আট ঘণ্টা বসে কাজ করে যে ঝুঁকিতে পড়ছেন
Published: 30th, June 2025 GMT
অফিসে তো বটেই, ঘরেও একটানা দীর্ঘ সময় বসে কাজ করেন অনেকে। এমনকি কাজকর্ম সেরে বাকি সময় পার করেন বসে বসে। একটানা অনেকটা সময় বসে থাকলে শরীরে জড়তা চলে আসে। ব্যথাবেদনাও হতে পারে। আর সৃষ্টি হয় দীর্ঘমেয়াদি বিভিন্ন রোগের ঝুঁকি। তা ছাড়া মনের ওপরে পড়তে পারে নেতিবাচক প্রভাব। এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানালেন রাজধানীর পপুলার মেডিকেল কলেজের মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা.
নওসাবাহ্ নূর।
আমাদের চারপাশে এমন অনেকেই আছেন, যাঁরা প্রায়ই কোমরব্যথা বা ঘাড়ব্যথায় ভোগেন। এসব ব্যথার জন্য অধিকাংশ ক্ষেত্রে দায়ী আমাদের দেহভঙ্গি। অনেক অফিসেই এমন চেয়ার-টেবিল বা ডেস্কের ব্যবস্থা থাকে না, যাতে সঠিক দেহভঙ্গি বজায় রেখে বসে কাজ করা যায়।
একই ভঙ্গিতে বসে কাজ করতে করতে একসময় ফ্রোজেন শোল্ডারে আক্রান্ত হতে পারেন কেউ কেউ।
কম্পিউটারের পর্দায় একটানা তাকিয়ে থাকার জন্য চোখের শুষ্কতাও দেখা দিতে পারে।
বদ্ধ ঘর, যেখানে বায়ুপ্রবাহ কম থাকে, সেখানে অ্যালার্জিজনিত সমস্যার ঝুঁকি বাড়ে।
কারও কারও পায়ে পানি আসে, পা ভারী হয়ে যায়।
একটানা বসে কাজ করতে করতে একঘেয়েমি চলে আসাও খুব স্বাভাবিক।
ভবিষ্যতের বড়সড় স্বাস্থ্যঝুঁকিএকটানা বসে কাজ করতে গিয়ে বেশ কিছু দীর্ঘমেয়াদি সমস্যার ঝুঁকি বাড়ে। স্থূলতা, উচ্চ রক্তচাপ এবং ডায়াবেটিসের মতো সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে এই বসে কাজ করার অভ্যাস। বাড়তে পারে রক্তের খারাপ কোলেস্টেরল। পরবর্তী জীবনে হৃদ্রোগ বা স্ট্রোকের মতো মারাত্মক রোগের ঝুঁকি সৃষ্টি হতে পারে এভাবেই।
আরও পড়ুনকাজের ফাঁকে যেভাবে চোখকে বিশ্রাম দেবেন২০ মে ২০২২সুস্থ থাকতে যা করবেনসুস্থ থাকতে দেহটাকে সচল রাখা চাই-ই চাই। ঠিক কতটা সময় বসে কাজ করা নিরাপদ, সে বিষয়ে সর্বজনস্বীকৃত কোনো নির্দেশনা নেই। আর জীবনের প্রয়োজনে কাজ তো করতেই হবে। তবে প্রতি ঘণ্টায় একবারের জন্য হলেও চেয়ার ছেড়ে উঠুন, অফিসের ভেতরেই একটু হাঁটাহাঁটি করুন। হাত এবং কাঁধও নাড়াচাড়া করুন।
কাজের ফাঁকে যেকোনো সময় বিরতি পেলে মুঠোফোনের পর্দায় সময় ব্যয় না করে চেয়ার ছেড়ে উঠুন। হাঁটুন, হাত-পায়ের পেশির সঞ্চালন করুন যতটা সম্ভব।
যেকোনো ডিজিটাল পর্দায় একটানা কাজ করার সময় ২০ মিনিট পরপর ২০ সেকেন্ডের জন্য ২০ ফুট দূরের কোনো কিছুর দিকে তাকিয়ে থাকুন।
প্রার্থনার জন্য উঠতে পারেন। সহকর্মীকে কিছু বলতে হলে নিজে উঠে যেতে পারেন।
সুযোগ থাকলে চেয়ার ছেড়ে দাঁড়ানোর পর দেহভঙ্গি খানিকটা বদলে যেসব ব্যায়াম করা যায়, সেসব করে নিন অন্তত পাঁচবার। এ ধরনের একটি ব্যায়াম হলো স্কোয়াট।
আরও পড়ুনকাজের ফাঁকে ৫ মিনিটের ব্যায়াম২০ মে ২০১৫নিজের ডেস্কে বসেই দুপুরের খাবার বা নাশতা না খেয়ে একটু হেঁটে খাবার জায়গা পর্যন্ত যান।
বসার ব্যবস্থা স্বস্তিদায়ক না হলে অফিসের সবাই মিলে কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানান। তাঁদের অনুরোধ করুন, যাতে কর্মীদের বসার ব্যবস্থাটি স্বাস্থ্যকর হয়। চেয়ারগুলো যাতে ভালো মানের হয়, চেয়ারের গড়ন যাতে মেরুদণ্ডের স্বাভাবিক বক্রতা অনুযায়ী হয়, টেবিল বা ডেস্কের উচ্চতাও যেন হয় স্বস্তিদায়ক। দাঁড়িয়ে কাজ করা যায়, এমন ডেস্কে কিছুটা সময় কাজ করার ব্যবস্থাও করতে পারেন।
বসা অবস্থায়ও হাত-পা কিছুটা নাড়াচাড়া করুন। পায়ে পানি আসার প্রবণতা থাকলে পায়ের নিচে একটু উঁচু, সামান্য ঢালু কিছু একটা রাখতে চেষ্টা করুন। একটা নিচু টুল রাখলেও উপকার পাবেন।
অফিসে যাতায়াতের পথে খানিকটা হাঁটুন। সব সময় লিফট ব্যবহার না করে কয়েক তলা সিঁড়ি ভেঙে ওঠানামা করুন।
অফিসের আগে বা পরে শরীরচর্চার অভ্যাস করুন। সপ্তাহে অন্তত দেড় শ মিনিট মাঝারি তীব্রতার ব্যায়াম করুন, অথবা অন্তত ৭৫ মিনিট ভারী ব্যায়াম করুন। কিংবা এই দুই ধরনের ব্যায়াম মিলিয়েও নিতে পারেন। এর পাশাপাশি দেহের সব পেশির জোর বাড়ানোর ব্যায়ামও করুন সপ্তাহে অন্তত দুবার।
আরও পড়ুননাসা বলছে, ১০ মিনিটের এই সহজ ব্যায়াম দৌড়ের চেয়ে ৬৮ শতাংশ বেশি কার্যকর ০৯ জুন ২০২৫উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র ব যবস থ ক জ কর র জন য একট ন সময় ব সমস য
এছাড়াও পড়ুন:
আঙুল হঠাৎ ‘লক’ হয় কেন, হলে কী করবেন
আঙুল সোজা করতে গিয়ে হঠাৎ বেঁকে বা লক হয়ে যেতে পারে। এটাকে বলা হয় ট্রিগার ফিঙ্গার। চিকিৎসাবিজ্ঞানে যার নাম স্টেনোসিং টেনোসিনোভাইটিস।
আমাদের আঙুল বাঁকা বা সোজা করার কাজটি হয় টেনডন বা রশির মতো একটি বস্তুর মাধ্যমে। হাড়ের সঙ্গে ঘর্ষণ কমাতে কিছু ‘পুলি’–এর মধ্য দিয়ে চলে। এর একটি ‘এ ওয়ান’ পুলি। এটি ফুলে বা আঁটসাঁট হয়ে গেলে টেনডন সহজে নড়ানো যায় না।
এর ফলে আঙুল বাঁকানোর সময় আটকে যায় বা হঠাৎ ক্লিক দিয়ে সোজা হয়। এটাকেই বলা হয় ট্রিগার ফিঙ্গার।
কেন হয়, লক্ষণদীর্ঘদিন কারও ডায়াবেটিস থাকলে, রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস, থাইরয়েড হরমোনের সমস্যা (হাইপোথাইরয়ডিজম), হাতের অতিরিক্ত ব্যবহার—যেমন গ্রিপ করে কাজ করা, হাতুড়ি, কাঁচি ইত্যাদির কারণে এটা হয়ে থাকে। এটি বেশি হয় নারীদের। সাধারণত ৪০ থেকে ৬০ বছর বয়সে এটা বেশি হতে দেখা যায়।
সকালের দিকে আঙুল শক্ত হয়ে থাকা বা সোজা হতে না চাইলে বুঝবেন ট্রিগার ফিঙ্গার হয়েছে। এ ছাড়া আঙুল বাঁকিয়ে ছেড়ে দিলে আটকে যায় বা ক্লিক শব্দ দিয়ে সোজা হওয়া, আঙুলের নিচের তালুর গোড়ার দিকে ব্যথা, আবার কখনো কখনো আঙুল একদম ‘লক’ হয়ে যেতে পারে।
আরও পড়ুন৮ বছর আগে যেমন ছিল সাদাপাথর পর্যটনকেন্দ্র, দেখুন ২০টি ছবি৭ ঘণ্টা আগেকরণীয় ও চিকিৎসাবারবার শক্তভাবে কিছু ধরা বা চেপে ধরার মতো কাজ কমাতে হবে।
ভারী জিনিস তোলা, ঝাড়ু দেওয়া, হাতুড়ি ব্যবহার সীমিত করতে হবে।
একটানা কোনো কাজ না করে মাঝেমধ্যে হাত বিশ্রামে রাখা।
ঘুমের সময় হাত মোড়ানো অবস্থায় না রেখে খোলা রাখতে চেষ্টা করা।
কলম বা হাতলের ওপর হালকা গ্রিপ ব্যবহার করা।
আরও পড়ুনআইপিএস ব্যাটারি দীর্ঘদিন ভালো রাখার ৫টি কার্যকর উপায়৫ ঘণ্টা আগেআঙুল সোজা করে রাখার জন্য ফিঙ্গার স্প্লিন্ট বা ওভাল ৮ স্প্লিন্ট ব্যবহার করা যেতে পারে। এতে টেনডনে চাপ কমে এবং বেশ আরামও পাওয়া যায়। এ ছাড়া ফিজিক্যাল থেরাপি বা মেশিন থেরাপি দেওয়া যায়। যেমন প্রদাহ কমাতে আলট্রাসাউন্ড থেরাপি, ব্যথা কমাতে টেনস থেরাপি এবং প্রদাহ–ব্যথা কমাতে ক্রায়োথেরাপি অর্থাৎ বরফ সেঁক বেশ কার্যকর।
ব্যথানাশক ইনজেকশন দেওয়া যেতে পারে। যদি ওপরের সব ব্যবস্থা তিন থেকে ছয় মাসে কাজে না আসে, তখন পারকিউটেনিয়াস রিলিজ বা ওপেন সার্জারির মাধ্যমে ‘এ ওয়ান’ পুলি কেটে দেওয়া হয়।
আঙুলের ব্যায়ামআঙুলের ব্যায়াম বেশ কার্যকর। থেরাপিস্টের মাধ্যমে বা নিজে নিজে ব্যায়াম করতে পারেন। যেমন ধীরে ধীরে আঙুল নাড়ানো, টেনডন গ্লাইডিং, থেরাপিউটিক পুটি বা বল ব্যবহার করে গ্রিপ শক্তিশালী করা, ব্যথা না বাড়লে ধীরে ধীরে ফ্লেক্সন-এক্সটেনশন ব্যায়াম শুরু করা যায়।
ডা. সাকিব আল নাহিয়ান, ফিজিক্যাল মেডিসিন বিশেষজ্ঞ, গ্রিন লাইফ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল, ঢাকা
আরও পড়ুনসারা টেন্ডুলকারই কি ভাই অর্জুনের বিয়ের ঘটক? বিস্তারিত জানুন ছবিতে ছবিতে১ ঘণ্টা আগে