দরপত্র ছাড়া চুক্তির জন্য গত সরকারের অনুমোদিত নবায়নযোগ্য জ্বালানিভিত্তিক ৩৭টি বিদ্যুৎকেন্দ্রের সম্মতিপত্র (লেটার অব ইনটেন্ট) গত বছর বাতিল করে দেয় অন্তর্বর্তী সরকার। এর মধ্যে বেসরকারি খাতের ৩১টি। এসব বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে ইতিমধ্যেই জমি কেনাসহ আরও কিছু বিনিয়োগ হয়েছে। ৩০ কোটি মার্কিন ডলারের বিদেশি বিনিয়োগ হয়েছে। এ ছাড়া বাতিলের পর এসব কেন্দ্র নির্মাণে দরপত্র ডেকেও সাড়া পাচ্ছে না সরকার।

আজ সোমবার রাজধানীর একটি হোটেলে আয়োজিত সেমিনারে এসব কথা বলেছে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)। এতে উপস্থাপন করা নিবন্ধে বলা হয়, সরকারের নীতি পরিবর্তনের কারণে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থার সংকট তৈরি হয়েছে। তারা স্থিতিশীল নীতি চায়, সরকার পরিবর্তন হলেও যাতে নীতি ঠিক থাকে। বিনিয়োগের আস্থা ফেরাতে বাতিল সৌরবিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর সম্মতিপত্র পর্যালোচনা করা উচিত।

তৃতীয় বাংলাদেশ-চায়না নবায়নযোগ্য জ্বালানি ফোরামের পক্ষ থেকে ‘নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে বিনিয়োগে প্রাতিষ্ঠানিক চ্যালেঞ্জ: চীনের বিদেশি বিনিয়োগ প্রেক্ষিত’ শিরোনামে নিবন্ধটি উপস্থাপন করা হয়। এতে বলা হয়, বিদ্যুৎকেন্দ্রের সম্মতিপত্র বাতিলের বিষয়টি কীভাবে পর্যালোচনা করা হয়েছে, তা পরিষ্কার করা উচিত সরকারের। যাদের জমি কেনাসহ প্রকল্পে অগ্রগতি আছে, তাদের পুনরায় আবেদন করতে বলা যেতে পারে। তাদের অগ্রাধিকার সুবিধা দিতে পারে সরকার।

নিবন্ধে বলা হয়, সম্মতিপত্র চূড়ান্ত চুক্তি নয়। তবে সরকারের সম্মতিপত্রে আস্থা রাখে বিনিয়োগকারীরা। এর ভিত্তিতে তারা প্রকল্প বাস্তবায়নে কাজ শুরু করে দেয়। বেসরকারি ৩১টি বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ৩ হাজার ২৮৭ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের কথা। সরকারের ইতিবাচক সংকেত পেয়ে ১৫টি কোম্পানি জমি কিনেছে। বিভিন্ন কর পরিশোধ করেছে। এসব বিনিয়োগ ফেরত পাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। জমি বিক্রি করা কেনার চেয়ে কঠিন। চারটি প্রকল্পে চীনের সরাসরি বিনিয়োগ আছে, যার দুটিতে শতভাগ মালিকানা চীনের কোম্পানির। দেশে বিদেশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে চীনের বিনিয়োগকারীরা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাদের আস্থা ফেরাতে তাই বিনিয়োগ ফেরত বা অন্য কোনোভাবে সহায়তা দিতে পারে সরকার।

জ্বালানি খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) চেয়ারম্যান জালাল আহমেদ বলেন, নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে গুরুত্ব দিচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকার। সিপিডির সুপারিশ নিয়ে সরকারের সঙ্গে আলোচনা করবে বিইআরসি। বিদ্যুৎকেন্দ্র বাতিলের বিষয়টি পর্যালোচনার সুযোগ থাকলে সরকার নিশ্চয়ই করবে এবং কারও সঙ্গে চুক্তির সুযোগ থাকলে সেটাও সরকার বিবেচনা করবে বলে তাঁর বিশ্বাস।

দরপত্র ছাড়া সব সময়ই চুক্তির বিরোধিতা করেছে সিপিডি, এখন কেন তাহলে বাতিল বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো পুনরায় পর্যালোচনা করতে বলছে—সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, সরকারের সম্মতিপত্র নিয়ে বিনিয়োগ হয়েছে, এ কারণেই পর্যালোচনার দাবি জানানো হয়েছে। পর্যালোচনার মানে আগের নির্ধারিত দামে চুক্তি নয়, বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় যৌক্তিক দাম নির্ধারণ করার কথা বলা হয়েছে।

বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) হেড অব বিজনেস ডেভেলপমেন্ট নাহিয়ান রহমান বলেন, আলোচনা থেকে যেসব প্রস্তাব আসছে, সেগুলো সরকারের কাছে উপস্থাপন করবে বিডা। বিনিয়োগের বিচারে চীন অগ্রাধিকার বিবেচনায় থাকা দেশ। বিনিয়োগের জন্য যা যা করণীয়, বিডা সেই ব্যবস্থা নেবে।

সিপিডির নিবন্ধে বলা হয়, বিদেশিদের ব্যবসার ক্ষেত্রে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে। এর মধ্যে আছে কোম্পানি গঠনে জটিল প্রক্রিয়া, আংশিক ডিজিটালাইজেশন, বিদেশি বিনিয়োগে আর্থিক কাঠামোগত প্রতিবন্ধকতা, বহুপক্ষীয় লাইসেন্সের বাধ্যবাধকতা। নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে বিনিয়োগের ক্ষেত্রেও নানা বাধা আছে। এসব প্রতিবন্ধকতা দূর করে বিদেশি বিনিয়োগের জন্য ব্যবসার পরিবেশ সহজতর করার সুপারিশ করেছে সিপিডি। বিদেশি বিনিয়োগের জন্য একটি সহায়তা কেন্দ্র চালু করা যেতে পারে।

বাংলাদেশ সোলার অ্যান্ড রিনিউয়েবল এনার্জি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মোস্তফা আল মাহমুদ বলেন, বিদ্যুৎকেন্দ্রের সম্মতিপত্র বাতিল করায় বিদেশি বিনিয়োগে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। তাই যত দ্রুত সম্ভব এটা প্রত‍্যাহার করা উচিত সরকারের।

নিবন্ধটি উপস্থাপন করেন সিপিডির প্রোগ্রাম অ্যাসোসিয়েট আবরার আহমেদ ভূঁইয়া। সেমিনার সঞ্চালনা করেন খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম। এখানে দেশি ও বিদেশি বিনিয়োগকারীরা বক্তব্য দেন। তাঁরা বলেন, সব বিদ্যুৎকেন্দ্রের সম্মতিপত্র তো রাজনৈতিক বিবেচনায় হয়নি। ৩৭টি বিদ্যুৎকেন্দ্রের মধ্যে কোনটায় দুর্নীতি হয়েছে, সেটা সরকার বলুক। সব কয়টা ঢালাওভাবে বাতিল কেন? কোনো কোনো প্রকল্পের বয়স হয়ে গেছে ৫ বছর। এসব প্রকল্প পর্যালোচনা করা উচিত সরকারের। সরকার নতুন বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে সম্মেলন করছে, অথচ যারা এখানে আছে সেই বিদেশি বিনিয়োগকারীদের গুরুত্ব দিচ্ছে না। বাতিল বিদ্যুৎকেন্দ্রের সম্মতিপত্রগুলো যাচাই করতে একটি কমিটি করে পুনর্বিবেচনা করা উচিত। এতে দরপত্রে অংশ নেওয়ায় বিদেশি বিনিয়োগকারীদের অনীহা কমতে পারে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ত সরক র র প রকল প দরপত র র জন য ন বন ধ

এছাড়াও পড়ুন:

রসুনের চায়ের এই পাঁচটি গুণের কথা জানতেন?

রসুনের চা পান করেছেন? এতে আছে অ্যান্টি-বায়োটিক এবং অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট্য। যেগুলো স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী। জেনে নিন, রসুনের চা পানের উপকারিতাগুলো।

অনেকেই সকালে খালি পেটে হয়তো রসুন খেয়ে থাকেন, যা শরীরের অনেক সমস্যা থেকে মুক্তি দেয়৷ কিন্তু কখনও কি রসুনের চা পান করেছেন? এই চা আপনার ত্বকের যত্ন নেবে, স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কমাবে। এ ছাড়াও নানাভাবে উপকৃত হতে পারেন।তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক, রসুনের চায়ের উপকারিতা ।

ব্যাকটেরিয়া থেকে রক্ষা করে
রসুন চায়ে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, অ্যান্টি-সেপটিক এবং অ্যান্টি-ফাঙ্গাল বৈশিষ্ট্য রয়েছে । যা শরীরকে ব্যাকটেরিয়া থেকে রক্ষা করে এবং ইমিউন সিস্টেমকে শক্তিশালী করতে সাহায্য করে । এটি দিয়ে আপনি মরশুমি রোগ থেকেও বাঁচতে পারেন । এর জন্য প্রতিদিন সকালে অবশ্যই রসুনের চা পান করতে হবে ।

আরো পড়ুন:

৪ মাস পর হিলি বন্দর দিয়ে চাল আমদানি শুরু

জুলাইয়ে রেমিট্যান্স এল ২৪৮ কোটি ডলার

হজমশক্তি বাড়ায়
রসুনে যে এনজাইম পাওয়া যায় তা হজমশক্তি বাড়ায়। এতে উপস্থিত পুষ্টি বদহজম দূর করতে সাহায্য করে ।

স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়
রসুন চায়ে ক্যানসার প্রতিরোধী গুণ রয়েছে । যা অনেক ধরনের ক্যান্সারের প্রতিরোধে সহায়ক । যারা রসুন চা খান তাদের পাকস্থলী এবং স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি কমতে পারে।

ওজন কমায়
রসুন চা ওজন কমাতেও সাহায্য করতে পারে । এই চা পান করলে মেটাবলিজম বাড়ে এবং খিদেও কমে । যার কারণে আপনি অতিরিক্ত খাওয়া থেকে বিরত থাকবেন । এভাবে ওজন কমাতে সাহায্য করে ।

ত্বককে ফ্রি র‌্যাডিক্যাল থেকে রক্ষা করে
রসুন চায়ে রয়েছে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট্য, যা ত্বককে ফ্রি র‌্যাডিক্যাল থেকে রক্ষা করে । এটি ত্বককে তরুণ রাখতে সাহায্য করে । এই চা পান করলে ব্রণ এবং একজিমার মতো ত্বকের সমস্যা থেকেও মুক্তি পাওয়া যায় ।

তথ্যসূত্র: ইটিভি ভারত

ঢাকা/লিপি

সম্পর্কিত নিবন্ধ