জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং (সিএসই) ভবনের সামনের প্রায় ৪০টি গাছ কেটে ফেলায় বিক্ষোভ মিছিল ও সংবাদ সম্মেলন করেছে ‘জাহাঙ্গীরনগর বাঁচাও আন্দোলন’। আগামী দুইদিনের মধ্যে মাস্টারপ্ল্যানের দরপত্র আহ্বানসহ চার দফা দাবি জানিয়েছেন সংগঠনটি।

সোমবার (৩০ জুন) বিকেল ৫টায় কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং (সিএসই) ভবনের সামনে গাছ কাটার স্থানে এ সংবাদ সম্মেলন করেন সংগঠনটির নেতাকর্মীরা।

এর আগে, বিকেল ৪টার দিকে তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলা এলাকা থেকে মিছিল শুরু করে। মিছিলটি রেজিট্রার ভবনের সামনে দিয়ে শহীদ মিনার হয়ে সিএসই ভবনের উল্টো দিকে এসে শেষ হয়।

আরো পড়ুন:

পাবিপ্রবিতে মেধাবী শিক্ষার্থীদের বৃত্তি প্রদান

জাবিতে নারী শিক্ষার্থী হেনস্তা ও নিরাপত্তা কর্মকর্তা আহত নিয়ে যা জানা গেল

সোমবার ভোরের দিকে সিএসই ভবন নির্মাণের জন্য ৪০টিরও বেশি কাটা গাছের মধ্যে শাল, সেগুন, জারুলসহ বিভিন্ন প্রজাতির গাছ রয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে চার দফা দাবি উত্থাপন করা হয়। দাবিগুলো হলো— সরকারের কারণ দর্শানোর নোটিশ উপেক্ষা করে কেন গাছ কাটা হলো তার জবাব বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে দিতে হবে; দুইদিনের মধ্যে মাস্টারপ্ল্যানের দরপত্র আহ্বান করতে হবে; পূর্ণাঙ্গ মাস্টারপ্ল্যান না হওয়া পর্যন্ত নতুন কোনো ভবনের কাজ শুরু করা যাবে না; অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্পের ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণ—প্রকৃতির যে ক্ষতিসাধন হয়েছে, তা পুনরুদ্ধারে জরুরি পদক্ষেপ নিতে হবে।

সংবাদ সম্মেলনে তারা বলেন, আওয়ামী আমলের প্রশাসন কোনো ধরনের পরিকল্পনা ছাড়াই বিভিন্ন জায়গায় রাতের আঁধারে এবং ছুটির সময়ে গাছ কেটে ভবন নির্মাণ করে শপিংলিস্ট উন্নয়নের মাধ্যমে এই বিশ্ববিদ্যালয়কে একটা কংক্রিটের জঞ্জালে পরিণত করার পায়ঁতারা চালায়। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনে অধিষ্ঠিত হয় মাস্টারপ্ল্যানের আন্দোলনকারী শিক্ষক।

আমরা আশায় ছিলাম, এই প্রশাসন অতি জরুরি ভিত্তিতে মাস্টারপ্ল্যান করে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণ-প্রকৃতি রক্ষার উপর গুরুত্ব দিবে। কিন্তু সেদিকে তারা কোনো গুরুত্ব দেননি। পরবর্তীতে, এই বিশ্ববিদ্যালয়ের নব্য প্রশাসন মাস্টারপ্ল্যানের উদ্যোগ না নিয়ে পূর্বের প্রশাসনের ফর্মূলা অনুসারে গাছ কেটে ভবন নির্মাণের পথে হাটতে থাকে। তারা গাণিতিক ও পদার্থ বিষয়ক অনুষদ ও চারুকলা ভবনের কাজ শুরু করার পায়ঁতারা নেয়। 

তারা উল্লেখ করেন, জাহাঙ্গীরনগর বাঁচাও আন্দোলন গত ৫ মে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়, শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং পরিবেশ, বন ও জলবায়ূ পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে চলমান উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ বন্ধ রেখে মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়নের উদ্যোগ নিতে চিঠি প্রেরণ করে। সেই চিঠির প্রেক্ষিতে ইউজিসি এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে মাস্টারপ্ল্যান ব্যতিত উন্নয়ন প্রকল্প কেনো চলছে, তার কারণ দর্শানোর নোটিশ প্রদান করে এবং রাজউক সমস্ত প্রকল্পের কাজ বন্ধ করে মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়নের নির্দেশ দেয়। 

তারা আরো বলেন, কারণ দর্শানোর নোটিশ পাওয়ার পর উপাচার্য আমাদের আশ্বাস দেওয়া হয়, গত ২০ মে এর মধ্যে তারা মাস্টারপ্ল্যানের দৃশ্যমান অগ্রগতি (ডিপিপি ও দরপত্র আহ্বান) প্রদর্শন করবে- এই মর্মে গত ৯ মে বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ কার্যালয় থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। কিন্তু এই প্রতিশ্রুতিও প্রশাসন রক্ষা করনি।

ঠিক যেভাবে তারা জাকসু নিয়ে টালবাহানা করছে, তিনবার তারিখ পরিবর্তন করেছে, একই প্রক্রিয়ায় মাস্টারপ্ল্যানের টেন্ডার নিয়েও টালবাহানা চলছে। মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়নে প্রশাসনের গড়িমসির কারণে আজ অব্দি আমরা কোনো ডিপিপি ও দরপত্র হাতে পাইনি। 

এসময় তারা দাবি করেন, আজ সকালে সিএসই ভবনের সামনের এই জায়গায় প্রায় ৪০টা গাছ উপড়িয়ে ফেলা হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে প্রশাসন, সরকারের কারণ দর্শানোর নোটিশকে উপেক্ষা করেছে। একইসঙ্গে তারা তাদের নিজস্ব প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে প্রতারণা করেছেন। অথচ উপাচার্য এবং প্রকল্প পরিচালক এসে বললেন, তারা নাকি জানেনই না যে, এখানে গাছ কাটা হয়েছে।

তাদের এই দায় এড়ানো বক্তব্য আমরা ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করছি। বিশ্ববিদ্যালয় টেরিটোরিতে দিনের বেলায় অর্ধ শতাধিক গাছ কেটে ফেলার ঘটনা প্রশাসন জানে না, এই কথা আমরা বিশ্বাস করি না। আমরা মনে করি এটা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সেই পুরনো চাল যা তারা অভ্যুত্থান পরবর্তী সময়েও একইভাবে খেলে যাচ্ছে।

এসময় তারা অভিযোগ করেন, এই প্রশাসনও শেখ হাসিনার উন্নয়ন দর্শন থেকে সরে আসেনি। কারণ তারা আওয়ামী আমলের প্রকল্প পরিচালক নাসিরুদ্দিন, আওয়ামী আমলে ২০১৯ সালে মাস্টারপ্ল্যানের আন্দোলনকারীদের উপর হামলার সঙ্গে যুক্ত অধ্যাপক সোহেল আহমেদসহ আওয়ামী লীগের অন্যান্য দোসরদের নিয়ে এই প্রশাসন গড়ে তুলেছে। 

গাছ কাটার বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক কামরুল আহসান বলেন, “গাছ কাটার বিষয়ে আমি সম্পূর্ণ অজ্ঞাত ছিলাম। খবর পাওয়া মাত্র আমি কাজ বন্ধ করে দিয়েছি। এছাড়া বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করার জন্য অধ্যাপক শামসুল আলমের নেতৃত্বে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে দিয়েছি।”

ঢাকা/আহসান/মেহেদী

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর জ হ ঙ গ রনগর ব র ব শ বব দ য প রকল প দরপত র স এসই আওয় ম

এছাড়াও পড়ুন:

বিদ্যমান ব্যবস্থায় নির্বাচন হলে নতুন ফ্যাসিবাদের জন্ম হতে পারে: পরওয়ার

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেছেন, বিদ্যমান ব্যবস্থায় নির্বাচন হলে নতুন ফ্যাসিবাদের জন্ম হতে পারে। নির্বাচনের সময় ঘোষণাকে ইতিবাচক বলা হলেও প্রয়োজনীয় সংস্কার ছাড়া নির্বাচন হলে তা জনগণের সঙ্গে প্রতারণা হবে।

আজ বুধবার সকালে খুলনা জেলার ডুমুরিয়া উপজেলার আরাফাত আবাসিক এলাকায় উপজেলা জামায়াতে ইসলামীর উদ্যোগে আয়োজিত ভোটার সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় মিয়া গোলাম পরওয়ার এসব কথা বলেন। সমাবেশে নির্দলীয় সরকারের অধীনেই ‘জুলাই সনদের’ আইনি ভিত্তি প্রতিষ্ঠা করে সেই আলোকে জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের আহ্বান জানান তিনি।

জুলাই ঘোষণা এবং জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি প্রদান করে নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবিতে এই সমাবেশের আয়োজন করা হয়। সমাবেশে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল বলেন, সারা দেশে দাঁড়িপাল্লা প্রতীকের অনুকূলে গণজোয়ার সৃষ্টি হয়েছে। অবাধ ও নির্বিঘ্নে নিজেদের ভোট প্রয়োগ করতে পারলে জনগণ ইসলামি আদর্শের শক্তিকেই ভোট দিয়ে নির্বাচিত করে দেশ পরিচালনার দায়িত্ব অর্পণ করবে।

মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, ফ্যাসিস্ট বাকশালী আওয়ামী লীগ সরকার ভিন্ন একটি দেশের প্রেসক্রিপশনে ক্ষমতায় এসে দেশের আলেম-ওলামাদের ওপর জেল-জুলুম চালিয়েছে। ছাত্র-জনতার ঐতিহাসিক বিপ্লবের মাধ্যমে তাদের লজ্জাজনক পতন হয়েছে। তাই আগস্ট বিপ্লবকে অর্থবহ ও টেকসই করতে দলমত–নির্বিশেষে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। বাংলাদেশের অতীতের দৃষ্টান্ত অনুসরণ করে অবিলম্বে জুলাই জাতীয় সনদের প্রণয়নের কাজ সুসম্পন্ন করে বর্তমান সরকারকেই তা বাস্তবায়ন করতে হবে এবং এই সনদের ভিত্তিতে অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে।

রাষ্ট্রের প্রতিটি রন্ধ্রে রন্ধ্রে পতিত স্বৈরাচারের অনুসারীরা সক্রিয় রয়েছে বলে মন্তব্য করে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল বলেন, ষড়যন্ত্রকারীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। আসন্ন নির্বাচনে প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে তুলতে হবে। আগামী নির্বাচনে দেশে ভোট বিপ্লব ঘটানোর জন্য নেতা-কর্মীদের এখন থেকেই প্রস্তুত থাকতে হবে। দেশের মানুষ এখন ইসলামী দলগুলোকে নেতৃত্বের আসনে দেখতে চায়। দেশে ইসলামের পক্ষে যে গণজোয়ার সৃষ্টি হয়েছে, তাতে অচিরেই জনগণের সে আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়িত হবে, ইনশা আল্লাহ। কোনো ষড়যন্ত্রই জনতার বিজয়কে ঠেকাতে পারবে না।

সাবেক সংসদ সদস্য মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পূর্বে জুলাই জাতীয় সনদ প্রণয়ন দ্রুত সম্পন্ন করে অধ্যাদেশ, এলএফও বা গণভোটের মাধ্যমে আইনি ভিত্তি প্রদান করা না হলে অন্তবর্তী সরকারের সংস্কার কার্যক্রম বিফলে যাবে। তাই  সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের লক্ষ্যে রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করতে হবে। এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সব বাহিনী ও সংস্থার কার্যকর ভূমিকা নিশ্চিত করতে হবে। সরকার ও প্রশাসনকে স্বৈরাচারের দোসরমুক্ত করতে হবে। নির্বাচন কমিশনসহ প্রশাসনের সব স্তরে নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করতে হবে।

জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল বলেন, বাংলাদেশের আপামর জনতা জুলাই জাতীয় ঘোষণাপত্রকে কেন্দ্র করে যে প্রত্যাশা নিয়ে অপেক্ষা করছিল তা পূরণ না হওয়ায় জনগণের মধে৵ দেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা তৈরি হয়েছে। শহীদ ও আহত ব্যক্তিদের পরিবারসহ জুলাই যোদ্ধাদের মধ্যে নতুনভাবে উৎকণ্ঠা পরিলক্ষিত হচ্ছে। ঐকমত্য কমিশনের মাধ্যমে জুলাই জাতীয় সনদ প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের রূপরেখা কী হবে তা জাতির কাছে অস্পষ্ট।

আরাফাত নগরের চকমথুরাবাদ ভোটকেন্দ্র কমিটির সভাপতি মো. মতিউর রহমান হাওলাদারের সভাপতিত্বে ও হরিণটানা থানার ৪ নম্বর ওয়ার্ড জামায়াতের সভাপতি মো. আমির হোসাইনের সঞ্চালনায় বিশেষ অতিথি ছিলেন, জামায়াতে ইসলামীর খুলনা জেলা সেক্রেটারি মুন্সি মিজানুর রহমান, সহকারী সেক্রেটারি মুন্সি মঈনুল ইসলাম ও মিয়া গোলাম কুদ্দুস, ডুমুরিয়া উপজেলা আমির মাওলানা মোক্তার হোসেন, হরিণটানা থানার আমির আবদুল গফুর, ডুমুরিয়া উপজেলা নায়েবে আমির মাওলানা হাবিবুর রহমান, উপজেলা হিন্দু কমিটির সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ দেবক প্রসাদ, সোনাডাঙ্গা থানা জামায়াতের সেক্রেটারি জাহিদুর রহমান, খুলনা জেলা শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের সহকারী সেক্রেটারি আল আমিন গোলদার প্রমুখ।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • এনবিআর বিলুপ্তির অধ্যাদেশ সংশোধন হতে পারে এক সপ্তাহের মধ্যে
  • ঢাবিতে ছাত্র রাজনীতির রূপরেখা প্রণয়নে কমিটি গঠন
  • দুদক সংস্কার আইন এক-দুই মাসের মধ্যে প্রণয়ন: আসিফ নজরুল
  • রোডক্র্যাশে বেশি মারা যাচ্ছে তরুণরা
  • জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম বর্ষের ক্লাস শুরু ২১ সেপ্টেম্বর
  • দেশের ওষুধশিল্পে সংকট ও ঝুঁকি তৈরি হওয়ায় বিএনপি মহাসচিবের উদ্বেগ
  • বিদ্যমান ব্যবস্থায় নির্বাচন হলে নতুন ফ্যাসিবাদের জন্ম হতে পারে: পরওয়ার
  • বাবাকে কুপিয়ে হত্যাচেষ্টার মামলায় ছেলে গ্রেপ্তার
  • জাবির কেন্দ্রীয় মসজিদে নারীদের জন্য পৃথক নামাজের স্থান দাবি
  • জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ফলিত গণিতে মাস্টার্স, সিজিপিএ–২.৫০ হলে আবেদন