ভবনে অগ্নিকাণ্ডের প্রধান কারণ হচ্ছে ইলেকট্রিক্যাল হ্যাজার্ড। অগ্নিকাণ্ড ছাড়া ইলেকট্রিক্যাল হ্যাজার্ডের মাধ্যমে অনেক জান ও মালের ক্ষতি হচ্ছে। সে জন্য যেকোনো স্থাপনায়—সেটা হোক আবাসিক, বাণিজ্যিক অথবা শিল্প—বৈদ্যুতিক ইনস্টলেশনের ত্রুটির জন্য সংগঠিত যেকোনো দুর্ঘটনা (অগ্ন্যুৎপাত, বৈদ্যুতিক শক ইত্যাদি) থেকে কিছু পদক্ষেপ জরুরি।
কোনো পেশাদার প্রকৌশলী দিয়ে স্থাপনার বৈদ্যুতিক নকশা করানো।
স্থাপনার বৈদ্যুতিক উপকরণের গুণগত মান নিশ্চিত করা।
নকশা অনুযায়ী স্থাপনার ইলেকট্রিক্যাল ইনস্টলেশনের কাজ বাস্তবায়ন করা।
বৈদ্যুতিক সংযোগের পরে নিয়মিত পর্যবেক্ষণ ও নিরীক্ষণ করা।
বৈদ্যুতিক নকশা
এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ প্রফেশনাল ইঞ্জিনিয়ারস রেজিস্ট্রেশন বোর্ড (বিপিইআরবি) কর্তৃক অনুমোদিত প্রকৌশলী হতে হবে। এখানে উল্লেখ্য যে ইনস্টিটিউশন অব ইঞ্জিনিয়ারস বাংলাদেশের (আইইবি) অধীনে বিপিইআরবি যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে বিভিন্ন শ্রেণিতে প্রকৌশলী অন্তর্ভুক্ত করে থাকে। ভবনের আয়তন ও উচ্চতার জন্য প্রযোজ্য শ্রেণির প্রকৌশলীর মাধ্যমে নকশা সম্পন্ন করা। অনেক সময় দেখা যায়, কোনো অন–অনুমোদিত প্রকৌশলী বা ডিপ্লোমা প্রকৌশলী কোনো রকম একটা নকশা সম্পন্ন করে জ্যেষ্ঠ কোনো প্রকৌশলীর সই নিয়ে নেন। এ ক্ষেত্রে ভবন অথবা প্রকল্পের মূল কর্তৃপক্ষের গাফিলতির সঙ্গে সঙ্গে প্রকল্পের মূল স্থপতির গাফিলতিও রয়েছে। তাদের দেখা উচিত, ভবন বা প্রকল্পের মূল বৈদ্যুতিক নকশা কে করছেন।
বৈদ্যুতিক কাজের মালামালের গুণগত মান নিশ্চিত করা
ইলেকট্রিক্যাল ইনস্টলেশনের কাজের ক্ষেত্রে এই ধাপ খুবই উপেক্ষিত। নিম্নমানের বৈদ্যুতিক মালামালে বাজার সয়লাব। একটি স্থাপনার নকশা যতই উন্নত বা টেকসই হোক না কেন, যদি মালামালের গুণগত মান নিশ্চিত করা না হয়, তবে নিরাপত্তাও নিশ্চিত করা যাবে না। যেমন তার বা কেবলসের কথা ধরা যাক, যেকোনো ব্র্যান্ডের তার যদি অথেনটিক সোর্স থেকে সংগ্রহ করা না হয়, তবে সেটা নকল হওয়ার আশঙ্কা শতভাগ। এ ছাড়া বাজারে নামে–বেনামে অনেক ধরনের তার রয়েছে, যেগুলোর বেশির ভাগই নকল বা মানসম্মত নয়। এসব তার ব্যবহারের আগে অবশ্যই স্যাম্পল টেস্ট করে নেওয়া উচিত। একইভাবে বৈদ্যুতিক লাইনের নিরাপত্তার জন্য ব্যবহৃত সার্কিট ব্রেকার যদি নিম্নমানের হয়, তবে তা দিয়ে নিরাপত্তা সম্ভব নয়। সে জন্য ভবন কর্তৃপক্ষের অবশ্যই বৈদ্যুতিক মালামালগুলো যথাযথ ব্র্যান্ড ও অনুমোদিত পরিবেশকের কাছ থেকে সংগ্রহে মনোযোগী হতে হবে।
যথাযথ বাস্তবায়ন
একটি বৈদ্যুতিক স্থাপনার কাজ তখনই নিরাপদ হবে, যখন উন্নত মানের মালামাল দিয়ে টেকসই ডিজাইন মোতাবেক বাস্তবায়ন করা হয়। বাস্তবতা হচ্ছে, এ ক্ষেত্রে ৯০ শতাংশ ভবনের কাজই ডিজাইনার কর্তৃক নির্মাণাধীন সময়ে প্রয়োজনীয় সুপারভিশন বা ইন্সপেকশন করানো হয় না। ফলে ইনস্টলেশনের কাজে ত্রুটিবিচ্যুতি থেকে যায় এবং এর ফলে বৈদ্যুতিক নিরাপত্তা বিঘ্নিত হয়।
নিয়মিত পর্যবেক্ষণ বা নিরীক্ষণ
কোনো স্থাপনায় বা ভবনে বৈদ্যুতিক সংযোগের পরে বৈদ্যুতিক নিরাপত্তার জন্য জরুরি বিষয় হচ্ছে, বেশ কিছু বৈদ্যুতিক প্যারামিটার নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করা। জীবন, সম্পদ ও বৈদ্যুতিক লাইনের নিরাপত্তার জন্য অনেক যন্ত্র ব্যবহার করা হয়। এসব যন্ত্রের কোনো কোনোটি বিভিন্ন কারণে ও সময়ের কালক্রমে অকেজো হয়ে যায় বা এর কার্যকারিতা হারায়। যেসব নিরাপত্তার যন্ত্র নষ্ট হয়ে যায়, সেগুলো সাধারণত হিট গেইন করে। এ ছাড়া লুজ কানেকশন, ওভারলোড ইত্যাদির কারণে তাপ বেড়ে যেতে পারে। এ জন্য নিয়মিত অ্যাম্পিয়ার, টেম্পারেচার, আর্থিং ইত্যাদি প্রয়োজনীয় কিছু প্যারামিটার মনিটরিং করলে আগে থেকেই সতর্ক হওয়া যায় এবং যন্ত্রগুলো পরিবর্তন করা যায়।
বাস্তবে অনুসন্ধান করলে দেখা যাবে, কোনো কোনো স্থাপনায় পেশাদার প্রকৌশলী দিয়ে নকশা করা হয়েছে ঠিকই, কিন্তু নকশা অনুযায়ী বাস্তবায়ন হয়নি। আবার কোনো কোনো জায়গায় ডিজাইন অনুযায়ী বাস্তবায়ন হয়েছে, কিন্তু বৈদ্যুতিক মালামালের মান ঠিক নেই। আবার কোনো জায়গায় ওপরের তিনটি ধাপ অনুসরণ করা হয়েছে ঠিকই, কিন্তু চতুর্থ ধাপ অনুসরণ করা হয়নি। এর ফলে যদি কোনো যন্ত্রে উৎপাদনগত ত্রুটি বা ব্যবহারের জন্য নষ্ট হয়ে যায়, তাহলে ওই যন্ত্রের নিয়ন্ত্রণাধীন বৈদ্যুতিক লাইন আর নিরাপদ থাকে না। অতএব ওপরের চারটি ধাপ অনুসরণ করে আমাদের প্রতিটি স্থাপনা বা ভবনকে বৈদ্যুতিক দুর্ঘটনা থেকে নিরাপদ রাখি এবং সবাই নিরাপদে থাকি।
মো.
রফিকুল ইসলাম
তড়িৎ প্রকৌশলী ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, ইলেকট্রো মেকানিক্যাল সলিউশন
ই–মেইল: [email protected]
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ন শ চ ত কর ত র জন য ন র পদ ব যবহ ইনস ট
এছাড়াও পড়ুন:
লিখিত পরীক্ষায় প্রতারণা, মৌখিক পরীক্ষায় এসে ধরা, ৮ জনকে কারাদণ্ড
কারারক্ষী নিয়োগ পরীক্ষায় প্রতারণার আশ্রয় নেওয়ায় ৮ জনের ১০ মাস করে কারাদণ্ড হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার সাক্ষাৎকার দিতে আসার পর তাঁরা ধরা পড়েন। বিষয়টি আজ বুধবার কারা কর্তৃপক্ষ সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানিয়েছে।
কারা কর্তৃপক্ষ জানায়, গতকাল মঙ্গলবার সাক্ষাৎকারের সময় জানা যায় ৮ জন প্রার্থী লিখিত পরীক্ষায় অংশ নেননি। তাঁদের নাম করে অন্যরা লিখিত পরীক্ষায় অংশ নেন। কিন্তু প্রকৃত প্রার্থীরা সাক্ষাৎকার দিতে এলে বিষয়টি ধরা পড়ে। লিখিত পরীক্ষার সময় কারা কর্তৃপক্ষ সব চাকরিপ্রার্থীর ছবি তুলে সংরক্ষণ করে রাখে। সাক্ষাৎকার নেওয়ার সময় সেই ছবি মিলিয়ে দেখা হয়। এভাবে জালিয়াতির বিষয়টি ধরা পড়ে।
কারা কর্তৃপক্ষ আরও জানিয়েছে, জালিয়াতিতে যুক্ত ৮ জন প্রার্থীকে শনাক্ত করার পর বিষয়টি চকবাজার থানা-পুলিশকে জানানো হয়। থানা কর্তৃপক্ষ তাঁদের আটক করে স্পেশাল মেট্রোপলিটন আদালত লালবাগে উপস্থিত করলে বিচারক তাঁদের কারাদণ্ড দেন।
আসামিদের জবানবন্দি থেকে দালাল চক্রের সঙ্গে জড়িত অনেক ব্যক্তির নাম পাওয়া গেছে বলে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে। তাঁদের ভাষ্য, চক্রের সদস্যরা নিয়োগপ্রার্থীদের বাবা, মা, ভাই বা নিকট আত্মীয়দের সঙ্গে ৫ থেকে ২০ লাখ টাকা পর্যন্ত চুক্তি করেন। কেউ কেউ সন্তানের পক্ষে অলিখিত স্টাম্পে স্বাক্ষর দিয়ে এবং ব্ল্যাঙ্ক চেক দালালদের কাছে জমা দিয়ে চুক্তি করেছেন। ঘটনার সঙ্গে জড়িত প্রকৃত দালালদের বিরুদ্ধে তদন্ত ও আইনগত ব্যবস্থা নিতে আদালত চকবাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে একটি এজাহার দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।