টেস্ট স্ট্যাটাস অর্জনের পঁচিশে বাংলাদেশ
Published: 26th, June 2025 GMT
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সাবেক এক টেস্ট অধিনায়কের কড়া সমালোচনা, ‘টেস্ট স্ট্যাটাস পাওয়ার ২৫ বছর উদযাপন! এটা কেমন উদযাপন? স্ট্যাটাস পাওয়ার উদযাপন করার কী আছে? টেস্ট খেলছে পৃথিবীর আর কোনো দেশ কী এমন উদযাপন করে। টেস্ট স্ট্যাটাস পাওয়ার ২৫ বছর…তো এই ২৫ বছরে বাংলাদেশের টেস্ট ক্রিকেট কতটুকু এগিয়েছে? কালেভাদ্রে কয়েকটি ম্যাচ জেতা বাদে কখনো কী এই ফরম্যাটে ধারাবাহিকতা ছিল। এসব বাদ দিয়ে মাঠের ক্রিকেটে মনোযোগ দেওয়াই উচিত।’’
সাবেক টেস্ট অধিনায়কের এমন ঝাঁজালো বক্তব্য আসলে টেস্ট স্ট্যাটাস অর্জনের উদযাপনের স্রেফ সমালোচনা করাই নয়, বরং আসল জায়গায় বিসিবির কাজ না করার একটি চিত্রও বটে। এই উদযাপন হচ্ছে চলমান সপ্তাহজুড়ে। রাজশাহী, খুলনা, সিলেট, চট্টগ্রাম ঘুরে আজ সমাপণী দিনে সবচেয়ে বড় আয়োজন মিরপুর হোব অব ক্রিকেটে।
২৫ বছর আগে, ২০০০ সালের ২৬ জুন আইসিসির পূর্ণ সদস্য দেশ হয় বাংলাদেশ। রজতজয়ন্তী উপলক্ষ্যে সপ্তাহব্যাপী নানা আয়োজনের মধ্যে ছিল অনূর্ধ্ব-১২ সিক্স-এ-সাইড টুর্নামেন্ট, চিত্রাঙ্কন ও ধারাভাষ্য প্রতিযোগিতা, ‘হিট দা স্টাম্প’ চ্যালেঞ্জসহ নানান আয়োজন।
২০০০ সালের ২৬ জুন টেস্ট স্বীকৃতি পাওয়ার পর ভারতের বিপক্ষে ১০ নভেম্বর প্রথম ম্যাচ খেলতে নামে বাংলাদেশ। বর্তমান বিসিবি সভাপতি আমিনুল ইসলাম প্রথম টেস্টে শতক হাঁকান। সেই দলের নেতৃত্বে ছিলেন নাঈমুর রহমান দূর্জয়। ঢাকা স্টেডিয়ামে ভারতের বিপক্ষে ম্যাচে স্কোয়াডে ছিলেন মোহাম্মদ রফিক, হাসিবুল হোসেন, আকরাম খান, এনামুল হক, খালেদ মাসুদ পাইলট, হাবিবুল বাশার, আল শাহরিয়ার রোকন, জাভেদ ওমর বেলিম, ফাহিম মুনতাসির, মেহেরাব হোসেন, শাহরিয়ার হোসেন, বিকাশ রঞ্জন দাস, রাজিন সালেহ, মঞ্জুরুল ইসলাম।
আজ তাদের সংবর্ধনা দেবে বিসিবি। নানা কারণে অনেকেই থাকবেন না। যারা থাকবেন তাদের দেওয়া হবে বিশেষ ব্লেজার ও সম্মাননা। দেশজুড়ে নানা আয়োজনে রজতজয়ন্তী উদযাপনের দুটি কারণও ব্যাখ্যা করেছেন আমিনুল, ‘‘প্রোগ্রামটা আমরা দুইটা কারণে করেছি, একটা হচ্ছে টেস্ট ক্রিকেটের ২৫ বছর উদযাপন। আরেকটা হচ্ছে দেশব্যাপী বহু জায়গায় ক্রিকেট ঘুমিয়ে ছিল, তাদের একটা ওয়াকআপ কল দেওয়া। এটা আমরা অত্যন্ত সফলভাবে করতে পেরেছি।’’
যেভাবে বাংলাদেশের টেস্ট স্ট্যাটাস অর্জন
১৯৭৭ সালের ২৬ জুলাই আইসিসির সহযোগী সদস্যপদ লাভ করে বাংলাদেশ। আইসিসি ট্রফি জয়ের পর ১৯৯৭ সালের ১৫ জুন বাংলাদেশ অর্জন করে ওয়ানডে স্টাটাস। সেই ধারাবাহিকতায় ১৯৯৮ সালে বাংলাদেশ টেস্ট স্টাটাসের জন্য আবেদন করেছিল। সে সময়ে পাঁচটি দেশ বাংলাদেশের পক্ষে ভোট দিলেও চারটি দেশ আরো পর্যবেক্ষণের পরামর্শ দেয়। তাতে ভেস্তে যায় সেই আবেদন।
তবে ১৯৯৯ বিশ্বকাপে বাংলাদেশ স্কটল্যান্ড এবং পাকিস্তানকে হারালে টেস্ট স্টাটাস অর্জনের ভিত্তি স্থাপিত হয়। এর পাশাপাশি বিভিন্নভাবে লবিং অব্যাহত থাকে। যেই কাজটা তখন বেশ সিদ্ধহস্তে করেছিলেন ক্রিকেটের দুই মহারথী সাবের হোসেন চৌধুরী ও সৈয়দ আশরাফুল হক।
পাশাপাশি বাংলাদেশের জন্য কাজটা আরো সহজ হয় তখন আইসিসি সভাপতি ছিলেন জগমোহান ডালমিয়া। যিনি সব সময় বাংলাদেশ ক্রিকেটের শুভাকাঙ্খী ছিলেন। মূলত তার আমল থেকেই বাংলাদেশের টেস্ট স্ট্যাটাস পাওয়ার প্রক্রিয়ায় এগিয়ে যায় বাংলাদেশ।
২০০০ সালের ২৬ জুন আসে মাহেন্দ্রক্ষণ। ক্রিকেট-তীর্থ লন্ডনের লর্ডসের লং রুমে আইসিসির নতুন সভাপতি অস্ট্রেলিয়ার ম্যালকম গ্রে বাংলাদেশকে দশম টেস্ট দল হিসেবে বাংলাদেশের নাম ঘোষণা করেন। লর্ডসে যখন সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় তখন বাংলাদেশ সময় রাত ১০টা। ব্যাস, এরপরই পুরো দেশে শুরু হয়ে যায় উৎসব। পরদিন ঢাকাসহ সারাদেশে বাংলাদেশ ক্রিকেটের জোয়ার লেগে যায়। শুরু হয়ে যায় নতুন এক পথ চলা।
যে পথ চলার ২৫ বছর পূর্তি আজ।
ঢাকা/ইয়াসিন
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর স ল র ২৬ জ র ২৫ বছর আইস স
এছাড়াও পড়ুন:
ভারতের সবচেয়ে সফল অভিনেতা শাহরুখ
ভারতের সবচেয়ে সফল অভিনেতা নির্বাচিত হয়েছেন বলিউড বাদশা শাহরুখ খান। ২০০০ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৫ সালের ৩১ আগস্ট পর্যন্ত প্রতি বছরের শীর্ষ পাঁচটি জনপ্রিয় ভারতীয় সিনেমা বিশ্লেষণের ভিত্তিতে এই সিদ্ধান্তে নিয়েছে আইএমডিবি।
বিশ্বের ৯.১ মিলিয়নেরও বেশি ব্যবহারকারীর দেওয়া রেটিংয়ের ভিত্তিতে গবেষণাটি চালানো হয়। এতে দেখা যায়, এই সময়ের সবচেয়ে জনপ্রিয় ১৩০টি সিনেমার মধ্যে ২০টিতে অভিনয় করেছেন শাহরুখ খান।
আরো পড়ুন:
শাহরুখ পুত্রের ওয়েব সিরিজ: সেই ওয়াংখেড়ের মামলা
তারকাখচিত প্রিমিয়ারে শাহরুখ পুত্রের বিদেশি প্রেমিকা
এ তালিকার দ্বিতীয় অবস্থানে যৌথভাবে রয়েছেন হৃতিক রোশান ও আমির খান। তারা দুজনেই জনপ্রিয় ১৩০টি সিনেমার মধ্যে ১১টি করে সিনেমায় কাজ করেছেন। এরপর রয়েছেন দীপিকা পাড়ুকোন (১০টি সিনেমা), অজয় দেবগন (৭টি সিনেমা)। তাছাড়া অমিতাভ বচ্চন, প্রিয়াঙ্কা চোপড়া ও রানী মুখার্জি ৬টি করে সিনেমায় অভিনয় করেছেন।
‘ভারতীয় সিনেমার ২৫ বছর’ শিরোনামের এই প্রতিবেদনটি গতকাল প্রকাশিত হয়। এটি শাহরুখ খানের কর্মজীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক এবং ভারতীয় তারকাদের নিয়ে বদলে যাওয়া ধারার প্রতিফলন হিসেবেও বিবেচিত।
আইএমডিবির প্রতিবেদন অনুযায়ী, শাহরুখ খান ২০০০-২০০৪ সালের মধ্যে দারুণ প্রভাব বিস্তার করেন। এই সময়ে মুক্তিপ্রাপ্ত সবচেয়ে জনপ্রিয় ২৫টি সিনেমার মধ্যে ৮টির প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেন তিনি। যে বছরগুলোতে শাহরুখ খানের কোনো সিনেমা মুক্তি পায়নি, সে সময়েও তিনি আইএমডিবির ‘জনপ্রিয় ভারতীয় তারকা’-এর তালিকার শীর্ষ দশে নিয়মিত জায়গা করে নেন।
এই সময়ে ভারতীয় তারকাদের গুরুত্বের ব্যাপারটি পরিবর্তিত হয়েছে। মিলেনিয়ামের প্রথম পাঁচ বছরে সবচেয়ে জনপ্রিয় ২৫টি সিনেমার প্রধান চরিত্রে ছিলেন ১৩ জন পুরুষ অভিনেতা। কিন্তু গত পাঁচ বছরে এই সংখ্যাটি দাঁড়িয়েছে ২৩ জনে, যেখানে শুধু প্রভাস, আল্লু অর্জুন, সুরিয়া ও বিজয় একাধিকবার জায়গা পান বলে এ প্রতিবেদনে জানানো হয়।
আইএমডিবি ইন্ডিয়ার প্রধান ইয়ামিনি পাতোদিয়া বলেন, “ভারতীয় চলচ্চিত্র শিল্প সবসময়ই চক্রাকারে এগিয়েছে। সুতরাং ভবিষ্যতের দিকে তাকাতে এই পঁচিশ বছরের মাইলফলক ভালো একটি দৃষ্টিকোণ প্রদান করে। এই বিবর্তন আগামী দিনে গল্প ও গল্পকারদের জন্য নতুন অর্থ নিয়ে আসবে।”
১৯৬৫ সালে ২ নভেম্বর ভারতের নয়াদিল্লিতে এক মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন শাহরুখ খান। তার শৈশবের প্রথম পাঁচ বছর কেটেছে ম্যাঙ্গালুরুতে। শাহরুখের দাদা ইফতিখার আহমেদ স্থানীয় পোর্টের প্রধান ইঞ্জিনিয়ার ছিলেন। যার কারণে সেখানে বসবাস করেন তারা। শাহরুখের বাবার নাম তাজ মোহাম্মদ খান, মা লতিফ ফাতিমা।
দিল্লির হংসরাজ কলেজ থেকে স্নাতক সম্পন্ন করেন শাহরুখ খান। তারপর জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়াতে গণযোগাযোগ বিষয়ে মাস্টার্সে ভর্তি হন। কিন্তু অভিনয় জীবন শুরু করার কারণে পড়াশোনা ছেড়ে দেন তিনি। তবে বলিউডে ক্যারিয়ার শুরুর দিকে দিল্লির ন্যাশনাল স্কুল অব ড্রামা-তে ভর্তি হন এই শিল্পী।
১৯৯২ সালে ‘দিওয়ানা’ সিনেমার মাধ্যমে বলিউডে পা রাখেন শাহরুখ খান। রোমান্টিক ঘরানার এ সিনেমায় অভিনয় করে নজর কাড়েন তিনি। সিনেমাটিতে দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের কারণে সেরা নবাগত অভিনেতা হিসেবে ফিল্মফেয়ার পুরস্কার লাভ করেন শাহরুখ।
একই বছর ‘চমৎকার’, ‘দিল আসনা হে’ ও ‘রাজু বান গেয়া জেন্টলম্যান’ সিনেমায় অভিনয় করেন শাহরুখ। তার পরের বছর ‘ডর’ ও ‘বাজিগর’ সিনেমায় অভিনয় করে নিজের জাত চেনান শাহরুখ। তার অভিনয়ের জাদুতে মুগ্ধ হন কোটি ভক্ত; পৌঁছে যান সাফল্যের চূড়ায়। তার অভিনয়ের খ্যাতি আরো বাড়তে থাকে যশরাজ ফিল্মসের সিনেমায় ধারাবাহিকভাবে অভিনয় করে। একের পর এক হিট সিনেমা দিয়ে জনপ্রিয়তার তুঙ্গে অবস্থান করেন শাহরুখ। যদিও তার এই সফলতার জার্নির গল্প মোটেও সহজ ছিল। আর সে গল্প সবারই জানা।
অভিনয় ক্যারিয়ারে অসংখ্য সম্মাননা পেয়েছেন শাহরুখ খান। তার মধ্যে মোট পনেরোবার ফিল্মফেয়ার পুরস্কার লাভ করেছেন তিনি। এর মধ্যে আটবার সেরা অভিনেতা হিসেবে পুরস্কার পেয়েছেন তিনি। হিন্দি সিনেমায় বিশেষ অবদানের জন্য ২০০২ সালে তাকে পদ্মশ্রী পুরস্কারে ভূষিত করে ভারত সরকার। এ ছাড়া বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি গ্রহণ করেন মোট পাঁচবার। দীর্ঘ ক্যারিয়ারে অসংখ্য সম্মাননা পেলেও চলতি বছরে ভারতের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন শাহরুখ।
তথ্যসূত্র: ইন্ডিয়া টুডে, ডেকান ক্রনিকল
ঢাকা/শান্ত