Samakal:
2025-07-03@04:38:45 GMT

মেঘনার ‘নিশি’ কাড়ছে আশা

Published: 3rd, July 2025 GMT

মেঘনার ‘নিশি’ কাড়ছে আশা

অমিত দেবনাথের জন্ম যে ভিটাটিতে, সেই জায়গায় এখন অথৈ পানি। মেঘনার বর্তমান তীর থেকে যার দূরত্ব ৫০০ ফুটের মতো। ১৯৮১ সালে যখন তাদের বসতভিটা-জমিজমা ভাঙনের মুখে পড়ে, তখন অমিতের বয়স বছর পাঁচেক। এক ঝটকায় সেই বছর ২৪ শতাংশ জমি হারায় তাঁর পরিবার। এখন তাঁর বাড়ি মেঘনাতীর থেকে প্রায় ৩৫০ মিটার দূরে। তবু ভাঙনের আতঙ্ক ছাড়েনি অমিতকে। এখনও এই আতঙ্ক তাঁকে তাড়া করে বেড়ায়। 

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলার পানিশ্বর বাজার ও আশপাশের এলাকার লোকজনের কাছে কয়েক দশক ধরেই চেনা মেঘনার এই আগ্রাসী রূপ। এই বাজারেই ওষুধের দোকান অমিত দেবনাথের (৪৯)। তিনি বললেন, ভিটা হারানোর পরও জমি ছিল তাঁর পরিবারের। সেখানে ফসল হতো। এখন নদীর মাঝখানে চর। নদীর এই দিকবদলের কারণে তাদের এলাকায় কয়েক বছর ধরে বেড়েছে ভাঙনের তীব্রতা। বহু বছরের পুরোনো পানিশ্বর বাজারে এক সময় ৪০-৪৫টি চাতাল ছিল। এসব চাতালে কাজ করতেন কয়েক হাজার শ্রমিক। শত শত মণ চাল সরবরাহ হতো দেশের বিভিন্ন এলাকায়। একে একে মেঘনায় বিলীন হয়েছে প্রায় সব চাতাল। যে ক’টির কঙ্কাল দাঁড়িয়ে আছে, সেগুলোও বন্ধ। ফলে পানিশ্বর বাজারের ব্যবসা-বাণিজ্য একরকম মৃত। 

পানিশ্বর পালপাড়ায় ১০-১২ শতাংশ জমিতে ভিটা পারুল পালের (৪০)। নদী ভাঙতে ভাঙতে যেন হা করে আসছে তাঁর ভিটার দিকে। পারুল বললেন, চার-পাঁচ বছর ধরে ভাঙন খুব বেশি। যেভাবে ভাঙন এগিয়ে আসছে, আর বোধহয় বেশি দিন তারা এ বাড়িতে থাকতে পারবেন না।

একই পাড়ায় থাকেন অধীর চন্দ্র সূত্রধর। ৬৫ বছরের জীবনে নদীভাঙনের কারণে তাঁকে বাড়ি বদলাতে হয়েছে পাঁচ দফায়। অধীর বললেন, সাত-আট বছর ধরে পালপাড়ার পাশে ভাঙনের তীব্রতা বেড়েছে। এই এলাকায় সূত্রধর পরিবার আগে ছিল ৫০-৬০টি। ভাঙনের শিকার হয়ে তারা গ্রামছাড়া। এখন সাকল্যে পাঁচ-ছয়টি পরিবার কোনোমতে টিকে আছে। 

পানিশ্বর ইউপির ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক সদস্য মো.

মোস্তফা। তিনি ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক পদেও আছেন। ২০১২ সাল থেকে মেঘনার ভাঙনের তীব্রতা বাড়তে থাকে জানিয়ে মো. মোস্তফা বলেন, আগে বর্ষার সময় ঢেউয়ে স্বাভাবিক যে ভাঙন হতো, তা প্রতিরোধ করতে পারতাম। এখন হঠাৎ ভাঙন দেখা দেয়, যা রোধের সময়ও তারা পান না। এই ভাঙন স্থানীয় ভাষায় পরিচিত হয়ে উঠেছে ‘নিশি’ বলে।

এই রাজনীতিবিদের ভাষ্য, নিশিতে এলাকার বেশ কিছু চাতাল, ইটভাটা ও কয়েকশ বাড়িঘর নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। বিগত সরকারের সময় প্রায় পৌনে দুই কিলোমিটার দীর্ঘ বেড়িবাঁধের একটি প্রকল্প একনেক পর্যন্ত গেছে। কিন্তু আর আলোর মুখ দেখিনি। এদিকে দিন দিন ভাঙনের তীব্রতা বেড়েই চলেছে। এখনই টেকসই ব্যবস্থা না নিলে বাজারসংলগ্ন পানিশ্বর স্কুল অ্যান্ড কলেজ ও বড় মাদ্রাসাটি নদীতে বিলীন হতে বেশিদিন লাগবে না। 

মো. মোস্তফা ভাঙনের জন্য খননযন্ত্র (ড্রেজার) বসিয়ে অবৈধভাবে বালু তোলাকেও দায়ী করেন। তিনি বলেন, ঈদুল আজহার কিছুদিন আগেই ওই এলাকায় কিছু লোক বালু তুলতে এসেছিল। এলাকাবাসী তাদের আটক করলে ড্রেজার না চালানোর অঙ্গীর করে ছাড়া পায়। এখন তারা সামান্য ভাটিতে ঠিকই বালু লুট করছে। ফলে পানিশ্বর এলাকায় ভাঙন ঠিকই চলছে। 

একই ওয়ার্ডের বর্তমান সদস্য সাদু মিয়া এলাকাটি রক্ষায় বেড়িবাঁধ দ্রুত নির্মাণের দাবি জানিয়ে বলেন, ‘নদীভাঙনের কারণে পানিশ্বর বাজারের ব্যবসা-বাণিজ্যের রমরমা ভাব আর নেই। ৪০-৫০টি বয়লার (চাতাল) নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। পাঁচ-ছয়টি ব্রিকফিল্ডও গেছে।’ ১০-১২ বছরে কয়েকশ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে জানিয়ে সাদু মিয়া বলেন, বহু পুরোনো এই জনপদ ও বাজারটি রক্ষায় বেড়িবাঁধ নির্মাণ করতে হবে। পাশাপাশি অবৈধ ড্রেজারগুলো বন্ধ করতে হবে। 

প্রায় পাঁচ বিঘা জমির ওপর গড়ে তোলা হয়েছিল মেসার্স আজমেরী রাইস মিলের চাতালটি। সেটির মালিক নূরুল ইসলাম নূরু সম্প্রতি মারা গেছেন। তাঁর ছেলে উজ্জ্বল মিয়া বললেন, বাবার চাতালটি নদীভাঙনের শিকার হতে শুরু করে ২০১৮ সালে। চলতি বছরই সব জমি নদীর পেটে গেছে। এসব কারণে সব মিলিয়ে তাদের ব্যবসার চার থেকে পাঁচ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।

২০১৮ সাল থেকে ভাঙনের শিকার হতে শুরু করে চৌধুরী রাইস মিলটি। প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী ওসমান চৌধুরীর ভাষ্য, এ পর্যন্ত নদীভাঙনে তাঁর চাতালের তিন-চতুর্থাংশ জমি (প্রায় ৪০ শতাংশ) বিলীন হয়ে গেছে। বাকি জমিও নদীতে যাওয়া সময়ের ব্যাপার মাত্র। সব মিলিয়ে তাঁর প্রায় আড়াই কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। চাতাল নদীতে চলে যাওয়ায় ৫০ লাখ টাকার বকেয়া তিনি পাননি। তবে পাওনাদারের টাকা ঠিকই পরিশোধ করতে হয়েছে। তিনি প্রাচীন এ জনপদ রক্ষায় দ্রুত সময়ের মধ্যে স্থায়ী বেড়িবাঁধ নির্মাণের দাবি জানান।

সরাইলের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোশাররফ হোসাইন সরেজমিন এসব এলাকায় গেছেন। তিনি বলেন, জেলা পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী তাঁকে জানিয়েছেন, জরুরি ভিত্তিতে ওই এলাকার জন্য ৮০ লাখ টাকা বরাদ্দ হয়েছে। স্থায়ী বেড়িবাঁধের বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করবেন। মেঘনা নদীতে স্বীকৃত কোনো বালুমহাল নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, যারা অবৈধভাবে ড্রেজার বসাচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে শিগগির ব্যবস্থা নেবেন। 

জেলা পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মঞ্জুর আহাম্মদের কাছ থেকে জানা গেছে, জরুরি ভিত্তিতে তিনটি প্যাকেজে ওই এলাকার ছয়টি পয়েন্টে ২২ হাজার জিও ব্যাগ ফেলা হবে। এতে ৮০ লাখ টাকা বরাদ্দ হয়েছে। জুলাইয়ের মধ্যেই এই কাজ শেষ হবে বলে আশা করছেন। 

পাউবোর হয়ে এ কাজ করছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মোসার্স ঊর্মি ট্রেডার্স, মেসার্স এসবি এন্টারপ্রাইজ ও মেসার্স দিয়া এন্টারপ্রাইজ। ঊর্মি ট্রেডার্সের প্রতিনিধি মো. মুজাহিদ জানিয়েছেন, তাদের কার্যাদেশে ৩০ দিন সময় দেওয়া হয়েছে। এই প্যাকেজে ৮ হাজার ৩৮১টি জিও ব্যাগ ফেলার কথা। ২৭ জুন থেকে কাজ শুরু করেছেন। ১০-১২ দিনের মধ্যেই কাজটি শেষ করতে পারবেন। 

স্থায়ী বেড়িবাঁধ নির্মাণ বিষয়ে মঞ্জুর আহাম্মদ বলেন, ২০২১ সালে তীর সংরক্ষণ প্রকল্পসংশ্লিষ্ট একটি প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছিল। সম্ভাব্যতা যাচাই না করায় সেটি ফেরত আসে। ২০২৩ সালের জুন থেকে প্রায় এক বছর মেঘনা নদীর ১৫টি পয়েন্টে সম্ভাব্যতা যাচাই করে পাউবো। পরবর্তী সময়ে ২০২৪ সালের মে মাসে ৯৬৭ কোটি টাকার একটি বড় প্রকল্প ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়। ইতোমধ্যে সেটি বোর্ড সভায়ও যাচাই-বাছাই হয়েছে। প্রকল্পটির প্রক্রিয়া চলছে। এর আওতায় পানিশ্বর এলাকায় ১ হাজার ৩৫০ মিটার স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের প্রস্তাব আছে। এতে ৭৫ কোটি টাকা খরচ হবে।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ব র হ মণব ড় য় প ন শ বর ব জ র ব ল ন হয় র ব যবস প রকল প পর ব র এল ক র এল ক য় ম ঘন র র এল ক বলল ন

এছাড়াও পড়ুন:

সিনেমা বানাবেন ইমন সাহা

বাবা কিংবদন্তি সংগীত পরিচালক ও প্রযোজক সত্য সাহা। তাঁরই পথ ধরে যেন দীর্ঘ পথ হেঁটে চলেছেন ইমন সাহা। গত তিন দশকে সিনেমায় প্রচুর সফল গানের জন্ম দিয়েই থামেননি, সংগীতের ওপর উচ্চতর পড়াশোনা করেছেন অস্কারজয়ী এ আর রহমানের কাছে। গানের সঙ্গে এখনও রয়েছেন নিয়মিত। এবার তিনি ঘোষণা দিলেন সিনেমা নির্মাণের। এর জন্য তিনি ১ জুলাই শেষ করেছেন পরিচালক সমিতির সঙ্গে দাপ্তরিক আনুষ্ঠানিকতাও।

নির্মাতা হিসেবে ইমন সাহার অভিষেক হতে যাচ্ছে ‘সাইলেন্স: আ মিউজিক্যাল জার্নি’ সিনেমার মাধ্যমে। সিনেমাটি নির্মাণ প্রসঙ্গে ইমন সাহা বলেন, ‘প্রথমে ভেবেছিলাম স্বল্পদৈর্ঘ্য দিয়ে শুরুটা হোক। পরে ভাবলাম করবই যখন, পূর্ণদৈর্ঘ্যই বা কেন নয়!’

সম্পর্কিত নিবন্ধ