কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়ায় চালককে চেতনানাশক দিয়ে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা ছিনতাই এবং চালকের মৃত্যুর ঘটনায় দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গতকাল শনিবার গভীর রাতে কিশোরগঞ্জ শহরের উজানভাটি আবাসিক হোটেলে অভিযান চালিয়ে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তাঁদের পাকুন্দিয়া থানায় নিয়ে আসা হয়।

গ্রেপ্তার আসামিরা হলেন কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার আমাটি শিবপুর গ্রামের প্রয়াত আফাজ উদ্দিনের ছেলে বিপ্লব মিয়া (৪৫) ও গোপালগঞ্জের গোপীনাথপুর এলাকার প্রয়াত জসিম উদ্দিনের ছেলে হিরু শেখ (৪৫)।

থানা-পুলিশ ও স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পাকুন্দিয়া উপজেলার পাটুয়াভাঙ্গা ইউনিয়নের বাঘপাড়া গ্রামের সুলতান উদ্দিন (৬২) ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতেন। ৩ আগস্ট সন্ধ্যায় অটোরিকশা নিয়ে বাড়ি থেকে বের হন তিনি। পরে অজ্ঞাতনামা কয়েকজন নেশা বা বিষজাতীয় কিছু খাইয়ে অচেতন করে তাঁকে পাকুন্দিয়া উপজেলা জামে মসজিদের পাশে ফেলে অটোরিকশা নিয়ে পালিয়ে যান। পরে স্থানীয় লোকজন তাঁকে উদ্ধার করে প্রথমে পাকুন্দিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে সেখান থেকে কিশোরগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়। কিন্তু পরদিন তাঁর অবস্থার আরও অবনতি হলে উন্নত চিকিৎসার জন্য ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজে নেওয়ার পথে সুলতান উদ্দিন মারা যান।

এ ঘটনায় নিহত ব্যক্তির স্ত্রী মোছা.

মিনা আক্তার বাদী হয়ে ৮ আগস্ট পাকুন্দিয়া থানায় অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে মামলা করলে সিসিটিভি ফুটেজ দেখে আসামিদের শনাক্ত করা হয় বলে জানায় পুলিশ। পরে তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় কিশোরগঞ্জ শহরের উজানভাটি আবাসিক হোটেলে অভিযান পরিচালনা করে দুই আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়।

পাকুন্দিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সাখাওয়াত হোসেন বলেন, গ্রেপ্তার আসামিদের কাছ থেকে অটোরিকশা বিক্রির নগদ ১৮ হাজার টাকা, চোরাই কাজে ব্যবহৃত দুটি মোটরসাইকেল উদ্ধার করা হয়েছে। ঘটনায় জড়িত অন্য আসামিদের গ্রেপ্তার এবং অটোরিকশাটি উদ্ধারের জন্য পুলিশের অভিযান অব্যাহত আছে। আসামিদের আদালতে পাঠানো হয়েছে।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ক শ রগঞ জ আস ম দ র উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

সিলেটে টাস্কফোর্সের অভিযানে আরও ৩৯ হাজার ঘনফুট পাথর উদ্ধার, আটক ২

সিলেটে টাস্কফোর্সের অভিযানে প্রায় ৩৯ হাজার ঘনফুট পাথর উদ্ধার করা হয়েছে। আজ রোববার সকাল থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত সিলেট সদর, কোম্পানীগঞ্জ ও গোয়াইনঘাট উপজেলার জাফলংয়ে অভিযান চালিয়ে এসব পাথর উদ্ধার করা হয়। এ সময় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দুজনকে আটক করা হয়েছে।

সাদাপাথর পর্যটনকেন্দ্রসহ সিলেটের বিভিন্ন এলাকা থেকে অবৈধভাবে লুট হওয়া পাথর উদ্ধারে গত বুধবার রাত থেকে জেলার বিভিন্ন স্থানে অভিযানে নামে টাস্কফোর্স ও যৌথ বাহিনী। এরই অংশ হিসেবে আজ পঞ্চম দিনের মতো সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত অভিযান চালানো হয়।

অভিযানসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, আজ সকালে সদর উপজেলার ধোপাগুল–সংলগ্ন সালুটিকর ভাটা এলাকায় সিলেটের জ্যেষ্ঠ সহকারী কমিশনার (রাজস্ব, জেলা ব্র্যান্ডিং ও পর্যটন সেল) মাহমুদ আশিক কবিরের নেতৃত্বে অভিযান চালানো হয়। এতে সেনাবাহিনী, পুলিশ ও র‌্যাবের সদস্যরা ছিলেন। অভিযানে পাথর ভাঙার কারখানার (স্টোন ক্রাশার মিল) আঙিনায় মাটিচাপা দেওয়া পাথরের সন্ধান পাওয়া যায়। এ সময় ঘটনাস্থল থেকে দুজনকে আটক করা হয়।

সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) খোশনূর রুবাইয়াৎ বলেন, উদ্ধার হওয়া পাথরগুলোর মধ্যে ৯টি ট্রাকে প্রায় সাড়ে চার হাজার ঘনফুট পাথর ভোলাগঞ্জের ১০ নম্বর ঘাটে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। আটক দুজনকে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে তাঁদের বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা দায়েরের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

এ ছাড়া কোম্পানীগঞ্জের কলাবাড়ি ও কালীবাড়ি এলাকায় অভিযান চালিয়ে প্রায় ২৫ হাজার ঘনফুট সাদাপাথর জব্দ করা হয়েছে। অভিযানে নেতৃত্ব দেওয়া জেলা প্রশাসনের জ্যেষ্ঠ সহকারী কমিশনার (ভূমি অধিগ্রহণ শাখা, জেনারেল সার্টিফিকেট শাখা) তমালিকা পাল বলেন, উদ্ধার হওয়া পাথরের মধ্যে প্রায় পাঁচ হাজার ঘনফুট পাথর সাদাপাথর পর্যটনকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। বাকি ২০ হাজার ঘনফুট পাথর কালীবাড়ি এলাকায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর জিম্মায় আছে। সেগুলোও সাদাপাথর পর্যটনকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হবে।

এদিকে গোয়াইনঘাটের জুমপার এলাকায় অভিযান চালিয়ে সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত প্রায় তিন হাজার ঘনফুট পাথর উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রতন কুমার অধিকারী। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, উদ্ধার হওয়া পাথরের মধ্যে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত প্রায় ১ হাজার ৫০০ ঘনফুট পাথর জাফলং জিরো পয়েন্ট এলাকায় প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। পাথর উদ্ধারের পাশাপাশি নদী থেকে অবৈধভাবে পাথর উত্তোলন করা ৫০টি নৌকা আটক করে ধ্বংস করা হয়েছে।

সারা দেশে ৫১টি কোয়ারি (পাথর ও বালু উত্তোলনের নির্দিষ্ট স্থান) আছে। এর মধ্যে সিলেটের কানাইঘাট, কোম্পানীগঞ্জ, গোয়াইনঘাট ও জৈন্তাপুরে আছে আটটি পাথর কোয়ারি। এর বাইরে সিলেটে সাদাপাথর, জাফলং, বিছনাকান্দি, উৎমাছড়াসহ আরও ১০টি জায়গায় পাথর আছে। এসব জায়গা পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে পরিচিত। সীমান্তের ওপারে ভারতের পাহাড়ি নদী থেকে এসব পাথর আসে। ২০২০ সালের আগে সংরক্ষিত এলাকা বাদে সিলেটের আটটি কোয়ারি ইজারা দিয়ে পাথর উত্তোলনের সুযোগ দেওয়া হতো। তবে পরিবেশ ও প্রতিবেশের ক্ষতির কারণে ২০২০ সালের পর আর পাথর কোয়ারি ইজারা দেওয়া হয়নি।

সিলেটের ব্যবসায়ী ও রাজনৈতিক দলের নেতারা সব সময় পাথর উত্তোলনের পক্ষে জোরালো অবস্থান নেন। বিগত পাঁচ বছরে তাঁরা নানাভাবে কোয়ারি ইজারা আবার চালুর চেষ্টা করেছেন, কিন্তু সরকার অনুমতি দেয়নি। এ অবস্থায় রাতের বেলা আড়ালে–আবডালে মানুষ অবৈধভাবে পাথর তুলতেন। গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর টানা এক বছর দেদার পাথর লুটপাট চলে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ