পাইপলাইনে তেল পরিবহন শুরু চলতি মাসেই
Published: 30th, June 2025 GMT
চট্টগ্রাম-ঢাকা জ্বালানি তেল ডিজেল পাইপলাইন বাণিজ্যিক পরিবহনের জন্য প্রস্তুত। পরীক্ষামূলক তেল পরিবহন সফলভাবে শেষ হয়েছে। চলতি মাসের মাঝামাঝি বাণিজ্যিকভাবে ডিজেল পরিবহন শুরু হবে। এতে বছরে প্রায় আড়াইশ কোটি টাকা সাশ্রয় হবে বলে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) সূত্রে জানা গেছে।
শুরুতে এই প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয় ২ হাজার ৮৬১ কোটি ৩১ লাখ টাকা। পরে সংশোধিত ব্যয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৩ হাজার ৬৯৯ কোটি টাকায়। এটি বাস্তবায়ন করছে সেনাবাহিনীর ২৪ ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্রিগেড। পাইপলাইনের দৈর্ঘ্য ২৩৭ কিলোমিটার।
বিপিসি চেয়ারম্যান আমিন উল আহসান সোমবার সমকালকে বলেন, ‘আশা করছি দুই-তিন সপ্তাহের মধ্যে সেনাবাহিনী পাইপলাইন প্রকল্পটি আমাদের কাছে হস্তান্তর করবে। তার পরই আমরা বাণিজ্যিক কাজ শুরু করে দেব। এরই মধ্যে সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে পাইপলাইনে পরীক্ষামূলকভাবে ছয় হাজার টন ডিজেল পরিবহন করা হয়েছে।’
তিনি বলেন, চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় তেল পরিবহনের ক্ষেত্রে নানা চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয়। যেমন রেলওয়ের ওয়াগন থাকলেও লোকোমোটিভ পাওয়া যায় না। সড়কপথে পণ্য পরিবহনে যানজটসহ নানা সমস্যা হয়, দীর্ঘ সময় লাগে। জলপথেও সমস্যা হয়। পাইপলাইনটি চালু হলে এসব সমস্যা শূন্যের কোঠায় নেমে আসবে। তিনি বলেন, আমাদের ব্যবহৃত জ্বালানি তেলের মধ্যে ডিজেল ৬৫ শতাংশ। ডিজেলের সরবরাহ নিশ্চিত হবে পাইপলাইনটি চালু হলে। পেট্রোল ও অকটেন আগে যেভাবে সরবরাহ করা হতো, কখনও রেলওয়ে ওয়াগনে করে, কখনও নদীপথে ট্যাঙ্কারে করে– সেভাবেই আসবে।
জানা গেছে, গত ২৪ জুন থেকে পরবর্তী পাঁচ দিন সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে এই পাইপলাইনের মাধ্যমে ডিজেল নারায়ণগঞ্জের গোদনাইল ডিপোতে পাঠানো হয়েছে। পরীক্ষামূলক এই সরবরাহ শতভাগ সফল বলে বিপিসি কর্মকর্তারা জানান।
দেশে ব্যবহৃত জ্বালানি তেলের ৯২ শতাংশ আমদানি করা হয়। বছরে জ্বালানি তেলের চাহিদা ৮০ থেকে ৯০ লাখ টন। পরিশোধিত তেলের মধ্যে সরকারিভাবে সবচেয়ে বেশি আমদানি করা হয় ডিজেল। বর্তমানে ঢাকায় তেল পরিবহনে প্রথমে চট্টগ্রামের পতেঙ্গা থেকে নদীপথে নারায়ণগঞ্জের গোদনাইল ও ফতুল্লা ডিপোতে নেওয়া হয়। এর পর সেখান থেকে সড়কপথে ঢাকাসহ অন্যান্য জেলায় তেল পরিবহন করা হয়। পরিবহনে ব্যবহৃত হয় ১৫০টি ছোট-বড় জাহাজ। এতে বছরে ২০০ কোটি টাকার বেশি খরচ হয়।
বিপিসির এক পরিচালক জানান, পাইপলাইনটি চালু হলে সড়ক ও জলপথে পরিবহনের জন্য কোনো টাকা ব্যয় হবে না। শুধু পরিচালন, রক্ষণাবেক্ষণ, বিদ্যুৎ বিল, জমির ভাড়াসহ কিছু খাতে ব্যয় হবে ৯০ কোটি টাকা। বছরে প্রকল্পটি থেকে আয় হবে ৩২৬ কোটি টাকা। সাশ্রয় হবে আড়াইশ কোটি টাকা। প্রকল্প বাস্তবায়নে যে টাকা বিনিয়োগ করা হয়েছে, তা আগামী ১৬ বছরের মধ্যে উঠে আসবে। এ ছাড়া প্রকল্পটি বাস্তবায়নের ফলে জ্বালানি তেল পরিবহন খরচ কমবে এবং নির্বিঘ্ন হবে সরবরাহ ব্যবস্থা। একই সঙ্গে পরিবেশ দূষণ কমবে। শুষ্ক মৌসুমে নৌপথে নাব্য কমে যাওয়ায় তেল পরিবহন করার যে সংকট, তাও আর থাকবে না। নদীপথে লাইটারেজে করে পরিবহনকে কেন্দ্র করে একটি বিশাল সিন্ডিকেট আছে। পাইপলাইন চালু হয়ে গেলে এসব বিষয়ও নিয়ন্ত্রণে আসবে বলে মনে করছে বিপিসি।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ত ল পর বহন প রকল প সরবর হ
এছাড়াও পড়ুন:
চলতি অর্থবছরে ৫% জিডিপি প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস এডিবির; ৪ কারণে চাপে প্রবৃদ্ধি
চলতি অর্থবছর মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) কিছুটা বাড়বে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। এডিবির পূর্বাভাস অনুসারে, ২০২৫-২৬ অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৫ শতাংশ হতে পারে। গত অর্থবছরের জন্য জিডিপি প্রবৃদ্ধির প্রাক্কলন হলো ৪ শতাংশ।
এডিবি আরও বলেছে, তৈরি পোশাক রপ্তানি স্থিতিশীল থাকলেও রাজনৈতিক পরিবর্তন, ঘন ঘন বন্যা, শিল্প খাতে শ্রমিক অস্থিরতা এবং বিরাজমান উচ্চ মূল্যস্ফীতি কারণে দেশের অভ্যন্তরীণ চাহিদা দুর্বল হয়ে পড়েছে। এই চার কারণে প্রভাব পড়ছে সামগ্রিক প্রবৃদ্ধিতে।
আজ মঙ্গলবার এডিবি এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট আউটলুক (এডিও) সেপ্টেম্বর সংস্করণ প্রকাশ করেছে। প্রতিবেদনে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি সম্পর্কে এমন পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে।
এডিবি আরও বলেছে, চলতি অর্থবছরে ভোগ্যব্যয় বাড়বে। কারণ, রেমিট্যান্সের প্রবৃদ্ধি পাবে। এ ছাড়া আসন্ন নির্বাচনসংক্রান্ত নানা ধরনের খরচের কারণেও ভোগব্যয় বাড়াবে।
বাংলাদেশে এডিবির কান্ট্রি ডিরেক্টর হো ইউন জিয়ং বলেন, ‘ভবিষ্যৎ প্রবৃদ্ধিনির্ভর করবে ব্যবসায়িক পরিবেশ উন্নয়নের মাধ্যমে প্রতিযোগিতা বাড়ানো, বিনিয়োগ আকৃষ্ট করা এবং নির্ভরযোগ্য জ্বালানি সরবরাহ নিশ্চিত করার ওপর। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের বাণিজ্যে মার্কিন শুল্কের প্রভাব এখনো স্পষ্ট নয়। দেশের ব্যাংক খাতের দুর্বলতা অব্যাহত রয়েছে। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা টেকসই প্রবৃদ্ধি অর্জনের জন্য জরুরি।
এডিবির প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ২০২৬ অর্থবছরের জন্য কিছু ঝুঁকি রয়ে গেছে। আন্তর্জাতিক বাণিজ্যসংক্রান্ত অনিশ্চয়তা, ব্যাংক খাতের দুর্বলতা এবং নীতি বাস্তবায়নের অনাগ্রহ প্রবৃদ্ধির অগ্রগতিতে বাধা হতে পারে। এ জন্য সঠিক সামষ্টিক অর্থনৈতিক নীতি বজায় রাখা এবং কাঠামোগত সংস্কার দ্রুততর করার ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে প্রতিবেদনে।
প্রতিবেদনে জানানো হয়, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে সার্বিক মূল্যস্ফীতি ছিল ৯ দশমিক ৭ শতাংশ। গত অর্থবছরের তা বেড়ে দাঁড়ায় ১০ শতাংশ। এর পেছনে রয়েছে পাইকারি বাজারে সীমিত প্রতিযোগিতা, বাজার তথ্যের ঘাটতি, সরবরাহ শৃঙ্খলে বাধা এবং টাকার অবমূল্যায়ন।
এডিবি বলছে, চলতি অর্থবছরে প্রবৃদ্ধির মূল চালিকাশক্তি হবে ভোগব্যয়, যা শক্তিশালী রেমিট্যান্স প্রবাহ ও নির্বাচন-সংশ্লিষ্ট ব্যয়ের কারণে বাড়বে। তবে সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি ও রাজস্বনীতি এবং বিনিয়োগকারীদের সতর্ক মনোভাব বিনিয়োগকে মন্থর করতে পারে। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের রপ্তানির ওপর ২০ শতাংশ শুল্ক আরোপ এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নে প্রতিযোগিতা বাড়ায় রপ্তানি খাত এবং এর প্রবৃদ্ধি চাপ বাড়াবে। ফলে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে রপ্তানিকারকদের মূল্য কমাতে হতে পারে।