কুষ্টিয়া পৌর বিএনপির কাউন্সিল: ভোটের ফল প্রত্যাখ্যান প্রার্থীর
Published: 29th, June 2025 GMT
কুষ্টিয়া পৌর বিএনপির কমিটি গঠন নিয়ে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ভোট কারচুপির অভিযোগ তুলে ফল প্রত্যাখ্যান করেছেন সভাপতি পদে পরাজিত প্রার্থী আখতারুজ্জামান ওরফে কাজল মাজমাদার। তিনি বলেন, ‘‘এই অনিয়ম ও ত্রুটিপূর্ণ নির্বাচনের ফলাফল প্রত্যাখ্যান করছি এবং পুনরায় নির্বাচনের দাবি করছি।’’
এ বিষয়ে রবিবার (২৯ জুন) বেলা ১১টার দিকে কুষ্টিয়া এনএস রোডে একটি রেস্টুরেন্টে সংবাদ সম্মেলন চলাকালে সেখানে খবর পৌঁছায়, কুষ্টিয়া সরকারি কলেজ ছাত্রাবাসের টয়লেটে সভাপতি পদে পরাজিত প্রার্থী আখতারুজ্জামান ওরফে কাজল মাজমাদারের চেয়ার প্রতীকের সিলমারা বেশ কিছু ব্যালট পেপার পাওয়া গেছে। এ নিয়ে দুপুর থেকে দলটির নেতাকর্মীদের মধ্যে উত্তেজনা তৈরি হয়।
কুষ্টিয়া জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সম্পাদক কাজল মাজমাদার বলেন, ‘‘নির্বাচন ঘিরে জনমনে নানা সংশয় থাকলেও আমরা দলের বৃহত্তর স্বার্থে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছিলাম। একটি সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য আমরা নির্বাচন কমিশনকে অনুরোধ জানিয়েছিলাম। নির্বাচন কমিশন নিরপেক্ষ নির্বাচনের আয়োজন সম্পন্ন করতে ব্যর্থ হয়েছে।’’
আরো পড়ুন:
মুরাদনগরে ক্ষমতার অপব্যবহার করছেন একজন উপদেষ্টা: ফখরুল
আ.
কুষ্টিয়া জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কুতুব উদ্দিন আহমেদ ও সদস্য সচিব ইঞ্জিনিয়ার জাকির হোসেন সরকারকে নির্বাচন পাতানোর জন্য দায়ী করে প্রভাবশালী এই নেতা বলেন, ‘‘তাদের থেকে আমরা দূরে ছিলাম। কিন্তু তারা সুষ্ঠু ভোটের কথা বলে ডেকে এনে আমাদের সঙ্গে প্রতারণা করেছেন। আমাদের আশ্বাস দেয়া হয়েছিল সুষ্ঠু ভোটের, সেই ওয়াদা তারা রক্ষা করেননি।’’
এর আগে শুক্রবার (২৭ জুন) কুষ্টিয়া সরকারি কলেজ মাঠে কুষ্টিয়া পৌর বিএনপির দ্বিবার্ষিক কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়। কাউন্সিল শেষে ভোটে সভাপতি পদে একে বিশ্বাস বাবু ও সাধারণ সম্পাদক পদে কামাল উদ্দিন বিজয়ী হন। পরে কাজল মাজমাদার ভোট কারচুপির অভিযোগ তুলে ভোট পুনর্গণনার আহ্বান জানান। পর দিন শনিবার পুনর্গণনা শেষে চার ভোট বেড়ে কাজলের ভোটের সংখ্যা হয় ৫৯৯। জয়ী প্রার্থী বাবুর ভোট সংখ্যা গিয়ে দাঁড়াই ৬১১।
এ তথ্য জানিয়ে সংবাদ সম্মেলনে কাজল বলেন, ‘‘চার ভোট বেড়ে যাওয়ায় প্রমাণ হয়, ভোটে কারচুপি হয়েছে। তাছাড়া এইমাত্র আমরা খবর পেলাম, কুষ্টিয়া সরকারি কলেজের টয়লেটে প্রায় শতাধিক সিলযুক্ত ব্যালট পেপার পাওয়া গেছে। এ বিষয়টি সংশ্লিষ্ট সবাইকে তদন্ত করে দেখার আহ্বান জানাচ্ছি।’’
কুষ্টিয়া জেলা বিএনপির সদস্য সচিব প্রকৌশলী জাকির হোসেন সরকার বলেন, ‘‘ভোটের সারা দিন কারো অভিযোগ ছিল না। ভোট গণনার সময় অভিযোগ ছিল না। ফলাফলের পরই তাদের যত অভিযোগ। আমরা আন্তরিকতার সঙ্গে শতভাগ স্বচ্ছ নির্বাচন করেছি। এখানে কারচুপির অভিযোগ ভিত্তিহীন।’’
ঢাকা/কাঞ্চন/বকুল
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব এনপ ব এনপ র সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
কেন বয়কট, বিনিয়োগ প্রত্যাহার ও নিষেধাজ্ঞা আন্দোলন সমর্থন করি?
আমি কখনো ইসরায়েল বা অধিকৃত পশ্চিম তীর এবং গাজা যাইনি। তবে আমার বেশ কয়েকজন ইহুদি ও ফিলিস্তিনি বন্ধু সেখানকার বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন। আমার এই বিডিএস (বয়কট, বিনিয়োগ প্রত্যাহার ও নিষেধাজ্ঞা) আন্দোলনে যোগ দেওয়াতে তাঁদের সঙ্গে আমার বন্ধুত্বে চিড় ধরবে না। কিন্তু গাজায় [ইসরায়েল কর্তৃক] বারবার বর্বর ধ্বংসযজ্ঞে আমি আতঙ্কিত। এর পাশাপাশি [ইসরায়েলি] দখলদারিত্বের নিষ্পেষণে ফিলিস্তিনি সমাজের ক্রমাগত অবনতিতে আমি হতবাক। গাজা একটি ছোট্ট ভূখণ্ড। বহু বছর ধরেই এটি স্থল, সমুদ্র ও আকাশপথে ইসরায়েলের অবরোধে রয়েছে। গাজায় পুনরাবৃত্ত হামলার প্রতি ইসরায়েলি সংখ্যাগরিষ্ঠের অকুণ্ঠ সমর্থন আমাকে আরও বিচলিত করে। এসব হামলায় হাজার হাজার ফিলিস্তিনি শহীদ হয়েছেন। আইডিএফ [ইসরায়েল ডিফেন্স ফোর্স] অত্যাধুনিক সব অস্ত্র ব্যবহার করছে দুর্বল প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে। ‘হামাসের হাজার হাজার রকেট ইসরায়েলের ওপর পড়ছে’ বলে আতঙ্ক ছড়ালেও বাস্তবে [এসব রকেটে] ইসরায়েলের সাধারণ নাগরিক বা স্থাপনার বিশেষ কোনো ক্ষতি হয়নি। অথচ ইসরায়েল নিজেকে সব সময়ই এই সংঘাতে নির্যাতিত পক্ষ হিসেবে উপস্থাপন করে।
ইসরায়েলি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো গাজার ওপর আইডিএফের সহিংসতার প্রতি কেবল সমর্থন ব্যক্তই করেনি; বরং ব্যবহারিক সম্পর্কও জোরদার করেছে। ইসরায়েলি সমাজ তার নিয়ন্ত্রণাধীন ফিলিস্তিনিদের প্রতি দিন দিন আরও যুদ্ধংদেহী হয়ে উঠছে। [ফিলিস্তিনিদের প্রতি] তারা আরও অবজ্ঞা ও বিদ্বেষ পোষণ করে চলছে। শিক্ষা, সাংস্কৃতিক এবং সংবাদ–সংশ্লিষ্ট—সব প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোই ফিলিস্তিনিদের প্রতি এই বর্ণবাদকে উৎসাহিত করছে। বিডিএস–এর সমালোচকেরা প্রায়ই প্রশ্ন তোলেন, [ফিলিস্তিনদের প্রতি ইসরায়েলিদের] এই দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনের ক্ষেত্রে ইসরায়েলি ও ফিলিস্তিনিদের মধ্যে সংলাপ এই বয়কটের চেয়ে বেশি কার্যকর নয় কি? বিশ্ববিদ্যালয় তো এমন এক জায়গা, যেখানে ভিন্নমতের মানুষেরা অবাধে আলোচনা ও বিতর্ক করতে পারে। তারা বলে, তাহলে, এসব ইসরায়েলি শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানগুলো বয়কট করা কি বাক্স্বাধীনতা পরিপন্থী নয়? এ প্রশ্নের একটি উত্তর হলো—অসম রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের মধ্যে অন্তহীন আলোচনা অর্থহীন। বিশেষ করে যখন একপক্ষ অন্যটির চেয়ে কেবল বহুগুণ শক্তিশালীই নয়; বরং শক্তিশালী পক্ষটি অপরকে অবজ্ঞা ও ঘৃণার দৃষ্টিতে দেখে থাকে। বিগত দুই দশকের কথিত শান্তি আলোচনা ব্যর্থ হয়েছে, এমনটা বলা হয়। কিন্তু আমি বলব, আসলে তা ব্যর্থ হয়নি। এই আলোচনা ইসরায়েলি ঔপনিবেশিকদের জন্য মূল্যবান সময় এনে দিয়েছে। এই সুযোগে তারা সরাসরি ইসরায়েলি রাষ্ট্রের পৃষ্ঠপোষকতায় আরও বেশি ফিলিস্তিনি জমি ও পানি দখল করেছে। গাজার ওপর শাস্তিমূলক অবরোধ আরও তীব্র করেছে। এবং পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি দখলদারি আরও মজবুত করেছে। শান্তি আলোচনার ন্যায্য ফলাফলের জন্য মধ্যস্থতাকারী তৃতীয় পক্ষকে অবশ্যই ন্যায়বিচারে অঙ্গীকারবদ্ধ হতে হবে। অথচ এই কথিত শান্তি আলোচনার ‘সৎ মধ্যস্থতাকারী’ বলে পরিচিত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কখনোই এই ন্যায্যতার জন্য আন্তরিকভাবে কাজ করেনি।
তারা বলে, তাহলে, এসব ইসরায়েলি শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানগুলো বয়কট করা কি বাক্স্বাধীনতা পরিপন্থী নয়? এ প্রশ্নের একটি উত্তর হলো—অসম রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের মধ্যে অন্তহীন আলোচনা অর্থহীন। বিশেষ করে যখন একপক্ষ অন্যটির চেয়ে কেবল বহুগুণ শক্তিশালীই নয়; বরং শক্তিশালী পক্ষটি অপরকে অবজ্ঞা ও ঘৃণার দৃষ্টিতে দেখে থাকে।বেশির ভাগ ইসরায়েলি মনে করেন, ফিলিস্তিনিদের কাছ থেকে তাঁরা একধরনের ‘অস্তিত্বগত হুমকির’ মুখে রয়েছেন। আসলে এই ধরনের বিশ্বাসই ন্যায়সংগত শান্তি অর্জনের পথে একটি বড় বাধা। সত্যিকার অর্থে ইসরায়েল একটি ধনী ও শক্তিশালী রাষ্ট্র। তাদের রয়েছে বিশ্বের অন্যতম আধুনিক ও শক্তিশালী সামরিক বাহিনী। রয়েছে পারমাণবিক অস্ত্র। আছে প্রযুক্তিনির্ভর অর্থনীতি। ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকার অকুণ্ঠ সমর্থন রয়েছে। প্রতিবেশী মিসর ও জর্ডানের সঙ্গে মজবুত চুক্তি আছে। এবং উপসাগরীয় দেশগুলোর সঙ্গে ক্রমবর্ধমান সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে উঠছে। সেই রাষ্ট্র যদি বলে যে, ইসরায়েলের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও ভৌগোলিক কর্তৃত্বাধীন ছোট ছোট বিচ্ছিন্ন ভূখণ্ডে বসবাসরত একটি নিরস্ত্র জনগোষ্ঠী তাদের জন্য ‘অস্তিত্বের হুমকি’, তখন সেটা হয় ভয়াবহ বিভ্রম, নয়তো ইচ্ছাকৃত মিথ্যাচার। এই ধরনের বিভ্রম থেকে যে শিক্ষা নেওয়া যায়, তা হলো—ইসরায়েলি রাষ্ট্রযন্ত্র যে শক্তি দিয়ে এই ‘ভয়-মনোবৃত্তি’ তৈরি করেছে, সেটি ভাঙার জন্য একটি পাল্টা নৈতিক ও রাজনৈতিক শক্তির প্রয়োজন। এ ক্ষেত্রে সহিংসতা কোনো কার্যকর বা নৈতিক পথ নয়। বরং প্রয়োজন এমন এক প্রচেষ্টা, যা অহিংস উপায়ে ইসরায়েলি সমাজকে বাস্তবতা চিনতে বাধ্য করে। এটি একটি নৈতিক শিক্ষা। এটি ব্যর্থও হতে পারে। কিন্তু কাউকে না কাউকে অন্তত চেষ্টা করা উচিত।
বিডিএস আন্দোলনের লক্ষ্য ব্যক্তি নয়; বরং প্রতিষ্ঠান। তবে প্রতিষ্ঠান আর ব্যক্তির মধ্যে আলাদা করা কঠিন বলে এর বিরোধীরা মনে করেন। যার ফলে, তাঁদের মতে, নিরপরাধ ব্যক্তিরাও ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। আইনি পরিভাষায় ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান উভয়কেই ‘পারসন’ বলা হয়। তবে বাস্তবে একজন ব্যক্তি, ব্যক্তি হিসেবে যেমন নিজস্ব পরিচয়ে থাকেন, তেমনই কোনো প্রতিষ্ঠান বা করপোরেট সত্তারও আলাদা সত্তা রয়েছে। সুতরাং, দুয়ের মধ্যে পার্থক্য নির্ধারণে তেমন সমস্যা থাকা উচিত নয়। আমার দৃষ্টিতে, একজন ব্যক্তি যদি এমন কোনো প্রতিষ্ঠানের সদস্য হন, যার কার্যক্রম অনৈতিক বা অন্যায়, এবং তিনি সেই কর্মকাণ্ডের পৃষ্ঠপোষকতা করেন বা তার ওপর প্রভাব রাখেন, তাহলে সেই ব্যক্তি অবশ্যই সেই প্রতিষ্ঠানের কর্মের নৈতিক দায় এড়াতে পারেন না। তাই কেউ চাইলে, নেতানিয়াহুর কোনো রাজনৈতিক ভাষণ বয়কট করতে পারেন। কিংবা [গাজায়] নির্যাতনের বৈধতাদানকারী একজন আইন বিশেষজ্ঞকে আমেরিকান বিশ্ববিদ্যালয়ে বক্তৃতা দেওয়ার নিমন্ত্রণ বাতিলের দাবি ওঠাতে পারেন। আমার দৃষ্টিতে এই অবস্থান নেওয়া মানে বিডিএস আন্দোলনের সমর্থনের অন্ধ অনুসরণ নয়। এখানে প্রশ্নটি এটি নয় যে ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে আলাদা করা যায় কি না (নিশ্চয়ই যায়); বরং আমি স্পষ্ট করে বলছি, আসল প্রশ্ন হলো কীভাবে আমরা সেই ‘বাস্তব’ ব্যক্তিদের শনাক্ত করব এবং তাদের জবাবদিহির আওতায় আনব, যারা কোনো ‘কৃত্রিম’ সত্তা—অর্থাৎ প্রতিষ্ঠান—এর অংশ হয়ে সেই প্রতিষ্ঠানের অন্যায় কর্মকাণ্ডকে সহায়তা করেছেন বা তাতে মদদ দিয়েছেন। আর এই প্রশ্নের উত্তর দিতে হলে প্রতিটি ঘটনাকে তার নিজস্ব বাস্তবতা অনুযায়ী আলাদাভাবে বিশ্লেষণ করতে হবে।
এখানে প্রশ্নটি এটি নয় যে ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে আলাদা করা যায় কি না (নিশ্চয়ই যায়); বরং আমি স্পষ্ট করে বলছি, আসল প্রশ্ন হলো কীভাবে আমরা সেই ‘বাস্তব’ ব্যক্তিদের শনাক্ত করব এবং তাদের জবাবদিহির আওতায় আনব, যারা কোনো ‘কৃত্রিম’ সত্তা—অর্থাৎ প্রতিষ্ঠান—এর অংশ হয়ে সেই প্রতিষ্ঠানের অন্যায় কর্মকাণ্ডকে সহায়তা করেছেন বা তাতে মদদ দিয়েছেন।কিন্তু একাডেমিক প্রতিষ্ঠান বয়কট কি আদৌ ইসরায়েলের এই অবাস্তব ভীতিকে দূর করতে সাহায্য করতে পারে? আমার ইসরায়েলি প্রতিবাদী বন্ধুদের বিশ্বাস, এটি ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে ইসরায়েল যা করছে এবং করে চলেছে, তা নিয়ে একটি বাস্তব গণবিতর্ক উসকে দেবে। আমি এই বিষয়ে তাঁদের বিচারবোধকে সম্মান করি। ঠিক যেমন আমি হেনরি সিগম্যানের মতো বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বদের সাহস, সুসংহত অবস্থান ও নীতি–নিষ্ঠাকে শ্রদ্ধা করি। তাঁরা ইহুদি ধর্মীয় মূল্যবোধকে কাজে লাগিয়ে ১৯৪৮ সালের সীমানার ভেতরে ও বাইরে বসবাসরত ফিলিস্তিনিদের প্রতি ইসরায়েলি সরকারের [বৈষম্যমূলক] নীতির বিরোধিতা করেন। তাঁরা ইসরায়েলি উগ্র জাতীয়তাবাদীদের একচোখা ও দখলদার রাজনৈতিক জগতের এক বিকল্প দৃষ্টিভঙ্গি উপস্থাপন করেন। আমেরিকান, ইসরায়েলি ও ইউরোপীয় তরুণ প্রজন্মের সেক্যুলার ইহুদিরাও বিডিএস ও অন্যান্য ন্যায়সংগত আন্দোলনের প্রতি ক্রমবর্ধমানভাবে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এসব আন্দোলন [আন্তর্জাতিক] বিভিন্ন ফোরামে ইসরায়েলি রাষ্ট্রকে চাপ সৃষ্টি করছে। (ইসরায়েলের ভেতরে এগুলোর মধ্যে সম্ভবত সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হলো জয়েন্ট লিস্ট। এটি সাম্প্রতিক নির্বাচনে ফিলিস্তিনিদের জন্য রাজনৈতিক ন্যায়বিচার এবং সবার জন্য অর্থনৈতিক ন্যায়বিচারের দাবি নিয়ে এসেছে। যদিও এটি ইসরায়েলের নেসেটের রাজনীতিতে কোনো প্রভাব ফেলবে কি না, তা দেখার বিষয়।)
হ্যাঁ, বয়কট প্রায়ই নিরীহ মানুষদেরও কষ্ট দেয়। যেমনটি ঘটেছিল আমেরিকার দক্ষিণাঞ্চলের নাগরিক অধিকার আন্দোলনে। কিংবা দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবাদবিরোধী সংগ্রামে। কিন্তু এই ‘পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া’ কোনোভাবেই [গাজার] মানুষের প্রাণহানি বা গৃহহীন করার সমতুল্য নয়। বিডিএস আন্দোলন তার ঘোষিত লক্ষ্যে শেষ পর্যন্ত কতটা সফল হবে বা হবে না, তা নিশ্চিতভাবে বলা কঠিন। কারণ, রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের ফলাফল কখনই পুরোপুরি পূর্বানুমান করা যায় না। তবে শেষতক অনেক কিছুই নির্ভর করবে এই বিষয়ের ওপর যে, নৈতিক প্রেরণা ও রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক চাপের সমন্বয়ে ইসরায়েলিদের এমন একটি অধিক ন্যায়ভিত্তিক ব্যবস্থার দিকে নিয়ে যাওয়া যায় কি না, যেখানে ফিলিস্তিনিরাও অন্তর্ভুক্ত থাকবে। এই প্রয়াসে ইসরায়েলি ইহুদি প্রতিবাদীদের ভূমিকা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু তাঁদের প্রতি ইসরায়েলের বাইরের প্রতিষ্ঠানগুলো ও ব্যক্তিদের সমর্থনও জরুরি। ইসরায়েলি রাষ্ট্রীয় অবিচারকে টিকিয়ে রাখতে সহায়তাকারী একাডেমিক প্রতিষ্ঠানগুলোর এই বয়কট একদিকে শিল্পবিরোধী ধর্মঘটের মতো, যা শ্রমজীবী মানুষের জীবনমান উন্নয়নে সহায়ক হয়েছে। অন্যদিকে এটি নাগরিক অসহযোগ আন্দোলনের মতো, যা নাগরিক অধিকার প্রসারে ভূমিকা রেখেছে। প্রায়ই এ আন্দোলনকে অপপ্রচারের মুখোমুখি হতে হয়। কখনো কখনো এটি ব্যর্থও হয়। তবে কঠিন পরিস্থিতিতে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার চেষ্টায় এটি একটি অপরিহার্য মাধ্যম।