ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়—বাংলাদেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ। অথচ এখানকার ছাত্রছাত্রীদের জীবনের নিরাপত্তা কতটা অনিশ্চিত, তা আবারও চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল লিজার মৃত্যু। একজন তরুণ শিক্ষার্থীকে হারালাম আমরা। আমাদের দুর্ভাগ্য, আমরা এমন হলে থাকি, যেখানে জীবনের কোনো দাম নেই, অসুস্থতার কোনো যথাযথ চিকিৎসা নেই।

২ হাজার ৬০০ শিক্ষার্থীর একটি হলে একজনও যোগ্য ডাক্তার নেই! এই হলো ঢাবির বাস্তবতা। হুমাইরা উপন‍্যাস জানায়, সেই অসহায় মুহূর্তে দেখা গেল, লাশ এলো হলে, রুমমেট অজ্ঞান হয়ে গেলেন। অথচ হলের ডাক্তার এলেন ২০ মিনিট পর। এ ডাক্তারকে আমরা ‘হাতুড়ে ডাক্তার’ বলতে বাধ্য হচ্ছি—কারণ, চিকিৎসা মানে তাঁর কাছে কেবল নাপা। প্রেশার মাপা ছাড়া তিনি কিছুই করতে পারলেন না। একজন ডাক্তার হয়ে এতটা বিভ্রান্ত আর নিষ্ক্রিয় থাকাটা অবিশ্বাস্য।

আরও হতাশার বিষয়, হাউস টিউটররা জানালেন—ডাক্তার শুক্র-শনিবার ডিউটিতেই থাকেন না! তাহলে ওই দুই দিন যদি কেউ গুরুতর অসুস্থ হয়, তার দায়ভার কে নেবে? হল প্রশাসন, নাকি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ?

আমার বান্ধবী হুমাইরা উপন‍্যাস জানায়, এমনকি লিজা আপুকে সরানোর জন্য একটি স্ট্রেচার পর্যন্ত ছিল না হলে। একজন যোগ্য ডাক্তার নেই, জরুরি সেবার কোনো অবকাঠামো নেই। তাহলে বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলো শিক্ষার্থীদের জন্য আবাসিক জায়গা, নাকি মৃত্যুকূপ?

অথচ আমরা বছরের পর বছর স্বাস্থ্যবিমা দিই। আমাদের হল ফি থেকে শুরু করে স্বাস্থ্য খাতে নানা অজুহাতে টাকা নেওয়া হয়। অথচ বিনিময়ে পাই কী? পাই একখানা নাপা। পাই একজন হাতুড়ে ডাক্তার, যিনি আসেন না সময়ে, এলেও দেন না কোনো চিকিৎসা। আমাদের রক্ত-ঘামে গড়া টাকা কোথায় যায়? এ প্রশ্নের উত্তর কারও কাছে নেই।

দিনের শেষে আমরা সবাই ব্যথিত হই। সবার জন্য মায়া কাজ করে। অথচ আন্দোলনের নামে যত দাবি ওঠে, সেগুলো বেশির ভাগই ব্যক্তিস্বার্থে। হলে শিক্ষার্থীদের জীবন রক্ষার মতো মৌলিক দাবিগুলো কখনোই কেন্দ্রীয় আলোচনায় আসে না। এ ব্যর্থতার দায় শুধু কর্তৃপক্ষ নয়, শিক্ষার্থীদেরও নিতে হবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে চিকিৎসা-সেবা অবকাঠামো নিশ্চিত করা এখন সময়ের দাবি। প্রতিটি হলে দক্ষ ডাক্তার, জরুরি মেডিকেল টিম, ২৪ ঘণ্টা অ্যাম্বুলেন্স ও স্ট্রেচার থাকা জরুরি। আমরা চাই না আর কোনো আপুকে আমাদের মাঝ থেকে অকালে হারাতে হোক।

লিজার মৃত্যু একটাই প্রশ্ন ছুড়ে দিয়েছে—এই অব্যবস্থার দায় কে নেবে? নাকি আমরা চুপ করে থেকে পরবর্তী মৃত্যু দেখার জন্য অপেক্ষা করব? ঢাবির গৌরবময় ইতিহাস, রাজনীতি বা সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সবই ম্লান হয়ে যায়, যদি শিক্ষার্থীদের মৌলিক অধিকার—জীবন ও স্বাস্থ্য নিশ্চিত না হয়। প্রশ্ন রয়ে যায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে চিকিৎসাহীন এই মৃত্যুর দায় কার? আর কত প্রাণ গেলে আমরা জাগ্রত হব?

নুসরাত রুষা

শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

[email protected]

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র জন য আম দ র

এছাড়াও পড়ুন:

ফিলিপাইনে ৬ দশমিক ৯ তীব্রতার ভূমিকম্পে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৬৯

ফিলিপাইনের মধ্যাঞ্চলে ৬ দশমিক ৯ তীব্রতার শক্তিশালী ভূমিকম্পে নিহত হওয়ার সংখ্যা বেড়ে ৬৯ জন হয়েছে। দেশটির দুর্যোগ-সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা আজ বুধবার এ খবর জানান। বেঁচে যাওয়া ব্যক্তিদের উদ্ধার কার্যক্রম পরিচালনা ও পানি-বিদ্যুতের সংযোগ আবার চালু করার চেষ্টা করছে ফিলিপাইন সরকার।

দেশটির সিভিল ডিফেন্স কর্মকর্তা রাফি আলেজান্দ্রো সাংবাদিকদের বলেন, স্থানীয় সময় গতকাল মঙ্গলবার রাত ১০টার আগে সেবু প্রদেশের উত্তরে বোগো শহরের কাছে ভূমিকম্পটির উৎপত্তি হয়। স্থানীয় হাসপাতালগুলো আহত মানুষের ভিড়ে রীতিমতো উপচে পড়ছে।

আঞ্চলিক সিভিল ডিফেন্স দপ্তরের তথ্য কর্মকর্তা জেন আবাপো বলেন, সেবুর প্রাদেশিক দুর্যোগ দপ্তরের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, ভূমিকম্পে নিহত হওয়ার সংখ্যা এখন পর্যন্ত ৬৯ জন। অন্য একজন কর্মকর্তা জানান, আহত হয়েছেন ১৫০ জনের বেশি।

দেশটির প্রেসিডেন্ট ফার্দিনান্দ মার্কোস জুনিয়র বেঁচে যাওয়া ব্যক্তিদের দ্রুত সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন। তিনি জানান, মন্ত্রিপরিষদ সচিবেরা ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। প্রিয়জন হারানো ব্যক্তিদের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন তিনি।

সেবু ফিলিপাইনের জনপ্রিয় পর্যটন গন্তব্যগুলোর একটি। সেখানে প্রায় ৩৪ লাখ মানুষের বসবাস। ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত হলেও ম্যাকতান-সেবু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্যক্রম চালু রয়েছে। এটা ফিলিপাইনের দ্বিতীয় ব্যস্ততম বিমানবন্দর।

ভূমিকম্পে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সান রেমিগিও শহরটিও। উদ্ধার ও ত্রাণ কার্যক্রমে সহায়তার জন্য এ শহরে ‘দুর্যোগপূর্ণ অবস্থা’ ঘোষণা করা হয়েছে। শহরের ভাইস মেয়র আলফি রেইনেস বলেন, উদ্ধারকর্মীদের জন্য খাবার ও পানি, সেই সঙ্গে ভারী সরঞ্জাম প্রয়োজন।

স্থানীয় ডিজেডএমএম রেডিওকে আলফি রেইনেস বলেন, ‘ভারী বৃষ্টি হচ্ছে। বিদ্যুৎ নেই। আমাদের সত্যিই সহায়তা দরকার। বিশেষ করে উত্তরাঞ্চলে পানির তীব্র সংকট রয়েছে। ভূমিকম্পে সেখানে সরবরাহ লাইন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।’

আরও পড়ুনফিলিপাইনে শক্তিশালী ভূমিকম্পে নিহত অন্তত ২৬, চলছে উদ্ধারকাজ৫ ঘণ্টা আগে

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ৪০ ঘণ্টা পর এক ছাত্রের মরদেহ উদ্ধার, নিখোঁজ আরেকজন
  • সিদ্ধিরগঞ্জে ৭ কেজি গাঁজাসহ মাদক কারবারি গ্রেপ্তার 
  • গরুর গোবর কুড়ানো থেকে সাত তারকা হোটেলে, জয়দীপের গল্প জানেন কি
  • টর্চলাইট
  • স্বাস্থ্য খাতে আলাদা বেতনকাঠামো হোক
  • গাজীপুরে আট বছরের শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগে একজন গ্রেপ্তার
  • খাগড়াছড়ির ঘটনায় জাতিসংঘকে যুক্ত করে বিচার বিভাগীয় তদন্ত দাবি
  • ডাক্তারদের হাতের লেখা ঠিক করার নির্দেশ দিলো আদালত
  • ‘মোটা জেনারেলদের’ কড়া সমালোচনা করলেন মার্কিন প্রতিরক্ষা হেগসেথ
  • ফিলিপাইনে ৬ দশমিক ৯ তীব্রতার ভূমিকম্পে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৬৯