ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির ভবিষ্যৎ কোন পথে
Published: 28th, June 2025 GMT
ইরানে মার্কিন বিমান হামলার পর থেকেই দেশটির ফর্দো ও নাতাঞ্জ ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্রগুলোর ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়। দ্য নিউইয়র্ক টাইমস ও সিএনএন মার্কিন প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা সংস্থার (ডিআইএ) একটি প্রাথমিক গোপন মূল্যায়ন প্রতিবেদন ফাঁস করে জানিয়েছে, হামলায় ক্ষয়ক্ষতির মাত্রা মাঝারি থেকে গুরুতর হতে পারে। ট্রাম্প দাবি করেছেন, ওই কেন্দ্রগুলো ‘সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস’ করে দেওয়া হয়েছে। এদিকে গতকাল শুক্রবার ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী স্বীকার করেছেন, যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলি বোমা হামলায় দেশটির পারমাণবিক স্থাপনাগুলোর ‘অত্যধিক ও গুরুতর’ ক্ষতি হয়েছে। এখন প্রশ্ন থেকেই যায়– ইরানের পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির উপযোগী মাত্রায় ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করার সক্ষমতা যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল নষ্ট করতে পেরেছে কিনা।
ইরান কী চায়: ইরানে মার্কিন হামলার পর প্রথমবার প্রকাশ্যে মুখ খুলেছেন দেশটির সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি। তিনি বলেছেন, হামলায় ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোর ‘গুরুতর কিছু হয়নি’। যুক্তরাষ্ট্রের হামলায় ক্ষয়ক্ষতি এবং ইরান পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করতে চায় কিনা, তা নিয়ে সাংঘর্ষিক দাবি ও মূল্যায়নের মধ্যেও তেহরান একটি বিষয় স্পষ্ট করেছে– তারা পারমাণবিক কর্মসূচি থেকে পিছু হটবে না।
স্থাপনাগুলো কতটা ক্ষতিগ্রস্ত: ঘটনাস্থল পরিদর্শন করার সুযোগ না থাকায় কেউই এ বিষয়ে নিশ্চিতভাবে কিছু বলতে পারছেন না। মার্কিন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স এজেন্সির (সিআইএ) পরিচালক জন র্যাটক্লিফ বুধবার এক বিবৃতিতে বলেছেন, ইরানের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পারমাণবিক স্থাপনা ধ্বংস হয়ে গেছে এবং সেগুলো পুনর্গঠনে কয়েক বছর লেগে যাবে।
২০১৫ সালের চুক্তি কি আবার কার্যকর সম্ভব: ২০১৫ সালে ইরানের সঙ্গে ফ্রান্স, জার্মানি, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, চীন, রাশিয়া ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের সই হওয়া ‘যৌথ সমন্বিত কর্মপরিকল্পনা’ বা জেসিপিওএ ছিল ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি ঘিরে একমাত্র সফল আন্তর্জাতিক চুক্তি। ট্রাম্প বলেছেন, তিনি ওবামার করা জেসিপিওএতে আর ফিরবেন না। কিন্তু এমন একটি নতুন চুক্তি করতে পারেন, যা মূলত জেসিপিওএর মতোই হবে।
ইরান যদি আবার ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ শুরু করে: ‘ইরান যদি বেসামরিক পারমাণবিক কর্মসূচি চালাতে চায়, তারা সেটা চালাতে পারে, বিশ্বের অনেক দেশ যেমনটা চালায়। এ জন্য প্রয়োজনীয় উপাদান আমদানি করলেই হয়’– গত এপ্রিল মাসে পডকাস্ট ‘অনেস্টলি’তে সাংবাদিক বারি ওয়েইসকে বলেছিলেন মার্কো রুবিও। ‘কিন্তু তারা যদি নিজেরাই সমৃদ্ধকরণে (ইউরেনিয়াম) অনড় থাকে, তাহলে তারা হবে বিশ্বের একমাত্র দেশ, যাদের কোনো অস্ত্র কর্মসূচি নেই, যা সত্যিই সমস্যার’। যুক্তরাজ্যের সেন্ট অ্যান্ড্রুজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইরান-বিষয়ক ইতিহাসবিদ আলী আনসারি আলজাজিরাকে বলেন, ইরানের ভেতর থেকেই ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ বন্ধের আহ্বান উঠেছে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের হামলার পর ইরানি কর্মকর্তারা যেসব জোরাল বক্তব্য দিয়েছেন, তাতে মনে হচ্ছে, তেহরান ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কর্মসূচি পরিত্যাগ করার মতো অবস্থায় নেই।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: য ক তর ষ ট র য ক তর ষ ট র
এছাড়াও পড়ুন:
শেষ হলো এক ছাদের নিচে ৩ খাতের প্রদর্শনী
দেশের আবাসন, নির্মাণ, পানি ও বিদ্যুৎ খাতের বিভিন্ন পণ্য নিয়ে রাজধানীর ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি বসুন্ধরায় (আইসিসিবি) আয়োজিত তিন দিনব্যাপী এক আন্তর্জাতিক প্রদর্শনী আজ শনিবার শেষ হয়েছে। এতে ২০ দেশের দুই শতাধিক প্রতিষ্ঠান এক ছাদের নিচে তিন খাতের প্রায় সব ধরনের পণ্য ও সেবা প্রদর্শন করেছে।
প্রদর্শনীটির আয়োজন করে সেমস গ্লোবাল। এতে ওয়ালটন, এসিআই, রহিমআফরোজ, ওমেরা, এসএসজিসহ দেশের শীর্ষস্থানীয় ব্র্যান্ডগুলো তাদের সর্বশেষ পণ্য ও সেবা প্রদর্শন করেছে। গত বৃহস্পতিবার শুরু হওয়া এ প্রদর্শনী প্রতিদিনই ব্যবসায়ী, গ্রাহক ও দর্শনার্থীদের মিলনমেলায় পরিণত হয় বলে জানান আয়োজকেরা।
আজ প্রদর্শনীতে গিয়ে স্টলগুলোতে শেষ মুহূর্তের ব্যস্ততা দেখা যায়। সবাই ক্রেতা–দর্শনার্থীকে নিজেদের পণ্যসেবার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছিলেন। একই সঙ্গে আগ্রহীদের নাম, মুঠোফোন নম্বর সংগ্রহ করে রাখছিলেন বিক্রয় প্রতিনিধিরা। আয়োজকেরা জানান, প্রদর্শনীতে সব মিলিয়ে পাঁচ শতাধিক বুথ ও আন্তর্জাতিক প্যাভিলিয়ন ছিল।
ওয়ালটনের স্টলে গিয়ে দেখা যায়, প্রতিষ্ঠানটি তাদের নতুন কেব্ল পণ্য প্রদর্শন করছে। এ বছরের জানুয়ারিতে কেব্লের ব্যবসায়ে আসে দেশীয় টেক ইলেকট্রনিকস প্রতিষ্ঠানটি। এখন দেশের বাজারের পাশাপাশি ৭টি দেশে কেব্ল রপ্তানি করছে বলে জানান ওয়ালটনের বিপণন কর্মকর্তা ইদ্রিস মোল্লা। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘নেপাল, ভুটান, শ্রীলঙ্কাসহ সাত দেশে আমাদের পণ্য যাচ্ছে। আমাদের পণ্যের মধ্যে এলিভেটর এবং ক্রেনে ব্যবহার করার কেব্ল রয়েছে। তা ছাড়া ফায়ার অ্যালার্ম কেব্লও আছে আমাদের।’ প্রদর্শনীতে তাদের লিফটও দেখছেন ক্রেতারা।
এসিআইয়ের স্টলে গিয়ে দেখা যায়, দেশের ভ্রমণপিপাসুদের কথা চিন্তা করে পোর্টেবল এসির প্রদর্শনী করছে প্রতিষ্ঠানটি। বিশেষ করে যাঁরা তাঁবু টাঙিয়ে ক্যাম্প করতে পছন্দ করেন, তাঁদের জন্য ৫ থেকে ১৫ ডিগ্রি তাপমাত্রায় তাঁবুর পরিবেশ ঠান্ডা এ গরম করার ব্যবস্থা থাকবে। দেড় ঘণ্টার চার্জে এটি টানা ৮ ঘণ্টা ব্যবহার করা যাবে। তবে পণ্যটি এখনো বাজারে আসেনি। তাই এর দাম সম্পর্কে কোনো তথ্য দিতে পারেননি প্রতিষ্ঠানটির নির্বাহী নাবিল মোর্শেদ। প্রথম আলোকে তিনি জানান, পণ্যটি চীনে ব্যাপক চলছে। চায়না ইকো ফ্লো কোম্পানির একক পরিবেশক হিসেবে দেশের বাজার যাচাই করার জন্য প্রদর্শনীতে রাখা হয়েছে ১৫ কেজি ওজনের যন্ত্রটি। এ ছাড়া প্রতিষ্ঠানটি চীনের তৈরি ৫০০ ওয়াটের ১ ঘণ্টা ব্যাকআপের আইপিএস প্রদর্শনীতে নিয়ে আসে। এটির দাম ৭৭ হাজার ৯০০ টাকা।
সুপার স্টার কোম্পানি সৌরচালিত সেচপাম্প প্রদর্শনীতে নিয়ে আসে। প্রতিষ্ঠানটির প্রতিনিধিরা জানান, খরচ কমে আসায় এখন কৃষিতে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পাচ্ছে এই সোলার পাম্প।
ওমেরা সোলার তাদের তৈরি সোলার প্যানেল নিয়ে আসে। ওমরা সেলারের প্রধান ডিজাইনার আমির হামজা প্রথম আলোকে জানান, এখন দেশের বাজারের পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও অস্ট্রেলিয়ায় তাদের সোলার প্যানেল রপ্তানি হচ্ছে। দেশের মধ্যে পাহাড়ি এলাকায় ছোট আকারের সোলার প্যানেল বেশি বিক্রি হচ্ছে।
প্রদর্শনীর আবাসন অংশে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান তাদের প্রকল্পগুলো নিয়ে আসে। তাদের আবাসিক ভবন ছাড়াও বিভিন্ন হোটেল এবং রিসোর্টে বিনিয়োগের জন্য ক্রেতা–দর্শনার্থীদের নানা অফার দিতে দেখা যায়। কুয়াকাটায় পাঁচ তারকা মানের হোটেল তৈরি করছে ম্যানগ্রোভ ইকো রিসোর্ট নামের একটি প্রতিষ্ঠান। ৫০ শতাংশ শেয়ারের মাধ্যমে প্রায় ৫ হাজার ইউনিটের মালিকানা বিক্রি করছে তারা। ৪ লাখ থেকে ৪০ লাখ টাকায় এই হোটেলের মালিকানা নেওয়ার অফার করা হয় প্রদর্শনীতে।
প্রদর্শনীর পানির অংশে বিভিন্ন পণ্যের সমাহার দেখা যায়। বাসাবাড়ি থেকে শুরু করে অফিস কিংবা কারখানার সুপেয় পানি বিশুদ্ধকরণের নানা প্রযুক্তি নিয়ে হাজির হয়েছিল বিভিন্ন কোম্পানি। ৫ থেকে ১৫ হাজার টাকায় বিভিন্ন মানের পানি বিশুদ্ধকরণ যন্ত্র নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানগুলো।