হাসিনার আইনজীবীর যুক্তি উপস্থাপন ৭ জুলাই
Published: 2nd, July 2025 GMT
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের ওপর শুনানি শেষ করেছে প্রসিকিউশন। পরে গতকাল মঙ্গলবার শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী আমির হোসেনের যুক্তি উপস্থাপনে ৭ জুলাই দিন ধার্য করেন বিচারপতি গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১।
মামলার অন্য আসামি হলেন কারাবন্দি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন। ট্রাইব্যুনালে তাঁর পক্ষে ছিলেন জায়েদ বিন আমজাদ।
গতকালও ট্রাইব্যুনালের বিচার কার্যক্রম সরাসরি সম্প্রচার করে বিটিভি। আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠনের ওপর প্রসিকিউশনের পক্ষে শুনানি করেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। তিনি শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে দাখিল করা পাঁচটি অভিযোগ পড়ে শোনান এবং অভিযোগ গঠনের পক্ষে নানা যুক্তি তুলে ধরেন।
চিফ প্রসিকিউটর বলেন, গত বছরের ১৪ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত শেখ হাসিনার নির্দেশে সারাদেশে হত্যা, নির্যাতন ও আক্রমণ চালানো হয়েছিল নিরীহ-নিরস্ত্র মানুষকে নিশ্চিহ্ন করার জন্য। পরিমাণ, সংখ্যা ও স্থানের ব্যাপকতায় এ অপরাধ ছিল বিস্তৃত এবং ব্যাপক।
তিনি বলেন, শেখ হাসিনার নির্দেশ অনুযায়ী পুলিশসহ অন্যান্য সহযোগী বাহিনী চেইন অব কমান্ড মেনে সব জায়গায় একই পদ্ধতিতে গণহত্যা চালায়। সারাদেশে একই পদ্ধতিতে প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করে। বাংলাদেশে সংঘটিত অপরাধের ঘটনায় যেসব অভিযোগ আমরা জমা দিয়েছি, তার পুরোটা ছিল বিস্তৃত ও পদ্ধতিগত, যা মানবতাবিরোধী অপরাধ বলে প্রতীয়মান। আমাদের আবেদন, অভিযোগের ভিত্তিতে অভিযোগ গঠন করে তাদের বিচারের মুখোমুখি করা হোক।
প্রসিকিউশনের বক্তব্য উপস্থাপনের পর শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী আমির হোসেন প্রস্তুতির জন্য দুই সপ্তাহ সময় আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল সময় দিয়ে ৭ জুলাই তাঁর যুক্তি উপস্থাপনের দিন ধার্য করেন।
এদিকে, শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আনা পাঁচটি অভিযোগ সঠিক নয় বলে দাবি করেছেন আমির হোসেন। ট্রাইব্যুনাল থেকে বেরিয়ে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, দেশের ইতিহাসে আর কোনো প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে এমন মামলা হয়নি। এটি অতি গুরুতর অভিযোগের মামলা। এ কারণে ট্রাইব্যুনালের কাছে প্রস্তুতির জন্য সময় চেয়েছি। আদালত যে সময় দিয়েছেন, তার মধ্যেই প্রস্তুতি নিতে পারব আশা করছি। আসামিদের খালাস করার জন্য আমি আপ্রাণ চেষ্টা করব।
গত ২৪ জুন মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেখ হাসিনা, আসাদুজ্জামান খান কামাল ও চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের শুনানির জন্য ১ জুলাই দিন ধার্য করেছিলেন ট্রাইব্যুনাল। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় ছাত্র-জনতার ওপর গুলি, হত্যার ‘নির্দেশদাতা ও পরিকল্পনাকারী’ হিসেবে শেখ হাসিনাসহ অন্যদের বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে বিচার চলছে।
হাসিনাসহ ২৩ জনের হাজিরে বিজ্ঞপ্তির নির্দেশ
পূর্বাচলে প্লট বরাদ্দে অনিয়মের পাঁচ মামলায় শেখ হাসিনাসহ ২৩ আসামিকে আদালতে হাজিরে জাতীয় দৈনিকে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের আদেশ দিয়েছেন আদালত। গতকাল ঢাকার মহানগর জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ জাকির হোসেন গালিব এ বিষয়ে আগামী ২০ জুলাই প্রতিবেদন দাখিলের জন্য দিন ধার্য করেছেন।
অন্য আসামি হলেন– শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়, মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল, বোন শেখ রেহানা, রেহানার মেয়ে টিউলিপ রিজওয়ানা সিদ্দিক, আজমিনা সিদ্দিক রূপন্তী, ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববি, জাতীয় গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব শহীদ উল্লা খন্দকার, অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন) কাজী ওয়াছি উদ্দিন, প্রশাসনিক কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম সরকার, সিনিয়র সহকারী সচিব পূরবী গোলদার, রাজউকের সাবেক চেয়ারম্যান আনিছুর রহমান মিঞা, সাবেক সদস্য (এস্টেট ও ভূমি) মোহাম্মদ খুরশীদ আলম, সদস্য কবির আল আসাদ, সদস্য তন্ময় দাস, সদস্য নুরুল ইসলাম, সাবেক সদস্য মোহাম্মদ নাসির উদ্দীন, সাবেক সদস্য সামসুদ্দীন আহমদ চৌধুরী, পরিচালক শেখ শাহিনুল ইসলাম, উপপরিচালক হাফিজুর রহমান, হাবিবুর রহমান, সাবেক প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ ও প্রধানমন্ত্রীর সাবেক একান্ত সচিব সালাউদ্দিন।
দুদকের পিপি মীর আহমেদ আলী সালাম জানান, প্লট বরাদ্দে অনিয়মের ছয়টির মধ্যে একটি মামলায় গত ১৭ জুন আদালত নির্দেশ দিলেও গেজেট হয়নি। অন্য পাঁচ মামলার ২৩ আসামি পলাতক। আমরা তাদের আদালতে হাজিরে গেজেট প্রকাশের আবেদন করি। আদালত বিজি প্রেসের মাধ্যমে আসামিদের হাজির হতে গেজেট প্রকাশের নির্দেশ দিয়েছেন।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: দ ন ধ র য কর হ স ন সহ ল ইসল ম প রস ক র জন য সদস য অপর ধ
এছাড়াও পড়ুন:
রিয়া মনির মামলায় জামিন পেলেন হিরো আলম
রাজধানীর হাতিরঝিল থানায় হত্যাচেষ্টা, মারধর ও ভয়ভীতি দেখানোর অভিযোগে সাবেক স্ত্রী রিয়া মনির করা মামলায় আলোচিত কনটেন্ট ক্রিয়েটর আশরাফুল আলম ওরফে হিরো আলমের জামিন মঞ্জুর করেছেন আদালত।
উভয়পক্ষের শুনানি নিয়ে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট মো. রাকিবুল হাসান আজ শনিবার এই আদেশ দেন।
বিকেল ৪টা ১০ মিনিটের দিকে হাতিরঝিল থানা থেকে হিরো আলমকে ঢাকার সিএমএম আদালতে হাজির করে পুলিশ। এরপর তাঁকে ঢাকার সিএমএম আদালতের হাজতখানায় রাখা হয়। কিছুক্ষণ পর পুলিশের কঠোর নিরাপত্তায় তাঁকে সিএমএম আদালতের ৯তলার এজলাসে নেওয়া হয়।
হিরো আলমের পক্ষের আইনজীবীরা তাঁর জামিন চেয়ে শুনানি করেন। বাদীপক্ষের আইনজীবী জামিনের বিরোধিতা করেন। উভয় পক্ষের শুনানি নিয়ে বিচারক ২০০ টাকা মুচলেকায় তাঁর জামিনের আবেদন মঞ্জুর করেন।
এদিকে হিরো আলমের মামলার শুনানির সময় আদালতে উপস্থিত ছিলেন এই মামলার বাদী রিয়া মনি। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘হিরো আলমের একটা শিক্ষা হওয়া দরকার। আমাকে যেমন বিনা কারণে জেল খাটিয়েছে, তারও জেলে থাকা উচিত।’
এর আগে শনিবার বেলা আড়াইটার দিকে রাজধানীর হাতিরঝিল থানাধীন এলাকা থেকে সাবেক স্ত্রী রিয়া মনির দায়ের করা মামলায় হিরো আলমকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ওয়াহিদুজ্জামানের আদালত হিরো আলম ও তাঁর সহযোগী আহসান হাবিব সেলিমের বিরুদ্ধে ১২ নভেম্বর গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। সেই পরোয়ানা অনুসারেই হিরো আলমকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গত ২৩ জুন হাতিরঝিল থানায় রিয়া মনি বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন। মামলার অভিযোগে সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি হিরো আলম ও বাদী রিয়া মনির মধ্যে মনোমালিন্য দেখা দেয়। এরপর হিরো আলম বাদীকে তালাক দিয়ে বাসা থেকে বের করে দেন। গত ২১ জুন বাদীর পরিবারের সঙ্গে মীমাংসার কথা বলে হাতিরঝিল থানাধীন এলাকায় একটি বাসায় ডাকা হয়। ওই সময়ে হিরো আলমসহ ১০ থেকে ১২ অজ্ঞাতনামা ব্যক্তি বাদী ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ শুরু করেন। পরে তাঁরা বাদীর বর্তমান বাসায় বেআইনিভাবে প্রবেশ করে কাঠের লাঠি দিয়ে মাথা ও শরীরের বিভিন্ন অংশে আঘাত করেন। এতে বাদীর শরীরে জখম হয়। এ সময় তাঁর গলায় থাকা দেড় ভরি ওজনের স্বর্ণের হার চুরি করে নিয়ে যাওয়া হয় বলেও অভিযোগে উল্লেখ করা হয়।
আরও পড়ুনরিয়া মনির মামলায় হিরো আলম গ্রেপ্তার২ ঘণ্টা আগে