প্যাকিং হাউজ সংকট, ক্ষীণ হচ্ছে আন্তর্জাতিক বাজারে সবজি-ফল রপ্তানি
Published: 17th, August 2025 GMT
গাজীপুরের কালীগঞ্জে কৃষকদের উৎপাদিত সবজি ও ফলের বৈদেশিক বাজারে ব্যাপক চাহিদা থাকলেও আধুনিক প্যাকিং হাউজ না থাকায় এ খাত ক্রমেই পিছিয়ে পড়ছে। কৃষক ও স্থানীয় রপ্তানিকারকদের দাবি, সরকারি ব্যবস্থাপনায় আন্তর্জাতিক মানের প্যাকিং হাউজ গড়ে উঠলে কৃষকরা যেমন ন্যায্য মূল্য পাবেন, তেমনি বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনেও নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে।
উপজেলার নাগরী ইউনিয়নের বির্তুল গ্রামের কৃষক রমেশ চন্দ্র দাস, প্রমেশ চন্দ্র দাস ও নিহার চন্দ্র দাস জানান- তাদের উৎপাদিত কাঁকরোল, কাঁচকলা, কচু, বরবটি, শসা, কচুর লতি, পাকা ও কাঁচা কাঁঠাল, লিচুসহ নানা কৃষিপণ্যের বিদেশে ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। স্থানীয় পাইকাররা এসব পণ্য মাঠ থেকেই সংগ্রহ করে মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করেন।
বির্তুল গ্রামের রপ্তানিকারক মো.
তাদের ভাষ্যে, “সরকারি উদ্যোগে আধুনিক প্যাকিং হাউজ হলে আন্তর্জাতিক বাজারের মান ধরে রাখা সহজ হবে। পচন ও ক্ষতির হার কমবে। কৃষক লাভবান হবেন, দেশও বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করবে।”
কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, একটি আধুনিক প্যাকিং হাউজে থাকবে-গ্রেডিং কর্নার: ছোট-বড় সবজি বাছাইয়ের ব্যবস্থা। সোর্টিং কর্নার: ক্ষতিগ্রস্ত সবজি আলাদা করার সুবিধা। ওয়াশিং চেম্বার: সবজি ধোয়ার ব্যবস্থা। ড্রাইং চেম্বার: ধোয়া সবজি শুকানোর স্থান। কুলিং চেম্বার: নির্দিষ্ট আর্দ্রতায় সংরক্ষণ সুবিধা। কুলিং ভ্যান (৩ টন ক্ষমতা): রাজধানী বা বিভাগীয় শহরে পরিবহনের সময় সবজি তাজা রাখার সুবিধা।
প্যাকিং হাউজ নির্মাণের জন্য ১০ থেকে ১২ শতাংশ জমি প্রয়োজন। সেখানে বাজার এলাকা ও ট্রাক লোড-আনলোডের জায়গাও থাকতে হবে। কৃষি বিশেষজ্ঞদের মতে, এসব সুবিধা থাকলে আন্তর্জাতিক বাজারের জন্য মানসম্মত কৃষিপণ্য প্রস্তুত করা সহজ হবে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, কালীগঞ্জের নাগরী ইউনিয়ন পরিষদের পাশে উলুখোলা বাজারসংলগ্ন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের প্রায় ১২ শতাংশ জমি দীর্ঘদিন ধরে অব্যবহৃত পড়ে আছে। এ জমি প্রায় অকার্যকর হয়ে যাচ্ছে।
স্থানীয় কৃষক ও কৃষি সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, এই জমি প্যাকিং হাউজের জন্য অত্যন্ত উপযুক্ত। কারণ এটি এশিয়ান হাইওয়ে ও রাজধানী ঢাকার নিকটবর্তী, পাশাপাশি হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকেও কাছাকাছি। এখন সরকার উদ্যোগ নিলেই এখানে আন্তর্জাতিক মানের প্যাকিং হাউজ নির্মাণ করা সম্ভব।
কৃষকদের উৎপাদিত কাঁকরোল
উলুখোলা ব্লকের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. মনির উদ্দিন মোল্লা বলেন, “এ অঞ্চলে উৎপাদিত সবজির বিদেশে প্রচুর চাহিদা রয়েছে। আধুনিক প্যাকিং হাউজ হলে রপ্তানির গতি বাড়বে এবং কৃষকরা ন্যায্য দাম পাবেন।”
কালীগঞ্জ উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ ফারজানা তাসলিম জানান, কৃষকরা নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় বিদেশে সবজি রপ্তানি করছেন। কিন্তু আধুনিক প্যাকিং হাউজ না থাকায় মান ধরে রাখা কঠিন হচ্ছে। দ্রুত উদ্যোগ নিলে কৃষিপণ্য রপ্তানি নতুন মাত্রা পাবে।
গাজীপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক কৃষিবিদ মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, “গাজীপুরে একটি প্যাকিং হাউজ নির্মাণের বিষয়টি এরইমধ্যেই ঢাকা অঞ্চলের কৃষি উন্নয়ন প্রকল্প কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত করেছে। এ বিষয়ে আমরা কালীগঞ্জ উপজেলার নাগরী ইউনিয়ন পরিষদ ও উলুখোলা বাজার সংলগ্ন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের প্রায় ১২ শতাংশ জমি প্রস্তাব করেছি। জমিটি দীর্ঘদিন অব্যবহৃত ছিল এবং ধীরে ধীরে বেদখল হয়ে যাচ্ছিলো। বর্তমানে কিছু লোক জায়গাটি দখল করে রেখেছে। আমরা এরইমধ্যে তাদের সরে যেতে নোটিশ দিয়েছি। যদি তারা না সরে, তাহলে উপজেলা প্রশাসনকে সঙ্গে নিয়ে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হবে। দ্রুতই আমরা প্যাকিং হাউজ নির্মাণের কাজ শুরু করার চেষ্টা করছি।”
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ঢাকা অঞ্চলের কৃষি উন্নয়ন প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক ড. মোহাম্মদ আবদুল কাইয়ুম মজুমদার বলেন, “প্যাকিং হাউজ নির্মাণের বিষয়ে আমাদের পরিকল্পনা রয়েছে। গাজীপুরের মধ্যে একটি স্থানে এ হাউজ নির্মাণ করা হবে। কালীগঞ্জ উপজেলাকে এ জন্য অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন গাজীপুরের উপ-পরিচালক। আমরা সে অনুযায়ী বাস্তবায়ন করব।”
ঢাকা/এস
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব যবস থ উৎপ দ ত সরক র উপজ ল
এছাড়াও পড়ুন:
মোহাম্মদপুরে বিশেষ অভিযানে গ্রেপ্তার ২৯
রাজধানীর মোহাম্মদপুরের কয়েকটি অপরাধপ্রবণ এলাকায় বুধবার দিনভর বিশেষ অভিযান চালিয়ে বিভিন্ন অপরাধে জড়িত অভিযোগে ২৯ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এ সময় তাঁদের কাছ থেকে তিনটি ছুরি, দুটি ধারালো চাকু, দুটি লোহার রড, একটি সাইকেল ও ৩০ গ্রাম হেরোইন উদ্ধার করা হয়।
বৃহস্পতিবার ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের মধ্যে নিয়মিত মামলা, মাদক মামলা, পরোয়ানাভুক্ত আসামি ও বিভিন্ন অপরাধে জড়িত অপরাধী রয়েছে।
গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন হীরা (১৯), রফিক (২১), আবদুর রহমান (৩৯), নাবিদ হাসান ওরফে চয়ন (২৬), খোকন (৩১), মনসুর (৩৫), জুয়েল (৩২), সানজু (২২), মিলন (৪২), শাওন (৩৬), নোয়াজ শরীফ (২৮), সেলিম (৩৪), আসাদুজ্জামান ওরফে ইমন (২৩), আনোয়ার হোসেন (৩৬), সজল (৩০), বরকত গাজী (২৮), জুয়েল (৩৮), আরমান (৩০), বাদল (৩৮), কোরবান (২৮), নয়ন (২৭), মাসরুফ (২৩), আল আমিন (২৭), রাকিব (১৮), মিলন (২৫), ওয়াজিদ (৩৬), এরশাদ (২৫), ছালাম ওরফে সামাদ (৩৭) ও দিলসার (৩০)।