ভারতের সঙ্গে ‘অনেক বড়’ চুক্তি হচ্ছে বলে জানালেন ডোনাল্ড ট্রাম্প
Published: 29th, June 2025 GMT
ভারতের সঙ্গে ‘অনেক বড়’ বাণিজ্য চুক্তি হতে যাচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। অর্থাৎ দীর্ঘ প্রতীক্ষিত এই দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য চুক্তির আলোচনায় উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন তিনি।
‘আমরা দারুণ কিছু চুক্তি করছি। এর মধ্যে একটি সম্ভবত ভারতের সঙ্গে অনেক বড় চুক্তি, আমরা ভারতের বাজার খুলে দিতে যাচ্ছি।’হোয়াইট হাউসে রিপাবলিকানদের কর ও ব্যয় হ্রাস আইন পাসের প্রচারণায় সম্প্রতি এ কথা বলেন ট্রাম্প। খবর হিন্দুস্তান টাইমসের
সেদিন ডোনাল্ড ট্রাম্প আরও বলেন, ‘চীনের সঙ্গে চুক্তি করে আমরা সে দেশের বাজার খুলতে যাচ্ছি; যেটা আগে কখনোই সম্ভব ছিল না, এখন তা বাস্তবায়িত হচ্ছে। প্রতিটি দেশের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক ভালো। সব দেশ এখন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চুক্তি করতে চায়।’
ট্রাম্প বলেন, কয়েক মাস আগেও সাংবাদিকেরা বলেছিলেন, কোনো গুরুত্বপূর্ণ দেশের সঙ্গে চুক্তি হচ্ছে কি। এর জবাবে ট্রাম্পের ভাষ্য, ‘চীনের সঙ্গে গতকালই চুক্তি হলো। এখন আমরা সবার সঙ্গে চুক্তি করছি না, কিছু দেশকে কেবল চিঠি পাঠিয়ে ধন্যবাদ দিয়ে বলেছি, আপনাদের ওপর ২৫ শতাংশ, ৩৫ শতাংশ ও এমনকি ৪৫ শতাংশ শুল্ক আরোপিত হতে পারে। এটা সহজ উপায়। তবে আমার লোকেরা এভাবে কাজ করতে চায় না। তারা আরও চুক্তি করতে চায়।’
ভারতের প্রধান বাণিজ্যবিষয়ক প্রতিনিধি রাজেশ আগরওয়ালের নেতৃত্বে প্রতিনিধিদল গত বৃহস্পতিবার ওয়াশিংটনে পৌঁছেছে। ঠিক সেই সময় ট্রাম্প ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তির বিষয়ে এই মন্তব্য করলেন।
গত ২ এপ্রিল ডোনাল্ড ট্রাম্প বিশ্বের প্রায় সব দেশের পণ্যে পাল্টা শুল্ক আরোপ করেন। দ্বিতীয় মেয়াদে ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পর ট্রাম্প এমনটা করবেন, সেটা বুঝে ভারত আগে থেকেই এই চুক্তির জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। এমনকি চলতি অর্থবছরের বাজেটেও মার্কিন পণ্যে শুল্ক হ্রাস করেছে তারা। এখন তাদের জোর প্রচেষ্টা, আগামী ৯ জুলাইয়ের মধ্যেই সমঝোতায় পৌঁছানো। ২ এপ্রিল ঘোষিত পাল্টা শুল্ক আগামী ৯ জুলাই পর্যন্ত স্থগিত থাকবে।
হিন্দুস্তান টাইমসের সংবাদে বলা হয়েছে, কৃষি ও দুগ্ধ খাতে ছাড় দেওয়া ভারতের পক্ষে কঠিন। এখন পর্যন্ত ভারতের কোনো মুক্ত বাণিজ্য চুক্তিতেই দুগ্ধ খাতের বাজার পুরোপুরি উন্মুক্ত করা হয়নি। কিছু শিল্পপণ্য, গাড়ি (বিশেষ করে বৈদ্যুতিক গাড়ি), পানীয়, পেট্রোকেমিক্যাল, দুগ্ধজাতপণ্য ও কৃষিপণ্য যেমন আপেল, বাদামজাতীয় ফল ও জিনগতভাবে পরিবর্তিত ফসলে শুল্ক ছাড় চাইছে যুক্তরাষ্ট্র।
অন্যদিকে ভারত চাইছে শ্রমনির্ভর খাতগুলোর জন্য যেমন পোশাক, গয়না, চামড়াজাত পণ্য, প্লাস্টিক, রাসায়নিক, চিংড়ি, তেলবীজ, আঙুর ও কলায় শুল্ক ছাড় দেওয়া হোক।
এর আগে জুন মাসের শুরুতে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যমন্ত্রী হাওয়ার্ড লুটনিক বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের মধ্যে বাণিজ্য চুক্তি সই করতে তেমন একটা সময় লাগবে না। আলোচনার জন্য উভয় পক্ষই যোগ্য মানুষদের নির্বাচন করেছে। ফলে দুই দেশের জন্যই কার্যকর, আমরা এমন একটা জায়গায় পৌঁছেছি।’
যুক্তরাষ্ট্র-ভারত কৌশলগত অংশীদারত্ব ফোরামের সম্মেলনে দেওয়া বক্তব্যে লুটনিক বলেন, ‘আপনারা আশা করতে পারেন, খুব শিগগির দুই দেশের মধ্যে প্রথম ধাপের চুক্তি হবে।’
উল্লেখ্য, চলতি বছরের সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে এই দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য চুক্তির প্রথম ধাপ সম্পন্ন করতে চায় দুই দেশ। লক্ষ্য, ২০৩০ সালের মধ্যে বর্তমান ১৯১ বিলিয়ন বা ১৯ হাজার ১০০ কোটি ডলারের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ৫০০ বিলিয়ন বা ৫০ হাজার কোটি ডলারে উন্নীত করা।
ইকোনমিক টাইমসের সংবাদে বলা হয়েছে, ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধের পালা আপাতত শেষ। এই পরিস্থিতিতে ট্রাম্প নিজের মূল কাজে মনোনিবেশ করেছেন। বাণিজ্য, শুল্ক আর চুক্তিকে কেন্দ্র করে কৌশল সাজাচ্ছেন তিনি। গত ৪৮ ঘণ্টায় তিনি কানাডার সঙ্গে ডিজিটাল কর নিয়ে আলোচনা স্থগিত করেছেন, চীনের সঙ্গে নতুন চুক্তির আভাস দিয়েছেন আর ভারতের সঙ্গে ‘অনেক বড় কিছু’ ঘটতে চলেছে বলেও জানিয়েছেন।
এই ঘোষণার কেন্দ্রবিন্দুতে আছে তাঁর পুরোনো কৌশল, যেসব দেশ মার্কিন বাজারে ঢুকতে চায়, তাদের উদ্দেশে চিঠি পাঠিয়ে পাল্টা শুল্ক বসানোর হুঁশিয়ারি।
চুক্তি যেন ভারসাম্যপূর্ণ হয়যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যেকোনো বাণিজ্য চুক্তি যেন রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রসূত না হয়ে ভারসাম্যপূর্ণ হয় এবং কৃষি, ডিজিটাল পরিকাঠামো ও নিয়ন্ত্রক নীতি কাঠামোর সার্বভৌমত্ব নিশ্চিত হয়, সে বিষয়ে সতর্কবার্তা দিয়েছে গ্লোবাল ট্রেড রিসার্চ ইনিশিয়েটিভ (জিটিআরআই)।
সংস্থাটি বলেছে, ৯ জুলাইয়ের সময়সীমা দ্রুত ঘনিয়ে আসছে। সেদিন ২ এপ্রিল প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ঘোষিত দেশভিত্তিক পাল্টা শুল্ক স্থগিতের ৯০ দিনের মেয়াদ শেষ হবে।
পিটিআইকে দেওয়া বিবৃতিতে জিটিআরআইয়ের প্রতিষ্ঠাতা অজয় শ্রীবাস্তব বলেন, ‘সম্ভবত সীমিত পরিসরের চুক্তি হবে, যেমনটা যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের মধ্যে ৮ মে স্বাক্ষরিত হয়েছে। তবে যেকোনো বাণিজ্য চুক্তিরই একপক্ষীয় বা রাজনৈতিক প্রভাবাধীন হওয়া চলবে না। অবশ্যই দেশের কৃষক, ডিজিটাল ইকোসিস্টেম ও নীতিনির্ধারণের সার্বভৌমত্ব রক্ষা করতে হবে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: য ক তর ষ ট র র র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
আধুনিক টিভির যত আধুনিক সুবিধা
টেলিভিশনকে বাংলায় বলা হয় ‘দূরদর্শন’। মাত্র কয়েক বছর আগেও এটি সত্যিই ছিল দূরদর্শনের মাধ্যম—দূরের কোনো ঘটনা চোখের সামনে এনে দেওয়ার একটি যন্ত্র। কিন্তু সময়ের সঙ্গে বদলে গেছে টিভির সংজ্ঞা, উদ্দেশ্য ও ব্যবহার। প্রযুক্তির দ্রুত অগ্রগতিতে আজকাল টিভি হয়ে উঠেছে একটি ‘স্মার্ট হাব’, যেখানে সিনেমা দেখা, গেম খেলা, ভিডিও কল করা, এমনকি বাড়ির অন্যান্য স্মার্ট ডিভাইসও নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। আধুনিক টিভিগুলোর সুবিধা কেবল ছবি বা সাউন্ডে সীমাবদ্ধ নয়, বরং এগুলো এখন ব্যবহারকারীদের এনে দিয়েছে একসঙ্গে বিনোদন, সংযোগ, যোগাযোগ ও নিয়ন্ত্রণের নতুন এক এক্সপেরিয়েন্স।
স্মার্ট অপারেটিং সিস্টেমবর্তমান প্রজন্মের টিভিগুলো শুধু নাটক কিংবা সিনেমা দেখার একটি স্ক্রিন নয়, বরং একটি সম্পূর্ণ স্মার্ট ডিভাইস। স্মার্ট টিভিতে অপারেটিং সিস্টেম (ওএস) হিসেবে টাইজেন, অ্যান্ড্রয়েড টিভি, রোকু টিভি এবং ওয়েবওএস ইত্যাদি ব্যবহৃত হয়। এই সিস্টেমগুলোর মাধ্যমেই বর্তমান যুগের টিভিগুলো হয়ে উঠছে আধুনিক থেকে আধুনিকতর। ব্যবহারকারীরা এখন চাইলেই স্মার্ট টিভিগুলোতে নেটফ্লিক্স, ইউটিউব, স্পটিফাই, অ্যামাজন প্রাইম কিংবা যেকোনো ওটিটি প্ল্যাটফর্মও সরাসরি উপভোগ করতে পারেন।
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো ‘অ্যাপ স্টোর ইন্টিগ্রেশন’। টিভিতেই এখন মোবাইলের মতো অ্যাপ ডাউনলোড করে ব্যবহার করা যায়। ওয়েদার অ্যাপ, গেমস, নিউজ—এমনকি ভিডিও কনফারেন্সিং অ্যাপও ব্যবহার করা যায় টিভির বড় স্ক্রিনে।
ভয়েস কন্ট্রোল: কথা বলেই নিয়ন্ত্রণরিমোট খোঁজার ঝামেলা এখন যেন অতীত। আগে টিভির সবকিছু রিমোট দ্বারা পরিচালিত হলেও এখনকার আধুনিক টিভিগুলোতে আছে ভয়েস কন্ট্রোল—যেখানে ব্যবহারকারীর ভয়েস দ্বারাই টিভি নিয়ন্ত্রণ করা যায়। এই প্রযুক্তি বিক্সবি, গুগল অ্যাসিস্ট্যান্ট, অ্যালেক্সার মতো ভয়েস অ্যাসিস্ট্যান্টের মাধ্যমে কাজ করে। এর পাশাপাশি কিছু হাই-এন্ড মডেলে রয়েছে জেসচার কন্ট্রোল—যেখানে হাত নাড়লেই টিভি রেসপন্স করে। টিভি চালু-বন্ধ করা, চ্যানেল পরিবর্তন—এমনকি ভলিউম বাড়ানো-কমানোর মতো কাজও করা যায় হাতের ইশারায়। এ ক্ষেত্রে গ্যালাক্সি ওয়াচের কথা বলা যায়। এটি হাতের নড়াচড়াকে শনাক্ত করে এসব কমান্ড কার্যকর করে।
মাল্টি-ডিভাইস কানেকটিভিটি: এক স্ক্রিনে সব সংযোগবর্তমানে টিভি শুধু সম্প্রচার মাধ্যম নয়; এটি হয়ে উঠেছে একটি সেন্ট্রাল কন্ট্রোল ইউনিট। মোবাইল ফোন, স্পিকার, ল্যাপটপ, গেমিং কনসোল—সব ডিভাইস এখন টিভির সঙ্গে সহজেই সংযুক্ত করা যায়।
বেশির ভাগ স্মার্ট টিভিতে রয়েছে ওয়াই-ফাই, ব্লুটুথ, এইচডিএমআই এআরসি, এয়ার প্লে, মিরাকাস্টসহ বিভিন্ন সুবিধা। ফলে ব্যবহারকারী চাইলে নিজের ফোনের ছবি, ভিডিও বা প্রেজেন্টেশন মুহূর্তেই বড় স্ক্রিনে শেয়ার করতে পারেন। সেই সঙ্গে আধুনিক টিভিগুলোতে রয়েছে গেমারদের জন্য এইচডিএমআই ২.১ পোর্ট এবং কম ইনপুট ল্যাগযুক্ত ডিসপ্লে, যা গেমিং এক্সপেরিয়েন্সকে করে তোলে আরও স্মুথ।
আধুনিক টিভিগুলো ব্যবহারকারীদের এনে দিয়েছে একসঙ্গে বিনোদন, সংযোগ, যোগাযোগ ও নিয়ন্ত্রণের নতুন এক এক্সপেরিয়েন্স