ঢাকা ব্যাংকসহ অন্যান্য বাণিজ্যিক ব্যাংক বাংলাদেশ ব্যাংকের পুনঃঅর্থায়ন স্কিম ও সরকারের বিভিন্ন প্রণোদনার আওতায় কম সুদে এসএমই ঋণ দিচ্ছে। একই সঙ্গে উদ্যোক্তাদের ব্যাংকিং কাঠামো ও আর্থিক ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে সচেতন ও দক্ষ করে তুলতে বিভিন্ন উদ্যোক্তা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ চালু রয়েছে

সমকাল : ঢাকা ব্যাংক এসএমই খাতকে কতটুকু গুরুত্ব দিচ্ছে? এ খাতে আপনাদের পণ্য ও সেবা সম্পর্কে জানতে চাই।
শেখ মোহাম্মদ মারুফ : দেশের অর্থনীতির টেকসই ও অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নে এসএমই খাতের অবদান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বর্তমানে বাংলাদেশের জিডিপির ২৫ শতাংশ আসে এ খাত থেকে। পাশাপাশি ব্যাংকিং খাতের টেকসই প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করতে এসএমই অর্থায়ন একটি গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত ক্ষেত্র হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। এসএমই খাতের সম্ভাবনা বিবেচনায় রেখে ঢাকা ব্যাংক ২০১৪ সালে একটি পূর্ণাঙ্গ এসএমই ডিভিশন গঠন করে। পরে ২০২১ সালে একটি স্বতন্ত্র এমএসএমই বিজনেস ডিভিশন গঠন করে। ঢাকা ব্যাংক এসএমই উদ্যোক্তাদের জন্য সময়োপযোগী ও কার্যকর কয়েকটি সঞ্চয় ও ঋণপণ্য চালু করেছে, যার মধ্যে রয়েছে– সুক্তি চলতি হিসাব, প্রবৃদ্ধি ডিপিএস, অদ্বিতীয়া ওভারড্রাফট, অদ্বিতীয়া টার্ম লোন, স্টার্টআপ লোন ইত্যাদি। এ ছাড়া এসএমই ডিস্ট্রিবিউটর ফাইন্যান্স ও সাপ্লাই চেইন ফাইন্যান্সের জন্য পৃথক ইউনিট চালু করা হয়েছে, যা সরবরাহকারী ও পরিবেশকদের জন্য সহজ শর্তে অর্থায়নের সুযোগ সৃষ্টি করেছে। বিশেষায়িত ইউনিট ও পণ্যের মাধ্যমে ঢাকা ব্যাংক বর্তমানে দেশের অগ্রণী কয়েকটি ব্যাংকের অন্যতম হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হয়েছে।
সমকাল : এসএমই উদ্যোগের বিস্তার অর্থনীতিকে কীভাবে এগিয়ে নিতে পারে?
শেখ মোহাম্মদ মারুফ : বিশ্বব্যাপী উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলোর অভিজ্ঞতা বলছে, এসএমই খাতই অর্থনীতির ভিত্তিকে শক্তিশালী করে। চীন, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া এবং জার্মানির মতো দেশের জিডিপির উল্লেখযোগ্য অংশই আসে এই খাত থেকে। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত, শ্রীলঙ্কা ও ভুটানের ক্ষেত্রেও একই চিত্র দেখা যায়। বাংলাদেশে এসএমই খাতের সম্প্রসারণের মাধ্যমে দেশজ উৎপাদন বাড়ানো সম্ভব, যা আমদানি নির্ভরতা কমাতে সহায়ক হবে। উদাহরণস্বরূপ– টুথপিক, কটন বাড, শিশুদের খেলনা, প্রসাধনী, ফ্যাশন সামগ্রী ও কৃষিভিত্তিক অনেক পণ্যই এখনও বিদেশ থেকে আমদানি হয়। এসব পণ্যের স্থানীয় উৎপাদনের মাধ্যমে একদিকে যেমন আমদানি ব্যয় কমানো যাবে, অন্যদিকে রপ্তানি আয়ের পথও উন্মুক্ত হবে। এসএমই খাতে উদ্দীপনা তাই অর্থনীতিকে বহুগুণে চাঙ্গা করতে সক্ষম।
সমকাল : অনেক উদ্যোক্তার অভিযোগ, ব্যাংক ঋণ সহজলভ্য নয়। আপনি কী মনে করেন?
শেখ মোহাম্মদ মারুফ : ব্যাংকিং খাতের ঋণ প্রক্রিয়াকরণ একটি সুনির্দিষ্ট নিয়মনীতি ও নিয়ন্ত্রক সংস্থার নির্দেশনা অনুসরণ করে পরিচালিত হয়। বাস্তবতা হলো, অনেক এসএমই উদ্যোক্তার ব্যবসায়িক লেনদেনের যথাযথ হিসাব সংরক্ষণের অভাব, ট্রেড লাইসেন্স ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র না থাকা ইত্যাদি কারণে ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে ঋণ গ্রহণ জটিল হয়ে পড়ে। তবে ঢাকা ব্যাংকসহ অন্যান্য বাণিজ্যিক ব্যাংক বাংলাদেশ ব্যাংকের পুনঃঅর্থায়ন স্কিম ও সরকারের বিভিন্ন প্রণোদনার আওতায় কম সুদে এসএমই ঋণ দিচ্ছে। একই সঙ্গে উদ্যোক্তাদের ব্যাংকিং কাঠামো ও আর্থিক ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে সচেতন ও দক্ষ করে তুলতে বিভিন্ন উদ্যোক্তা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ চালু রয়েছে, যেখানে নারী ও তরুণ উদ্যোক্তাদের অংশগ্রহণ উৎসাহিত করা হচ্ছে।
সমকাল : এসএমই খাতকে আরও এগিয়ে নেওয়ার জন্য কোন কোন পদক্ষেপ নেওয়া উচিত?
শেখ মোহাম্মদ মারুফ : এসএমই খাতের দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়নের জন্য প্রয়োজন একটি সমন্বিত ও ফলপ্রসূ জাতীয় রোডম্যাপ। দেশের অবকাঠামো, প্রযুক্তিগত সক্ষমতা এবং দক্ষ মানবসম্পদ এখনও এসএমই খাতের পূর্ণ বিকাশে যথেষ্ট নয়। এ খাতকে এগিয়ে নিতে প্রয়োজন নতুন উদ্যোক্তা সৃষ্টি, আধুনিক প্রশিক্ষণ, উৎপাদনে প্রযুক্তির ব্যবহার, বাজারজাতকরণে সহায়তা ও নেটওয়ার্ক গঠন এবং তথ্যপ্রবাহের নিশ্চিতকরণ। এসএমই ফাউন্ডেশনের জেলা পর্যায়ে কার্যক্রম আরও শক্তিশালীকরণ এবং সম্প্রসারণ একান্ত জরুরি। আগামী অর্থবছরের জাতীয় বাজেটে এসএমই খাতকে উৎসাহিত করতে নারীদের জন্য ঋণ কোটাসহ সহজতর প্রক্রিয়া এবং ট্রেনিং ও মার্কেট লিংকেজ সুবিধা অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, যা অত্যন্ত সময়োপযোগী পদক্ষেপ।
সমকাল : নারী উদ্যোক্তাদের অংশগ্রহণ কীভাবে বাড়ানো যায়?
শেখ মোহাম্মদ মারুফ : বর্তমানে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনায় প্রতিটি ব্যাংককে তাদের এসএমই ঋণ পোর্টফোলিওর কমপক্ষে ১৫ শতাংশ নারী উদ্যোক্তার জন্য বরাদ্দ রাখতে হয়। নারী উদ্যোক্তাদের জন্য পুনঃঅর্থায়ন স্কিমে ১ শতাংশ প্রণোদনা ও ৫ শতাংশ সুদে ঋণের সুবিধা রয়েছে।
ঢাকা ব্যাংক নারী উদ্যোক্তাদের জন্য বিশেষায়িত ঋণপণ্য চালু করেছে এবং জামানত সংক্রান্ত বাধা দূর করতে গ্রুপ গ্যারান্টির আওতায় ঋণ কার্যক্রমের ওপর জোর দিচ্ছে। এ ছাড়া জেলা ও থানা পর্যায়ে নারী উদ্যোক্তাদের পণ্যের প্রচার ও বিপণনের সুবিধার্থে মেলা আয়োজন, আলোচনা সভা ও বাজার সংযোগ কার্যক্রম গ্রহণ করা যেতে পারে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তত্ত্বাবধানে ঢাকা ব্যাংক আগামী ১৮ আগস্ট থেকে এক মাসব্যাপী নতুন উদ্যোক্তা প্রশিক্ষণ কর্মসূচি চালু করছে, যার একটি বড় অংশ নারী উদ্যোক্তাদের জন্য এবং প্রশিক্ষণ-পরবর্তী অর্থায়নের সুযোগ থাকবে।
সমকাল : এসএমই খাতে ঢাকা ব্যাংকের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?
শেখ মোহাম্মদ মারুফ : ঢাকা ব্যাংক এসএমই খাতে আরও শক্তিশালী অবস্থান নিশ্চিত করতে প্রযুক্তিনির্ভর এবং গ্রাহকবান্ধব ব্যাংকিং প্রক্রিয়া চালু করছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য পরিকল্পনা হলো–     ঋণ প্রক্রিয়াকরণে সফটওয়্যার আধুনিকায়ন,     ডিস্ট্রিবিউটর ও সাপ্লাই চেইন ফাইন্যান্সে অটোমেশন, ক্লাস্টারভিত্তিক অর্থায়নের জন্য যুগোপযোগী নীতিমালা প্রণয়ন, উদ্ভাবনী এসএমই পণ্য চালু, নারী উদ্যোক্তা ও তরুণদের জন্য বিশেষায়িত প্যাকেজ। ঢাকা ব্যাংক প্রতিবছর আন্তর্জাতিক এমএসএমই দিবস উদযাপনের মাধ্যমে এসএমই উদ্যোগের প্রচার ও বিকাশে অঙ্গীকারবদ্ধ।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: শ খ ম হ ম মদ ম র ফ এসএমই খ ত র ক এসএমই প রক র য় সমক ল গ রহণ ত করত

এছাড়াও পড়ুন:

ক্ষুদ্র উদ্যোগই বাংলাদেশকে নীরবে এগিয়ে নিচ্ছে

দেশের অনেক এসএমই প্রতিষ্ঠান পণ্যের ব্র্যান্ডিং, প্যাকেজিং, ডিজিটাল মার্কেটিং, বাজারসাপেক্ষে দাম নির্ধারণসহ বিভিন্ন মৌলিক ব্যবসায়িক দক্ষতার ঘাটতিতে ভুগছে

বাংলাদেশের প্রত্যন্ত কোনো গ্রামে একটি ছোট কারখানা, যেখানে কয়েকজন নারী প্রতিদিন নিজ হাতে তৈরি করছেন পাটের ব্যাগ। শহরের গলিতে তরুণ উদ্যোক্তা তাঁর ক্ষুদ্র কফিশপে বানাচ্ছেন নতুন স্বাদের পানীয়। মফস্বলের কোনো কিশোরী তার ছোট্ট টেইলারিং শপে বসে ভবিষ্যতে কোনো একদিন নিজের একটা বুটিক ব্র্যান্ড বানানোর স্বপ্নে নোটখাতায় এঁকে চলেছে নতুন সব ডিজাইন। এমন হাজারো স্বপ্ন, হাজারো ক্ষুদ্র উদ্যোগই বাংলাদেশকে এগিয়ে নিচ্ছে নীরবে। এসব স্বপ্ন টিকিয়ে রাখতে আমাদের করণীয় কী?
আজ আন্তর্জাতিক এসএমই দিবসে আমরা যখন ক্ষুদ্র, মাঝারি ও কুটির শিল্প খাতের সম্ভাবনা নিয়ে কথা বলছি, তখন এসব উদ্যোগের টিকে থাকা এবং লাভজনকভাবে এগিয়ে যাওয়ার জন্য কেমন সহযোগিতা প্রয়োজন, তা নতুন করে ভাবার সময় এসেছে। এসএমই অর্থাৎ ক্ষুদ্র ও মাঝারিশিল্প খাত বাংলাদেশের অর্থনীতিতে ধারাবাহিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির ক্ষেত্রে অন্যতম চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করছে। শিল্প খাতের ৯০ শতাংশ কর্মসংস্থান এ খাতের সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সম্পৃক্ত। সেই সঙ্গে দেশের জিডিপিতেও ৩০ শতাংশের কাছাকাছি অবদান রেখে খাতটি বিগত বছরগুলোতে প্রমাণ করেছে, সংকট মোকাবিলা করে টিকে থাকা ও এগিয়ে চলার জন্য প্রয়োজনীয় শক্তি ও সম্ভাবনা দুটোই এর রয়েছে।
মূল্যস্ফীতি, বিদ্যুৎ ও গ্যাসের বাড়ন্ত দাম, বাজারে চাহিদার ঘাটতি এবং রাজনৈতিক অস্থিরতাসহ নানা কারণে এসএমই খাতের অনেক উদ্যোক্তাই চাপের মুখে রয়েছেন। ব্যাংক ঋণের প্রবাহ কমেছে, যার বিপরীতে নতুন বিনিয়োগ হয়েছে হাতে গোনা। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের দ্বিতীয়ার্ধে ঋণ বিতরণে প্রায় ১৩ শতাংশ পতন এরই প্রমাণ দেয়। তবে ২০২৫ সাল আমাদের জন্য আবার আশার আলো নিয়ে এসেছে।
২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে এসএমই খাতকে ঘিরে বেশ কিছু ইতিবাচক উদ্যোগের কথা জানিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদের বাজেট বক্তব্যে বলা হয়েছে, আগামী তিন অর্থবছরে দেশে অন্তত ১৫ হাজার নতুন উদ্যোক্তা তৈরি করার পরিকল্পনা রয়েছে। পাশাপাশি ২৫ হাজার উদ্যোক্তাকে দক্ষতা ও কারিগরি প্রশিক্ষণ দেওয়ার পরিকল্পনা জানান দেয়, আগামীতে দেশের এসএমই খাতে দক্ষ মানবসম্পদের অভাব কমে আসবে। বিভাগীয় শহরগুলোতে এসএমই পণ্যের প্রদর্শনী ও বিক্রয়কেন্দ্র গড়ে তোলার কথাও বলা হয়েছে। এ ধরনের উদ্যোগ এসএমই ব্যবসার প্রসার ও লাভজনকতা বাড়ার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
শুধু তাই নয়, ভবিষ্যতে দেশের ১০ হাজার এসএমই উদ্যোক্তাকে এক হাজার কোটি টাকার ঋণ সহায়তার প্রতিশ্রুতি জানিয়েছেন অর্থ উপদেষ্টা। জেলা শহরগুলোতে আঞ্চলিক এসএমই মেলার আয়োজন, নারী উদ্যোক্তাদের করপোরেট ক্রেতাদের সঙ্গে ডিজিটাল সংযোগ গঠন, কেন্দ্রীয় এসএমই তথ্যভান্ডার তৈরির পরিকল্পনাসহ অন্যান্য উদ্যোগের মধ্য দিয়ে বাস্তবভিত্তিক ও অন্তর্ভুক্তিমূলক এসএমই সহায়তা কাঠামো গড়ে তোলার প্রচেষ্টা দেখা যাচ্ছে।
তবে কেবল আর্থিক সহায়তা দিয়েই সম্ভাবনাময় খাতটি পুরোপুরি গতিশীল হতে পারবে না। দেশের অনেক এসএমই প্রতিষ্ঠান পণ্যের ব্র্যান্ডিং, প্যাকেজিং, ডিজিটাল মার্কেটিং, বাজারসাপেক্ষে দাম নির্ধারণসহ বিভিন্ন মৌলিক ব্যবসায়িক দক্ষতার ঘাটতিতে ভুগছে। ঢাকার বাইরের বেশির ভাগ উদ্যোক্তা প্রথাগত ও ডিজিটাল বিপণনের পার্থক্য জানেন না। কেমনভাবে নিজেদের উন্নত মানসম্পন্ন পণ্যকে জেলা, বিভাগ এমনকি দেশের সীমার বাইরে ক্রেতার সামনে তুলে ধরা যায়, সে বিষয়ে তাদের কোনো ধারণা নেই। ই-কমার্সের যুগেও এমন পিছিয়ে পড়া উদ্যোক্তাদের 

জন্য প্রশিক্ষণ ও পরামর্শ জরুরি। বাজেটে প্রশিক্ষণের কথা উল্লেখ থাকলেও এর বাস্তবায়নে মনোযোগ না দিলে আশানুরূপ কার্যকারিতা আসবে না।

এসএমই খাতের অবকাঠামো উন্নয়নের আলোচনায় আরও একটি বিবেচ্য বিষয় হলো, ২০১৯ সালের এসএমই নীতিমালার মেয়াদ ২০২৪ সালেই শেষ হয়ে গেছে। ‘বৈষম্যহীন টেকসই ভবিষ্যৎ বিনির্মাণে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের ক্ষমতায়ন’– এই রূপকল্প সামনে রেখে সম্প্রতি খসড়া এসএমই নীতিমালা ২০২৫ প্রণীত হয়েছে। এর মূল লক্ষ্য ২০৩০ সালের মধ্যে জিডিপিতে এসএমই খাতের অবদান ৩৫ শতাংশে উন্নীতকরণ। একটি নতুন, সময়োপযোগী ও বাস্তবমুখী নীতিমালার অধীনে আমাদের বর্তমানের চ্যালেঞ্জ ও ভবিষ্যতের সম্ভাবনা দুটিকেই সমানভাবে আমলে নিতে হবে। 

এসএমই ব্যবসা পরিচালনায় আইনি ও প্রশাসনিক শর্ত সহজ করা, কর ব্যবস্থা সহজ ও যৌক্তিক করা এবং রপ্তানিমুখী এসএমই খাতকে বিনিয়োগ, রাজস্ব ও অন্যান্য প্রণোদনা প্রদানসহ বিভিন্ন নতুন কর্মকৌশলকে আমাদের অবশ্যই সাধুবাদ জানাতে হবে। এসএমই খাতের উন্নয়নে সরকারের অঙ্গীকার বাস্তবায়নে সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী কমিটি জাতীয় এসএমই উন্নয়ন পরিষদ যেন দেশের লাখো তরুণ উদ্যোক্তাকে সহযোগিতা ও সমাধানের একটি নির্ভরযোগ্য ঠিকানা হতে পারে, সেই আশাবাদও ব্যক্ত করি।

সিএমএসএমই খাতে ঋণ প্রদানে নানা চ্যালেঞ্জ থাকলেও নিজেদের অভিজ্ঞতা, দূরদর্শিতা এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের রিফাইন্যান্সিং স্কিমের আওতায় এ খাতে ঋণসুবিধা সহজলভ্য করার চেষ্টা করে যাচ্ছে আইডিএলসি ফাইন্যান্স। একটি ‘ডিজিটালাইজড ও অ্যাসিস্টিভ’ মডেলে আমাদের এসএমই অর্থায়ন কার্যক্রম পরিচালিত হয়। উদ্যোক্তাদের প্রয়োজন অনুযায়ী রিলেশনশিপ ম্যানেজারের সহায়তা, বিনামূল্যের ডিজিটাল লোন স্টেটমেন্ট ইত্যাদি সুবিধাও দিয়ে থাকে আইডিএলসি। বাংলাদেশে আমরাই প্রথম লোন ওরিজিনেশন সিস্টেম ও ক্রেডিট স্কোরকার্ডের ব্যবহার শুরু করি, যা গ্রাহকদের জন্য অর্থায়ন প্রাপ্তির সময় উল্লেখযোগ্যভাবে কমিয়ে এনেছে। এছাড়া আমরা ২০১৬ সাল থেকে ‘আইডিএলসি এসএমই পূর্ণতা’ নামে একটি বিশেষায়িত পণ্য চালু রেখেছি, যার মাধ্যমে ইতোমধ্যে ৭ হাজারের বেশি নারী উদ্যোক্তা নিজেদের ব্যবসায়ের স্বপ্নকে বাস্তব রূপদানে পূর্ণাঙ্গ আর্থিক সহায়তা পেয়েছেন।

বাংলাদেশের এসএমই খাতের ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রয়োজন টিকে থাকার শক্তিকে সামনে এগিয়ে যাওয়ার সাহসে রূপ দেওয়ার মতো পরিবেশ ও অবকাঠামো। সেই পরিবেশ যদি তৈরি করা যায়, তাহলে ছোট প্রতিটি উদ্যোগ একদিন দেশের অর্থনীতির বড় প্রভাবক হয়ে উঠবে। ধীরে ধীরে হলেও দেশের মূল্যস্ফীতি এখন কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আসছে। সুদের হার ধীরে ধীরে স্থিতিশীল হচ্ছে, বিনিয়োগকারীদের আস্থা বাড়ছে। এখনই দরকার সম্মিলিত প্রচেষ্টা, যথাযথ সহযোগিতা ও সময়োচিত নীতির ভিত্তিতে দেশের সম্ভাবনাময় এসএমই খাতের জন্য একটি শক্ত ভিত গড়ে তোলা। 


 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ব্র্যাংক ব্যাংকের বেশির ভাগ এসএমই ঋণ জামানতবিহীন
  • আমাদের বিনিয়োগের ৩০% এসএমইতে
  • এক জায়গা থেকে সেবা চালু করা উচিত
  • এসএমই খাতের বিকাশই অর্থনীতির বিকাশ
  • অর্থনীতির প্রাণ ছোট ও মাঝারি উদ্যোগ
  • পাঁচ বছরে ১৪৪ কোটি টাকার মূলধন সংগ্রহ
  • আমরা আরও প্রযুক্তিনির্ভর ঋণ প্রক্রিয়া চালু করব
  • ক্ষুদ্র উদ্যোগই বাংলাদেশকে নীরবে এগিয়ে নিচ্ছে
  • ব্যাংক ঋণে অস্থাবর সম্পত্তিকে জামানত হিসেবে গ্রহণের তাগিদ