এরপর পশ্চিম তীরে গিয়ে সেখানকার ক্লাব আল আমারি ইয়ুথ সেন্টারে ২০০৯ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত খেলেন। ২০১০–১১ মৌসুমে ফিলিস্তিনের প্রথম পেশাদার ফুটবল লিগ জেতেন সুলেইমান। আল আমারি ছেড়ে আল শাতিয়া ক্লাবে এক মৌসুম খেলেন সুলেইমান। এরপর গাজা স্পোর্টস ক্লাবের হয়ে সাউদার্ন গভর্নরেটস প্রিমিয়ার লিগে ২০২৬–১৭ মৌসুমে ১৭ গোল করে সর্বোচ্চ গোলদাতা হন। পরের মৌসুমে আল খাদামা ক্লাবের হয়েও লিগে সর্বোচ্চ গোলদাতা হন।
আরও পড়ুনলা লিগায় সর্বোচ্চ বেতন পাওয়া ১০ ফুটবলার৬ ঘণ্টা আগেপিএএফের বিবৃতিতে আরও জানানো হয়, দুর্দান্ত গতি ও দক্ষতার জন্য ২০০৭ সালে ফিলিস্তিন জাতীয় দলে জায়গা করে নেন সুলেইমান। ২০১৩ সালে জাতীয় দলের হয়ে শেষ ম্যাচটি খেলার আগে ২৪ ম্যাচে করেন ২ গোল। এর মধ্যে সুলেইমানের বিখ্যাত গোলটি ২০১০ সালে পশ্চিম এশিয়ান ফুটবল ফেডারেশন চ্যাম্পিয়নশিপে। ইয়েমেনের বিপক্ষে ‘সিজর্স কিকে’ চোখধাঁধানো গোলটি করেছিলেন।
সুলেইমানের মৃত্যুতে শোক জানিয়ে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড কিংবদন্তি এরিক ক্যান্টোনা নিজের ইনস্টাগ্রাম হ্যান্ডলে লিখেছেন, ”‘সাহায্য পাওয়ার আশায় রাফায় অবস্থান করার সময় ফিলিস্তিন জাতীয় দলের তারকা সুলেইমান আল–ওবেইদকে হত্যা করেছে ইসরায়েল। তাকে “ফিলিস্তিনের পেলে” ডাকা হতো। আমরা তাদের আর কত গণহত্যা করতে দেব? ফিলিস্তিন মুক্ত হোক।’”
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘লম্বা ক্যারিয়ারে সুলেইমান আল–ওবেইদ ১০০–এর বেশি গোল করে ফিলিস্তিন ফুটবলের অন্যতম উজ্জ্বল তারকায় পরিণত হয়েছিলেন।’ তাঁর মৃত্যুর মধ্য দিয়ে খেলাধুলা ও স্কাউটিং–সংশ্লিষ্ট পরিবারে শহীদের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ৬৬২, যেটা ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের নির্মূলীকরণ যুদ্ধের মাধ্যমে শুরু হয়। ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন–সংশ্লিষ্ট মৃত মানুষের সংখ্যা ৩২১। এর মধ্যে রয়েছেন খেলোয়াড়, কোচ, প্রশাসক, সংগঠক, রেফারি ও ক্লাবের বোর্ড সদস্য।’
তবে গত ২৩ জুলাই পিএএফের এক্সে করা পোস্টের বরাত দিয়ে ফুটবলপ্যালেস্টাইন ওয়েবসাইট জানিয়েছে, গত ৬৬৯ দিনে ইসরায়েলের হামলায় ৪০০–এর বেশি ফুটবলার নিহত হয়েছেন। সেই পোস্টে তখন জানানো হয়েছিল, সর্বশেষ ৬৫৬ দিনে খেলাধুলা ও স্কাউটিং–সংশ্লিষ্ট ৮০০–এর বেশি নিহত হয়েছেন ইসরায়েলের হামলায়।
গত ২৯ জুলাই সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ফিলিস্তিন অলিম্পিক কমিটি জানিয়েছে, শুধু জুলাই মাসেই গাজা ও দখলকৃত পশ্চিম তীরে ইসরায়েলের হামলায় ৪০ জন ফিলিস্তিনি অ্যাথলেট নিহত হয়েছেন। বিবৃতিতে বলা হয়েছিল, ‘একেকটি দিন যায় আর ফিলিস্তিনের ক্রীড়াঙ্গনে বিয়োগান্ত ঘটনার নতুন অধ্যায় যোগ হয়।’
গাজায় গণহত্যামূলক যুদ্ধ শুরুর পর ইসরায়েলি বাহিনীর হাতে ৬১ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নাগরিক মারা গেছেন। আহত হয়েছেন দেড় লাখের বেশি; তাঁদের মধ্যে বেশির ভাগই নারী ও শিশু বলে জানিয়েছে ইরানের রাষ্ট্রায়ত্ত সংবাদমাধ্যম প্রেসটিভি।