ইরানে মার্কিন বিমান হামলার পর থেকেই দেশটির ফর্দো ও নাতাঞ্জ ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্রগুলোর ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়। দ্য নিউইয়র্ক টাইমস ও সিএনএন মার্কিন প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা সংস্থার (ডিআইএ) একটি প্রাথমিক গোপন মূল্যায়ন প্রতিবেদন ফাঁস করে জানিয়েছে, হামলায় ক্ষয়ক্ষতির মাত্রা মাঝারি থেকে গুরুতর হতে পারে। ট্রাম্প দাবি করেছেন, ওই কেন্দ্রগুলো ‘সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস’ করে দেওয়া হয়েছে। এদিকে গতকাল শুক্রবার ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী স্বীকার করেছেন, যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলি বোমা হামলায় দেশটির পারমাণবিক স্থাপনাগুলোর ‘অত্যধিক ও গুরুতর’ ক্ষতি হয়েছে। এখন প্রশ্ন থেকেই যায়– ইরানের পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির উপযোগী মাত্রায় ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করার সক্ষমতা যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল নষ্ট করতে পেরেছে কিনা।

ইরান কী চায়: ইরানে মার্কিন হামলার পর প্রথমবার প্রকাশ্যে মুখ খুলেছেন দেশটির সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি। তিনি বলেছেন, হামলায় ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোর ‘গুরুতর কিছু হয়নি’। যুক্তরাষ্ট্রের হামলায় ক্ষয়ক্ষতি এবং ইরান পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করতে চায় কিনা, তা নিয়ে সাংঘর্ষিক দাবি ও মূল্যায়নের মধ্যেও তেহরান একটি বিষয় স্পষ্ট করেছে– তারা পারমাণবিক কর্মসূচি থেকে পিছু হটবে না।

স্থাপনাগুলো কতটা ক্ষতিগ্রস্ত: ঘটনাস্থল পরিদর্শন করার সুযোগ না থাকায় কেউই এ বিষয়ে নিশ্চিতভাবে কিছু বলতে পারছেন না। মার্কিন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স এজেন্সির (সিআইএ) পরিচালক জন র‍্যাটক্লিফ বুধবার এক বিবৃতিতে বলেছেন, ইরানের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পারমাণবিক স্থাপনা ধ্বংস হয়ে গেছে এবং সেগুলো পুনর্গঠনে কয়েক বছর লেগে যাবে।

২০১৫ সালের চুক্তি কি আবার কার্যকর সম্ভব: ২০১৫ সালে ইরানের সঙ্গে ফ্রান্স, জার্মানি, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, চীন, রাশিয়া ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের সই হওয়া ‘যৌথ সমন্বিত কর্মপরিকল্পনা’ বা জেসিপিওএ ছিল ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি ঘিরে একমাত্র সফল আন্তর্জাতিক চুক্তি। ট্রাম্প বলেছেন, তিনি ওবামার করা জেসিপিওএতে আর ফিরবেন না। কিন্তু এমন একটি নতুন চুক্তি করতে পারেন, যা মূলত জেসিপিওএর মতোই হবে। 

ইরান যদি আবার ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ শুরু করে: ‘ইরান যদি বেসামরিক পারমাণবিক কর্মসূচি চালাতে চায়, তারা সেটা চালাতে পারে, বিশ্বের অনেক দেশ যেমনটা চালায়। এ জন্য প্রয়োজনীয় উপাদান আমদানি করলেই হয়’– গত এপ্রিল মাসে পডকাস্ট ‘অনেস্টলি’তে সাংবাদিক বারি ওয়েইসকে বলেছিলেন মার্কো রুবিও। ‘কিন্তু তারা যদি নিজেরাই সমৃদ্ধকরণে (ইউরেনিয়াম) অনড় থাকে, তাহলে তারা হবে বিশ্বের একমাত্র দেশ, যাদের কোনো অস্ত্র কর্মসূচি নেই, যা সত্যিই সমস্যার’। যুক্তরাজ্যের সেন্ট অ্যান্ড্রুজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইরান-বিষয়ক ইতিহাসবিদ আলী আনসারি আলজাজিরাকে বলেন, ইরানের ভেতর থেকেই ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ বন্ধের আহ্বান উঠেছে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের হামলার পর ইরানি কর্মকর্তারা যেসব জোরাল বক্তব্য দিয়েছেন, তাতে মনে হচ্ছে, তেহরান ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কর্মসূচি পরিত্যাগ করার মতো অবস্থায় নেই।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: য ক তর ষ ট র য ক তর ষ ট র

এছাড়াও পড়ুন:

দেশে ৩০ শতাংশ শিশু খর্বাকৃতি, ওজনস্বল্পতায় ভুগছে ২১ শতাংশ

বাংলাদেশে পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের মধ্যে পুষ্টিহীনতার চিত্র এখনো উদ্বেগজনক। দেশে প্রায় ৩০ দশমিক ৭ শতাংশ শিশু খর্বাকৃতি, ৮ দশমিক ৪ শতাংশ শিশু অপুষ্টিজনিত ক্ষয়রোগে (ওয়েস্টিং) ভুগছে এবং ২১ দশমিক ৮ শতাংশ শিশু ওজনস্বল্পতায় ভুগছে। খর্বাকৃতি ও ওজনস্বল্পতার হার শহর ও গ্রামাঞ্চলের শিশুদের মধ্যে উল্লেখযোগ্যভাবে ভিন্ন।

‘বাংলাদেশে বৃহৎ পরিসরে ফুড ফর্টিফিকেশন (খাদ্য সমৃদ্ধকরণ)’ শীর্ষক এক কর্মশালার মূল প্রবন্ধে এসব তথ্য তুলে ধরেন বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের সদস্য অধ্যাপক মোহাম্মদ শোয়েব। আজ বুধবার বেলা ১১টার দিকে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) কৃষি অনুষদের ডিন কার্যালয়ের সম্মেলনকক্ষে এ কর্মশালা শুরু হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মুহাম্মদ হোসেন কেন্দ্রীয় গবেষণাগার ও আন্তর্জাতিক অলাভজনক সংস্থা গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ইমপ্রুভড নিউট্রিশনের (জিএআইএন) যৌথ উদ্যোগে কর্মশালাটি অনুষ্ঠিত হয়।

মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে অধ্যাপক মোহাম্মদ শোয়েব আরও বলেন, ফুড ফর্টিফিকেশন বা খাদ্য সমৃদ্ধকরণ হচ্ছে এমন একটি প্রক্রিয়া, যেখানে কোনো খাদ্যদ্রব্যের সঙ্গে এক বা একাধিক ভিটামিন বা খনিজ উপাদান নির্দিষ্ট পরিমাণে মিশিয়ে খাদ্যের পুষ্টিমান বৃদ্ধি করা হয়। বর্তমানে চালের ফর্টিফিকেশনে ছয়টি পুষ্টি উপাদান সংযোজনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এই পুষ্টি উপাদানগুলো হলো ভিটামিন এ, বি-১ ও বি-১২, ফলিক অ্যাসিড, আয়রন ও জিঙ্ক। এ ছাড়া ভোজ্যতেলে ভিটামিন এ সমৃদ্ধকরণের মাধ্যমে নারী ও শিশুর ভিটামিন এর ঘাটতি পূরণ করা সম্ভব।

এ সময় দেশের নারীদের অপুষ্টিজনিত অবস্থার পরিসংখ্যান তুলে ধরে মূল প্রবন্ধে বলা হয়, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যমতে, বাংলাদেশে বর্তমানে প্রজননক্ষম বয়সী (১৫ থেকে ৪৯ বছর) বিবাহিত নারীর সংখ্যা প্রায় ৩ কোটি ৮০ লাখ। এর মধ্যে প্রায় ১ কোটি ৭০ লাখ নারী পুষ্টিহীনতায় ভুগছেন। এর মধ্যে ৫০ লাখ নারী অপুষ্টির কারণে কম ওজন এবং ১ কোটি ২০ লাখ নারী অতিরিক্ত ওজন বা স্থূলতায় আক্রান্ত। অপুষ্টিজনিত সমস্যার টেকসই সমাধানের অন্যতম কার্যকর উপায় হলো ফুড ফর্টিফিকেশন অর্থাৎ খাদ্য সমৃদ্ধকরণ। তবে এটি শুরু করাটাই কেবল যথেষ্ট নয়, এর যথাযথ নিরাপত্তা নিশ্চিত করাও জরুরি। ভোক্তা পর্যায়ে পৌঁছানো পর্যন্ত খাদ্যের গুণগত মান, সঠিক ডোজ, নিরাপদ সংরক্ষণ নিশ্চিত করতে হবে।

অধ্যাপক মুহাম্মদ হোসেন কেন্দ্রীয় গবেষণাগারের পরিচালক অধ্যাপক আমির হোসেনের সভাপতিত্বে কর্মশালায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক এ কে ফজলুল হক ভূঁইয়া। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থার (সার্ক) কৃষি কেন্দ্রের পরিচালক মো. হারুনুর রশিদ এবং জিএআইএনের বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর রুদাবা খন্দকার। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অনুষদের শতাধিক শিক্ষক ও গবেষক এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

কর্মশালায় বিশ্বের অন্যান্য দেশে ফুড ফর্টিফিকেশনবিষয়ক ব্যবস্থাপনা নিয়ে প্রবন্ধ উপস্থাপন করা হয়। পাশাপাশি দেশে জাতীয় ফুড ফর্টিফিকেশন কর্মসূচির অংশ হিসেবে একটি বিশেষ কেন্দ্র স্থাপনের সম্ভাব্যতা যাচাই, কৌশলপত্র প্রণয়ন, খাদ্যমান নিয়ন্ত্রণ, বাজার তদারকি এবং দেশের চাহিদা অনুযায়ী যুগোপযোগী ফুড ফর্টিফিকেশন কর্মসূচি গ্রহণের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করেন বিশেষজ্ঞরা। এ ছাড়া ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প–উদ্যোক্তাদের উদ্বুদ্ধ করার মাধ্যমে পুষ্টিসমৃদ্ধ খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি, অপুষ্টিজনিত রোগবালাই হ্রাস এবং জনস্বাস্থ্য উন্নয়ন নিয়েও আলোচনা করা হয়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • দেশে ৩০ শতাংশ শিশু খর্বাকৃতি, ওজনস্বল্পতায় ভুগছে ২১ শতাংশ