গাছ কাটার প্রতিবাদে জাবিতে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভসহ বিভিন্ন কর্মসূচি
Published: 30th, June 2025 GMT
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং (সিএসই) ভবনের সামনের প্রায় ৪০টি গাছ কেটে ফেলায় বিক্ষোভ মিছিল ও সংবাদ সম্মেলন করেছে ‘জাহাঙ্গীরনগর বাঁচাও আন্দোলন’। আগামী দুইদিনের মধ্যে মাস্টারপ্ল্যানের দরপত্র আহ্বানসহ চার দফা দাবি জানিয়েছেন সংগঠনটি।
সোমবার (৩০ জুন) বিকেল ৫টায় কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং (সিএসই) ভবনের সামনে গাছ কাটার স্থানে এ সংবাদ সম্মেলন করেন সংগঠনটির নেতাকর্মীরা।
এর আগে, বিকেল ৪টার দিকে তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলা এলাকা থেকে মিছিল শুরু করে। মিছিলটি রেজিট্রার ভবনের সামনে দিয়ে শহীদ মিনার হয়ে সিএসই ভবনের উল্টো দিকে এসে শেষ হয়।
আরো পড়ুন:
পাবিপ্রবিতে মেধাবী শিক্ষার্থীদের বৃত্তি প্রদান
জাবিতে নারী শিক্ষার্থী হেনস্তা ও নিরাপত্তা কর্মকর্তা আহত নিয়ে যা জানা গেল
সোমবার ভোরের দিকে সিএসই ভবন নির্মাণের জন্য ৪০টিরও বেশি কাটা গাছের মধ্যে শাল, সেগুন, জারুলসহ বিভিন্ন প্রজাতির গাছ রয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে চার দফা দাবি উত্থাপন করা হয়। দাবিগুলো হলো— সরকারের কারণ দর্শানোর নোটিশ উপেক্ষা করে কেন গাছ কাটা হলো তার জবাব বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে দিতে হবে; দুইদিনের মধ্যে মাস্টারপ্ল্যানের দরপত্র আহ্বান করতে হবে; পূর্ণাঙ্গ মাস্টারপ্ল্যান না হওয়া পর্যন্ত নতুন কোনো ভবনের কাজ শুরু করা যাবে না; অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্পের ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণ—প্রকৃতির যে ক্ষতিসাধন হয়েছে, তা পুনরুদ্ধারে জরুরি পদক্ষেপ নিতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে তারা বলেন, আওয়ামী আমলের প্রশাসন কোনো ধরনের পরিকল্পনা ছাড়াই বিভিন্ন জায়গায় রাতের আঁধারে এবং ছুটির সময়ে গাছ কেটে ভবন নির্মাণ করে শপিংলিস্ট উন্নয়নের মাধ্যমে এই বিশ্ববিদ্যালয়কে একটা কংক্রিটের জঞ্জালে পরিণত করার পায়ঁতারা চালায়। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনে অধিষ্ঠিত হয় মাস্টারপ্ল্যানের আন্দোলনকারী শিক্ষক।
আমরা আশায় ছিলাম, এই প্রশাসন অতি জরুরি ভিত্তিতে মাস্টারপ্ল্যান করে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণ-প্রকৃতি রক্ষার উপর গুরুত্ব দিবে। কিন্তু সেদিকে তারা কোনো গুরুত্ব দেননি। পরবর্তীতে, এই বিশ্ববিদ্যালয়ের নব্য প্রশাসন মাস্টারপ্ল্যানের উদ্যোগ না নিয়ে পূর্বের প্রশাসনের ফর্মূলা অনুসারে গাছ কেটে ভবন নির্মাণের পথে হাটতে থাকে। তারা গাণিতিক ও পদার্থ বিষয়ক অনুষদ ও চারুকলা ভবনের কাজ শুরু করার পায়ঁতারা নেয়।
তারা উল্লেখ করেন, জাহাঙ্গীরনগর বাঁচাও আন্দোলন গত ৫ মে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়, শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং পরিবেশ, বন ও জলবায়ূ পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে চলমান উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ বন্ধ রেখে মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়নের উদ্যোগ নিতে চিঠি প্রেরণ করে। সেই চিঠির প্রেক্ষিতে ইউজিসি এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে মাস্টারপ্ল্যান ব্যতিত উন্নয়ন প্রকল্প কেনো চলছে, তার কারণ দর্শানোর নোটিশ প্রদান করে এবং রাজউক সমস্ত প্রকল্পের কাজ বন্ধ করে মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়নের নির্দেশ দেয়।
তারা আরো বলেন, কারণ দর্শানোর নোটিশ পাওয়ার পর উপাচার্য আমাদের আশ্বাস দেওয়া হয়, গত ২০ মে এর মধ্যে তারা মাস্টারপ্ল্যানের দৃশ্যমান অগ্রগতি (ডিপিপি ও দরপত্র আহ্বান) প্রদর্শন করবে- এই মর্মে গত ৯ মে বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ কার্যালয় থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। কিন্তু এই প্রতিশ্রুতিও প্রশাসন রক্ষা করনি।
ঠিক যেভাবে তারা জাকসু নিয়ে টালবাহানা করছে, তিনবার তারিখ পরিবর্তন করেছে, একই প্রক্রিয়ায় মাস্টারপ্ল্যানের টেন্ডার নিয়েও টালবাহানা চলছে। মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়নে প্রশাসনের গড়িমসির কারণে আজ অব্দি আমরা কোনো ডিপিপি ও দরপত্র হাতে পাইনি।
এসময় তারা দাবি করেন, আজ সকালে সিএসই ভবনের সামনের এই জায়গায় প্রায় ৪০টা গাছ উপড়িয়ে ফেলা হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে প্রশাসন, সরকারের কারণ দর্শানোর নোটিশকে উপেক্ষা করেছে। একইসঙ্গে তারা তাদের নিজস্ব প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে প্রতারণা করেছেন। অথচ উপাচার্য এবং প্রকল্প পরিচালক এসে বললেন, তারা নাকি জানেনই না যে, এখানে গাছ কাটা হয়েছে।
তাদের এই দায় এড়ানো বক্তব্য আমরা ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করছি। বিশ্ববিদ্যালয় টেরিটোরিতে দিনের বেলায় অর্ধ শতাধিক গাছ কেটে ফেলার ঘটনা প্রশাসন জানে না, এই কথা আমরা বিশ্বাস করি না। আমরা মনে করি এটা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সেই পুরনো চাল যা তারা অভ্যুত্থান পরবর্তী সময়েও একইভাবে খেলে যাচ্ছে।
এসময় তারা অভিযোগ করেন, এই প্রশাসনও শেখ হাসিনার উন্নয়ন দর্শন থেকে সরে আসেনি। কারণ তারা আওয়ামী আমলের প্রকল্প পরিচালক নাসিরুদ্দিন, আওয়ামী আমলে ২০১৯ সালে মাস্টারপ্ল্যানের আন্দোলনকারীদের উপর হামলার সঙ্গে যুক্ত অধ্যাপক সোহেল আহমেদসহ আওয়ামী লীগের অন্যান্য দোসরদের নিয়ে এই প্রশাসন গড়ে তুলেছে।
গাছ কাটার বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক কামরুল আহসান বলেন, “গাছ কাটার বিষয়ে আমি সম্পূর্ণ অজ্ঞাত ছিলাম। খবর পাওয়া মাত্র আমি কাজ বন্ধ করে দিয়েছি। এছাড়া বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করার জন্য অধ্যাপক শামসুল আলমের নেতৃত্বে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে দিয়েছি।”
ঢাকা/আহসান/মেহেদী
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর জ হ ঙ গ রনগর ব র ব শ বব দ য প রকল প দরপত র স এসই আওয় ম
এছাড়াও পড়ুন:
এমফিল ও পিএইচডি প্রোগ্রামে ভর্তিপ্রক্রিয়ায় অভিন্ন নীতিমালা প্রণয়নে নিষ্ক্রিয়তা প্রশ্নে রুল
এমফিল ও পিএইচডি প্রোগ্রামে ভর্তিপ্রক্রিয়ায় বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করে অভিন্ন নীতিমালা প্রণয়নে নিষ্ক্রিয়তা কেন আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল দিয়েছেন হাইকোর্ট। এক রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে বিচারপতি ফাহমিদা কাদের ও বিচারপতি মো. আসিফ হাসানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ আজ রোববার এ রুল দেন।
রিট আবেদন থেকে জানা যায়, এমফিল/পিএইচডি প্রোগ্রামে ভর্তির জন্য গত ১০ আগস্ট বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। এ ক্ষেত্রে শিক্ষাগত যোগ্যতার শর্তে ন্যূনতম নম্বর, শ্রেণির সঙ্গে যে জিপিএ/সিজিপিএ নির্ধারণ করা হয়েছে তা অসামঞ্জস্যপূর্ণ এবং অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বুয়েট, চুয়েট ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়) তুলনায় অনেক বেশি উল্লেখ করে তা সমন্বয়ের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন দেন কয়েকজন প্রার্থী। এতে ফল না পেয়ে সালাহ উদ্দিন মোহাম্মদ উজ্জলসহ তিনজন প্রার্থী রিটটি করেন।
আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী জুয়েল আজাদ, সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী মোহাম্মদ রিয়াজ উদ্দিন আদনান। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মুহাম্মদ শফিকুর রহমান ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল ইকরামুল কবির।
পরে আইনজীবী জুয়েল আজাদ প্রথম আলোকে বলেন, এমফিল ও পিএইচডি প্রোগ্রামে ভর্তিপ্রক্রিয়ায় অভিন্ন কোনো নীতিমালা না থাকায় গ্রেডিং সিস্টেম নির্ধারণে বিশ্ববিদ্যালয় ভেদে বৈষম্য দেখা যায়। কারণ, সুনির্দিষ্ট কোনো নীতিমালা নীতিমালা নেই। ফলে অনেক শিক্ষার্থী ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। শিক্ষাসচিব, উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যসহ বিবাদীদের চার সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।