আইসিসি মুট কোর্ট প্রতিযোগিতার বিশ্ব আসরে প্রেসিডেন্সি ইউনিভার্সিটির অনন্য অর্জন
Published: 29th, June 2025 GMT
নেদারল্যান্ডসের হেগ শহরে আয়োজিত আইসিসি মুট কোর্ট কম্পিটিশনে (আইসিসিএমসিসি) প্রেসিডেন্সি ইউনিভার্সিটির আইন ও বিচার বিভাগ আইবিএ স্পিরিট অব দ্য কম্পিটিশন পুরস্কার অর্জন করেছে।
গত ১১ জুন থেকে ১৮ জুন অনুষ্ঠিত এই আয়োজনে বাংলাদেশ থেকে একমাত্র প্রতিনিধি হিসেবে অংশ নেয় প্রেসিডেন্সি ইউনিভার্সিটি।
প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারী চার সদস্য বিশিষ্ট মুট কোর্ট টিমে ছিলেন সৈয়দ মাহিন, মাহবুবুর রহমান সোহাগ, সোনালী রাজবংশী এবং দীপাণ্বিতা চাকমা। তাদের কোচ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন বিভাগের প্রভাষক সাল সাবিল চৌধুরী এবং সহকারী কোচ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন মো.
এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের ৪৫টি দেশ থেকে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষার্থীদের ৮৮টি দল আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) সদরদপ্তরে ওই আদালতের আদলে গঠিত কোর্ট রুমে তর্ক-বিতর্কে অংশ নেয়। প্রতিযোগিতার মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা আন্তর্জাতিক ফৌজদারি আইন, মানবাধিকার ও বিচার প্রক্রিয়ার বিষয়ে বাস্তব অভিজ্ঞতা অর্জন করে।
আন্তর্জাতিক বার অ্যাসোসিয়েশন (আইবিএ) এ বছর প্রতিযোগিতায় প্রথমবারের মতো এই পুরস্কার প্রবর্তন করেছে।
গৌরবোজ্জ্বল এই অর্জনকে কেন্দ্র করে রোববার বেলা ১১ টায় রাজধানীর হোটেল লা ভিঞ্চির মোনালিসা হলে মিট দ্য প্রেস অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন ও বিচার বিভাগের বিভাগীয় প্রধান মো. দিদারুল ইসলাম ভূঁইয়া বলেন, আমাদের শিক্ষার্থীদের এই অর্জন শুধু তাদের ব্যক্তিগত নয়, বরং বাংলাদেশের আইন শিক্ষার একটি ঐতিহাসিক সাফল্য। এটি ভবিষ্যৎ আইন শিক্ষার্থীদের জন্য অনুপ্রেরণার বাতিঘর হয়ে থাকবে। আমাদের শিক্ষার্থীরা প্রমাণ করেছে যে, সঠিক দিকনির্দেশনা ও সহায়তা পেলে তারা বিশ্ব পরিমণ্ডলে নেতৃত্ব দিতে সক্ষম।
অনুষ্ঠানে স্কুল অব ল-এর ডিন মোহাম্মদ আজহারুল ইসলাম বলেন, আমরা অত্যন্ত গর্বিত যে আমাদের শিক্ষার্থীরা আইনের মতো একটি জটিল ও চ্যালেঞ্জিং বিষয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সাফল্যের সঙ্গে নিজেদের প্রতিভা তুলে ধরেছে। এ অর্জন ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে থাকবে।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
ইসির সিদ্ধান্ত ইতিবাচক
সব দল ও পক্ষের লক্ষ্য যদি হয় একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন, তাহলে নির্বাচনবিষয়ক আইন ও বিধিমালা সংশোধনের প্রয়োজনীয়তা অস্বীকার করা যাবে না। বিশেষ করে যেসব আইনের ফাঁকফোকর দিয়ে বিগত আওয়ামী লীগ সরকার নির্বাচনকে প্রহসনে পরিণত করেছে, সেগুলো মেরামত করা জরুরি হয়ে পড়েছে।
ইসির চূড়ান্ত প্রস্তাবে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সংজ্ঞায় ‘সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনী’ যুক্ত করা হয়েছে। আইনে এটি যুক্ত হলে তিন বাহিনীকে নির্বাচনী দায়িত্ব দিতে আলাদা কোনো আদেশের প্রয়োজন হবে না। প্রস্তাবে সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরাও পুলিশের মতো ভোটকেন্দ্রে দায়িত্ব পালন করতে পারবেন এবং বিনা পরোয়ানায় গ্রেপ্তারের ক্ষমতা পাবেন। এ ছাড়া ইভিএমে ভোট না করারও সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইসি।
অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় থাকায় ইসির পক্ষে সিদ্ধান্ত নেওয়া যতটা সহজ হয়েছে, রাজনৈতিক সরকারের সময়ে সেটা পারত কি না, সন্দেহ আছে। আমাদের দুর্ভাগ্য হলো, যখন যে দল ক্ষমতায় থাকে, তারা নির্বাচনে সশস্ত্র বাহিনীর ক্ষমতা ও এখতিয়ার নিজেদের সুবিধামতো নিয়ন্ত্রণ বা খর্ব করতে চায় আর বিরোধী দলে থাকলে বাড়ানোর জন্য মরিয়া হয়ে ওঠে। দ্বিতীয়ত, ইভিএম ব্যবহার নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে বিতর্ক ছিল বহু বছর ধরে। এ নিয়ে আন্দোলন-সংগ্রাম কম হয়নি। সে ক্ষেত্রে ইসির নেওয়া দুটি সিদ্ধান্তই ইতিবাচক বলে মনে করি। রাজনৈতিক দলগুলোও স্বাগত জানিয়েছে।
তবে ইসির বৈঠকে নেওয়া কিছু সিদ্ধান্ত বিতর্ক তৈরি করতে পারে। যেমন জোটগত নির্বাচনে দলীয় প্রতীক ব্যবহারের বাধ্যবাধকতা। আসন সমঝোতা ও জোটগত নির্বাচনকে এক করে দেখা ঠিক হবে কি না, তা আরও বিচার-বিবেচনার প্রয়োজন আছে বলে মনে হয়। অন্যদিকে ইসি একক প্রার্থীর ক্ষেত্রে ‘না’ ভোটের যে প্রস্তাব করেছে, তা নিয়েও বিতর্ক উঠেছে। নবম জাতীয় সংসদে ‘না’ ভোটের ব্যবস্থা ছিল সব আসনের ক্ষেত্রে। পরে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে এটি বাতিল করে দেয়। নির্বাচন কমিশন যে নির্বাচন উৎসবমুখর পরিবেশে হবে বলে আশা করছে, সেই নির্বাচনে একক প্রার্থী থাকার সম্ভাবনা ক্ষীণ। যদি ইসি না ভোটের প্রয়োজনীয়তা বোধ করে, সেটি সব আসনের জন্যই হওয়া উচিত।
ইসির প্রস্তাবে প্রার্থীদের নির্বাচনী ব্যয় নিরীক্ষার বিষয় সুনির্দিষ্ট করা (ব্যত্যয় হয়েছে মনে করলে ইসি সেগুলোই নিরীক্ষা করবে), দলের অনুদান ব্যাংকের মাধ্যমে নেওয়া এবং দাতার আয়কর বিবরণীতে সেটা দেখানোর বিধান করার কথা বলা হয়েছে। এর পক্ষে-বিপক্ষে মত এসেছে।
রাজনৈতিক দলের অনুদান বিষয়ে সর্বক্ষেত্রে ব্যাংকের মাধ্যমে গ্রহণ করার প্রস্তাবটি ভালো। রাজনৈতিক দলগুলো যেখানে সর্বক্ষেত্রে সরকার ও প্রতিষ্ঠানের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি চায়, সেখানে এ বিষয়ে আপত্তি করার কোনো যুক্তি নেই।
অনিয়মের কারণে পুরো আসনের ভোট বাতিলের সিদ্ধান্তও সাহসী বলে মনে করি। অবশ্যই তথ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে তা করতে হবে। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে তৎকালীন নির্বাচন কমিশন যখন একটি আসনের উপনির্বাচন পুরোপুরি বাতিল করেছিল, তখন সব দলই সেই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছিল। এখন আপত্তি কেন?
অতীতের তিক্ত অভিজ্ঞতার আলোকেই গত সোমবার নির্বাচন কমিশনের (ইসি) বৈঠকে নির্বাচনসংক্রান্ত আইন গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ বা আরপিও সংশোধনের বিষয়টি বিবেচনা করতে হবে। সংসদ না থাকায় ইসির প্রস্তাব অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদে যাবে। অনুমোদনের পর রাষ্ট্রপতি অধ্যাদেশ জারি করলে এগুলো আইনের অংশ হবে।