অধস্তন আদালতের বিচারকদের শৃঙ্খলা বিধিমালা গ্রহণ করে সাত বছর আগে দেওয়া আদেশ স্থগিত করেছেন আপিল বিভাগ।

বিধিমালা গ্রহণসংক্রান্ত আদেশ পুনর্বিবেচনা চেয়ে করা আবেদনের (রিভিউ) শুনানি নিয়ে লিভ মঞ্জুর (আপিল করার অনুমতি) করে আদেশ দিয়েছেন আপিল বিভাগ। প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন ছয় সদস্যের আপিল বিভাগ আজ রোববার এ আদেশ দেন। এর ফলে এ–সংক্রান্ত আপিল শুনবেন দেশের সর্বোচ্চ আদালত।

বিচার বিভাগ পৃথক্‌করণ-সংক্রান্ত মাসদার হোসেন মামলার রায়ের ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস (শৃঙ্খলা) বিধিমালা-২০১৭ প্রজ্ঞাপন আকারে ২০১৭ সালের ১১ ডিসেম্বর প্রকাশ করা হয়।

এই বিধিমালা গ্রহণ করে ২০১৮ সালের ৩ জানুয়ারি আদেশ দেন তৎকালীন দায়িত্বরত প্রধান বিচারপতি আবদুল ওয়াহ্‌হাব মিঞার নেতৃত্বাধীন পাঁচ সদস্যের আপিল বিভাগ।

এই আদেশ পুনর্বিবেচনা চেয়ে তৃতীয় পক্ষ হিসেবে আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনিরসহ আট আইনজীবী গত মাসে আপিল বিভাগে আবেদন (রিভিউ) করেন।
রিভিউ আবেদনটি গত ২১ মে আপিল বিভাগের চেম্বার আদালতে ওঠে। সেদিন আদালত আবেদনটি আপিল বিভাগে শুনানির জন্য নির্ধারণ করেন। এর ধারাবাহিকতায় গত বৃহস্পতিবার শুনানি হয়। সেদিন শুনানি নিয়ে আপিল বিভাগ আদেশের জন্য আজ দিন রাখেন।

আদালতে পুনর্বিবেচনার আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির, সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী মোহাম্মদ সাদ্দাম হোসেন।

রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো.

আসাদুজ্জামান, সঙ্গে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদ উদ্দিন।

১৯৯৯ সালের ২ ডিসেম্বর আপিল বিভাগ মাসদার হোসেন মামলায় ১২ দফা নির্দেশনা দিয়ে রায় দেন। মাসদার হোসেন মামলাটি নির্বাহী বিভাগ থেকে বিচার বিভাগ পৃথকসংক্রান্ত মামলা হিসেবে পরিচিত। এই মামলার রায়ের আলোকে নিম্ন আদালতের বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলাসংক্রান্ত বিধিমালা প্রণয়নের নির্দেশনা ছিল। আপিল বিভাগের নির্দেশনার পর আইন মন্ত্রণালয় বিধিমালার একটি খসড়া তৈরি করে ২০১৫ সালের ৭ মে সুপ্রিম কোর্টে পাঠায়।

খসড়াটি ১৯৮৫ সালের সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালার অনুরূপ হওয়ায় তা মাসদার হোসেন মামলার রায়ের পরিপন্থী বলে জানান আপিল বিভাগ। বিধিমালা সংশোধন করে দেন আদালত। সুপ্রিম কোর্ট কমিটির সংশোধনী অনুসারে বিধিমালার গেজেট সরকার প্রকাশ করবে বলে আশা করে ২০১৬ সালের ২৮ আগস্ট আদেশ দেন তৎকালীন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বাধীন ৯ সদস্যের আপিল বিভাগ।

আজকের আদেশের পর আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির সাংবাদিকদের বলেন, ২০১৫ সালের ৭ মে তৎকালীন সরকারের পক্ষ থেকে অধস্তন আদালতের বিচারকদের শৃঙ্খলাবিধি বিষয়ে প্রস্তাবনা সুপ্রিম কোর্টের কাছে পাঠানো হয়। ২০১৬ সালে আগস্টে সুপ্রিম কোর্টের পক্ষ থেকে শৃঙ্খলা বিধিটি সংশোধনীসহ আবার সরকারের কাছে পাঠানো হয়। এ কথা বলে যে শৃঙ্খলাবিধিতে কিছু পরিবর্তন আনতে হবে। কিন্তু তৎকালীন সরকার এই পরিবর্তনগুলো গ্রহণ না করে সরকারের দেওয়া আগের শৃঙ্খলাবিধি তা প্রজ্ঞাপন আকারে ২০১৭ সালে প্রকাশ করে। এই বিধিমালাটি সুপ্রিম কোর্ট ২০১৮ সালের ৩ জানুয়ারি এক আদেশের মাধ্যমে গ্রহণ করে নেয়।

এর মধ্যে অনেক দুর্ঘটনা ঘটে উল্লেখ করে এই আইনজীবী বলেন, তৎকালীন প্রধান বিচারপতি যিনি ছিলেন, তিনি (বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা) দেশের বাইরে যেতে বাধ্য হন। তিনি দেশের বাইরে থেকে পদত্যাগপত্র পাঠান। নতুন করে ভারপ্রাপ্ত যে প্রধান বিচারপতি (বিচারপতি আবদুল ওয়াহ্‌হাব মিঞা) হন, তাঁর নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট আপিল বিভাগের বেঞ্চ এই শৃঙ্খলাবিধি গ্রহণ করে নেন। তারিখ ছিল ২০১৮ সালের ৩ জানুয়ারি। এই আদেশ চ্যালেঞ্জ করে রিভিউ আবেদনটি করা হয়। আগের আদেশ ছিল নয় বিচারপতির সমন্বয়ে, তা রিভিউ না করে পরবর্তী সময়ে পাঁচ বিচারপতির সমন্বয়ে ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি এ ধরনের আদেশ দিতে পারেন না। এটা সুপ্রিম কোর্টের আগের আদেশের প্রতি অবমাননা প্রদর্শনের শামিল।

শৃঙ্খলা বিধিমালা গ্রহণ করে ২০১৮ সালের ৩ জানুয়ারির আদেশ আপিল বিভাগ স্থগিত করে দিয়েছেন বলে জানান শিশির মনির। তিনি বলেন, একই সঙ্গে নিম্ন আদালতের বিচারকদের জন্য যে শৃঙ্খলাবিধি আছে, তা এই সময়ে কার্যকর থাকবে। একইভাবে হাইকোর্ট বিভাগে যে রিট আবেদনের (সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদ নিয়ে) শুনানি হচ্ছে তা, যথাযথভাবে চলবে। রিভিউ আবেদনের শুনানি নিয়ে তিন বিষয়ে আদেশের মাধ্যমে লিভ মঞ্জুর করা হয়েছে।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ২০১৮ স ল র ৩ জ ন য় র র আপ ল ব ভ গ শ শ র মন র ম হ ম মদ তৎক ল ন আইনজ ব সরক র সদস য

এছাড়াও পড়ুন:

শেখ হাসিনার আইনজীবী হতে চাইলেন জেড আই খান পান্না, খারিজ করলেন ট্রাইব্যুনাল

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের একটি মামলার পলাতক আসামি ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে আইনজীবী হতে চেয়েছিলেন সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জেড আই খান পান্না। তবে তাঁর আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১।

বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১ এই আবেদন আজ মঙ্গলবার খারিজ করেন। ট্রাইব্যুনালের অন্য দুই সদস্য হলেন বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ ও বিচারক মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।

আজকে ট্রাইব্যুনালের বিচার কার্যক্রমের শুরুতে কথা বলেন আইনজীবী নাজনীন নাহার। তিনি বলেন, জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জেড আই খান পান্না আজকে এখানে আসতে পারেননি। তিনি শেখ হাসিনার পক্ষে আইনজীবী হিসেবে নিয়োগ পেতে চান। এ কথা ট্রাইব্যুনালকে জানানোর জন্য তাঁকে (নাজনীন) বলেছেন।

তখন ট্রাইব্যুনাল বলেন, ‘শেখ হাসিনার পক্ষে স্টেট ডিফেন্স (রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী) নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এটা ওভার (শেষ)। উনি সিভি দিলে অন্য মামলায় তাঁকে আইনজীবী হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার বিষয়টি দেখবেন। তা ছাড়া কাকে স্টেট ডিফেন্স নিয়োগ দেওয়া হবে, সেটা ট্রাইব্যুনালের বিষয়।’

ট্রাইব্যুনাল আরও বলেন, ‘তিনি প্রসিডিওর জানেন। যে মামলায় আসামি উপস্থিত নাই, এমন পার্টিকুলার মামলায় আসবেন কেন? তা ছাড়া এ মামলায় যখন ডিফেন্স নিয়োগ দেওয়া হচ্ছিল, তখন তিনি এসে বলতে পারতেন। তখন বিবেচনা করা যেত কাকে নিয়োগ দেওয়া হবে। ট্রেন স্টেশন ছেড়ে যাওয়ার পর মাস্টারকে বললেন, ট্রেনে উঠিয়ে দেন।’

একপর্যায়ে আইনজীবী নাজনীন নাহার বলেন, শেখ হাসিনার পক্ষে যাঁকে স্টেট ডিফেন্স নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, তাঁকে সহযোগিতা করতে চান জেড আই খান পান্না।

এই আবেদনও খারিজ করে দেন ট্রাইব্যুনাল।

গণ-অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান পলাতক। তাঁদের পক্ষে রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী হিসেবে মো. আমির হোসেনকে নিয়োগ দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল-১। এ মামলার অপর আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল–মামুন গ্রেপ্তার আছেন। তিনি ইতিমধ্যে অপরাধ স্বীকার করে নিয়েছেন। একই সঙ্গে এ মামলায় ‘অ্যাপ্রুভার’ (রাজসাক্ষী হিসেবে পরিচিত) হয়েছেন তিনি।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • প্রাণনাশের আশঙ্কায় রাহুল গান্ধী, আদালতে অভিযোগ
  • বিচার কার্যক্রম বিলম্ব করতে চাইলে ‘টুঁটি চেপে’ ধরবেন ট্রাইব্যুনাল
  • মুক্তিযোদ্ধাদের ন্যূনতম বয়সসীমা নির্ধারণ অবৈধ ঘোষণার বিরুদ্ধে আপিল শুনবেন পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ
  • ১১৬ অনুচ্ছেদ ও বিচার বিভাগের জন্য পৃথক সচিবালয় প্রশ্নে রুল শুনানি শেষ, রায় ২ সেপ্টেম্বর
  • ময়মনসিংহের সাবেক সংসদ সদস্য রুহুল আমিন মাদানীর ইন্তেকাল
  • ব্যক্তিগত মুহূর্তের ভিডিও ফাঁস, বিতর্কে পাকিস্তানি অভিনেত্রী
  • ভোট পর্যবেক্ষণ করতে ৩১৮ সংস্থার আবেদন
  • কাঠগড়ায় কাঁদলেন এনবিআরের সেই মতিউর, আদালত বললেন, ‘দুদকের জালে এখন হাজার মতিউর’
  • শেখ হাসিনার আইনজীবী হতে চাইলেন জেড আই খান পান্না, খারিজ করলেন ট্রাইব্যুনাল
  • ছক্কার সব রেকর্ড কি ভাঙবে এবার, পিছিয়ে নেই বাংলাদেশও