সাগরে বেড়েছে পানির উচ্চতা কাজে আসছে না পুরোনো বাঁধ
Published: 27th, June 2025 GMT
কক্সবাজারের টেকনাফ উপকূলীয় অঞ্চলে সমুদ্রের পানি প্রবেশ রোধে ২০১৩ সালে নির্মাণ করা হয়েছিল ৬ মিটার উচ্চতার বেড়িবাঁধ। পরবর্তী কয়েক বছর বন্যা ও জলোচ্ছ্বাসের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগে গ্রাম ও ফসলের মাঠে আর সাগরের
পানি প্রবেশ করেনি। এখন সামান্য বৃষ্টি ও বন্যাতেই বাঁধ উপচে লোকালয়ে প্রবেশ করছে লবণাক্ত পানি। পানিবন্দি হচ্ছে লাখো মানুষ। পাশাপাশি শত শত হেক্টর ফসলের মাঠ ডুবে ক্ষতির শিকার হচ্ছেন কৃষক।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এক যুগের ব্যবধানে সমুদ্রপৃষ্ঠের পাশাপাশি উপকূলে জোয়ারের পানির উচ্চতা বেড়েছে। এ ছাড়া বন্যা ও জলোচ্ছ্বাসে আগের তুলনায় পানির উচ্চতা বেশি থাকছে ৩ থেকে ৫ ফুট। এতে পুরোনো বেড়িবাঁধ আর কাজে আসছে না। সমুদ্রের পানি প্রবেশ রোধে আরও উঁচু বাঁধ নির্মাণ করা জরুরি।
টেকনাফের মতো চট্টগ্রামের উপকূলীয় অধিকাংশ এলাকার চিত্র একই। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) চট্টগ্রাম ভূপৃষ্ঠ পানিবিজ্ঞান শাখার গবেষণায়ও এর প্রমাণ মিলেছে। চট্টগ্রামের মিরসরাই থেকে কক্সবাজারের টেকনাফ পর্যন্ত ৩০০ কিলোমিটার উপকূলে ২০২৪ সালজুড়ে এ বিষয়ে জরিপ চালানো হয়।
গবেষণায় উল্লেখ করা হয়েছে, ২০১২-১৩ সালে মিরসরাই, সীতাকুণ্ড, বাঁশখালী ও আনোয়ারা উপকূলে সাগরের পানির উচ্চতা ৬ মিটার পর্যন্ত উঠতে দেখা যেত। তবে ২০২৪ সালে এটি সাড়ে ৭ মিটার পর্যন্ত বাড়তে দেখা গেছে। একটি পয়েন্টে ৮ মিটারও পাওয়া গেছে। কক্সবাজারের টেকনাফ ও চকরিয়া উপকূলে একই ধরনের তথ্য মিলেছে। সব মিলিয়ে ১৮৩ কিলোমিটার উপকূলীয় এলাকা অধিক ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতাও ধীরে ধীরে বাড়ছে।
এই গবেষণার ফলাফলের ভিত্তিতে চট্টগ্রাম পাউবো এরই মধ্যে বেড়িবাঁধের উচ্চতায় পরিবর্তন এনেছে। আগে ৬ মিটার উচ্চতার বাঁধ দিলেও ২০২৪ সাল থেকে সাড়ে ৭ মিটার থেকে ৯ মিটার করছে পাউবো। মিরসরাই উপকূলে এরই মধ্যে ৯ মিটার উচ্চতার বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে। উচ্চতা বাড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে বড় আকৃতির টেকসই ব্লকও ব্যবহার করা হচ্ছে বাঁধ নির্মাণে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, সাগরের পানির উচ্চতার তুলনায় বাঁধ নিচু হয়ে যাওয়ায় উপকূলীয় এলাকায় এখন অল্পতেই লবণাক্ত পানি লোকালয়ে প্রবেশ করছে। এতে স্থানীয়রা দুর্ভোগ পোহানোর পাশাপাশি অর্থনৈতিক ক্ষতিরও শিকার হচ্ছে।
ভূপৃষ্ঠ পানিবিজ্ঞান সার্কেল চট্টগ্রামের প্রকৌশলী ইমরান হাসান বলেন, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার অঞ্চলে এক যুগের ব্যবধানে সাগরের পানির উচ্চতার ভারসাম্য মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত। পানির উচ্চতা ধীরে ধীরে বাড়তে থাকায় উপকূলের বিপদ বাড়ছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী (পুর) ড.
পরিবেশবিদ ও গবেষক ড. ইদ্রিস আলী বলেন, আমরা প্রকৃতির যে ক্ষতি করছি, প্রকৃতি তা আমাদের ফিরিয়ে দিচ্ছে। সাগর ও কর্ণফুলী নদীর পানি বৃদ্ধি তা আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ধ ন র ম ণ কর র উপক ল উপক ল য় ম রসর ই প রব শ
এছাড়াও পড়ুন:
২০২৪ সালে ডামি নির্বাচন হয়েছে, আদালতে স্বীকারোক্তি হাবিবুল আউয়ালের
রাজনৈতিক সরকারের অধীনে আগামী এক হাজার বছরেও নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না বলে দাবি করেছেন সাবেক নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল।
বৃহস্পতিবার ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমানের আদালতে এ কথা বলেন তিনি। রিমান্ড শুনানিকালে আদালতের এজলাসে নিজে ২০২৪ সালে ডামি নির্বাচন আয়োজন করেছেন বলেও স্বীকার করেন হাবিবুল আউয়াল।
আদালতে অনুমতি নিয়ে তিনি বলেন, আমার জীবনে কোনোদিন কেউ অর্থ আত্মসাৎ বা দুর্নীতির অভিযোগ আনতে পারেনি। আমি ডামি বা প্রহসনের নির্বাচনের সঙ্গে জড়িত নই। এ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য আমাকে কেউ পয়সা দেয়নি বা আমি কারও কাছ থেকে পয়সা নেয়নি।
এ সময় বিচারক মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, রিটার্নিং কর্মকর্তার যারা সহযোগী থাকেন, তারা অতীতে ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকার অধিক পায়নি। আপনার সময়ে তাদের পারিশ্রমিক বহুগুণ বৃদ্ধি করে প্রায় পাঁচ লাখ টাকা করে দেওয়া হয়েছে, সেক্ষেত্রে আপনার কোনো দায়িত্ব ছিল কিনা? এবারের নির্বাচনের সময় আমি একটা জেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত বিচারক ছিলাম, অথচ আমাকে দায়িত্ব না দিয়ে অন্য একজনকে দেওয়া হয়, তারা প্রত্যেকে ৫ লাখ টাকা করে বিল তুলেছেন।
হাবিবুল আউয়াল বলেন, এত টাকা বিল পাওয়ার কথা আমার জানা নেই। একটি নির্বাচন পরিচালনার জন্য প্রায় ৮ লাখ লোক যুক্ত থাকে, তাদের কাউকে আমি চিনিও না।
বিচারক বলেন, আপনার সময় আপনি দেশ সেরা অফিসার ছিলেন। নির্বাচনে অনৈতিকতা দায় নিয়ে কেন আপনি পদত্যাগ করেননি?
জবাবে তিনি বলেন, পদত্যাগ করলে ভালো হতো। কিন্তু রাজনৈতিক সরকারের অধীনে অতীতে কোনো নির্বাচনই সুষ্ঠু হয়নি। তখন কী নির্বাচন কমিশনাররা পদত্যাগ করেছেন। ক্ষমতার লোভ শেখ মুজিবুর রহমানও সামলাতে পারেননি।
এদিন ১০ দিনের রিমান্ড আবেদনের ওপর রাষ্ট্র ও আসামিপক্ষের শুনানি শেষে তার তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন বিচারক। দুপুর ১টা ২৫ মিনিটে আদালতের কাঠগড়ায় তোলা হয় কাজী হাবিবুল আওয়ালকে। এরপর বিচারক ১টা ৩০ মিনিটের দিকে এজলাসে আসেন।
এরপর রাষ্ট্রপক্ষে পাবলিক প্রসিকিউটর ওমর ফারুক ফারুকী ও আসামিপক্ষের আইনজীবীরা শুনানি করেন। আদালতের অনুমতি নিয়ে কথা বলেন আসামি কাজী হাবিবুল আওয়াল। এ সময় তিনি বলেন, ‘আমি স্বীকার করেছি- আমি ডামি নির্বাচন করেছি। রাজনৈতিক সমঝোতার অভাবে এক তরফা নির্বাচন হয়েছে। তবে এখানে আমাকে পয়সা দেওয়ার কোনো প্রশ্ন আসেনি। আমার জীবনে আমি অর্থ আত্মসাৎ বা দুর্নীতি করিনি।’
এ সময় আদালত বলেন, আপনার কাছে জাতির প্রত্যাশা ছিল অনেক। কিন্তু বিতর্কমুক্ত নির্বাচন করতে পারেননি।
এ প্রসঙ্গে সাবেক এই নির্বাচন কমিশনার বলেন, বাংলাদেশের কোনো নির্বাচন বিতর্কিত হয়নি? ১৯৭২ এর ডিসেম্বরে সংবিধান রচনার তিন মাস পর ৭৩এর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে শেখ মুজিবের মতো নেতা নির্বাচনে কারচুপি করেছে। ক্ষমতার যে লোভ এটা ভয়ানক। দেশে এক হাজার বছরেও নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না। সেটা করার জন্য সংস্কার লাগবে।
আদালত বলেন, সাধারণত নির্বাচনী কর্মকর্তাদের ২০-২৫ হাজার টাকা করে ভাতা দেওয়া হতো। কিন্তু এই নির্বাচনে ৪-৫ লাখ টাকা করে দেওয়া হয়। এমনটি হওয়ার কারণ কী?
তবে এ প্রশ্নের জবাবে নিজের দায় এড়িয়ে যান কাজী হাবিবুল আওয়াল।
রাতের ভোট করার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, যখন রাতের বেলায় ভোট হয়, তখন আমি গভীর নিদ্রায় নিমগ্ন।
এ সময় তার দীর্ঘ বক্তব্যে বিরক্তি প্রকাশ করেন পাবলিক প্রসিকিউটর ওমর ফারুক ফারুকী। এসময় হাবিবুল আওয়াল বলেন, ‘জাস্টিফাই করার সুযোগ না দিলে একটা জীবনকে মেরে ফেলেন।’
পরে পাবলিক প্রসিকিউটর বলেন, ‘এখানে সাধু সাজার সুযোগ নেই। আপনার নিজের অপরাধ ঢাকার সুযোগ নেই। অন্যরা অন্যায় করেছে এসব না বলে আপনি কী করেছেন সেটা বলেন।
এ সময় পাশ থেকে এক আইনজীবী বলেন, ‘এতগুলো ছেলেমেয়ে মারা গেছে আপনার জন্য।’
এর উত্তরে হাবিবুল আওয়াল পাল্টা প্রশ্ন করেন- ‘আমার জন্য এতগুলো ছেলেমেয়ে মারা গেছে?’
এদিন রিমান্ড শুনানিকালে পাবলিক প্রসিকিউটর ওমর ফারুক ফারুকী বলেন, ‘২০২৪ সালের নির্বাচনের আগে তিনি (আসামি) শেখ হাসিনাকে বলেন, সমস্যা নেই। আমি আপনাকে বিজয়ী ঘোষণা করে দেব। আর আপনি যে টাকা দেবেন, তা পকেটে ঢুকিয়ে নেব।’
পিপি বলেন, ‘বিভিন্ন জায়গায় নির্বাচনী কর্মকর্তাদের টাকা দেয়, এই আসামি তার হিসাব দেয়নি। এছাড়াও তিনি নির্বাচনি বরাদ্দের টাকার হিসাব পেশ করেননি এবং এ টাকাগুলো আত্মসাৎ করেছে। এ ধরনের ব্যক্তিদের শাস্তি দিতে হবে, যেন আগামীতে আর এমন জঘন্য নির্বাচন কমিশনার এ দেশে জন্মগ্রহণ না করে।’
আসামিপক্ষের আইনজীবী বলেন, ‘তিনি ৭০ বছর বয়স্ক লোক। ফ্যাস্টিস্ট হটাতে গিয়ে আমরা যেন ফ্যাসিস্ট হয়ে না যাই। আমি আসামির রিমান্ড বাতিল ও জামিন প্রার্থনা করছি।’ পরে আসামির জামিন নামঞ্জুর করে তিন দিনের রিমান্ডের আদেশ দেন বিচারক।
এর আগে গত ২৩ জুন এ মামলায় নুরুল হুদার চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। পরে বুধবার রাজধানীর মগবাজার থেকে হাবিবুল আউয়ালকে গ্রেপ্তার করে ডিএমপির গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি)।
গত ২২ জুন বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে নির্বাচন কমিশনের সাংবিধানিক দায়িত্ব পালন না করে উল্টো ভয়-ভীতি দেখিয়ে জনগণের ভোট ছাড়াই নির্বাচন সম্পন্ন করার অভিযোগে মামলা করে বিএনপি। সংগঠনের জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন খান বাদী হয়ে এ মামলা করেন।
পরবর্তীতে গত ২৫ জুন এ মামলায় নতুন করে রাষ্ট্রদ্রোহ, প্রতারণা ও অর্থ আত্মসাতের ধারা যুক্ত করা হয়। এ মামলায় শেখ হাসিনা এবং সাবেক ১৫ নির্বাচন কমিশনারসহ মোট ২৪ জনকে এজাহারনামীয় আসামি করা হয়েছে।