মিথ্যা মামলা এবং এ–সংক্রান্ত গ্রেপ্তার সমাজের সব স্তরে উদ্বেগ তৈরি করেছে। নির্দোষ মানুষকে আসামি করা হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে সরকার মিথ্যা মামলা এবং এসব মামলায় গ্রেপ্তার থামাতে নতুন বিধান করছে বলে অন্তর্বর্তী সরকারের আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল জানিয়েছেন।

আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ ও জাতিসংঘের মাদক ও অপরাধসংক্রান্ত কার্যালয়ের (ইউনাইটেড নেশনস অফিস অন ড্রাগ অ্যান্ড ক্রাইম) আয়োজনে এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

মিথ্যা মামলা এবং ওই সব মামলায় গ্রেপ্তার কেন থামাতে পারছেন না, এমন প্রশ্নের মুখোমুখি হচ্ছেন বলে জানান আসিফ নজরুল। তিনি বলেন, ‘আমাকে প্রশ্ন করা হয় কেন আমি মিথ্যা মামলা বন্ধ করতে পারছি না। আমি তখন সবার কাছ থেকে একটা পরামর্শ চাই যে কীভাবে এটা থামানো যায়, সে বিষয়ে আমাকে প্রস্তাব দেন।’

সমাজের প্রতিটি স্তরে গণগ্রেপ্তার, মিথ্যা মামলা এখন বড় উদ্বেগের বিষয়ে পরিণত হয়েছে উল্লেখ করে আইন উপদেষ্টা এ বিষয়ে তাঁর পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেন। নির্দোষ মানুষদের মামলায় জড়ানো হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এসব মামলা ও গ্রেপ্তার বন্ধ করতে কিছু বিধান করছি। আপাতত সেটা প্রকাশ করছি না। অন্তত এসব মামলা যেন কমে আসে, সেই ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’

বিগত সময়ের মিথ্যা ও রাজনৈতিক উদ্দ্যেশ্যপ্রণোদিত মামলা প্রত্যাহারে শক্ত পদক্ষেপ নিয়েছেন বলেও জানান আইন উপদেষ্টা। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘প্রায় ১২ হাজার মামলা প্রত্যাহার করার সুপারিশ করা হয়েছে, যেখানে প্রায় তিন লাখ মানুষকে জড়ানো হয়েছে।’

অন্তর্বর্তী সরকার সংস্কারের যে উদ্যোগ নিয়েছে, তার বেশির ভাগ মূলত পুলিশ ও বিচার বিভাগকে ঘিরে বলে জানান আইন উপদেষ্টা। তিনি বলেন, ‘আমরা তিনটি অগ্রাধিকার ঠিক করেছি। একটি হলো অভিযুক্তদের স্বচ্ছ বিচার নিশ্চিত করা, মামলার অচলাবস্থার কারণগুলো চিহ্নিত করা এবং বিচার বিভাগের জবাবদিহি নিশ্চিত করা।’

ফৌজদারি কার্যবিধি সংশোধনের জন্য চূড়ান্ত খসড়া প্রস্তুত করা হয়েছে জানিয়ে আইন উপদেষ্টা বলেন, আগামী রোববার বা উপদেষ্টা পরিষদের পরবর্তী সভায় এটা অনুমোদন হয়ে যাবে।

অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেন, উচ্চ আদালতের সিদ্ধান্তের আলোকে ফৌজদারি কার্যবিধিতে সংশোধনী আনা হচ্ছে। এ বিষয়ে তিনি আরও বলেন, ‘আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদের সময় আইনজীবীর উপস্থিতি নিশ্চিত করা নিয়ে একটা প্রস্তাব ছিল সংস্কার কমিশন থেকে। এটা নিয়ে কিছু অংশীদারের মধ্য থেকে শক্ত আপত্তি আসছে। আপাতত আইনে এটা করার সুযোগ নেই।’

অন্তর্বর্তী সরকার ইতিমধ্যে যেসব কার্যক্রম সম্পন্ন করেছে, সেগুলো তুলে ধরে আইন উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে কিছু সংশোধনী এনেছি। একই সঙ্গে একটা প্রক্রিয়া নির্মাণ করেছি, যাতে এসব মামলার নিস্পত্তি ত্বরান্বিত করা যায়। ছেলেশিশুদের যৌন নির্যাতনকে আমরা প্রথমবারের মতো শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছি।’

এ ছাড়া গুমবিষয়ক যে আন্তর্জাতিক কনভেনশন, সেটার সঙ্গে সংগতি রেখে একটা নতুন আইনের খসড়া করার প্রক্রিয়ার মধ্যে সরকার আছে বলে জানান তিনি।

সেমিনারের দ্বিতীয় অধিবেশনে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ও বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্টের (ব্লাস্ট) অবৈতনিক নির্বাহী পরিচালক সারা হোসেন বলেন, বিনা বিচারে আটক ব্যক্তিদের সংখ্যা কমানোর ক্ষেত্রে পুলিশ, বিচার বিভাগের ভূমিকা নেওয়া উচিত। এ ক্ষেত্রে এক সংস্থা আরেক সংস্থার ওপর দোষ চাপায় জানিয়ে তিনি বলেন, ‘পুলিশ বলে আমাদের করার কিছু নাই। আদালত জামিন দেয় না। আমরা কী করব? অন্যদিকে আদালত বলে আমার ওপর চাপ আছে।’ সবাই মিলে এ জায়গাটাতে কাজ করলে একটা পথ বের হবে বলে উল্লেখ করেন সারা হোসেন।

সেমিনারে স্বাগত বক্তব্য দেন জাতিসংঘের মাদক ও অপরাধসংক্রান্ত কার্যালয়ের উপ আঞ্চলিক প্রতিনিধি সুরুচি পান্ট। সেমিনারের দ্বিতীয় অধিবেশন পরিচালনা করেন বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের সদস্য আইনজীবী তানিম হোসাইন শাওন। এ অধিবেশনে বক্তব্য দেন জাতিসংঘের মাদক ও অপরাধসংক্রান্ত কার্যালয়ের টিম লিডার অ্যানা জিডিস।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আইন উপদ ষ ট সরক র অপর ধ ন আইন

এছাড়াও পড়ুন:

ভাইকে বাঁচাতে বান্ধবীকে ফাঁসানোর অভিযোগ

পাবনার ভাঙ্গুড়ায় ঘুমন্ত অবস্থায় বান্ধবীর ছবি তুলেছিলেন ভাই। বিষয়টি নিয়ে আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার কথা জানালে ভাইকে বাঁচাতে উল্টো বান্ধবীর নামে মিথ্যা চুরির মামলা দিয়ে হয়রানির অভিযোগ উঠেছে তানিয়া হক নামের এক নারীর বিরুদ্ধে। 

এছাড়াও চুরির ঘটনার কোনো তদন্ত ছাড়াই মামলা নেওয়ারও অভিযোগ উঠেছে থানা পুলিশের বিরুদ্ধে।

মঙ্গলবার (৩০ সেপ্টেম্বর) দুপুরে পাবনা জেলা জজকোর্টের সামনে গণমাধ্যমকে এসব কথা বলেন ভুক্তভোগী নারী ইফফাত মোকাররমার আইনজীবী অ্যাডভোকেট আব্দুল্লাহ আল মামুন রাসেল। 

পাবনা সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ আখতারুজ্জামানের আদালত ভুক্তভোগী নারী ইফফাত মোকাররমা সানিমুনকে জামিন দিয়েছেন।

অ্যাডভোকেট আব্দুল্লাহ আল মামুন রাসেল বলেন, “আমার মক্কেল ইফফাত মোকাররমা দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষকতায় পেশায় নিয়োজিত। তিনি একজন সম্মানিত লোক। মামলার বাদীর সঙ্গে তার দীর্ঘদিন বন্ধুত্বের সম্পর্ক। সেই সম্পর্কের কারণে তার বান্ধবীর বাসায় গিয়েছিলেন এবং একসঙ্গে ঘোরাঘুরির পর যখন রাত্রীযাপন করছিলেন সেই সময়ে বাদীর ভাই ইফফাত মোকাররমার ছবি তুলেছিলেন। বিষয়টি টের পেয়ে তিনি তাৎক্ষণিক প্রতিবাদ জানান এবং ছবিগুলো দেখানোর জন্য অনুরোধ করেন। এ নিয়ে তাদের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। পরেরদিন সকালে আইনী পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলে ইফফাত মোকাররমা ঢাকায় চলে যান এবং সেখানে জিডি করেন। কিন্তু এই ঘটনা ধামাচাপা দিতে উল্টো ইফফাত মোকাররমার বিরুদ্ধে মিথ্যা চুরির মামলা দায়ের করেন তার বান্ধবী।”

তিনি আরো বলেন, “বাদী তানিয়া হক উল্লেখ করেছেন ২৬ লাখ টাকার স্বর্ণালঙ্কার চুরি হয়েছে যা তিনি তার শরীরে পড়ে তার বান্ধবীর সঙ্গে ঘুড়ে বেড়িয়েছিলেন। কিন্তু ওইদিনের ঘোরাঘুরির ছবিতে তার শরীরে কোনো স্বর্ণালঙ্কার ছিল না। এছাড়াও ঘটনার দুইদিনের মাথায় যেভাবে মামলা গ্রহণ করা হয়েছে তাতে বোঝা যায় কোনো তদন্ত ছাড়াই থানা কোনো পক্ষ থেকে প্রভাবিত হয়ে মামলা গ্রহণ করেছেন।”

ভুক্তভোগী নারী ইফফাত মোকাররমা বলেন, “এই মামলার নূন্যতম প্রমাণ নেই। আমি যে একজন শিক্ষক হিসেবে আমার ছাত্রদের সামনে দাঁড়াবো সেই অবস্থাও তারা আমাকে রাখেনি। আমার সন্তানসহ পুরো পরিবার সামাজিকভাবে হেয় পতিপন্ন হচ্ছে। আমি চাই ঘটনার সুষ্ঠ তদন্ত করে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হোক।”

এ বিষয়ে মামলার বাদীর তানিয়া হকের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করে ফোন রিসিভ না করায় মন্তব্য পাওয়া যায়নি।

তবে ভাঙ্গুড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শফিকুল ইসলাম বলেন, “উনি (আইনজীবী) উনার মক্কেলের জন্য এসব কথা বলতেই পারেন। উনার মক্কেলকে সুবিধা দেওয়ার জন্য এসব অভিযোগ করেছেন। কিন্তু ঘটনার তদন্ত করে এবং আইনানুগভাবেই মামলা দায়ের হয়েছে, যা এখনও তদন্ত চলছে।”

ঢাকা/শাহীন/এস

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ঋণ আদায়ে লাগবে ৩৩৩ বছর
  • ভাইকে বাঁচাতে বান্ধবীকে ফাঁসানোর অভিযোগ