দিনরাত ২৪ ঘণ্টা, সারা বছর খোলা। গোসল করলে তেল ফ্রি। কোথাও কোথাও সঙ্গে দাঁতের মাজনও সংযুক্ত। একুনে খরচ ১০ টাকা। যতক্ষণ মনে চায়, গায়ে–মাথায় পানি ঢালা যায়। আপত্তি করার কেউ নেই। গোসলের এই প্যাকেজ আছে কারওয়ান বাজারের গোসলখানায়।
রাজধানীর অন্যতম প্রধান কাঁচাবাজার হলো কারওয়ান বাজার। এখানে সকাল থেকে সারা দিন চলে খুচরা ও পাইকারি বেচাকেনা। রাত গভীর হলে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সবজি, ফলমূলসহ অনেক রকম পণ্যবোঝাই ট্রাক একের পর এক এসে থামে এখানে। এসব শ্রমজীবী ও স্বল্প আয়ের মানুষদের জন্যই কারওয়ান বাজারে গড়ে উঠেছে বেশ কিছু গোসলখানা।
কারওয়ান বাজারের উত্তর প্রান্তে ফলের আড়তগুলোর পাশে টিনের ছাউনির পাইকারি বাজারটি হাসিনা মার্কেট নামে পরিচিত। এখানে আছে কিছু পরপর পাঁচটি গোসলখানা। এক দুপুরে শুঁটকি মাছ পট্টির গোসলখানার সামনে দেখা গেল গায়ে শর্ষের তেল মেখে গোসলের প্রস্তুতি নিচ্ছেন মো.
এই গোসলখানাটি সকাল ৮টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত খোলা থাকে। ব্যবস্থাপক কলিম উদ্দিন জানালেন প্রায় ২০ বছর ধরে তিনি এখানে এই চাকরি করছেন। এখানেই বিনা খরচায় থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা। বেতন প্রতিদিন দুই শ টাকা।
ফলপট্টির পাশের গোসলখানায় গিয়ে দেখা গেল, ব্যবস্থাপকের টেবিলের পাশে ছোট আকারের একটি কাঠের তাক। সেখানে লাল, সাদা, গোলাপি ও নীল রঙের অনেক সাবান সারি করে রাখা। সাবানগুলো কাগজ দিয়ে পেঁচিয়ে রাবার দিয়ে আটকে রাখা। প্রতিটি কাগজে ফরহাদ, কবির, ইয়াছিন, সফিক এমন অনেকের নাম লেখা। ব্যবস্থাপক মো. ওলিউল্লাহ জানালেন, যাঁরা নিয়মিত গোসল করতে আসেন এই সাবানগুলো তাঁদের। আলাদাভাবে চেনার জন্য প্রতিটিতে আলাদা করে নাম লেখা আছে। এই গোসলখানা সারা বছর দিনরাত ২৪ ঘণ্টা খোলা থাকে। প্রতিদিন এখানে দুই থেকে তিন শ লোক গোসল করেন। তবে শীতকালে সংখ্যা কিছু কমে বলে জানালেন তিনি।
সারা দিন খাটুনির কাজ। ধুলাবালিতে থাকতে হয়। গোসল না করে থাকা যায় না। গা ভেজালেই শান্তি। আশপাশে গোসলের আর কোনো ব্যবস্থা নেই। কারওয়ান বাজারের এই গোসলখানাগুলোর পানি যেমন ঠান্ডা, জায়গাও পরিষ্কার। তাঁদের মতো অল্প আয়ের মানুষের জন্য এটা অনেক উপকারী।চাঁদপুরের উত্তর তরপুরচণ্ডী গ্রামের খোরশেদ আলমকারওয়ান বাজার ঘুরে দেখা গেল, কিচেন মার্কেটের উত্তর পাশের নিচের তলায়, ডিএনসিসি মার্কেটের ওপরে ও নিচের তলায়, কাঠপট্টি মার্কেটসহ এই এলাকার মার্কেটগুলোতে অন্তত ১৭টি গোসলখানা রয়েছে। এসব গোসলখানায় শৌচাগারও রয়েছে। এ ছাড়া গোসলখানা ছাড়া শুধু গণশৌচাগার আছে প্রায় ২০টির মতো।
এসব গোসলখানায় প্রতিদিন কত মানুষ গোসল করেন সঠিক বলা অসম্ভব। তবে গোসলখানার ব্যবস্থাপকদের ধারণা, প্রতিদিন গড়ে তিন হাজারের বেশি মানুষ গোসল করেন। গরমের সময় সংখ্যা বাড়ে এবং শীতে গোসলের ব্যবসায় কিছুটা মন্দা। কবে থেকে এসব গোসলখানা চলছে জানতে চাইলে এক ব্যবস্থাপক বলেন, কেউ বলে পাকিস্তান আমল থেকে, কেউ বলে ব্রিটিশ আমল। আদতে গোসলখানাগুলো কবে থেকে চলছে তার নির্দিষ্ট কোনো সময় জানা যায়নি।
চাঁদপুরের উত্তর তরপুরচণ্ডী গ্রামের খোরশেদ আলম ৫ বছর ধরে কাজ করেন ফলের আড়তে। আড়তেই থাকেন। তিনি বললেন, সারা দিন খাটুনির কাজ। ধুলাবালিতে থাকতে হয়। গোসল না করে থাকা যায় না। গা ভেজালেই শান্তি। আশপাশে গোসলের আর কোনো ব্যবস্থা নেই। কারওয়ান বাজারের এই গোসলখানাগুলোর পানি যেমন ঠান্ডা, জায়গাও পরিষ্কার। তাঁদের মতো অল্প আয়ের মানুষের জন্য এটা অনেক উপকারী।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ক রওয় ন ব জ র র র ব যবস থ র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
সাইয়ামি দুই মাঠের যোদ্ধা
অভিনয়ের পাশাপাশি ক্রীড়াঙ্গনেও সমান পারদর্শী সাইয়ামি খের। একদিকে বড় পর্দা ও ওয়েব সিরিজ, অন্যদিকে আন্তর্জাতিক ক্রীড়ামঞ্চ—দুই ক্ষেত্রেই ছাপ রাখছেন বলিউড অভিনেত্রী। ‘স্পেশাল অপস ২’-এ তাঁর সাম্প্রতিক অভিনয় যেমন প্রশংসিত হয়েছে, তেমনি খেলাধুলার ময়দানেও তিনি লিখেছেন নতুন ইতিহাস; পরপর দুই বছর জিতেছেন ‘আয়রনম্যান ৭০.৩’ ট্রায়াথলন। প্রথম ভারতীয় অভিনেত্রী হিসেবে এই কীর্তি গড়েছেন তিনি।
‘আয়রনম্যান ৭০.৩’ বিশ্বের অন্যতম কঠিন সহনশীলতা প্রতিযোগিতা। এখানে প্রতিযোগীদের ১ দশমিক ৯ কিলোমিটার সাঁতার, ৯০ কিলোমিটার সাইক্লিং এবং ২১ কিলোমিটার দৌড় সম্পন্ন করতে হয়। সব মিলিয়ে ৭০.৩ মাইল, যা জয় করতে লাগে অবিশ্বাস্য মানসিক দৃঢ়তা ও শারীরিক সহনশীলতা। ২০২৪ ও ২০২৫—দুই বছরই সফলভাবে এই কঠিন পরীক্ষা পেরিয়েছেন সাইয়ামি।
সাইয়ামি খের। ছবি: অভিনেত্রীর ইনস্টাগ্রাম থেকে