ঢাবির হলে চিকিৎসাহীন মৃত্যুর দায় কার
Published: 17th, August 2025 GMT
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়—বাংলাদেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ। অথচ এখানকার ছাত্রছাত্রীদের জীবনের নিরাপত্তা কতটা অনিশ্চিত, তা আবারও চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল লিজার মৃত্যু। একজন তরুণ শিক্ষার্থীকে হারালাম আমরা। আমাদের দুর্ভাগ্য, আমরা এমন হলে থাকি, যেখানে জীবনের কোনো দাম নেই, অসুস্থতার কোনো যথাযথ চিকিৎসা নেই।
২ হাজার ৬০০ শিক্ষার্থীর একটি হলে একজনও যোগ্য ডাক্তার নেই! এই হলো ঢাবির বাস্তবতা। হুমাইরা উপন্যাস জানায়, সেই অসহায় মুহূর্তে দেখা গেল, লাশ এলো হলে, রুমমেট অজ্ঞান হয়ে গেলেন। অথচ হলের ডাক্তার এলেন ২০ মিনিট পর। এ ডাক্তারকে আমরা ‘হাতুড়ে ডাক্তার’ বলতে বাধ্য হচ্ছি—কারণ, চিকিৎসা মানে তাঁর কাছে কেবল নাপা। প্রেশার মাপা ছাড়া তিনি কিছুই করতে পারলেন না। একজন ডাক্তার হয়ে এতটা বিভ্রান্ত আর নিষ্ক্রিয় থাকাটা অবিশ্বাস্য।
আরও হতাশার বিষয়, হাউস টিউটররা জানালেন—ডাক্তার শুক্র-শনিবার ডিউটিতেই থাকেন না! তাহলে ওই দুই দিন যদি কেউ গুরুতর অসুস্থ হয়, তার দায়ভার কে নেবে? হল প্রশাসন, নাকি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ?
আমার বান্ধবী হুমাইরা উপন্যাস জানায়, এমনকি লিজা আপুকে সরানোর জন্য একটি স্ট্রেচার পর্যন্ত ছিল না হলে। একজন যোগ্য ডাক্তার নেই, জরুরি সেবার কোনো অবকাঠামো নেই। তাহলে বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলো শিক্ষার্থীদের জন্য আবাসিক জায়গা, নাকি মৃত্যুকূপ?
অথচ আমরা বছরের পর বছর স্বাস্থ্যবিমা দিই। আমাদের হল ফি থেকে শুরু করে স্বাস্থ্য খাতে নানা অজুহাতে টাকা নেওয়া হয়। অথচ বিনিময়ে পাই কী? পাই একখানা নাপা। পাই একজন হাতুড়ে ডাক্তার, যিনি আসেন না সময়ে, এলেও দেন না কোনো চিকিৎসা। আমাদের রক্ত-ঘামে গড়া টাকা কোথায় যায়? এ প্রশ্নের উত্তর কারও কাছে নেই।
দিনের শেষে আমরা সবাই ব্যথিত হই। সবার জন্য মায়া কাজ করে। অথচ আন্দোলনের নামে যত দাবি ওঠে, সেগুলো বেশির ভাগই ব্যক্তিস্বার্থে। হলে শিক্ষার্থীদের জীবন রক্ষার মতো মৌলিক দাবিগুলো কখনোই কেন্দ্রীয় আলোচনায় আসে না। এ ব্যর্থতার দায় শুধু কর্তৃপক্ষ নয়, শিক্ষার্থীদেরও নিতে হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে চিকিৎসা-সেবা অবকাঠামো নিশ্চিত করা এখন সময়ের দাবি। প্রতিটি হলে দক্ষ ডাক্তার, জরুরি মেডিকেল টিম, ২৪ ঘণ্টা অ্যাম্বুলেন্স ও স্ট্রেচার থাকা জরুরি। আমরা চাই না আর কোনো আপুকে আমাদের মাঝ থেকে অকালে হারাতে হোক।
লিজার মৃত্যু একটাই প্রশ্ন ছুড়ে দিয়েছে—এই অব্যবস্থার দায় কে নেবে? নাকি আমরা চুপ করে থেকে পরবর্তী মৃত্যু দেখার জন্য অপেক্ষা করব? ঢাবির গৌরবময় ইতিহাস, রাজনীতি বা সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সবই ম্লান হয়ে যায়, যদি শিক্ষার্থীদের মৌলিক অধিকার—জীবন ও স্বাস্থ্য নিশ্চিত না হয়। প্রশ্ন রয়ে যায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে চিকিৎসাহীন এই মৃত্যুর দায় কার? আর কত প্রাণ গেলে আমরা জাগ্রত হব?
নুসরাত রুষা
শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
[email protected]
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
কক্সবাজার সৈকতে গোসলে নেমেছিলেন চার বন্ধু, ঢেউয়ে ভেসে একজনের মৃত্যু
কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে গোসল করতে নেমে আবারও এক পর্যটকের মৃত্যু হয়েছে। আজ শুক্রবার বেলা একটার দিকে সৈকতের শৈবাল পয়েন্টে এ ঘটনা ঘটে। নিহত ওই পর্যটকের নাম মোহাম্মদ সামির (২২)। তিনি চট্টগ্রামের হালিশহরের বাসিন্দা।
পুলিশ জানায়, মোহাম্মদ সামির পেশায় রেফ্রিজারেটর কারিগর। তিনিসহ চার বন্ধু আজ সকালে কক্সবাজার বেড়াতে এসেছিলেন। দুপুরে তাঁরা একসঙ্গে সৈকতে এসে গোসলে নামেন। এ সময় সামির সাগরের ঢেউয়ে ভেসে যান। একপর্যায়ে তিন বন্ধু মুমূর্ষু অবস্থায় উদ্ধার করে তাঁকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে নেন। সেখানে চিকিৎসক সামিরকে মৃত ঘোষণা করেন।
জানতে চাইলে কক্সবাজার সদর মডেল থানার উপপরিদর্শক সুস্ময় দাশ প্রথম আলোকে বলেন, খবর পেয়ে তাঁরা হাসপাতালে গিয়েছেন। প্রাথমিকভাবে নিহতের তিন বন্ধুর কাছ থেকে ঘটনার বিষয়ে জেনেছেন। আরও জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাঁদের পুলিশি হেফাজতে রাখা হয়েছে। নিহতের পরিবারকে খবর দেওয়া হয়েছে। তাঁরা কক্সবাজারের উদ্দেশে রওনা হয়েছেন।
উল্লেখ্য, চলতি বছর কক্সবাজারে সাগরে গোসলে নেমে মৃত্যুর ঘটনা এবারই প্রথম নয়। গত সাত মাসে এ ১২ জন পর্যটকের মৃত্যু হয়েছে। এ ছাড়া উদ্ধার করা হয়েছে আরও ৭৮ জনকে। গত ১০ বছরে সাগরে মৃত্যু হয়েছে ৬৪ পর্যটকের। এ ছাড়া ৭৮২ জনকে জীবিত উদ্ধার করেছে লাইফ গার্ড।