কেউ হুংকার দিবে গডফাদার হয়ে যাবে, বিএনপি হতে দেবে না: মামুন মাহমদ
Published: 2nd, July 2025 GMT
নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক অধ্যাপক মামুন মাহমুদ বলেছেন, বিএনপিকে নিয়ে অনেক ষড়যন্ত্র হচ্ছে। স্বৈরাচারের পতন এক বছর হয়েছে কিন্ত আজও নির্বাচন হয়নি। আগামী নির্বাচনের পরীক্ষায় আমাদের উত্তীর্ণ হতে হবে।
গত ১৫ বছর আমরা একটি ভোটের জন্য আন্দোলন করেছি। আমরা সেই যুদ্ধে জয়লাভ করেছি। এখন ভোট যুদ্ধে যাতে আমরা জয়ী হতে পারি সে লক্ষে কাজ করতে হবে।
বুধবার (২ জুলাই) বিকেলে ফতুল্লা চৌধুরী বাড়ী পারিবারিক মিলনায়তনের মাঠে ফতুল্লা ইউনিয়ন বিএনপির উদ্যেগে বিএনপির নতুন সদস্য সংগ্রহের ফরম বিতরণ ও নবায়ন কর্মসূচির উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন তিনি।
তিনি বলেন, এখানে কেউ রাজা আর কেউ প্রজা তা হবে না। কেউ হুংকার দিবে, গডফাদার হয়ে যাবে সেরকম দল বিএনপি কখনও হতে দেবে না। অনেক রক্ত দিয়ে এই বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে। এদেশের আর কোনদিন যেন ফ্যাসিবাদ না হয় সেটা নিশ্চিত করতে হলে নতুন ও পুরাতনদের সমন্বয়ে একটি সরকার গঠন করতে হবে। সেখানে কোন রাজা প্রজার সৃষ্টি হতে দেয়া যাবে না, কোন গডফাদার, ভূমিদস্যু, চাঁদাবাজের জন্ম হতে দেয়া যাবে না।
তিনি আরও বলেন, যারা আমাদের জমি দখল করেছে, হামলা করেছে, মামলা দিয়ে পুলিশ নিয়ে আমাদের ধরিয়ে দিয়েছি তাদেরকে কোন ভাবেই দলে নেয়া যাবেনা। কোন দোসরদের দলে নেয়া যাবেনা। যারা নতুন করে সদস্য ফরম পূরণ করবে তাদের কে নিয়ে আমরা নতুন বাংলাদেশ গড়বো।
নতুনরাই এক সময় দলকে নেতৃত্ব দিবো। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল হলো শান্তির দল। এই দল লুটেরা চাঁদাবাজদের দল নয়। এই দল খেটে খাওয়া সাধারন মানুষ, কৃষক,শ্রমিক, শান্তি প্রয় মানুষদের দল। এই দলে অসংখ্য সাধারণ ভোটার রয়েছে তাদেরকে আমরা আমন্ত্রণ জানিয়েছি সদস্য ফরম পূরন করে জাতীয়তাবাদী বিএনপির ছায়াতলে আসার জন্য।
গত ১৫ বছর আওয়ামীলীগ দুঃশাসন করে লুটতরাজ করে বিদেশে অর্থ পাচার করে দেশকে তলাবিহীন ঝুড়িতে রুপান্তরিত করেছে।
তিনি বলেন, ইউনিয়ন বা ওয়ার্ডে কে সদস্য নবায়ন ফরম নিচ্ছেন, তা লেখা থাকবে। যাকে ইচ্ছা তাকে ফরম দেবেন, তা হবে না। ইউনিয়নের দায়িত্বশীল ব্যক্তিকে ফরম দেবেন। কিন্তু বিএনপির লোক হতে হবে।
প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক মাসুকুল ইসলাম রাজীব। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ফতুল্লা থানা বিএনপির সভাপতি শহিদুল ইসলাম টিটু। সঞ্চালনা করেন থানা বিএনপির ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক সাগর সিদ্দিকী।
এসময় প্রধান বক্তার বক্তব্যে জেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক মাসুকুল ইসলাম রাজীব বলেন, বাংলাদেশোর অধিকাংশ মানুষের বিশ্বাস ও আস্থার জায়গা হলো বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি। স্বৈরাচারের পতন হয়েছে। সে তার সিপাহী শালা নিয়ে দেশ ছেড়েছেন।
তাদের নিয়ে চিন্তা ভাবনা করার কারন নেই। যারা এক সময় শেখ হাসিনাকে বিভিন্ন উপমা দিয়ে আপা বলতে বলতে মুখে ফেনা তুলে ফেলেছে, তারাই আজ বিভিন্ন দলের নেতৃত্বে এসে দেশকে অস্থিতিশীল করে তুলতে চাইছে। কোন অবস্থাতেই যেন যারা আওয়ামী লীগ করেছে বা তাদের দোসর তারা যেনো সদস্য ফরম নবায়ন করতে না পারে। চরম ষড়যন্ত্র চলছে।
বিএনপির নামে প্রতিনিয়ত প্রপাগান্ডা চলেছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় মনে হয় বেতন দিয়ে বিএনপির বদনাম করার কাজ করা হচ্ছে। নিজেদের মধ্যে কাঁদা ছুড়াছুড়ি যেন না হয়। মানুষের আস্থা বিনস্ট হয় তা করা যাবেনা। দলকে মানুষের কাছে হেনস্থা করার চেস্টা করা হচ্ছে যাদের পাঁচটা সিট পাওয়ার যোগ্যতা নেই তারাই আজ বিএনপির বিরুদ্ধে বড় বড় কথা কথা বলছে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ফতুল্লা থানা বিএনপির সভাপতি শহিদুল ইসলাম টিটু বলেন, বিএনপি একটি সুশৃংখল দল। ফতুল্লা বিএনপির ঘাটি। বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠন আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন। আওয়ামী দোসররা যাতে সদস্য না হতে পারে সেজন্য সকলকে সজাগ থাকতে হবে।
কারা আন্দোলনে দেশের বাইরে এবং কক্সবাজারে অবস্থান করেছে তাও আমরা জানি। তাদেরকেও আমরা চিহ্নিত করেছি। নতুন করে যাদেরকে সদস্য বানাবো এমন কেউ যেন আওয়ামী দোসর না থাকে সে ব্যাপারে সবার প্রতি অনুরোধ।
এ ছাড়া বিশেষ অতিথি হিসেবে আরো উপস্থিত ছিলেন ফতুল্লা থানা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক রুহুল আমিন শিকদার, এনায়েত নগর ইউনিয়ন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক জহিরুল ইসলাম চৌধুরী, ফতুল্লা থানা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহবায়ক জাকির হোসেন রবিন, ফতুল্লা থানা যুবদলের যুগ্ম আহবায়ক আব্দুল খালেক টিপু, জেলা কৃষক দলের যুগ্ম আহবায়ক জুয়েল আরমান, ফতুল্লা থানা শ্রমিক দলের আহবায়ক শাহ আলম পাটোয়ারী, সদস্য সচিব আল আমিন, স্বেচ্ছাসেবকদলের যুগ্ম আহবায়ক আমিনুল ইসলাম লিটন, ফতুল্লা থানা তাতী দলের, সদস্য সচিব ইমন।
উৎস: Narayanganj Times
কীওয়ার্ড: ব এনপ ন র য়ণগঞ জ ব এনপ র স ল ইসল ম আওয় ম সদস য
এছাড়াও পড়ুন:
অর্থ পাচার করে বিদেশে গড়ে তোলা ৪০ হাজার কোটি টাকার সম্পদের সন্ধান
বাংলাদেশ থেকে অর্থ পাচার করে বিভিন্ন দেশে গড়ে তোলা প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকার সম্পদের সন্ধান পেয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সেল (সিআইসি)। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত পাঁচটি দেশের সাতটি শহরে অনুসন্ধান চালিয়ে এই তথ্য পাওয়া গেছে বলে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসকে জানিয়েছেন সিআইসির মহাপরিচালক আহসান হাবিব।
আজ রোববার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় এনবিআর চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান ও সিআইসি মহাপরিচালক আহসান হাবিব প্রধান উপদেষ্টার সামনে এসব তথ্য তুলে ধরেন। পরে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইংয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এ ছাড়া নয়টি দেশে ৩৫২টি পাসপোর্টের সন্ধান পাওয়া গেছে, যেগুলো টাকার বিনিময়ে অর্জন করেছে কিছু বাংলাদেশি। দেশগুলো হচ্ছে- অ্যান্টিগা অ্যান্ড বারবুডা, অস্ট্রিয়া, ডমেনিকা, গ্রেনেডা, সেন্ট কিটস অ্যান্ড নেভিস, নর্থ মেসিডোনিয়া, মালটা, সেন্ট লুসিয়া ও তুরস্ক।
সিআইসির মহাপরিচালক আহসান হাবিব বলেছেন, দেশে বসেই বিভিন্ন উৎস থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে প্রাথমিক প্রস্তুতি শেষে সিআইসির গোয়েন্দারা দেশগুলোতে সরেজমিনে পরিদর্শন করে বিস্তারিত তথ্য তুলে নিয়ে আসেন। আরও অনুসন্ধান চলমান আছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ থেকে ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নামে অর্থ পাচার করে গড়ে তোলা ৩৪৬টি সম্পত্তির সন্ধান মিলেছে। এটি আমাদের অনুসন্ধানের আংশিক চিত্র। এসব সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে বাংলাদেশের অনুকূলে নিয়ে আসার জন্য এবং অর্থ পাচারের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের সাজা নিশ্চিত করতে কাজ করছে সিআইসি। ছয়টিরও অধিক আন্তর্জাতিক সংস্থা এই প্রক্রিয়ায় বাংলাদেশকে সহযোগিতা করছে।’
সিআইসির মহাপরিচালক বলেন, ‘এখন পর্যন্ত আমরা যা পেয়েছি এটি “টিপ অব দ্য আইসবার্গ” (হিমশৈলের চূড়া মাত্র)। আমাদের কাছে এখনো প্রচুর তথ্য রয়েছে, যা উন্মোচনে আরও সময় প্রয়োজন।’
এই অর্থ পাচারের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরা শেখ হাসিনার আমলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ডেটাবেজ (তথ্যভাণ্ডার) নিয়ন্ত্রণ প্রক্রিয়ায় নিজেদের লোক বসিয়ে বহু তথ্য গায়েব করে দিয়েছেন জানিয়ে আহসান হাবিব বলেন, মুছে দেওয়া ওই সব তথ্য উদ্ধারে দক্ষতা অর্জন করেছে সিআইসি।
বিস্তারিত জানার পর প্রধান উপদেষ্টা বলেন, অর্থ পাচারের সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনতে দুদক, সিআইসি ও পুলিশের সিআইডিসহ অন্যান্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সমন্বয়ে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। তিনি বলেন, এমন দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে হবে যাতে ভবিষ্যতে কেউ দেশের সম্পদ লুট করে বিদেশে সম্পত্তি তৈরি করতে না পারে।
সিআইসিকে অনুসন্ধান কাজ চলমান রাখার নির্দেশনা দিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, যত দূর সম্ভব গভীরে যেতে হবে এবং সম্ভাব্য আরও দেশে অনুসন্ধান বিস্তৃত করতে হবে। যাতে দেশের সম্পদ দেশে ফিরিয়ে আনতে সম্ভাব্য সব পদক্ষেপে সরকার সর্বাত্মক সহযোগিতা করবে।
দেশের অর্থনৈতিক খাতের এই লুটপাটকে ভয়াবহ দেশদ্রোহিতা হিসেবে উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি সুন্দর দেশ বিনির্মাণ করতে হলে অবশ্যই এই লুটেরাদের আইনের আওতায় আনতে হবে। দেশের সম্পদকে কীভাবে লুটপাট করেছে কিছু মানুষ, তা জাতির সামনে প্রকাশ করতে হবে। সে জন্য সবগুলো সংস্থাকে জোটবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে।