অধস্তন আদালতের বিচারকদের শৃঙ্খলা বিধিমালা গ্রহণের আদেশ স্থগিত, আপিল শুনবেন সর্বোচ্চ আদালত
Published: 29th, June 2025 GMT
অধস্তন আদালতের বিচারকদের শৃঙ্খলা বিধিমালা গ্রহণ করে সাত বছর আগে দেওয়া আদেশ স্থগিত করেছেন আপিল বিভাগ।
বিধিমালা গ্রহণসংক্রান্ত আদেশ পুনর্বিবেচনা চেয়ে করা আবেদনের (রিভিউ) শুনানি নিয়ে লিভ মঞ্জুর (আপিল করার অনুমতি) করে আদেশ দিয়েছেন আপিল বিভাগ। প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন ছয় সদস্যের আপিল বিভাগ আজ রোববার এ আদেশ দেন। এর ফলে এ–সংক্রান্ত আপিল শুনবেন দেশের সর্বোচ্চ আদালত।
বিচার বিভাগ পৃথক্করণ-সংক্রান্ত মাসদার হোসেন মামলার রায়ের ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস (শৃঙ্খলা) বিধিমালা-২০১৭ প্রজ্ঞাপন আকারে ২০১৭ সালের ১১ ডিসেম্বর প্রকাশ করা হয়।
এই বিধিমালা গ্রহণ করে ২০১৮ সালের ৩ জানুয়ারি আদেশ দেন তৎকালীন দায়িত্বরত প্রধান বিচারপতি আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞার নেতৃত্বাধীন পাঁচ সদস্যের আপিল বিভাগ।
এই আদেশ পুনর্বিবেচনা চেয়ে তৃতীয় পক্ষ হিসেবে আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনিরসহ আট আইনজীবী গত মাসে আপিল বিভাগে আবেদন (রিভিউ) করেন।
রিভিউ আবেদনটি গত ২১ মে আপিল বিভাগের চেম্বার আদালতে ওঠে। সেদিন আদালত আবেদনটি আপিল বিভাগে শুনানির জন্য নির্ধারণ করেন। এর ধারাবাহিকতায় গত বৃহস্পতিবার শুনানি হয়। সেদিন শুনানি নিয়ে আপিল বিভাগ আদেশের জন্য আজ দিন রাখেন।
আদালতে পুনর্বিবেচনার আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির, সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী মোহাম্মদ সাদ্দাম হোসেন।
রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো.
১৯৯৯ সালের ২ ডিসেম্বর আপিল বিভাগ মাসদার হোসেন মামলায় ১২ দফা নির্দেশনা দিয়ে রায় দেন। মাসদার হোসেন মামলাটি নির্বাহী বিভাগ থেকে বিচার বিভাগ পৃথকসংক্রান্ত মামলা হিসেবে পরিচিত। এই মামলার রায়ের আলোকে নিম্ন আদালতের বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলাসংক্রান্ত বিধিমালা প্রণয়নের নির্দেশনা ছিল। আপিল বিভাগের নির্দেশনার পর আইন মন্ত্রণালয় বিধিমালার একটি খসড়া তৈরি করে ২০১৫ সালের ৭ মে সুপ্রিম কোর্টে পাঠায়।
খসড়াটি ১৯৮৫ সালের সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালার অনুরূপ হওয়ায় তা মাসদার হোসেন মামলার রায়ের পরিপন্থী বলে জানান আপিল বিভাগ। বিধিমালা সংশোধন করে দেন আদালত। সুপ্রিম কোর্ট কমিটির সংশোধনী অনুসারে বিধিমালার গেজেট সরকার প্রকাশ করবে বলে আশা করে ২০১৬ সালের ২৮ আগস্ট আদেশ দেন তৎকালীন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বাধীন ৯ সদস্যের আপিল বিভাগ।
আজকের আদেশের পর আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির সাংবাদিকদের বলেন, ২০১৫ সালের ৭ মে তৎকালীন সরকারের পক্ষ থেকে অধস্তন আদালতের বিচারকদের শৃঙ্খলাবিধি বিষয়ে প্রস্তাবনা সুপ্রিম কোর্টের কাছে পাঠানো হয়। ২০১৬ সালে আগস্টে সুপ্রিম কোর্টের পক্ষ থেকে শৃঙ্খলা বিধিটি সংশোধনীসহ আবার সরকারের কাছে পাঠানো হয়। এ কথা বলে যে শৃঙ্খলাবিধিতে কিছু পরিবর্তন আনতে হবে। কিন্তু তৎকালীন সরকার এই পরিবর্তনগুলো গ্রহণ না করে সরকারের দেওয়া আগের শৃঙ্খলাবিধি তা প্রজ্ঞাপন আকারে ২০১৭ সালে প্রকাশ করে। এই বিধিমালাটি সুপ্রিম কোর্ট ২০১৮ সালের ৩ জানুয়ারি এক আদেশের মাধ্যমে গ্রহণ করে নেয়।
এর মধ্যে অনেক দুর্ঘটনা ঘটে উল্লেখ করে এই আইনজীবী বলেন, তৎকালীন প্রধান বিচারপতি যিনি ছিলেন, তিনি (বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা) দেশের বাইরে যেতে বাধ্য হন। তিনি দেশের বাইরে থেকে পদত্যাগপত্র পাঠান। নতুন করে ভারপ্রাপ্ত যে প্রধান বিচারপতি (বিচারপতি আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞা) হন, তাঁর নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট আপিল বিভাগের বেঞ্চ এই শৃঙ্খলাবিধি গ্রহণ করে নেন। তারিখ ছিল ২০১৮ সালের ৩ জানুয়ারি। এই আদেশ চ্যালেঞ্জ করে রিভিউ আবেদনটি করা হয়। আগের আদেশ ছিল নয় বিচারপতির সমন্বয়ে, তা রিভিউ না করে পরবর্তী সময়ে পাঁচ বিচারপতির সমন্বয়ে ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি এ ধরনের আদেশ দিতে পারেন না। এটা সুপ্রিম কোর্টের আগের আদেশের প্রতি অবমাননা প্রদর্শনের শামিল।
শৃঙ্খলা বিধিমালা গ্রহণ করে ২০১৮ সালের ৩ জানুয়ারির আদেশ আপিল বিভাগ স্থগিত করে দিয়েছেন বলে জানান শিশির মনির। তিনি বলেন, একই সঙ্গে নিম্ন আদালতের বিচারকদের জন্য যে শৃঙ্খলাবিধি আছে, তা এই সময়ে কার্যকর থাকবে। একইভাবে হাইকোর্ট বিভাগে যে রিট আবেদনের (সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদ নিয়ে) শুনানি হচ্ছে তা, যথাযথভাবে চলবে। রিভিউ আবেদনের শুনানি নিয়ে তিন বিষয়ে আদেশের মাধ্যমে লিভ মঞ্জুর করা হয়েছে।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ২০১৮ স ল র ৩ জ ন য় র র আপ ল ব ভ গ শ শ র মন র ম হ ম মদ তৎক ল ন আইনজ ব সরক র সদস য
এছাড়াও পড়ুন:
প্রযোজককে অপহরণ করে মুক্তিপণ দাবি, গ্রেপ্তার ৬
প্রয়াত জনপ্রিয় চিত্রনায়ক সালমান শাহকে ভালোবেসে নায়কের সবচেয়ে সুপারহিট সিনেমা ‘স্বপ্নের ঠিকানা’ নামে কয়েক বছর আগে একটি শুটিং স্পট নির্মাণ করেন চলচ্চিত্র প্রযোজক মো. রাশেদুল ইসলাম রাশেদ। নিয়মিত সেখানে নাটক-সিনেমার শুটিং হয়। সালমান শাহ ভক্ত-প্রযোজক রাশেদকে অপহরণের অভিযোগ উঠেছে। নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে পূর্বাচল এলাকায় প্রকাশ্য দিবালোকে এই প্রযোজক ও ব্যবসায়ীকে অপহরণ করা হয়েছে বলে গণমাধ্যমে নিশ্চিত করেছেন রাশেদ নিজেই।
তিনি বলেন, “২০১৮ সালে একটি ধর্ষণ ও হত্যা মামলা দায়ের করি। সেই মামলা তুলে না নেওয়ায় এই অপরহণ করা হয়। মামলা তুলে নিতে দীর্ঘদিন চাপ সৃষ্টি করে আসছিল এই চক্রটি। মামলাটি তুলে না নেওয়ায় শুক্রবার দুপুরে পূর্বাচল ১৩ নম্বর সেক্টরের অফিস থেকে আমাকে অপহরণ করা হয়। অপহরণের পর আমার পরিবারের কাছে ৭০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে অপহরণকারীরা।”
রাশেদের ভাষ্য অনুযায়ী, পূর্বাচলের কথিত যুবদল নেতা রাসেল আহমেদের নেতৃত্বে ৮-১০ জন যুবক দুপুর আড়াইটার দিকে অফিসে ঢুকে জোরপূর্বক তাকে তুলে নিয়ে যায়। রাসেল ও তার লোকজনের বিরুদ্ধে ২০১৮ সালে আমার চাচাতো ভাই রাকিবের মেয়ে সূর্বনাকে অপহরণ, ধর্ষণ ও হত্যার অভিযোগে মামলা রয়েছে। সেই মামলা তুলে নেওয়ার জন্য দীর্ঘদিন ধরে হুমকি দিয়ে আসছিল অভিযুক্ত চক্রটি।
জানা যায়, অপহরণের খবর পেয়ে রাশেদের পরিবার দ্রুত পূর্বাচল সেনা ক্যাম্পে অভিযোগ জানায়। এতে অপহরণকারীরা চাপে পড়ে যায় এবং রাশেদকে ‘আওয়ামী লীগ কর্মী’ পরিচয়ে রূপগঞ্জ থানায় সোপর্দ করার চেষ্টা করে। পরে পুলিশ উভয় পক্ষকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হেফাজতে নেয়।
রূপগঞ্জ থানার ওসি তরিকুল ইসলাম জানান, এ ঘটনায় অভিযুক্ত যুবদল নেতা রাসেল মিয়াসহ চক্রের ছয় সদস্য— রাসেল, শান্ত, রনি, শিপলু সাব্বির ও রনিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
ঘটনার বিষয়ে নারায়ণগঞ্জের সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) মেহেদী ইসলাম বলেন, “তাকে (রাশেদুল ইসলাম রাশেদ) আওয়ামী লীগ কর্মী হিসেবে থানায় সোপর্দ করার চেষ্টা করা হলেও এখন পর্যন্ত তার সে রকম কোনো রাজনৈতিক পরিচয়ের প্রমাণ আমরা পাইনি। বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”
রাশেদ ‘নিশ্চুপ ভালোবাসা’ নামে সিনেমা প্রযোজনা করেছেন। পাশাপাশি বেশ কিছু নাটক, সিনেমা এবং মিউজিক ভিডিওতে অভিনয় করেছেন। এ ঘটনায় চলচ্চিত্রপাড়ায় ব্যাপক চাঞ্চল্য ও উদ্বেগ তৈরি হয়েছে।
ঢাকা/রাহাত//