রাজনৈতিক সরকারের অধীনে আগামী এক হাজার বছরেও নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না বলে দাবি করেছেন সাবেক নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল।

বৃহস্পতিবার ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমানের আদালতে এ কথা বলেন তিনি। রিমান্ড শুনানিকালে আদালতের এজলাসে নিজে ২০২৪ সালে ডামি নির্বাচন আয়োজন করেছেন বলেও স্বীকার করেন হাবিবুল আউয়াল।

আদালতে অনুমতি নিয়ে তিনি বলেন, আমার জীবনে কোনোদিন কেউ অর্থ আত্মসাৎ বা দুর্নীতির অভিযোগ আনতে পারেনি। আমি ডামি বা প্রহসনের নির্বাচনের সঙ্গে জড়িত নই। এ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য আমাকে কেউ পয়সা দেয়নি বা আমি কারও কাছ থেকে পয়সা নেয়নি।

এ সময় বিচারক মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, রিটার্নিং কর্মকর্তার যারা সহযোগী থাকেন, তারা অতীতে ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকার অধিক পাননি। আপনার সময়ে তাদের পারিশ্রমিক বহুগুণ বৃদ্ধি করে প্রায় পাঁচ লাখ টাকা করে দেওয়া হয়েছে, সেক্ষেত্রে আপনার কোনো দায়িত্ব ছিল কিনা? এবারের নির্বাচনের সময় আমি একটা জেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত বিচারক ছিলাম, অথচ আমাকে দায়িত্ব না দিয়ে অন্য একজনকে দেওয়া হয়, তারা প্রত্যেকে ৫ লাখ টাকা করে বিল তুলেছেন।

হাবিবুল আউয়াল বলেন, এত টাকা বিল পাওয়ার কথা আমার জানা নেই। একটি নির্বাচন পরিচালনার জন্য প্রায় ৮ লাখ লোক যুক্ত থাকে, তাদের কাউকে আমি চিনিও না।

বিচারক বলেন, আপনার সময় আপনি দেশ সেরা অফিসার ছিলেন। নির্বাচনে অনৈতিকতা দায় নিয়ে কেন আপনি পদত্যাগ করেননি? 

জবাবে তিনি বলেন, পদত্যাগ করলে ভালো হতো। কিন্তু রাজনৈতিক সরকারের অধীনে অতীতে কোনো নির্বাচনই সুষ্ঠু হয়নি। তখন কী নির্বাচন কমিশনাররা পদত্যাগ করেছেন। ক্ষমতার লোভ শেখ মুজিবুর রহমানও সামলাতে পারেননি।

এদিন ১০ দিনের রিমান্ড আবেদনের ওপর রাষ্ট্র ও আসামিপক্ষের শুনানি শেষে হাবিবুল আউয়ালের তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন বিচারক। দুপুর ১টা ২৫ মিনিটে আদালতের কাঠগড়ায় তোলা হয় কাজী হাবিবুল আওয়ালকে। এরপর বিচারক ১টা ৩০ মিনিটের দিকে এজলাসে আসেন। 

এরপর রাষ্ট্রপক্ষে পাবলিক প্রসিকিউটর ওমর ফারুক ফারুকী ও আসামিপক্ষের আইনজীবীরা শুনানি করেন। আদালতের অনুমতি নিয়ে কথা বলেন আসামি কাজী হাবিবুল আওয়াল। এ সময় তিনি বলেন, ‘আমি স্বীকার করেছি- আমি ডামি নির্বাচন করেছি। রাজনৈতিক সমঝোতার অভাবে এক তরফা নির্বাচন হয়েছে। তবে এখানে আমাকে পয়সা দেওয়ার কোনো প্রশ্ন আসেনি। আমার জীবনে আমি অর্থ আত্মসাৎ বা দুর্নীতি করিনি।’

এ সময় আদালত বলেন, আপনার কাছে জাতির প্রত্যাশা ছিল অনেক। কিন্তু বিতর্কমুক্ত নির্বাচন করতে পারেননি।

এ প্রসঙ্গে সাবেক এই নির্বাচন কমিশনার বলেন, বাংলাদেশের কোনো নির্বাচন বিতর্কিত হয়নি? ১৯৭২ এর ডিসেম্বরে সংবিধান রচনার তিন মাস পর ৭৩এর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে শেখ মুজিবের মতো নেতা নির্বাচনে কারচুপি করেছে। ক্ষমতার যে লোভ এটা ভয়ানক। দেশে এক হাজার বছরেও নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না। সেটা করার জন্য সংস্কার লাগবে।

আদালত বলেন, সাধারণত নির্বাচনী কর্মকর্তাদের ২০-২৫ হাজার টাকা করে ভাতা দেওয়া হতো। কিন্তু এই নির্বাচনে ৪-৫ লাখ টাকা করে দেওয়া হয়। এমনটি হওয়ার কারণ কী?

তবে এ প্রশ্নের জবাবে নিজের দায় এড়িয়ে যান কাজী হাবিবুল আওয়াল। 

রাতের ভোট করার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, যখন রাতের বেলায় ভোট হয়, তখন আমি গভীর নিদ্রায় নিমগ্ন।

এ সময় তার দীর্ঘ বক্তব্যে বিরক্তি প্রকাশ করেন পাবলিক প্রসিকিউটর ওমর ফারুক ফারুকী। এসময় হাবিবুল আওয়াল বলেন, ‘জাস্টিফাই করার সুযোগ না দিলে একটা জীবনকে মেরে ফেলেন।’

পরে পাবলিক প্রসিকিউটর বলেন, ‘এখানে সাধু সাজার সুযোগ নেই। আপনার নিজের অপরাধ ঢাকার সুযোগ নেই। অন্যরা অন্যায় করেছে এসব না বলে আপনি কী করেছেন সেটা বলেন। 

এ সময় পাশ থেকে এক আইনজীবী বলেন, ‘এতগুলো ছেলেমেয়ে মারা গেছে আপনার জন্য।’ 

এর উত্তরে হাবিবুল আওয়াল পাল্টা প্রশ্ন করেন- ‘আমার জন্য এতগুলো ছেলেমেয়ে মারা গেছে?’

এদিন রিমান্ড শুনানিকালে পাবলিক প্রসিকিউটর ওমর ফারুক ফারুকী বলেন, ‘২০২৪ সালের  নির্বাচনের আগে তিনি (আসামি) শেখ হাসিনাকে বলেন, সমস্যা নেই। আমি আপনাকে বিজয়ী ঘোষণা করে দেব। আর আপনি যে টাকা দেবেন, তা পকেটে ঢুকিয়ে নেব।’

পিপি বলেন, ‘বিভিন্ন জায়গায় নির্বাচনী কর্মকর্তাদের টাকা দেয়, এই আসামি তার হিসাব দেয়নি। এছাড়াও তিনি নির্বাচনি বরাদ্দের টাকার হিসাব পেশ করেননি এবং এ টাকাগুলো আত্মসাৎ করেছে। এ ধরনের ব্যক্তিদের শাস্তি দিতে হবে, যেন আগামীতে আর এমন জঘন্য নির্বাচন কমিশনার এ দেশে জন্মগ্রহণ না করে।’

আসামিপক্ষের আইনজীবী বলেন, ‘তিনি ৭০ বছর বয়স্ক লোক। ফ্যাস্টিস্ট হটাতে গিয়ে আমরা যেন ফ্যাসিস্ট হয়ে না যাই। আমি আসামির রিমান্ড বাতিল ও জামিন প্রার্থনা করছি।’ পরে আসামির জামিন নামঞ্জুর করে তিন দিনের রিমান্ডের আদেশ দেন বিচারক। 

এর আগে গত ২৩ জুন এ মামলায় নুরুল হুদার চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। পরে বুধবার  রাজধানীর মগবাজার থেকে হাবিবুল আউয়ালকে গ্রেপ্তার করে ডিএমপির গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি)। 

গত ২২ জুন বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে নির্বাচন কমিশনের সাংবিধানিক দায়িত্ব পালন না করে উল্টো ভয়-ভীতি দেখিয়ে জনগণের ভোট ছাড়াই নির্বাচন সম্পন্ন করার অভিযোগে মামলা করে বিএনপি। সংগঠনের জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন খান বাদী হয়ে এ মামলা করেন। 
পরবর্তীতে গত ২৫ জুন এ মামলায় নতুন করে রাষ্ট্রদ্রোহ, প্রতারণা ও অর্থ আত্মসাতের ধারা যুক্ত করা হয়। এ মামলায় শেখ হাসিনা এবং সাবেক ১৫ নির্বাচন কমিশনারসহ মোট ২৪ জনকে এজাহারনামীয় আসামি করা হয়েছে। 
 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ক জ হ ব ব ল আউয় ল হ ব ব ল আউয় ল হ ব ব ল আওয় ল র জন ত ক সরক র র কর ছ ন ব চ রক র জন য আম র জ এ সময় আপন র

এছাড়াও পড়ুন:

ব্লগার অভিজিৎ হত্যা মামলায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত ফারাবীর জামিন বহাল

ব্লগার অভিজিৎ রায় হত্যা মামলায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত শফিউর রহমান ফারাবীকে হাইকোর্টের দেওয়া অন্তর্বর্তী জামিন বহাল রয়েছে। ওই জামিন স্থগিত চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষের করা আবেদনে ‘নো অর্ডার’ দিয়েছেন আপিল বিভাগের চেম্বার আদালত। চেম্বার বিচারপতি মো. রেজাউল হক রোববার এ আদেশ দেন।

ওই মামলায় ২০২১ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি বিচারিক আদালতের দেওয়া রায়ে ফারাবীকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। দণ্ডাদেশের রায়ের বিরুদ্ধে ওই বছরই হাইকোর্টে আপিল করেন ফারাবী।

২০২২ সালের ৪ আগস্ট হাইকোর্ট আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করেন। বিচারাধীন আপিলে জামিন চেয়ে আবেদন করেন ফারাবী। এর ওপর শুনানি নিয়ে গত ৩০ জুলাই হাইকোর্ট তাঁকে অন্তর্বর্তী জামিন দেন। এই জামিন স্থগিত চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষ আবেদন করে, যা এদিন চেম্বার আদালতে শুনানির জন্য ওঠে।

আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. সাইফুদ্দিন খালেদ। ফারাবীর পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এস এম শাহজাহান, সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী মোহিনুর রহমান ও ওমর ফারুক।

পরে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এস এম শাহজাহান প্রথম আলোকে বলেন, আদালত ‘নো অর্ডার’ দিয়েছেন। তার মানে হাইকোর্ট ফারাবীকে যে জামিন দিয়েছিলেন, তা বহাল। ফারাবী ১৬৪ ধারায় কোনো স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেননি। মামলায় চারজন স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। তাঁদের কেউই ফারাবীর নাম উল্লেখ করেননি। ফারাবী প্ররোচনা দিয়েছেন—কোনো সাক্ষী তা বলেনি। এমনকি তাঁর সরাসরি কোনো সম্পৃক্ততাও পাওয়া যায়নি। ফারাবীর জামিনের পক্ষে এসব যুক্তি তুলে ধরা হয়।

২০১৫ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি অমর একুশে গ্রন্থমেলা প্রাঙ্গণ থেকে ফেরার পথে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি এলাকায় অভিজিৎ রায়কে কুপিয়ে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা। হামলায় অভিজিতের স্ত্রী রাফিদা আহমেদও গুরুতর আহত হন। এ ঘটনায় অভিজিতের বাবা অধ্যাপক অজয় রায় বাদী হয়ে রাজধানীর শাহবাগ থানায় হত্যা মামলা করেন।

মামলাটি তদন্ত করে ২০১৯ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি ছয়জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেওয়া হয়। অভিযোগপত্র আমলে নিয়ে ২০১৯ সালের ৬ আগস্ট ছয়জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন আদালত। রাষ্ট্রপক্ষ থেকে এই মামলায় ২৮ জন সাক্ষীকে আদালতে হাজির করা হয়।

আরও পড়ুনব্লগার অভিজিৎ হত্যা মামলায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত ফারাবীর জামিন৩০ জুলাই ২০২৫

এই মামলায় ২০২১ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. মজিবুর রহমান রায় দেন। রায়ে পাঁচ আসামিকে মৃত্যুদণ্ড এবং এক আসামিকে (শফিউর রহমান ফারাবী) যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। দণ্ডাদেশের রায়ের বিরুদ্ধে ওই বছরই হাইকোর্টে আপিল করেন ফারাবী।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ব্লগার অভিজিৎ হত্যা মামলায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত ফারাবীর জামিন বহাল
  • সংরক্ষিত বনাঞ্চল ও সন্নিকটের নয়টি বালুমহালের ইজারা কার্যক্রম স্থগিত
  • কুমিল্লায় সাবেক বিএনপি নেতাকে আইনজীবী হত্যা মামলায় ফাঁসানোর অভিযোগে সংবাদ সম্মেলন
  • নিজেকে ড. ইউনূস ও হাসিনার দ্বন্দ্বের বলির পাঠা বলে দাবি করলেন টিউলিপ
  • এনবিআর বিলুপ্ত করে দুটি বিভাগ করার অধ্যাদেশের বৈধতা নিয়ে রিট খারিজ
  • দণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে আসামিদের আপিলের ওপর রায় প্রদান শুরু
  • সুনামগঞ্জে সড়কের নিরাপত্তা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস জেলা সদরে স্থাপনের দাবিতে মানববন্ধন
  • আইনজীবী আজাদ হত্যা: সাবেক এমপি বাহারের বিরুদ্ধে চার্জশিট
  • চট্টগ্রামে আইনজীবী হত্যা মামলার অভিযোগপত্র নিয়ে রাষ্ট্রপক্ষের আপত্তি, শুনানি ২৫ আগস্ট
  • খুলনায় আইনজীবীর বিরুদ্ধে সম্পত্তি দখলের অভিযোগ ভাতিজার