ভাঙ্গা থেকে কুয়াকাটা পর্যন্ত ছয় লেন মহাসড়ক দ্রুততম সময়ে নির্মাণ, বরিশাল-বাউফল সড়কের অসমাপ্ত নেহালগঞ্জ ও গোমা সেতুর কাজ দ্রুত শেষ করার দাবিতে বরিশালে বিক্ষোভ সমাবেশ হয়েছে।

আজ রোববার দুপুরে জেলা প্রশাসক কার্যালয় ও বরিশাল সড়ক ও জনপথ বিভাগের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলীর কার্যালয় সড়ক ভবনের সামনে বরিশাল বিভাগ উন্নয়ন ও স্বার্থ সংরক্ষণ কমিটির উদ্যোগে এই বিক্ষোভ সমাবেশ হয়। পরে জেলা প্রশাসক ও সড়ক বিভাগের কর্মকর্তাদের কাছে স্মারকলিপি দেওয়া হয়।

সমাবেশে বক্তারা বলেন, পদ্মা সেতু চালুর পর দক্ষিণাঞ্চলে যানবাহনের চাপের বিষয়টি মাথায় রেখে ফরিদপুরের ভাঙ্গা পর্যন্ত ছয় লেনের এক্সপ্রেসওয়ে করা হয়েছিল। কিন্তু ঢাকা-বরিশাল হয়ে সমুদ্রসৈকত কুয়াকাটা পর্যন্ত মহাসড়ক রয়ে গেছে আগের মতোই। সেতু চালুর পর এই পথে যানবাহন চলাচল কয়েক গুণ বেড়ে গেছে। কিন্তু সেই চাপ সামলাতে পারছে না এই সরু মহাসড়ক।

বক্তারা আরও বলেন, বরিশাল সদর ও বাকেরগঞ্জের সঙ্গে বাউফল ও পটুয়াখালী জেলার সংযোগ রক্ষাকারী নেহালগঞ্জ ও গোমা সেতু এখনো অসমাপ্ত অবস্থায় পড়ে। এ অবস্থা চলতে থাকলে বরিশালের সঙ্গে  উপকূলীয় এলাকার আন্তজেলা যোগাযোগে দীর্ঘমেয়াদি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। উন্নয়নের গতি বাধাগ্রস্ত হবে।

বরিশাল বিভাগ উন্নয়ন ও স্বার্থ সংরক্ষণ কমিটির সভাপতি নজরুল ইসলাম বলেন, দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ দীর্ঘদিন অবহেলিত ছিল। পদ্মা সেতু হয়েছে, কিন্তু তার সঙ্গে সম্পর্কিত মহাসড়ক নির্মাণে গড়িমসি হচ্ছে। এর ফলেই বাড়ছে দুর্ঘটনা ও দুর্ভোগ। পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর দক্ষিণাঞ্চলের সড়ক যোগাযোগব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন হয়েছে। ৫৪ কিলোমিটার এক্সপ্রেসওয়ের পর ফরিদপুরের ভাঙ্গা থেকে কুয়াকাটা পর্যন্ত ১৯৫ কিলোমিটার দীর্ঘ ঢাকা-বরিশাল মহাসড়ক এখনো দুই লেনের সরু। ফলে এই মহাসড়কে প্রতিদিন যে পরিমাণ যানবাহন চলাচল করে তার চাপ নিতে পারছে না। প্রতিনিয়ত দেখা দিচ্ছে ভয়াবহ যানজট ও প্রাণঘাতী দুর্ঘটনা। পদ্মা সেতুর সুফল থেকে বঞ্চিত হচ্ছে দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ।’

নজরুল ইসলাম আরও বলেন, ‘দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ যুগ যুগ ধরে উন্নয়নবঞ্চনার শিকার। নদীমাতৃক হওয়ায় এই অঞ্চল যোগাযোগবিচ্ছিন্ন থাকায় শিল্পায়নসহ অর্থনৈতিক বিকাশ হয়নি। মহাসড়ক প্রশস্ত না হওয়ায় কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন ত্বরান্বিত হয়নি। অন্তর্বর্তী সরকার বরিশাল-কুয়াকাটা মহাসড়ক প্রশস্তকরণের প্রকল্প বাতিল করেছিল। কিন্তু পরে সরকার এই প্রকল্প পটুয়াখালী পর্যন্ত বাস্তবায়ন করার সিদ্ধান্ত নেয়। এই কাজের কোনো অগ্রগতি না থাকায় আমরা এই প্রকল্প নিয়ে গভীর উদ্বেগে আছি।’

সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন সংগঠনের সহসভাপতি আমিনুর রহমান, সদস্য নজরুল হক, চন্দ্রমোহন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সিরাজুল হক হাওলাদার, সমাজকর্মী কামরুন নাহার বেগম, বরিশাল রিপোর্টার্স ইউনিটির সাধারণ সম্পাদক খালিদ সাইফুল্লাহ প্রমুখ।

স্মারকলিপি গ্রহণকালে বরিশালের জেলা প্রশাসক দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘এই দাবিগুলো গুরুত্বপূর্ণ। এর আগেও বিষয়টি আলোচনায় এসেছে। স্মারকলিপি দ্রুত মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে, যাতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া যায়।’

সড়ক বিভাগের সহকারী প্রকৌশলী আতিকুল ইসলাম জানান, গোমা সেতুর কাজ ডিসেম্বরের মধ্যে সম্পন্ন হবে। নেহালগঞ্জ সেতু দ্রুত শেষ করতে মন্ত্রণালয় সচেতনভাবে কাজ করছে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: বর শ ল রকল প

এছাড়াও পড়ুন:

ন্যায়বিচার হয়েছে, এই রায় সামনের দিনের জন্য একটা উদাহরণ: সালাহউদ্দিন আহমদ

শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে মামলায় যে রায় হয়েছে, তাতে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা হয়েছে বলে মনে করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন, এই বিচার, এই রায় সামনের দিনের জন্য একটা উদাহরণ।

আজ সোমবার রায় ঘোষণার পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। তবে আসামিদের অপরাধের তুলনায় এই সাজা যথেষ্ট কম। কিন্তু আইনে এর ওপরে কোনো সাজা নাই।

আজ বেলা তিনটার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে এই প্রতিক্রিয়া জানান সালাহউদ্দিন আহমদ। এর আগে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন।

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে শেখ হাসিনাকে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানকেও মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। আরেক আসামি পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনকে দেওয়া হয়েছে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড। বিচারপতি গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ আজ সোমবার এই রায় ঘোষণা করেন। এই ট্রাইব্যুনালের অপর দুই সদস্য হলেন বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ ও বিচারক মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।

রায়ের প্রতিক্রিয়ায় সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, এই রায়ের মধ্য দিয়ে কয়েকটি জিনিস প্রমাণিত হয়েছে। ফ্যাসিস্ট, স্বৈরাচার যত শক্তিশালী হোক, যত দীর্ঘদিনই রাষ্ট্রক্ষমতা অবৈধভাবে পরিচালিত করুক, ক্ষমতা ভোগ করুক, একদিন না একদিন আদালতের কাঠগড়ায় তাঁদের দাঁড়াতেই হবে।

আরও যেসব মামলা আছে, সেই মামলাগুলোতেও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা হবে বলে আশা প্রকাশ করেন সালাহউদ্দিন আহমদ।

এক প্রশ্নের জবাবে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, এই বিচার অপরাধের তুলনায় যথেষ্ট নয়। কিন্তু এটা শুধু ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা নয়, সামনের দিনের জন্য একটা উদাহরণ। ভবিষ্যতে যাতে এই রাষ্ট্রে কেউ আর ফ্যাসিবাদী শাসনব্যবস্থা কায়েম না করতে পারে, ফ্যাসিস্ট না হয়ে উঠতে পারে, একনায়কতন্ত্র যাতে প্রতিষ্ঠা না হয়, তার একটি উদাহরণ। এটা ভবিষ্যতের জন্য একটা শিক্ষা। শুধু অতীতের জন্য বিচার নয়, এটা মনে রাখতে হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ