আইনি কাঠামো ও আন্তর্জাতিক মানই হতে হবে চূড়ান্ত নির্ধারক
Published: 26th, June 2025 GMT
বাংলাদেশে আইনিভাবে কারা অডিট কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারবে—এই প্রশ্নে বিতর্ক দিন দিন বাড়ছে। ব্যক্তিগতভাবে ভারত থেকে কোয়ালিফাই করা একজন সনদধারী হিসাববিদ বা চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট (সিএ) ও কস্ট অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট অ্যাকাউন্ট্যান্ট (সিএমএ) হিসেবে আমি উভয় পেশার গুরুত্ব ও অবদানকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করি।
কস্ট অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট অ্যাকাউন্ট্যান্টরা প্রতিষ্ঠানের খরচ নিয়ন্ত্রণ, সিদ্ধান্ত গ্রহণে সহায়তা, অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা এবং কার্যক্রম (পারফরম্যান্স) বিশ্লেষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। তবে নিরীক্ষা বা অডিট পরিচালনার জন্য প্রয়োজন একটা সুনির্দিষ্ট আইনি অধিকার, কাঠামোবদ্ধ প্রশিক্ষণ ও বাস্তব অভিজ্ঞতা, যা কেবল পেশাদার হিসাববিদদের পক্ষেই সম্ভব।
সংবিধিবদ্ধ নিরীক্ষা হচ্ছে এমন একটি নিরীক্ষা, যা কোনো কোম্পানি বা প্রতিষ্ঠানকে আইন অনুসারে বাধ্যতামূলকভাবে করতে হয়। বাংলাদেশের কোম্পানি (সংশোধিত) আইন, ২০২০, আয়কর আইন ২০২৩, এনজিও নীতিমালা, সোসাইটি নিবন্ধন আইন, ট্রাস্ট ও ক্লাবের উপধারা, ব্যাংক ও যৌথ মূলধন কোম্পানি ও ফার্মসমূহের পরিদপ্তরের (আরজেএসসি) প্রথা, সবকিছুতেই পেশাদার হিসাববিদদের মাধ্যমে কোম্পানির নিরীক্ষা বাধ্যতামূলক হিসেবে নির্ধারিত। চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস অর্ডার ১৯৭৩ এবং সংশ্লিষ্ট বিধিতে স্পষ্টভাবে বলা আছে, কেবল দ্য ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস অব বাংলাদেশ বা আইসিএবির সদস্যরা এই দায়িত্ব পালনের আইনগত অধিকার রাখেন।
এটি আন্তর্জাতিক রীতিনীতিরও প্রতিফলন। যেমন, ভারতে শুধু সনদধারী হিসাববিদেরাই সংবিধিবদ্ধ নিরীক্ষা করতে পারেন। যুক্তরাজ্যে চার্টার্ড ইনস্টিটিউট অব ম্যানেজমেন্ট অ্যাকাউন্ট্যান্টস বা সিআইএমএ সদস্যদের নিরীক্ষা স্বাক্ষরের অনুমতি নেই। আর যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডায় সার্টিফায়েড পাবলিক অ্যাকাউন্ট্যান্টস বা সিপিও ছাড়া কেউ নিরীক্ষা করতে পারেন না।
বাংলাদেশে আইসিএবির তিন বছর মেয়াদি প্রশিক্ষণের পর আরও দুই বছর বাস্তব অভিজ্ঞতা লাগে পেশাদার হিসেবে কার্যক্রম শুরুর সনদ পেতে। ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অব অ্যাকাউন্ট্যান্টসের (আইএফএসি) আন্তর্জাতিক শিক্ষা মানদণ্ডের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ ও নিরীক্ষা তত্ত্বাবধানকারী বা সুপারভাইজারের অধীনে এই বাস্তব অভিজ্ঞতা নিশ্চিত করতে হয়। কস্ট অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট অ্যাকাউন্ট্যান্টস পেশাজীবীদের ব্যাপক হিসাবরক্ষণ ও খরচ ব্যবস্থাপনার দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা কখনো নিরীক্ষাসংক্রান্ত হাতে-কলমে শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের বিকল্প হতে পারে না।
বাংলাদেশে আইসিএবির ব্যাপক প্রশিক্ষণ কাঠামোর কঠোরতা অন্যান্য কিছু পেশার সঙ্গেও আমরা তুলনা করতে পারি। যেমন চিকিৎসকদের এক বছরের ইন্টার্নশিপ ও আইনজীবীদের দুই বছরের বাস্তব অভিজ্ঞতা ছাড়া উচ্চ আদালতে মামলায় আইনজীবী হিসেবে দাঁড়ানোর সক্ষমতা অর্জন করা যায় না।
আইসিএবি বাংলাদেশে ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অব অ্যাকাউন্ট্যান্টসের একমাত্র সদস্য প্রতিষ্ঠান, যা আন্তর্জাতিক মানের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নিরীক্ষা সনদ প্রদান ও বাতিল করতে পারে। সনদধারী হিসাববিদ বা চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস ছাড়া অন্য কোনো পেশাজীবী প্রতিষ্ঠানকে কোম্পানি নয় এমন প্রতিষ্ঠানের নিরীক্ষার অনুমতি দেওয়ার প্রস্তাব আইনিভাবে ভিত্তিহীন এবং আন্তর্জাতিক মানের পরিপন্থী।
অনেকে দাবি করেন, দুর্বল নিরীক্ষা মান বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) কমিয়ে দিচ্ছে বা অর্থ পাচার বাড়াচ্ছে। বাস্তবে আন্তর্জাতিক সংস্থা ও বৈশ্বিক গণমাধ্যম কখনো নিরীক্ষা মানকে বিদেশি বিনিয়োগের প্রধান প্রতিবন্ধক হিসেবে চিহ্নিত করেনি। এনরন কেলেঙ্কারি থেকে শুরু করে বিগ ফোর ফার্মগুলোর ওপর সাম্প্রতিক নজরদারিও প্রমাণ করে, এ ধরনের ব্যর্থতা উন্নত দেশেও ঘটে। তবে এগুলো ব্যতিক্রম ঘটনা, যা নিয়মিত ঘটে না। আর অর্থ পাচার প্রতিরোধের মূল দায়িত্ব নিরীক্ষকদের নয়, বরং এই দায়িত্ব কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও অন্যান্য নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠানের। তাই এক-দুটি ব্যতিক্রম ঘটনার দুর্বলতা তুলে ধরে সনদধারী হিসাববিদ ছাড়া অন্যদের নিরীক্ষার অধিকার দেওয়া যুক্তিসংগত নয়। এমন অনুমতি দিলে প্রশিক্ষণ, আইনি কাঠামো ও মান নিয়ে প্রশ্ন উঠবে, যা সামগ্রিকভাবে নিরীক্ষার গুণগত মান ক্ষুণ্ন করবে।
তবে সাম্প্রতিককালে শীর্ষস্থানীয় কিছু প্রতিষ্ঠানের নিরীক্ষা ঘিরে বিতর্ক প্রমাণ করে, আমাদের এখন জরুরি ভিত্তিতে নিরীক্ষার মান ও নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করতে একটি শক্তিশালী তদারকি সংস্থার প্রয়োজন। বাংলাদেশের দরকার এখন পেশাগত দ্বন্দ্ব নয়, বরং ভারতের ন্যাশনাল ফাইন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং অথরিটি বা এনএফআরএ এবং যুক্তরাষ্ট্রের পাবলিক কোম্পানি অ্যাকাউন্টিং ওভারসাইট বোর্ড বা পিসিএওবির আদলে ফাইন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং কাউন্সিল বা এফআরসিকে শক্তিশালী করা। আইসিএবি ও আইসিএমএবি যৌথভাবে নিরীক্ষার মানোন্নয়ন, এনভায়রনমেন্টাল, সোশ্যাল ও গভর্ন্যান্স বা ইএসজি রিপোর্টিং, ডিজিটাল ফাইন্যান্স ও পাবলিক খাত সংস্কারে সহযোগিতা করতে পারে। আইসিএবি এরই মধ্যে কস্ট অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট অ্যাকাউন্ট্যান্টসদের জন্য সনদধারী হিসাববিদ হওয়ার পথ উন্মুক্ত করেছে। যেখানে কিছু কোর্সে ছাড় থাকলেও নিরীক্ষা প্রশিক্ষণ বাধ্যতামূলক।
সবশেষে আমাদের মনে রাখতে হবে, নিরীক্ষা কোনো পেশাগত মর্যাদার লড়াই নয়, এটি একটি আইনি ও পেশাগত কাঠামোর বিষয়। যার মূল লক্ষ্য হলো আর্থিক শৃঙ্খলা নিশ্চিত করার মাধ্যমে দেশ ও জনগণের স্বার্থ রক্ষা করা। তাই সংস্কার হবে আইন, আন্তর্জাতিক মান ও আন্তর্জাতিক উত্তম চর্চার আলোকে। অযাচিত চাপ প্রয়োগ, লবিং কিংবা আবেগের ভিত্তিতে নয়।
লেখক: দেশি-বিদেশি বেশ কিছু কোম্পানির পরিচালকের দায়িত্ব রয়েছেন।
মাসুদ খান, চেয়ারম্যান, ইউনিলিভার কনজ্যুমার কেয়ার
লেখার মতামত লেখকের নিজস্ব অবস্থান
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: চ র ট র ড অ য ক উন ট য ন ট হ স বব দ সনদধ র
এছাড়াও পড়ুন:
নিভৃতচারী কৃষকের আর্তনাদ কি আমরা শুনছি
কৃষি এবং কৃষকই এ দেশের প্রাণ—এই ধ্রুব সত্যটি নিয়ে সংশয় নেই। কিন্তু বেদনাদায়ক বাস্তবতা হলো, মধ্যস্বত্বভোগী ও কপট ব্যবসায়ীদের কারণে কৃষকের স্বার্থ বরাবরই উপেক্ষিত। নীতিনির্ধারক ও মূলধারার রাজনীতিবিদদের নীরবতা এবং কৃষকের সমস্যা নিয়ে সম্প্রতি জনগুরুত্বপূর্ণ বক্তব্যকে ‘ট্রল’ করার মতো দুর্ভাগ্যজনক প্রবণতা আমাদের জাতীয় সংবেদনশীলতার অভাবকেই প্রকটভাবে তুলে ধরে।
করোনাকালীন ভয়াবহ সংকটে কৃষি যেভাবে খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করে অর্থনীতিকে রক্ষা করেছে, তা আমাদের ভুলে যাওয়া উচিত হবে না। অথচ এত কমিশন গঠিত হলেও, কৃষি কমিশন গঠন করা হয়নি। এর মূল কারণ সম্ভবত নিভৃতে কাজ করে যাওয়া কৃষক বা কৃষিশ্রমিকের মূল্য এই সমাজে অনেক সস্তা।
বর্তমানে কৃষি খাত নিয়ে যত আলোচনা—তা সবই যেন নিরাপদ কৃষি, বাণিজ্যিক কৃষি, কৃষিতে যান্ত্রিকীকরণ, ভ্যালু চেইন ও উৎপাদন বৃদ্ধিকেন্দ্রিক। প্রধান স্টেকহোল্ডার কৃষক ও তাঁর জীবন-জীবিকার স্বার্থ প্রায়শই থেকে যাচ্ছে অন্তরালে। অন্যান্য পেশাজীবীর মতো কৃষকের কোনো সক্রিয় সংগঠন নেই। চাষাবাদ ফেলে ঢাকা শহরে দাবি আদায়ের আন্দোলনে নামাও তাঁদের পক্ষে অসম্ভব, কারণ তাতে তাঁদের পেটে ভাত জুটবে না।
অথচ কৃষকেরা শুধু অর্থনৈতিকভাবেই নয়, শারীরিকভাবেও চরম ঝুঁকির মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। জাতীয় ক্যানসার গবেষণা ইনস্টিটিউটের তথ্য অনুযায়ী, হাসপাতালে ভর্তি হওয়া ক্যানসারে আক্রান্ত পুরুষ রোগীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক পেশায় কৃষক! মাস্ক, গ্লাভস বা রাবারের জুতা চোখে না দেখা, ছেঁড়া গামছা মুখে পেঁচিয়ে বিষাক্ত কীটনাশক স্প্রে করা ভূমিহীন মানুষটা আমাদের কাছে হয়তো ‘কৃষিশ্রমিক’, ‘কৃষক’ নন; কিন্তু খাদ্য উৎপাদনচক্রে তাঁর অবদান সবচেয়ে মৌলিক এবং তাঁর স্বাস্থ্যঝুঁকিও সবচেয়ে বেশি।
সমাজের চোখে ‘কৃষক’ বলতে যখন বিঘার পর বিঘা জমির মালিক, শিক্ষিত বাণিজ্যিক উদ্যোক্তাদের বোঝানো হচ্ছে, তখন প্রান্তিক, নিরক্ষর মানুষগুলোর অস্তিত্ব ও সংগ্রাম প্রায় অস্বীকৃত থেকে যাচ্ছে।
আবার কৃষক ও কৃষির সমস্যা শুধু অর্থনৈতিক ও স্বাস্থ্যগত নয়, এর শিকড় প্রোথিত আমাদের শিক্ষাব্যবস্থাতেও। বিশেষ করে উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে। বাণিজ্যিক কৃষিকে গুরুত্ব দিতে গিয়ে আমাদের শিক্ষায় কৃষির নৃতাত্ত্বিক ও সাংস্কৃতিক দিকগুলো প্রায় উপেক্ষিত।
কৃষকের নিবিড় জীবন ও সংস্কৃতি সম্পর্কে আমাদের নতুন প্রজন্ম প্রায়শই অন্ধকারে থাকছে। গান গাইতে গাইতে ধান কাটা, ধান লাগানো বা নবান্ন উৎসব—এসব প্রথা ও রীতিনীতি কেবল সংস্কৃতি নয়, কৃষকের জীবনের আনন্দ, দুঃখ ও শ্রমের প্রকাশ। পাঠ্যক্রমে এসবের অনুপস্থিতি কৃষি ও কৃষক সম্পর্কে নাগরিকসচেতনতা বৃদ্ধির পথে এক বড় বাধা।আমাদের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে কৃষির উৎপত্তি ও ক্রমবিকাশ নিয়ে তেমন উল্লেখযোগ্য কোনো আলোচনা বা গবেষণা নেই। কীভাবে নারীর হাত দিয়ে কৃষির সূচনা হয়েছিল—ফসলের বীজ সংগ্রহ, সংরক্ষণ, বপন ও পরিচর্যার প্রথম ধাপগুলোয় নারীর যে ঐতিহাসিক ভূমিকা ছিল, সেই গুরুত্বপূর্ণ নৃতাত্ত্বিক ও প্রত্নতাত্ত্বিক দিকগুলো পড়ানো হয় না বললেই চলে।
বাংলার কৃষিকাজে লোকায়ত জ্ঞানের অন্যতম ধারক খনার বচন প্রাসঙ্গিক হলেও আবহাওয়া, ফসল রোপণের সময়, মাটির গুণাগুণ–সম্পর্কিত হাজার বছরের পরীক্ষিত প্রথাগত প্রজ্ঞা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর পাঠ্যক্রমে স্থান পায় না। এর বদলে শুধু স্থান পায় আধুনিক প্রযুক্তি ও বাণিজ্যিকীকরণের তত্ত্ব।
ধান লাগানো থেকে শুরু করে প্রক্রিয়াকরণ, বীজ সংরক্ষণ, ফসল মাড়াই ও ঝাড়াইয়ের মতো অনেক ধাপে নারীর সরাসরি অংশগ্রহণ বাংলাদেশের কৃষিতে অপরিহার্য অনুষঙ্গ। বিভিন্ন গবেষণায় এই সত্য বারবার প্রমাণিত হয়েছে। অথচ এই বিশাল শ্রমশক্তি ও তাঁদের সমস্যা নিয়ে মূলধারার একাডেমিক আলোচনায় বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয় না। যদিও সস্তা শ্রম আর অধিকার বঞ্চনার মতো প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও কৃষিতে নারীর উপস্থিতি বাড়ছে।
কৃষকের নিবিড় জীবন ও সংস্কৃতি সম্পর্কে আমাদের নতুন প্রজন্ম প্রায়শই অন্ধকারে থাকছে। গান গাইতে গাইতে ধান কাটা, ধান লাগানো বা নবান্ন উৎসব—এসব প্রথা ও রীতিনীতি কেবল সংস্কৃতি নয়, কৃষকের জীবনের আনন্দ, দুঃখ ও শ্রমের প্রকাশ। পাঠ্যক্রমে এসবের অনুপস্থিতি কৃষি ও কৃষক সম্পর্কে নাগরিকসচেতনতা বৃদ্ধির পথে এক বড় বাধা।
কৃষির এই বহুমুখী সংকট থেকে মুক্তি পেতে হলে শুধু যান্ত্রিকীকরণ আর উৎপাদন বৃদ্ধির দিকে নজর দিলেই চলবে না। প্রয়োজন সুদূরপ্রসারী নীতিগত পরিবর্তন।
যা করা যেতে পারে:
ন্যায্যমূল্য নিশ্চিতকরণ: সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে ফসল কেনার সরকারি উদ্যোগকে আরও বিস্তৃত ও মধ্যস্বত্বভোগীর দৌরাত্ম্য কমাতে শক্তিশালী ‘ভ্যালু চেইন’ ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলা।
স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিতকরণ: প্রান্তিক কৃষক ও কৃষিশ্রমিকদের জন্য বিনা মূল্যে মানসম্পন্ন কীটনাশকপ্রতিরোধী মাস্ক, গ্লাভস এবং সুরক্ষামূলক সরঞ্জাম সরবরাহ করা।
শিক্ষায় কৃষির সাংস্কৃতিক পাঠ অন্তর্ভুক্তিকরণ: উচ্চশিক্ষা ও স্কুল পর্যায়ের পাঠ্যক্রমে কৃষির উৎপত্তি, নৃতত্ত্ব, নারীর ভূমিকা, লোকায়ত জ্ঞান (যেমন খনার বচন) এবং কৃষকের জীবন ও সংস্কৃতিকে অন্তর্ভুক্ত করে সচেতনতা বৃদ্ধি করা।
কৃষিশ্রমিকের স্বীকৃতি: নারীর কৃষিভিত্তিক শ্রমের স্বীকৃতি প্রদান করা। কৃষিশ্রমিকদের জন্য সামাজিক সুরক্ষা বেষ্টনী ও স্বাস্থ্যবিমার ব্যবস্থা করা। বিশেষ করে জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতি মোকাবিলায় আলাদা বরাদ্দ রাখা।
সর্বোপরি নীতিগত সদিচ্ছা এবং কৃষকের ন্যায্য অধিকার ও স্বাস্থ্য সুরক্ষাকে গুরুত্ব দিয়ে রাষ্ট্রীয় বিনিয়োগ বৃদ্ধিই পারে আমাদের খাদ্যনিরাপত্তার মূল ভিত্তি—নিভৃতচারী কৃষককে তাঁর প্রাপ্য সম্মান ও স্বীকৃতি দিতে। কৃষি ও কৃষক সম্পর্কে প্রত্যেক নাগরিকের সচেতনতা বৃদ্ধি এখন সময়ের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দাবি।
মো. জুবায়ের ইবনে কামাল অফিসার, জনতা ব্যাংক পিএলসি। প্রাক্তন শিক্ষার্থী, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়