৩১টি সৌরবিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে সম্মতিপত্র বাতিলের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার আহ্বান সিপিডির
Published: 30th, June 2025 GMT
দরপত্র ছাড়া চুক্তির জন্য গত সরকারের অনুমোদিত নবায়নযোগ্য জ্বালানিভিত্তিক ৩৭টি বিদ্যুৎকেন্দ্রের সম্মতিপত্র (লেটার অব ইনটেন্ট) গত বছর বাতিল করে দেয় অন্তর্বর্তী সরকার। এর মধ্যে বেসরকারি খাতের ৩১টি। এসব বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে ইতিমধ্যেই জমি কেনাসহ আরও কিছু বিনিয়োগ হয়েছে। ৩০ কোটি মার্কিন ডলারের বিদেশি বিনিয়োগ হয়েছে। এ ছাড়া বাতিলের পর এসব কেন্দ্র নির্মাণে দরপত্র ডেকেও সাড়া পাচ্ছে না সরকার।
আজ সোমবার রাজধানীর একটি হোটেলে আয়োজিত সেমিনারে এসব কথা বলেছে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)। এতে উপস্থাপন করা নিবন্ধে বলা হয়, সরকারের নীতি পরিবর্তনের কারণে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থার সংকট তৈরি হয়েছে। তারা স্থিতিশীল নীতি চায়, সরকার পরিবর্তন হলেও যাতে নীতি ঠিক থাকে। বিনিয়োগের আস্থা ফেরাতে বাতিল সৌরবিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর সম্মতিপত্র পর্যালোচনা করা উচিত।
তৃতীয় বাংলাদেশ-চায়না নবায়নযোগ্য জ্বালানি ফোরামের পক্ষ থেকে ‘নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে বিনিয়োগে প্রাতিষ্ঠানিক চ্যালেঞ্জ: চীনের বিদেশি বিনিয়োগ প্রেক্ষিত’ শিরোনামে নিবন্ধটি উপস্থাপন করা হয়। এতে বলা হয়, বিদ্যুৎকেন্দ্রের সম্মতিপত্র বাতিলের বিষয়টি কীভাবে পর্যালোচনা করা হয়েছে, তা পরিষ্কার করা উচিত সরকারের। যাদের জমি কেনাসহ প্রকল্পে অগ্রগতি আছে, তাদের পুনরায় আবেদন করতে বলা যেতে পারে। তাদের অগ্রাধিকার সুবিধা দিতে পারে সরকার।
নিবন্ধে বলা হয়, সম্মতিপত্র চূড়ান্ত চুক্তি নয়। তবে সরকারের সম্মতিপত্রে আস্থা রাখে বিনিয়োগকারীরা। এর ভিত্তিতে তারা প্রকল্প বাস্তবায়নে কাজ শুরু করে দেয়। বেসরকারি ৩১টি বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ৩ হাজার ২৮৭ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের কথা। সরকারের ইতিবাচক সংকেত পেয়ে ১৫টি কোম্পানি জমি কিনেছে। বিভিন্ন কর পরিশোধ করেছে। এসব বিনিয়োগ ফেরত পাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। জমি বিক্রি করা কেনার চেয়ে কঠিন। চারটি প্রকল্পে চীনের সরাসরি বিনিয়োগ আছে, যার দুটিতে শতভাগ মালিকানা চীনের কোম্পানির। দেশে বিদেশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে চীনের বিনিয়োগকারীরা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাদের আস্থা ফেরাতে তাই বিনিয়োগ ফেরত বা অন্য কোনোভাবে সহায়তা দিতে পারে সরকার।
জ্বালানি খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) চেয়ারম্যান জালাল আহমেদ বলেন, নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে গুরুত্ব দিচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকার। সিপিডির সুপারিশ নিয়ে সরকারের সঙ্গে আলোচনা করবে বিইআরসি। বিদ্যুৎকেন্দ্র বাতিলের বিষয়টি পর্যালোচনার সুযোগ থাকলে সরকার নিশ্চয়ই করবে এবং কারও সঙ্গে চুক্তির সুযোগ থাকলে সেটাও সরকার বিবেচনা করবে বলে তাঁর বিশ্বাস।
দরপত্র ছাড়া সব সময়ই চুক্তির বিরোধিতা করেছে সিপিডি, এখন কেন তাহলে বাতিল বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো পুনরায় পর্যালোচনা করতে বলছে—সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, সরকারের সম্মতিপত্র নিয়ে বিনিয়োগ হয়েছে, এ কারণেই পর্যালোচনার দাবি জানানো হয়েছে। পর্যালোচনার মানে আগের নির্ধারিত দামে চুক্তি নয়, বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় যৌক্তিক দাম নির্ধারণ করার কথা বলা হয়েছে।
বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) হেড অব বিজনেস ডেভেলপমেন্ট নাহিয়ান রহমান বলেন, আলোচনা থেকে যেসব প্রস্তাব আসছে, সেগুলো সরকারের কাছে উপস্থাপন করবে বিডা। বিনিয়োগের বিচারে চীন অগ্রাধিকার বিবেচনায় থাকা দেশ। বিনিয়োগের জন্য যা যা করণীয়, বিডা সেই ব্যবস্থা নেবে।
সিপিডির নিবন্ধে বলা হয়, বিদেশিদের ব্যবসার ক্ষেত্রে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে। এর মধ্যে আছে কোম্পানি গঠনে জটিল প্রক্রিয়া, আংশিক ডিজিটালাইজেশন, বিদেশি বিনিয়োগে আর্থিক কাঠামোগত প্রতিবন্ধকতা, বহুপক্ষীয় লাইসেন্সের বাধ্যবাধকতা। নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে বিনিয়োগের ক্ষেত্রেও নানা বাধা আছে। এসব প্রতিবন্ধকতা দূর করে বিদেশি বিনিয়োগের জন্য ব্যবসার পরিবেশ সহজতর করার সুপারিশ করেছে সিপিডি। বিদেশি বিনিয়োগের জন্য একটি সহায়তা কেন্দ্র চালু করা যেতে পারে।
বাংলাদেশ সোলার অ্যান্ড রিনিউয়েবল এনার্জি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মোস্তফা আল মাহমুদ বলেন, বিদ্যুৎকেন্দ্রের সম্মতিপত্র বাতিল করায় বিদেশি বিনিয়োগে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। তাই যত দ্রুত সম্ভব এটা প্রত্যাহার করা উচিত সরকারের।
নিবন্ধটি উপস্থাপন করেন সিপিডির প্রোগ্রাম অ্যাসোসিয়েট আবরার আহমেদ ভূঁইয়া। সেমিনার সঞ্চালনা করেন খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম। এখানে দেশি ও বিদেশি বিনিয়োগকারীরা বক্তব্য দেন। তাঁরা বলেন, সব বিদ্যুৎকেন্দ্রের সম্মতিপত্র তো রাজনৈতিক বিবেচনায় হয়নি। ৩৭টি বিদ্যুৎকেন্দ্রের মধ্যে কোনটায় দুর্নীতি হয়েছে, সেটা সরকার বলুক। সব কয়টা ঢালাওভাবে বাতিল কেন? কোনো কোনো প্রকল্পের বয়স হয়ে গেছে ৫ বছর। এসব প্রকল্প পর্যালোচনা করা উচিত সরকারের। সরকার নতুন বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে সম্মেলন করছে, অথচ যারা এখানে আছে সেই বিদেশি বিনিয়োগকারীদের গুরুত্ব দিচ্ছে না। বাতিল বিদ্যুৎকেন্দ্রের সম্মতিপত্রগুলো যাচাই করতে একটি কমিটি করে পুনর্বিবেচনা করা উচিত। এতে দরপত্রে অংশ নেওয়ায় বিদেশি বিনিয়োগকারীদের অনীহা কমতে পারে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ত সরক র র প রকল প দরপত র র জন য ন বন ধ
এছাড়াও পড়ুন:
সরকারি কেনাকাটায় অনলাইনে দরপত্র বাধ্যতামূলক
সরকারি কেনাকাটায় সুশাসন ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে সরকারি ক্রয়নীতিতে (পিপিএ) বড় পরিবর্তন আনা হয়েছে। নতুন ক্রয়নীতিতে সব ধরনের সরকারি কেনাকাটায় অনলাইনে দরপত্র আবেদন (ই–জিপি) বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। গত রোববার নতুন এই বিধিমালা গেজেট হিসেবে প্রকাশ করে কার্যকর করা হয়েছে।
গতকাল মঙ্গলবার বাংলাদেশ সরকারি ক্রয় কর্তৃপক্ষ বা পাবলিক প্রকিউরমেন্ট অথরিটি (বিপিপিএ) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানায়। সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ২০০৬ সালে প্রকাশিত পাবলিক প্রকিউরমেন্ট অ্যাক্টে (পিপিএ) আনা সংশোধনের সঙ্গে সামঞ্জস্য রাখতে নতুন পিপিআর ২০২৫ তৈরি করা হয়। এখন থেকে সরকারি কেনাকাটায় সংশোধিত পিপিএ ২০০৬ ও নতুন পিপিআর ২০২৫ দুটিই কার্যকর হবে।
আরও কী কী পরিবর্তন এসেছে
নতুন সরকারি ক্রয়নীতিতে ১৫৪টি বিধি ও ২১টি তফসিল অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। নতুন বিধিমালায় অভ্যন্তরীণ কেনাকাটায় ১০ শতাংশ মূল্যসীমা বাতিল করা হয়েছে। এ ছাড়া চুক্তি পাওয়ার ক্ষেত্রে প্রকৃত উপকারভোগীর (বেনিফিশিয়ারি ওনারশিপ) তথ্য প্রকাশ বাধ্যবাধকতার কথা বলা হয়েছে। সেই সঙ্গে সরকারি ক্রয়ে টেকসই কেনাকাটা করতে হবে। সরকারি প্রতিটি কেনাকাটায় কৌশলগত পরিকল্পনা প্রস্তুত বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
নতুন বিধিমালায় আরও বলা হয়, ভৌত সেবাকে স্বতন্ত্র প্রকিউরমেন্ট ক্যাটাগরি হিসেবে স্বীকৃতি দিতে হবে। এ ছাড়া কাঠামো চুক্তি (ফ্রেমওয়ার্ক অ্যাগ্রিমেন্ট) দর–কষাকষির ক্ষেত্র সম্প্রসারণ করতে হবে। যেকোনো কেনাকাটার পরিকল্পনা বাতিলের জন্য একটি ডেবারমেন্ট বোর্ড (বাতিল করার ক্ষমতাপ্রাপ্ত বোর্ড) প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এ ছাড়া সম্পদ নিষ্পত্তিসংক্রান্ত স্পষ্ট বিধান তৈরি করতে হবে।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, নতুন বিধিমালা তৈরি করতে বাংলাদেশ পাবলিক প্রকিউরমেন্ট অথরিটি (বিপিপিএ) এ খাতের অংশীজনদের সঙ্গে পরামর্শ ও আলোচনা করে। আলোচনায় সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বড় ক্রয়কারী সংস্থা, দরদাতা, সাংবাদিক, নারী উদ্যোক্তা ও উন্নয়ন সহযোগীদের সঙ্গে জাতীয় ও স্থানীয় পর্যায়ে ১২টি সভা অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় অধিকাংশ অংশগ্রহণকারী পুরোনো বিধিমালায় সংশোধন না এনে সম্পূর্ণ নতুন পিপিআর করার মত দেন।
বাংলাদেশ পাবলিক প্রকিউরমেন্ট অথরিটির (বিপিপিএ) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এস এম মঈন উদ্দীন আহম্মেদ সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে বলেন, নতুন বিধিমালা দেশের সরকারি কেনাকাটা সংস্কারের ইতিহাসে মাইলফলক।
পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) সচিব মো. কামাল উদ্দিন বলেন, নতুন এই বিধিমালা সরকারি কেনাকাটার প্রক্রিয়ায় প্রতিযোগিতা ও ন্যায্যতা নিশ্চিত করতে গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি।