প্রহসনের নির্বাচনে অনিয়মে আরও যাঁরা জড়িত ছিলেন, তাঁদেরকে আমরা খুঁজছি: রাষ্ট্রপক্ষ
Published: 27th, June 2025 GMT
চার দিনের জিজ্ঞাসাবাদে সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদা ২০১৮ সালের নির্বাচনে ‘দিনের ভোট রাতে করার’ অভিযোগসহ বিভিন্ন বিষয়ে অনেক তথ্য দিয়েছেন বলে জানিয়েছে রাষ্ট্রপক্ষ। তাঁকে আবারও রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার পক্ষে যুক্তি তুলে ধরে রাষ্ট্রপক্ষ বলেছে, ওই প্রহসনের নির্বাচনে অনিয়মের সঙ্গে আর যাঁরা যাঁরা জড়িত ছিলেন, তাঁদের প্রত্যেককে খুঁজছেন তাঁরা। এ সম্পর্কিত তথ্য উদঘাটনের জন্য নূরুল হুদাকে আবারও জিজ্ঞাসাবাদ করা প্রয়োজন।
প্রহসনের নির্বাচন করার অভিযোগে এক বিএনপি নেতার করা মামলায় চার দিনের রিমান্ড শেষে আজ শুক্রবার দুপুরে সাবেক সিইসি নূরুল হুদাকে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে হাজির করা হয়। নতুন করে তাঁর আরও ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) শামসুজ্জোহা সরকার। তাঁর সঙ্গে আবেদনের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরেন ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের প্রধান পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ওমর ফারুক ফারুকী। তাঁদের বক্তব্যে ২০১৮ সালের নির্বাচন ঘিরে সহিংসতা ও অনিয়মের কথা উঠে আসে। এ ঘটনায় কারা কারা জড়িত ছিলেন, তাঁদের খুঁজে বের করার জন্য আরও তথ্য প্রয়োজন বলে উল্লেখ করেন তাঁরা।
এর আগে দুপুর আড়াইটার দিকে কালো গ্লাসের একটি মাইক্রোবাসে করে নূরুল হুদাকে সিএমএম আদালতে আনা হয়। প্রায় এক ঘণ্টা হাজতখানায় রাখার পর নূরুল হুদাকে হাজতখানা থেকে বের করে আনে পুলিশ। তখন দেখা যায়, নূরুল হুদার মাথায় পুলিশের হেলমেট। তার দুই হাত পেছনে, দুই হাতেই হাতকড়া। মাথা নিচু করে নূরুল হুদাকে হাজতখানার ফটক থেকে আদালতের লিফটের কাছে আনা হয়। পরে তাঁকে লিফটে করে সিএমএম আদালতের নবম তলায় এজলাস কক্ষে নেওয়া হয়। তখন সময় বিকেল ৩টা ৪০ মিনিট।
কাঠগড়ায় তোলার পর নূরুল হুদা মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে ছিলেন। তখন পুলিশের একজন কনস্টেবল তাঁর দুই হাত পিছনে নিয়ে পরিয়ে দেওয়া হাতকড়া খুলে দেন। এরপর মাথার হেলমেটটিও খুলে দেন। তখন নূরুল হুদা কাঠগড়ার লোহার রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে থাকেন।
এ সময় নূরুল হুদার আইনজীবী ওবায়দুল ইসলাম তাঁর কাছে এগিয়ে যান। তিনি কথা বলতে থাকেন। এর ১০ মিনিট পর বিকেল ৩টা ৫০ মিনিটের দিকে ম্যাজিস্ট্রেট আওলাদ হোসাইন মুহাম্মদ জুনাইদ এজলাসে আসেন।
এ সময় সাক্ষীর কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে থাকা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা শেরেবাংলা নগর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) শামসুজ্জোহা সরকার নূরুল হুদাকে রিমান্ডে নেওয়ার পক্ষে পাঁচটি কারণ একে একে তুলে ধরতে শুরু করেন।
রিমান্ডে নেওয়ার পক্ষে যেসব যুক্তি দিল পুলিশ
তদন্ত কর্মকর্তা এসআই শামসুজ্জোহা আদালতকে বলেন, ‘আদালতের নির্দেশ পাওয়ার পর নূরুল হুদাকে চার দিন রিমান্ডে নিয়ে আমি জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। ২০১৮ সালের দিনের ভোট রাতে করার নির্বাচনের অভিযোগসহ মামলা সংক্রান্ত বিষয়ে নূরুল হুদা অনেক তথ্য দিয়েছেন। নূরুল হুদার দেওয়া এসব তথ্য যাচাই-বাছাই করার জন্য তাঁকে আবারও দশ দিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা প্রয়োজন।’
তিনি বলেন, ‘নূরুল হুদা যেসব তথ্য দিয়েছেন সেসব তথ্য নথি সংক্রান্ত বিষয়। মামলার তদন্তের স্বার্থে এসব নতি উদ্ধার করা একান্ত প্রয়োজন। নথি উদ্ধার করার জন্য তাঁকে আবারও রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা দরকার।’
এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ‘নূরুল হুদা প্রধান নির্বাচন কমিশনার থাকাকালে ২০১৮ সালে একটি পাতানো নির্বাচন হয়। এটি ছিল দাপ্তরিক সংঘবদ্ধ অপরাধ। নূরুল হুদার নির্দেশে অন্যান্য অফিসের সঙ্গে যোগাযোগ করে কীভাবে তখন একটি পাতানো জাতীয় সংসদ নির্বাচন করা হয়েছে, সেই রহস্য উৎঘাটনের জন্য তাঁকে রিমান্ডে নেওয়া দরকার।’
পুলিশ কর্মকর্তা শামসুজ্জোহা বলেন, ‘মাননীয় আদালত, ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বাজেট বাস্তবায়ন সংক্রান্ত তথ্য উদঘাটন করা জরুরি। এজন্যই তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করা প্রয়োজন।’
সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদাকে আদালত থেকে হাজতখানায় নিয়ে যাচ্ছে পুলিশ। আজ শুক্রবার বিকেলে ঢাকার সিএমএম আদালত প্রাঙ্গণে.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: জ জ ঞ স ব দ কর কর মকর ত ২০১৮ স ল হ জতখ ন স এমএম র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
গোপালগঞ্জে আরো দুই মামলায় আসামি ৫৫২
আওয়ামী লীগের ‘ঢাকা লকডাউন’ কর্মসূচির ঘটনায় গোপালগঞ্জ সদর ও কাশিয়ানী থানায় সন্ত্রাস বিরোধী আইনে আরো পৃথক দুটি মামলা দায়ের করেছে পুলিশ। এ দুটি মামলায় ১৫২ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাত আরো ৪০০ জনকে আসামি করা হয়েছে। এ নিয়ে এ ঘটনায় জেলায় মোট চারটি মামলা দায়ের হলো।
শনিবার (১৫ নভেম্বর) রাতে গোপালগঞ্জ সদর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) শফিক ও কাশিয়ানী থানার উপপরিদর্শক (এসআই) জাহাঙ্গীর বাদী হয়ে সংশ্লিষ্ট থানায় এ দুটি মামলা দায়ের করেন।
গোপালগঞ্জ সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. শাহ আলম জানিয়েছেন, গত ১৩ নভেম্বর আওয়ামী লীগের ঢাকা লকডাউন কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে গোপালগঞ্জের কয়েকটি স্থানে সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালনা করে আওয়ামী লীগ ও তাদের সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা। ৬৮ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতনামা ২০০ জনসহ ২৬৮ জনকে আসামি করা হয়েছে।
অপরদিকে, কাশিয়ানী থানার থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) কামাল হোসেন জানিয়েছেন, কাশিয়ানী থানায় সন্ত্রাস বিরোধী আইনের মামলায় ৮৪ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতনামা ২০০ জনসহ মোট ২৮৪ জনকে আসামি করা হয়েছে।
এর আগে আওয়ামী লীগের ‘ঢাকা লকডাউন’ কর্মসূচির ঘটনায় গোপালগঞ্জ সদর ও কোটালীপাড়া থানায় সন্ত্রাস বিরোধী আইনে আরো পৃথক দুটি মামলা দায়ের করেছে পুলিশ। এ দুটি মামলায় ৮২ জনের নাম উল্লেখ করে ও অজ্ঞাত নামা ২৮৫ জনসহ মোট ৩৬৭ জনকে আসামি করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত এ দুই মামলায় পাঁচ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
প্রসঙ্গত, আওয়ামী লীগের ঢাকা লকডাউন কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে গোপালগঞ্জ শহরের গণপূর্ত অফিসের গাড়িতে ও সদর উপজেলার উলপুরে গ্রামীণ ব্যাংক অফিসে পেট্রোল বোমা নিক্ষেপ করে আগুন ধরিয়ে দেওয়ার ঘটনা ঘটে। এছাড়া জেলার কয়েকটি স্থানে সড়কে গাছ ফেলে যান চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হয়।
ঢাকা/বাদল/এস