শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বে সরকারবিরোধী বিক্ষোভে উত্তাল সার্বিয়া
Published: 29th, June 2025 GMT
শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বে প্রেসিডেন্টবিরোধী বিক্ষোভে ফের উত্তাল ইউরোপের দেশ সার্বিয়া। শনিবার (২৮ জুন) দেশটির রাজধানী বেলগ্রেডে প্রেসিডেন্ট আলেকজান্ডার ভুচিচকের ১২ বছরের শাসনের অবসান ও আগাম নির্বাচনের দাবিতে বিক্ষোভকারীদের বিশাল জনতার সঙ্গে পুলিশ সংঘর্ষ হয়েছে।
রবিবার (২৯ জুন) বিট্রিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশটির সাম্প্রতিক ইতিহাসে অন্যতম বড় এই বিক্ষোভে অংশ নেয় প্রায় এক লাখ ৪০ হাজার মানুষ। ‘আমরা নির্বাচন চাই’- এমন দাবিতে মুখর জনতা সরকারের প্রতি ক্ষোভ জানায়। ছাত্রদের নেতৃত্বে সংগঠিত এই আন্দোলন ভুচিচ সরকারের ওপর প্রচণ্ড চাপ সৃষ্টি করেছে।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে কয়েক ডজন বিক্ষোভকারীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, দাঙ্গা পুলিশকে কাঁদানে গ্যাস ও স্টান গ্রেনেড ছুঁড়তে দেখা গেছে।
প্রেসিডেন্ট ভুচিচ তার ইনস্টাগ্রাম পেজে একটি পোস্টে ‘আগামী নির্বাচন আহ্বানকারী বিক্ষোভকারীদের দেশ দখল করার চেষ্টা করা বিদেশি ষড়যন্ত্রের অংশ’ বলে অভিযুক্ত করেছেন।
তিনি বলেন, “তারা সার্বিয়াকে উৎখাত করতে চেয়েছিল, কিন্তু তারা ব্যর্থ হয়েছে।”
এর আগে শুক্রবার বেলগ্রেডের হাই কোর্ট জানিয়েছিল, সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্রের অভিযোগে পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
সার্বিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বিক্ষোভকারীদের সহিংসতার তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেছেন, “দায়ীদের গ্রেপ্তার করা হবে।”
ভুচিচের দ্বিতীয় মেয়াদ শেষ হবে ২০২৭ সালে। সে বছরই নির্ধারিত সময় অনুযায়ী সংসদ নির্বাচন হওয়ার কথা রয়েছে। তবে বিরোধীদের দাবির মুখে আগাম নির্বাচনে যেতে রাজি নন তিনি। বর্তমানে তার দল ‘সার্বিয়ান প্রগ্রেসিভ পার্টি’ এবং মিত্রদের দখলে রয়েছে সংসদের ২৫০ আসনের মধ্যে ১৫৬টি।
শনিবার উত্তরের শিদ শহর থেকে এসে বিক্ষোভে অংশ নেওয়া ৩৭ বছর বয়সী কৃষক স্লাজানা লোজনোভিচ বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেন, “প্রতিষ্ঠানগুলো দখলে চলে গেছে, দুর্নীতি চরমে। শান্তিপূর্ণভাবে ভুচিচ ক্ষমতা ছাড়বেন বলে মনে হয় না। নির্বাচনই একমাত্র সমাধান।”
বিরোধীরা দীর্ঘদিন ধরে অভিযোগ করে আসছে, ভুচিচ প্রশাসন সংঘবদ্ধ অপরাধে জড়িত, গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রণ করে এবং রাজনৈতিক বিরোধীদের দমন করে। তবে ক্ষমতাসীন দল এ অভিযোগ বরাবরই অস্বীকার করে এসেছে।
ভুচিচে রাশিয়ার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রেখেছেন। ইউক্রেনে হামলার কারণে মস্কোর ওপর আরোপিত পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা ব্যবস্থায় যোগ দেয়নি সার্বিয়া।
২০২৩ সালের ১ নভেম্বর নভি সাদ শহরের রেলস্টেশনের ছাদ ধসে ১৬ জনের মৃত্যুর পর থেকেই আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে। ওই ঘটনায় দুর্নীতিকেই দায়ী করে রাজপথে নামে ছাত্র, রাজনীতিক, শ্রমিক ও কৃষকরা। এরই জেরে পদত্যাগ করেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মিলোস ভুচেভিস।
শনিবারের বিক্ষোভ শেষে আয়োজকরা জনতার উদ্দেশ্যে একটি বিবৃতি দেন, সেখানে সার্বিয়ানদের ‘স্বাধীনতা নিজের হাতে নেওয়ার’ আহ্বান জানানো হয় এবং তাদেরকে আন্দোলনের পরবর্তী ধাপে যাওয়ার ‘সবুজ সংকেত’ দেওয়া হয়।
সমাবেশ শেষে ইনস্টাগ্রামে এক বিবৃতিতে আয়োজকরা বলেন, “সরকারের কাছে দাবি পূরণ ও উত্তেজনা রোধ করার জন্য সব ব্যবস্থা ও সময় ছিল। কিন্তু এর পরিবর্তে, তারা জনগণের বিরুদ্ধে সহিংসতা ও দমন-পীড়নের পথ বেছে নিয়েছে। পরিস্থিতি আরো চরমে গেলে তার দায় সরকারকেই নিতে হবে।”
ঢাকা/ফিরোজ
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
ইন্দোনেশিয়ায় ভূমিধসে নিহত ১৮, নিখোঁজ অনেক
ইন্দোনেশিয়ার মধ্য জাভা প্রদেশের দুটি অঞ্চলে বৃষ্টিপাতের কারণে সৃষ্ট ভূমিধসে কমপক্ষে ১৮ জন নিহত হয়েছে। স্থানীয় কর্তৃপক্ষ সোমবার এ তথ্য জানিয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় এখনো অনুসন্ধান অভিযান চলছে। খবর রয়টার্সের।
দুর্যোগ প্রশমন সংস্থা জানিয়েছে, গত সপ্তাহে সিলাকাপ শহরে ভূমিধসে সিবেউনিং গ্রামের এক ডজন বাড়ি চাপা পড়ে। ৩ থেকে ৮ মিটার (১০ থেকে ২৫ ফুট) গভীরে লোকজন চাপা পড়ায় অনুসন্ধান ও উদ্ধার প্রচেষ্টা চ্যালেঞ্জিং ছিল।
অনুসন্ধান ও উদ্ধার সংস্থার স্থানীয় বিভাগের প্রধান এম আবদুল্লাহ জানিয়েছেন, সিলাকাপ ভূমিধসে কমপক্ষে ১৬ জন নিহত এবং ৭ জন নিখোঁজ রয়েছে।
নিউজ চ্যানেল কমপাসটিভির ফুটেজে দেখানো হয়েছে, সিলাকাপে মাটি খুঁড়তে খননকারীকে মোতায়েন করা হয়েছে।
এদিকে, মধ্য জাভার বানজারনেগারা অঞ্চলে শনিবার ভূমিধসের পর দুজন নিহত এবং ২৭ জন নিখোঁজ রয়েছে বলে দুর্যোগ প্রশমন সংস্থা সোমবার জানিয়েছে। এতে ৩০টিরও বেশি বাড়ি এবং খামার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
আবহাওয়া সংস্থা জানিয়েছে, দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় দেশটির বর্ষা মৌসুম সেপ্টেম্বরে শুরু হয় এবং এপ্রিল পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে। বর্ষা মৌসুম দেশটিতে ব্যাপক বৃষ্টিপাত ও বন্যার উচ্চ ঝুঁকি নিয়ে আসে।
ঢাকা/ফিরোজ