রাজশাহীর চারঘাটে ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ কেন্দ্রগুলোতে ২৩ ধরনের ওষুধ সরবরাহ একেবারে বন্ধ রয়েছে। পর্যাপ্ত সরবরাহ নেই জন্মনিয়ন্ত্রণ সামগ্রীর। ওষুধ না পেয়ে হতাশ হয়ে ফিরে যাচ্ছেন সেবাপ্রত্যাশীরা। এতে অপ্রত্যাশিত ও কম বয়সে বিবাহিত মেয়েদের গর্ভধারণের আশঙ্কা বেড়ে গেছে। স্বাস্থ্য-সংশ্লিষ্টরা এর সম্ভাব্য প্রভাব নিয়ে উদ্বিগ্ন।
সদর স্বাস্থ্যকেন্দ্রের পাশাপাশি পাঁচটি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ কেন্দ্র ও ২৩টি কমিউনিটি ক্লিনিক রয়েছে। এসব কেন্দ্রের মাধ্যমে নিয়মিত সেবা নেন উপজেলার ৫০ হাজারেরও বেশি মানুষ। সেবাপ্রত্যাশী দম্পতিদের জন্য প্রতি মাসে ১৫ হাজার সেট সুখী তৃতীয় প্রজন্মের খাওয়ার বড়ির চাহিদা রয়েছে। চলতি মাসে সরবরাহ করা হয়েছে মাত্র ১৫৪ সেট। ২৫ হাজার কনডমের চাহিদার বিপরীতে সরবরাহ পাওয়া গেছে ১৩ হাজার ৯০৫ পিস। জন্মনিয়ন্ত্রণের আইইউডি, ইমপ্লান্ট, ডিডিএস কিট এক পিসও সরবরাহ নেই। নেই আয়রন, ক্যালসিয়াম ও ফলিক এসিড ট্যাবলেট। এতে অন্তঃসত্ত্বা মা ও কিশোরীরা স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। মোট ২৩ রকমের ওষুধ ছয় মাস ধরে সরবরাহ নেই।
সরেজমিন শলুয়া ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ কেন্দ্রে গেলে দেখা গেছে, শুধু ওষুধ নয়; জনবল ও চিকিৎসাসামগ্রী সংকটেও রোগীর সংখ্যা শূন্যের কোঠায় নামতে বসেছে। সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সর্বশেষ
গত ডিসেম্বরে ২৩ রকমের ওষুধ এসেছে এ কেন্দ্রে। এর পর থেকে সরবরাহ বন্ধ। জন্মনিয়ন্ত্রণ সামগ্রীর চরম সংকট রয়েছে।
কথা হয় সেবা নিতে আসা ভ্যানচালক রবিউল ইসলামের সঙ্গে। তিনি বলেন, বাজারে জন্মনিয়ন্ত্রণ সামগ্রীর অনেক দাম। তাই স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে প্রতি মাসে কনডম সংগ্রহ করি। কিন্তু কয়েক মাস ধরে চাহিদার চেয়ে অনেক কম পাচ্ছি। অনেক সময় পাওয়াই যায় না। বাধ্য হয়ে বেশি দাম দিয়ে বাইরে থেকে কিনতে হচ্ছে। এতে খরচ বেড়ে যাচ্ছে।
এ কেন্দ্রের উপসহকারী কমিউনিটি অফিসার নাসিম আহমেদ বলেন, ওষুধের সরবরাহ নেই। আমরা শুধু পরামর্শ দিচ্ছি। রোগীরা বিরক্ত হয়ে ফিরে যাচ্ছেন। আগে প্রতিদিন ৫০-৬০ জন রোগী আসতেন। কিন্তু এখন আসছেন ১০-১২ জন।
একই অবস্থা দেখা গেছে ভায়ালক্ষ্মীপুর ও নিমপাড়া ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ কেন্দ্রে। ভায়ালক্ষ্মীপুর কেন্দ্রে চিকিৎসা নিতে আসা মেহেরুন নেসা বলেন, চিকিৎসক সংকটের কারণে মাঝেমধ্যেই স্বাস্থ্যকেন্দ্র বন্ধ থাকে। আবার কখনও খোলা থাকলেও জ্বর-সর্দির ওষুধও থাকে না। কয়েক মাস ধরে সেবা নিতে এসে কেউই ওষুধ পায়নি। শুধু প্রেসার আর ওজন মেপে বাড়ি পাঠানো হচ্ছে।
নিমপাড়া ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ কেন্দ্রের ফার্মাসিস্ট মোস্তাকিন হোসেন বলেন, ওষুধ সরবরাহ একেবারে বন্ধ। এ কারণে রোগী তেমন আসছেন না। কনডম, খাবার বড়িসহ জন্মনিয়ন্ত্রণ সামগ্রীও সরবরাহ কম। দম্পতিদের চাহিদার চেয়ে অনেক কম পরিমাণে দেওয়া হচ্ছে।
সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) উপজেলার সহসভাপতি আঞ্জুমান আরা বলেন, স্থানীয় সক্ষম লোকজন সাধারণত বেসরকারি হাসপাতাল বা ক্লিনিকে সেবা নেন। সেখান থেকেই জন্মনিয়ন্ত্রণ সামগ্রী সংগ্রহ করেন। সরকারের কাছ থেকে ওষুধসেবা বা জন্মনিয়ন্ত্রণ সামগ্রী নেন মূলত সমাজের দরিদ্র শ্রেণি। সরবরাহ ঠিক না থাকলে সমস্যায় পড়েন তারা। এতে বাড়তি খরচের পাশাপাশি ভুল চিকিৎসার মুখোমুখি হতে হয় তাদের।
চারঘাট উপজেলায় স্বাস্থ্য কার্যক্রম নিয়ে কাজ করে ডাসকো ফাউন্ডেশন। এ সংস্থার উপজেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিনিধি ফারজানা ববি বলেন, ২৩ প্রকারের ওষুধ সরবরাহ না থাকায় অসহায় ও গরিব নারী-পুরুষ ও কিশোরীর স্বাস্থ্যগত সমস্যার জন্য স্থানীয় ওষুধের দোকানগুলোতে গিয়ে বাড়তি খরচের পাশাপাশি ভুল চিকিৎসার মুখোমুখি হচ্ছেন। এ ছাড়া জন্মনিয়ন্ত্রণ সামগ্রী সরবরাহ স্বাভাবিক না হলে এ অঞ্চলে অনাকাঙ্ক্ষিত গর্ভধারণ এবং জনসংখ্যার হার বেড়ে যেতে পারে।
এ বিষয়ে উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ফয়সাল ফেরদৌস বলেন, ওষুধ ও জন্মনিয়ন্ত্রণ সামগ্রী না পেয়ে রোগীদের স্বাস্থ্যকেন্দ্রের প্রতি আগ্রহ কমেছে। জেলা কার্যালয়ে কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জেনেছি, আগামী কয়েক মাসের
মধ্যে পর্যায়ক্রমে ওষুধ ও জন্মনিয়ন্ত্রণ সামগ্রীর সরবরাহ স্বাভাবিক হবে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: সরবর হ ন ই উপজ ল
এছাড়াও পড়ুন:
জবির ছাত্রী হলে মেডিকেল সেবা চালুর উদ্যোগ
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) একমাত্র নওয়াব ফয়জুন্নেছা চৌধুরানী ছাত্রী হলে জরুরি চিকিৎসা সেবা চালুর উদ্যোগ নিয়েছে ‘শহীদ সাজিদ মেডি এইড, জবি’।
বৃহস্পতিবার (১৪ আগস্ট) বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সংশ্লিষ্ট কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. রইছ উদ্দীনের কাছে এ বিষয়ে লিখিত আবেদন হস্তান্তর করেন সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা ও ফার্মেসি বিভাগের শিক্ষার্থী আবু বকর খান।
আবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, চিকিৎসা শিক্ষার্থীদের মৌলিক অধিকার হলেও জবি ছাত্রী হলে এ বিষয়ে কোনো স্থায়ী ব্যবস্থা নেই। এজন্য নওয়াব ফয়জুন্নেছা চৌধুরানী ছাত্রী হলে মেডিকেল কার্যক্রম চালুর পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে সংগঠনটি।
আরো পড়ুন:
ঢাবির হলগুলোতে ছাত্রদলের কমিটি বহাল থাকবে: রাকিব
রাবিতে নিয়োগ পাননি জামায়াত নেতার সুপারিশপ্রাপ্ত সেই প্রার্থী
আবেদনে তারা ছয় ধরনের পরিকল্পনার কথা জানান। এর মধ্যে রয়েছে— হলে দ্রুত মেডিকেল সেন্টার চালু করে প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম ও মৌলিক ওষুধ সরবরাহ; হলে অবস্থানরত নারী শিক্ষার্থীদের বিনামূল্যে ভ্যাকসিন ও টিকা প্রদান; শিক্ষার্থীদের মতামতের ভিত্তিতে স্যানিটারি ভেন্ডিং মেশিন স্থাপন, যেখানে প্রতি প্যাডের ২০ শতাংশ মূল্য বহন করবে সংগঠন।
অন্য পরিকল্পনাগুলো হলো- অভিজ্ঞ নারী বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের মাধ্যমে বিনামূল্যে মেডিকেল ক্যাম্প পরিচালনা; সুনামধন্য ডায়াগনস্টিক সেন্টারের সঙ্গে সমন্বয় করে শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষ ছাড়ে চিকিৎসা পরীক্ষা-নিরীক্ষা; স্বাস্থ্য সচেতনতামূলক সভা ও সেমিনার আয়োজন।
সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতা আবু বকর খান বলেন, “বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ঘোষিত রাষ্ট্র কাঠামো মেরামতের ৩১ দফার ২৬তম দফা ‘সবার জন্য স্বাস্থ্যসেবা ও সার্বজনীন চিকিৎসা’ থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।”
তিনি বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত, বিশেষ করে চিকিৎসা সেবা প্রায় নেই বললেই চলে। আমাদের সামর্থ্য অনুযায়ী শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে কাজ করব।”
শিক্ষার্থী সংশ্লিষ্ট কমিটির আহ্বায়ক ও শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. রইছ উদ্দীন বলেন, “এই উদ্যোগটি ভালো। বিস্তারিত আলোচনা করার পরে তারা কার্যক্রম শুরু করতে পারবে।”
শহীদ সাজিদ কমল মেডি এইড একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। জবি শিক্ষার্থীদের বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে সপ্তাহের বিভিন্ন দিনে মেডিকেল ক্যাম্প করা হবে। এ সময় চিকিৎসা সেবা, স্বাস্থ্য পরীক্ষা এবং ঔষধ সরবরাহ করা হবে। পাশাপাশি বিভিন্ন স্বাস্থ্যবিষয়ক সচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনাও করা হবে। তবে এসব সেবা ক্যাম্পাস চলাকালেও দেওয়া হবে।
ঢাকা/লিমন/মেহেদী