ইসরায়েল-ইরান সংঘাতে আপাতত যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ায় আন্তর্জাতিক দৃষ্টি আবারও গাজার দিকে ফিরছে, যেখানে প্রতিদিনই বাড়ছে ফিলিস্তিনি প্রাণহানি। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইরানে যুদ্ধবিরতির জন্য চাপ প্রয়োগ করে সফল হলেও গাজায় ইসরায়েলকে থামাতে কোনো দৃশ্যমান উদ্যোগ নিচ্ছেন না। আন্তর্জাতিক ক্রাইসিস গ্রুপের বিশ্লেষক মাইরাভ জোনসেইন বলেন, ‘ট্রাম্প চাইলে নেতানিয়াহুকে থামাতে পারেন। কিন্তু আপাতদৃষ্টিতে মনে হচ্ছে, তিনি ইসরায়েলকে গাজায় যা ইচ্ছা করার পূর্ণ ছাড় দিয়েছেন।’

এদিকে সহিংসতা আরও বেড়েছে গাজায়। গত ২৪ ঘণ্টায় ইসরায়েলি হামলায় নিহত হয়েছেন অন্তত ৯০ জন। বুধবার প্রাণ গেছে ৪৫ জনের, যাদের অনেকেই ত্রাণ সহায়তা নিতে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হন। গাজায় ইসরায়েলি অভিযানে এখন পর্যন্ত নিহত হয়েছেন ৫৬ হাজার ১৫৭ ফিলিস্তিনি।

গাজা প্রশাসনের তথ্যমতে, গত চার সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলসমর্থিত ‘গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন (জিএইচএফ)’ পরিচালিত ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রে সহায়তার জন্য গিয়ে ৫৪৯ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ৪ হাজারের বেশি। এ ছাড়া নিখোঁজ হয়েছেন ৩৯ জন। এই কেন্দ্রগুলোকে ‘মৃত্যুকেন্দ্র’ হিসেবে আখ্যা দিয়ে গাজা কর্তৃপক্ষ বলছে, ‘খাদ্যকে গণহত্যার অস্ত্রে রূপান্তরিত করেছে ইসরায়েল।’

তবে জিএইচএফ দাবি করছে, তারা এখন পর্যন্ত ৪৪ মিলিয়ন খাবার প্যাকেট সহায়তা হিসেবে বিতরণ করেছে। কিন্তু ইউনিসেফসহ অনেক মানবাধিকার সংস্থাই এই ত্রাণ কেন্দ্রগুলোতে শিশুহত্যা এবং মানবিক নীতিমালা লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলেছে। সেভ দ্য চিলড্রেন জানিয়েছে, জিএইচএফের খাদ্য বিতরণ কেন্দ্রগুলোতে হওয়া ১৯টি প্রাণঘাতী হামলার মধ্যে অন্তত ১০টিতে হতাহতদের অধিকাংশই শিশু।

জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএ জানিয়েছে, ইসরায়েলি বোমা হামলা, অবরোধ ও জ্বালানির অভাবে গাজায় প্রায় ধ্বংসের মুখে পড়েছে পানির সরবরাহ ব্যবস্থা। এমনকি পানির সংকটে পড়েছেন ত্রাণ বিতরণসহ বিভিন্ন দায়িত্বে থাকা আন্তর্জাতিক স্বেচ্ছাসেবীরাও। এর ফলে তৃষ্ণায় মৃত্যুর ঝুঁকিতে পড়েছেন হাজার হাজার গাজাবাসী।

এমন অবস্থায় যুদ্ধবিরতি প্রসঙ্গে হামাস জানিয়েছে, কাতার, মিসর ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতির চেষ্টা চললেও এখনও কোনো কার্যকর প্রস্তাব পায়নি তারা। ট্রাম্পের দাবি অনুযায়ী, যুদ্ধবিরতি ‘খুব কাছাকাছি’ হলেও বাস্তবে আলোচনায় কোনো অগ্রগতি হয়নি বলে জানিয়েছে ইসরায়েলি কর্মকর্তারা।

এএফপি জানায়, অধিকৃত পশ্চিম তীরে দখলদার ইসরায়েলি বসতি স্থাপনকারীদের সহিংসতা ক্রমেই বাড়ছে। রামাল্লার উত্তর-পূর্বে কফর মালেক গ্রামে গতকাল দখলদারদের চালানো হামলায় অন্তত তিন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া গুরুতর আহত হয়েছেন আরও কয়েকজন। স্থানীয় সূত্রে আলজাজিরা জানিয়েছে, হামলাকারীরা ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর পাহারায় ফিলিস্তিনিদের গ্রামটিতে ঢুকে নির্বিচারে গুলি ছোড়ে ও ঘরবাড়ি ভাঙচুর করে।

একই দিনে জেরিকোর কাছে আল-মালিহাত গ্রামে এবং আল-মিনিয়া গ্রামের কাছে ফিলিস্তিনি যানবাহনে পাথর নিক্ষেপ করে দখলদার ইসরায়েলিরা। এসব হামলার সময়ও ইসরায়েলি সেনাবাহিনী তাদের পাশে ছিল বলে অভিযোগ উঠেছে। মানবাধিকার সংস্থাগুলোর মতে, ইসরায়েলের এই ‘দ্বৈত ভূমিকা’ যেমন একদিকে সেনা পাহারায় দখলদারদের তাণ্ডব, অন্যদিকে ফিলিস্তিনিদের ওপর দমনপীড়ন পশ্চিম তীরের মানবাধিকার পরিস্থিতিকে আরও সংকটাপন্ন করে তুলছে। 

ইসরায়েলের জাতীয় নিরাপত্তা মন্ত্রী ইতামার বেন-গাভির আবারও গাজায় সব ধরনের মানবিক সহায়তা বন্ধের আহ্বান জানিয়েছেন। বিশ্লেষকরা বলছেন, ইরানের সঙ্গে সংঘাতে বিরতি নিশ্চিত হওয়ায় এখন ইসরায়েলের নজর আবার পুরোপুরি গাজার হত্যাযজ্ঞে ফিরেছে। 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ইসর য় ল ইসর য় ল র দখলদ র

এছাড়াও পড়ুন:

ত্রাণবাহী জাহাজে বাধা মানবতার বিরুদ্ধে ঘৃণ্যতম অপরাধ: জামায়া‌ত

গাজামুখী ত্রাণবাহী জাহাজ আটক করার ঘটনায় দখলদার ইসরাইলের ন্যক্কারজনক ভূমিকার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জা‌নি‌য়ে‌ছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। আন্তর্জাতিক পানিসীমায় ত্রাণবাহী জাহাজে বাধা দেওয়া‌কে মানবতার বিরুদ্ধে ঘৃণ্যতম অপরাধও ব‌লে‌ছে দল‌টি।

ত্রাণবাহী জাহাজগুলোর নিরাপত্তা বিধানের আহ্বান জানিয়ে বৃহস্প‌তিবার এক বিবৃ‌তি‌তে দল‌টির সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার এসব কথা বলেন।

আরো পড়ুন:

ব্রাজিল ও সুই‌ডে‌নের রাষ্ট্রদূতের স‌ঙ্গে জামায়াত আমিরের বৈঠক

নির্বাচনের প্রস্তুতিতে জামায়াত ৫ পার্সেন্ট এগিয়ে: দুদু

তি‌নি ব‌লেন, “২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে এ পর্যন্ত ইসরায়েলি আগ্রাসনে গাজায় প্রায় ৭০ হাজার নিরীহ মানুষ শহীদ হয়েছেন, যাদের অধিকাংশই নারী ও শিশু। জাতিসংঘসহ বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা সতর্ক করে বলেছে, গাজায় ইতোমধ্যেই দুর্ভিক্ষ ও রোগব্যাধি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। জরুরি ভিত্তিতে ত্রাণ পৌঁছাতে না পারলে হাজার হাজার নারী-শিশুর মৃত্যু অনিবার্য হয়ে পড়বে।”

“আমরা জেনেছি, ইসরাইল ‘গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা’র ১৩টি ত্রাণবাহী নৌযান এবং সেখানে থাকা বহু মানবাধিকার কর্মীকে আটক করেছে। অথচ এই নৌযানগুলো গাজাবাসীর জন্য খাদ্য, পানি ও ওষুধ বহন করছিল। আমি ইসরাইলের এই অমানবিক ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।”

জামায়া‌তের সে‌ক্রেটা‌রি জেনা‌রেল বলেন, “আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন অনুযায়ী মানবিক সহায়তা গন্তব্যে পৌঁছাতে কাউকে বিরত রাখা যায় না। দখলদার ইসরাইল নৌযান ও মানবাধিকার কর্মীদের আটক করে মানবতার বিরুদ্ধে জঘন্য অপরাধ করেছে। ইতোমধ্যেই এ ঘটনায় বিশ্বজুড়ে নিন্দার ঝড় উঠেছে। তুরস্কের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও ইসরাইলের এ কর্মকাণ্ডকে ‘সন্ত্রাসী হামলা’ আখ্যা দিয়ে বলেছে, এটি নিরীহ মানুষের জীবনকে মারাত্মকভাবে ঝুঁকির মধ্যে ফেলেছে।”

তিনি বলেন, “মূলত দখলদার ইসরাইল ফিলিস্তিনে জাতিগত নিধনযজ্ঞ চালাচ্ছে। আন্তর্জাতিক পানিসীমায় ত্রাণবাহী জাহাজে বাধা দিয়ে তারা চরম অপরাধ সংঘটিত করেছে। এ হামলা মানবতার বিরুদ্ধে এক ঘৃণ্যতম অপরাধ।”

তিনি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, “ক্ষুধার্ত গাজাবাসীর প্রাণ বাঁচাতে ত্রাণবাহী জাহাজগুলো যাতে নিরাপদে গাজায় পৌঁছতে পারে, সেজন্য ইসরাইলের ওপর অবিলম্বে চাপ সৃষ্টি করতে হবে। একই সাথে আটক মানবাধিকার কর্মীদের নিরাপত্তা ও নিঃশর্ত মুক্তি নিশ্চিত করতে হবে।”

ঢাকা/নঈমুদ্দীন/এসবি 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ত্রাণবাহী জাহাজে বাধা মানবতার বিরুদ্ধে ঘৃণ্যতম অপরাধ: জামায়া‌ত