পুতিন কি পুরো ইউক্রেনকে রাশিয়ার অংশ করতে চান
Published: 28th, June 2025 GMT
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গত সপ্তাহে ন্যাটো সম্মেলনে ইউক্রেনকে কোনো সামরিক সহায়তার প্রতিশ্রুতি দেননি। তবে তিনি বলেছেন, ইউক্রেনের কাছে ‘প্যাট্রিয়ট আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা’ বিক্রির চেষ্টা করবেন।
ইউক্রেনের ইউরোপীয় মিত্ররা এ বছর সামরিক সহায়তা বৃদ্ধির প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। কারণ, যুক্তরাষ্ট্র সাময়িকভাবে সহায়তা বন্ধ রেখেছে। এরই মধ্যে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন আবারও বলেছেন, তিনি পুরো ইউক্রেন রাশিয়ার অংশ করতে চান।
ন্যাটো মহাসচিব মার্ক রুটে বলেছেন, এই মুহূর্তে ইউরোপ ও কানাডা ইউক্রেনকে মোট ৩ হাজার ৫০০ কোটি ডলারের সামরিক সহায়তা দেবে বলে ঘোষণা দিয়েছে। গত বছর পুরো বছরে তা ছিল প্রায় ৫ হাজার কোটি ডলার। এবার ৬ মাস পূর্ণ হওয়ার আগেই প্রায় ৩ হাজার ৫০০ কোটি ডলার পৌঁছে গেছে। কেউ কেউ বলছেন, তা ৪ হাজার কোটি ডলারের কাছাকাছি।
ন্যাটো মহাসচিব মার্ক রুটে বলেছেন, এই মুহূর্তে ইউরোপ ও কানাডা ইউক্রেনকে মোট ৩ হাজার ৫০০ কোটি ডলারের সামরিক সহায়তা দেবে বলে ঘোষণা দিয়েছে। গত বছর পুরো বছরে তা ছিল প্রায় ৫ হাজার কোটি ডলার। এবার ৬ মাস পূর্ণ হওয়ার আগেই প্রায় ৩ হাজার ৫০০ কোটি ডলার পৌঁছে গেছে।এই ইউরোপীয় সহায়তা কিছুটা হলেও ট্রাম্প প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো সহায়তা না দেওয়ার ঘাটতি পূরণ করছে।
গত এপ্রিলে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি যুক্তরাষ্ট্রের প্যাট্রিয়ট আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা কেনার আগ্রহ প্রকাশ করেন। প্রতিদিনের রুশ ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা থেকে আত্মরক্ষা করতে পারে এই প্রতিরক্ষাব্যবস্থা দরকার।
ট্রাম্প প্রশাসন এরপর কিছু অস্ত্র বিক্রি করলেও তা ছিল কেবল এফ–১৬ যুদ্ধবিমানের যন্ত্রাংশ।
হেগে অনুষ্ঠিত ন্যাটো সম্মেলনে জেলেনস্কি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে প্যাট্রিয়ট–ব্যবস্থা নিয়ে আলোচনা করেছেন বলে জানান। গত বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্প বলেন, ‘কিছু দেওয়া সম্ভব কি না, তা আমরা দেখতে পারি। সেগুলো পাওয়া খুব কঠিন। আমরাও এগুলো ব্যবহার করছি এবং ইসরায়েলকেও দিচ্ছি।’
যুদ্ধবিরতির শর্ত হিসেবে ইউক্রেনের কাছে তার মিত্রদের অস্ত্র সরবরাহ বন্ধের দাবি জানিয়েছে রাশিয়া। গত শনিবার ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভও সে কথা মনে করিয়ে দিয়েছেন।
২১ জুন টেলিগ্রামে প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি লিখেন, পুতিন এবার একেবারে খোলাখুলি বলেই দিয়েছেন, হ্যাঁ, তিনি পুরো ইউক্রেন চান। শুধু তা-ই নয়, তিনি বেলারুশ, বাল্টিক রাষ্ট্রগুলো, মলদোভা, ককেশাস এবং কাজাখস্তানের কথাও বলছেন।পুতিন যা বললেন২০ জুন সেন্ট পিটার্সবার্গে এক সম্মেলনে ভ্লাদিমির পুতিন বলেন, ‘আমি বহুবার বলেছি, রুশ ও ইউক্রেনীয়রা একই জাতি। এই অর্থে, পুরো ইউক্রেনই আমাদের।’
পুতিন আরও বলেন, ‘আমাদের একটা পুরোনো প্রবাদ আছে, যেখানে রুশ সেনা পা রাখে, সেটা আমাদের হয়ে যায়।’
পুতিনের এই বক্তব্যের উত্তরে ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আন্দ্রেই সিবিহা বলেন, যেখানে রুশ সেনা যায়, সেখানে শুধু মৃত্যু, ধ্বংস আর নরক নেমে আসে।
২১ জুন টেলিগ্রামে প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি লেখেন, পুতিন এবার একেবারে খোলাখুলি বলেই দিয়েছেন, হ্যাঁ, তিনি পুরো ইউক্রেন চান। শুধু তা-ই নয়, তিনি বেলারুশ, বাল্টিক রাষ্ট্রগুলো, মলদোভা, ককেশাস এবং কাজাখস্তানের কথাও বলছেন।
জার্মানির সামরিক কর্মকর্তারাও পুতিনের সম্প্রসারণবাদ নিয়ে একমত। সম্প্রতি ফাঁস হওয়া এক কৌশলপত্রে বলা হয়, রাশিয়া ন্যাটোর বিরুদ্ধে বড় ধরনের যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছে এবং চলতি দশকের শেষ নাগাদ সে লক্ষ্য পূরণের চেষ্টায় আছে।
জার্মান চ্যান্সেলর ফ্রিডরিখ মের্ৎস বলেন, ‘আমরা অনেক দিন ধরেই বাল্টিক রাষ্ট্রগুলোর বিষয়ে রাশিয়ার সতর্কবার্তা উপেক্ষা করেছি। এখন বুঝতে পেরেছি, এটা আমাদের ভুল ছিল। এ উপলব্ধি থেকে আর ফেরার উপায় নেই। বিশ্ব আর আগের মতো শান্তিতে ফিরে যাবে না।’
এ কারণে জার্মানি ও অন্য ইউরোপীয় ন্যাটো সদস্যরা সিদ্ধান্ত নিয়েছে, ২০৩৫ সালের মধ্যে তারা মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ৫ শতাংশ প্রতিরক্ষা খাতে ব্যয় করবে।
এর মধ্যে ১ দশমিক ৫ শতাংশ ব্যয় হবে দ্বৈত ব্যবহারযোগ্য অবকাঠামো, জরুরি স্বাস্থ্যসেবা, সাইবার সুরক্ষা ও নাগরিক সুরক্ষাব্যবস্থায়।
ট্রাম্পের অবস্থানপুতিনের প্রতি আগে সহানুভূতিশীল মনোভাব দেখানো ট্রাম্প এবার কিছুটা ভিন্ন সুরে বলেন, ‘আমি মনে করি, তিনি একজন বিভ্রান্ত মানুষ। আমি খুব অবাক হয়েছি। ভাবতাম, এই যুদ্ধ সহজেই মিটে যাবে। এখন মনে হচ্ছে, পুতিনকেই এই যুদ্ধ বন্ধ করতে হবে।’
ট্রাম্প দ্বিতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রথম দিকে বলেছিলেন, ইউক্রেনকেই যুদ্ধ থামানোর দায়িত্ব নিতে হবে।
মাঠে যুদ্ধইউক্রেনের সেনাবাহিনীর দাবি, ন্যাটো সম্মেলনের সপ্তাহজুড়ে রাশিয়া প্রায় প্রতিদিন ২০০ বার করে আক্রমণ চালিয়েছে।
জেলেনস্কি গত শনিবার জানান, ইউক্রেনে এখন ৬ লাখ ৯৫ হাজার রুশ সেনা রয়েছে। আর সুমি এলাকায় নতুন ফ্রন্ট তৈরি করতে আরও ৫২ হাজার সেনা মোতায়েনের চেষ্টা চালাচ্ছে।
জেলেনস্কি বলেন, ‘এই সপ্তাহে তারা সুমির দিকে ২০০ মিটার এগিয়েছিল। আমরা আবার ২০০ থেকে ৪০০ মিটার পেছনে ঠেলে দিয়েছি।’
পুতিনের প্রতি আগে সহানুভূতিশীল মনোভাব দেখানো ট্রাম্প এবার কিছুটা ভিন্ন সুরে বলেন, ‘আমি মনে করি, তিনি একজন বিভ্রান্ত মানুষ। আমি খুব অবাক হয়েছি, ভাবতাম এই যুদ্ধ সহজেই মিটে যাবে। এখন মনে হচ্ছে, পুতিনকেই এই যুদ্ধ বন্ধ করতে হবে।’আকাশ থেকে হামলারাশিয়া ইউক্রেনের সাধারণ মানুষকে ভীত করে তোলার উদ্দেশ্যে নিয়মিত ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। ১৯ জুন কিয়েভে রুশ হামলায় ৩০ জন নিহত ও ১৭২ জন আহত হন।
জেলেনস্কি বলেন, ‘আমি কিয়েভের রুশ ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত একটি বাড়িতে গিয়েছিলাম। সাধারণ একটি অ্যাপার্টমেন্ট বিল্ডিং, ক্ষেপণাস্ত্রটি সব তলা ভেদ করে বেজমেন্ট পর্যন্ত চলে গেছে। মাত্র একটি হামলাতেই ২৩ জন মারা গেছেন।’
জেলেনস্কি বলেন, এ হামলার কোনো সামরিক উদ্দেশ্য ছিল না। রাশিয়ার জন্য এটা কোনো লাভ বয়ে আনেনি।
রাশিয়া একই রাতে ওদেসা, খারকিভ ও আশপাশের এলাকায় ২০টির বেশি ড্রোন হামলা চালিয়েছে। ওদেসায় চারতলা একটি ভবনে আগুন ধরে যায়, ভবনের একাংশ ভেঙে পড়ে। এতে ফায়ার সার্ভিসের তিন কর্মী আহত হন।
গত সোমবার কিয়েভে ড্রোন হামলায় অন্তত সাতজন নিহত হন। জেলেনস্কি বলেন, ‘মোট ৩৫২টি ড্রোন ও ১৬টি ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হয়েছিল। এর মধ্যে উত্তর কোরিয়ার তৈরি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রও ছিল।’
গত মঙ্গলবার নিপ্রোপেত্রোভস্ক অঞ্চলে রাশিয়ার ড্রোন হামলায় ২০ জন নিহত ও প্রায় ৩০০ জন আহত হন।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ৩ হ জ র ৫০০ ক ট ইউক র ন র এই য দ ধ আম দ র বল ছ ন ইউর প
এছাড়াও পড়ুন:
নিভৃতচারী কৃষকের আর্তনাদ কি আমরা শুনছি
কৃষি এবং কৃষকই এ দেশের প্রাণ—এই ধ্রুব সত্যটি নিয়ে সংশয় নেই। কিন্তু বেদনাদায়ক বাস্তবতা হলো, মধ্যস্বত্বভোগী ও কপট ব্যবসায়ীদের কারণে কৃষকের স্বার্থ বরাবরই উপেক্ষিত। নীতিনির্ধারক ও মূলধারার রাজনীতিবিদদের নীরবতা এবং কৃষকের সমস্যা নিয়ে সম্প্রতি জনগুরুত্বপূর্ণ বক্তব্যকে ‘ট্রল’ করার মতো দুর্ভাগ্যজনক প্রবণতা আমাদের জাতীয় সংবেদনশীলতার অভাবকেই প্রকটভাবে তুলে ধরে।
করোনাকালীন ভয়াবহ সংকটে কৃষি যেভাবে খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করে অর্থনীতিকে রক্ষা করেছে, তা আমাদের ভুলে যাওয়া উচিত হবে না। অথচ এত কমিশন গঠিত হলেও, কৃষি কমিশন গঠন করা হয়নি। এর মূল কারণ সম্ভবত নিভৃতে কাজ করে যাওয়া কৃষক বা কৃষিশ্রমিকের মূল্য এই সমাজে অনেক সস্তা।
বর্তমানে কৃষি খাত নিয়ে যত আলোচনা—তা সবই যেন নিরাপদ কৃষি, বাণিজ্যিক কৃষি, কৃষিতে যান্ত্রিকীকরণ, ভ্যালু চেইন ও উৎপাদন বৃদ্ধিকেন্দ্রিক। প্রধান স্টেকহোল্ডার কৃষক ও তাঁর জীবন-জীবিকার স্বার্থ প্রায়শই থেকে যাচ্ছে অন্তরালে। অন্যান্য পেশাজীবীর মতো কৃষকের কোনো সক্রিয় সংগঠন নেই। চাষাবাদ ফেলে ঢাকা শহরে দাবি আদায়ের আন্দোলনে নামাও তাঁদের পক্ষে অসম্ভব, কারণ তাতে তাঁদের পেটে ভাত জুটবে না।
অথচ কৃষকেরা শুধু অর্থনৈতিকভাবেই নয়, শারীরিকভাবেও চরম ঝুঁকির মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। জাতীয় ক্যানসার গবেষণা ইনস্টিটিউটের তথ্য অনুযায়ী, হাসপাতালে ভর্তি হওয়া ক্যানসারে আক্রান্ত পুরুষ রোগীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক পেশায় কৃষক! মাস্ক, গ্লাভস বা রাবারের জুতা চোখে না দেখা, ছেঁড়া গামছা মুখে পেঁচিয়ে বিষাক্ত কীটনাশক স্প্রে করা ভূমিহীন মানুষটা আমাদের কাছে হয়তো ‘কৃষিশ্রমিক’, ‘কৃষক’ নন; কিন্তু খাদ্য উৎপাদনচক্রে তাঁর অবদান সবচেয়ে মৌলিক এবং তাঁর স্বাস্থ্যঝুঁকিও সবচেয়ে বেশি।
সমাজের চোখে ‘কৃষক’ বলতে যখন বিঘার পর বিঘা জমির মালিক, শিক্ষিত বাণিজ্যিক উদ্যোক্তাদের বোঝানো হচ্ছে, তখন প্রান্তিক, নিরক্ষর মানুষগুলোর অস্তিত্ব ও সংগ্রাম প্রায় অস্বীকৃত থেকে যাচ্ছে।
আবার কৃষক ও কৃষির সমস্যা শুধু অর্থনৈতিক ও স্বাস্থ্যগত নয়, এর শিকড় প্রোথিত আমাদের শিক্ষাব্যবস্থাতেও। বিশেষ করে উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে। বাণিজ্যিক কৃষিকে গুরুত্ব দিতে গিয়ে আমাদের শিক্ষায় কৃষির নৃতাত্ত্বিক ও সাংস্কৃতিক দিকগুলো প্রায় উপেক্ষিত।
কৃষকের নিবিড় জীবন ও সংস্কৃতি সম্পর্কে আমাদের নতুন প্রজন্ম প্রায়শই অন্ধকারে থাকছে। গান গাইতে গাইতে ধান কাটা, ধান লাগানো বা নবান্ন উৎসব—এসব প্রথা ও রীতিনীতি কেবল সংস্কৃতি নয়, কৃষকের জীবনের আনন্দ, দুঃখ ও শ্রমের প্রকাশ। পাঠ্যক্রমে এসবের অনুপস্থিতি কৃষি ও কৃষক সম্পর্কে নাগরিকসচেতনতা বৃদ্ধির পথে এক বড় বাধা।আমাদের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে কৃষির উৎপত্তি ও ক্রমবিকাশ নিয়ে তেমন উল্লেখযোগ্য কোনো আলোচনা বা গবেষণা নেই। কীভাবে নারীর হাত দিয়ে কৃষির সূচনা হয়েছিল—ফসলের বীজ সংগ্রহ, সংরক্ষণ, বপন ও পরিচর্যার প্রথম ধাপগুলোয় নারীর যে ঐতিহাসিক ভূমিকা ছিল, সেই গুরুত্বপূর্ণ নৃতাত্ত্বিক ও প্রত্নতাত্ত্বিক দিকগুলো পড়ানো হয় না বললেই চলে।
বাংলার কৃষিকাজে লোকায়ত জ্ঞানের অন্যতম ধারক খনার বচন প্রাসঙ্গিক হলেও আবহাওয়া, ফসল রোপণের সময়, মাটির গুণাগুণ–সম্পর্কিত হাজার বছরের পরীক্ষিত প্রথাগত প্রজ্ঞা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর পাঠ্যক্রমে স্থান পায় না। এর বদলে শুধু স্থান পায় আধুনিক প্রযুক্তি ও বাণিজ্যিকীকরণের তত্ত্ব।
ধান লাগানো থেকে শুরু করে প্রক্রিয়াকরণ, বীজ সংরক্ষণ, ফসল মাড়াই ও ঝাড়াইয়ের মতো অনেক ধাপে নারীর সরাসরি অংশগ্রহণ বাংলাদেশের কৃষিতে অপরিহার্য অনুষঙ্গ। বিভিন্ন গবেষণায় এই সত্য বারবার প্রমাণিত হয়েছে। অথচ এই বিশাল শ্রমশক্তি ও তাঁদের সমস্যা নিয়ে মূলধারার একাডেমিক আলোচনায় বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয় না। যদিও সস্তা শ্রম আর অধিকার বঞ্চনার মতো প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও কৃষিতে নারীর উপস্থিতি বাড়ছে।
কৃষকের নিবিড় জীবন ও সংস্কৃতি সম্পর্কে আমাদের নতুন প্রজন্ম প্রায়শই অন্ধকারে থাকছে। গান গাইতে গাইতে ধান কাটা, ধান লাগানো বা নবান্ন উৎসব—এসব প্রথা ও রীতিনীতি কেবল সংস্কৃতি নয়, কৃষকের জীবনের আনন্দ, দুঃখ ও শ্রমের প্রকাশ। পাঠ্যক্রমে এসবের অনুপস্থিতি কৃষি ও কৃষক সম্পর্কে নাগরিকসচেতনতা বৃদ্ধির পথে এক বড় বাধা।
কৃষির এই বহুমুখী সংকট থেকে মুক্তি পেতে হলে শুধু যান্ত্রিকীকরণ আর উৎপাদন বৃদ্ধির দিকে নজর দিলেই চলবে না। প্রয়োজন সুদূরপ্রসারী নীতিগত পরিবর্তন।
যা করা যেতে পারে:
ন্যায্যমূল্য নিশ্চিতকরণ: সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে ফসল কেনার সরকারি উদ্যোগকে আরও বিস্তৃত ও মধ্যস্বত্বভোগীর দৌরাত্ম্য কমাতে শক্তিশালী ‘ভ্যালু চেইন’ ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলা।
স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিতকরণ: প্রান্তিক কৃষক ও কৃষিশ্রমিকদের জন্য বিনা মূল্যে মানসম্পন্ন কীটনাশকপ্রতিরোধী মাস্ক, গ্লাভস এবং সুরক্ষামূলক সরঞ্জাম সরবরাহ করা।
শিক্ষায় কৃষির সাংস্কৃতিক পাঠ অন্তর্ভুক্তিকরণ: উচ্চশিক্ষা ও স্কুল পর্যায়ের পাঠ্যক্রমে কৃষির উৎপত্তি, নৃতত্ত্ব, নারীর ভূমিকা, লোকায়ত জ্ঞান (যেমন খনার বচন) এবং কৃষকের জীবন ও সংস্কৃতিকে অন্তর্ভুক্ত করে সচেতনতা বৃদ্ধি করা।
কৃষিশ্রমিকের স্বীকৃতি: নারীর কৃষিভিত্তিক শ্রমের স্বীকৃতি প্রদান করা। কৃষিশ্রমিকদের জন্য সামাজিক সুরক্ষা বেষ্টনী ও স্বাস্থ্যবিমার ব্যবস্থা করা। বিশেষ করে জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতি মোকাবিলায় আলাদা বরাদ্দ রাখা।
সর্বোপরি নীতিগত সদিচ্ছা এবং কৃষকের ন্যায্য অধিকার ও স্বাস্থ্য সুরক্ষাকে গুরুত্ব দিয়ে রাষ্ট্রীয় বিনিয়োগ বৃদ্ধিই পারে আমাদের খাদ্যনিরাপত্তার মূল ভিত্তি—নিভৃতচারী কৃষককে তাঁর প্রাপ্য সম্মান ও স্বীকৃতি দিতে। কৃষি ও কৃষক সম্পর্কে প্রত্যেক নাগরিকের সচেতনতা বৃদ্ধি এখন সময়ের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দাবি।
মো. জুবায়ের ইবনে কামাল অফিসার, জনতা ব্যাংক পিএলসি। প্রাক্তন শিক্ষার্থী, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়