স্বভাবতই আমরা একে অপরের ওপর নির্ভরশীল, তা আমরা অন্তর্মুখী হই বা বহির্মুখী। বন্ধুত্ব আমাদের ঈমান, জীবনের পরীক্ষা মোকাবিলা এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কোরআন ও হাদিসে বন্ধুত্বের গুরুত্ব এবং ভালো বন্ধু নির্বাচনের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। কোরআনে আল্লাহ বলেছেন, ‘মুমিনরা পরস্পর ভাই। সুতরাং তোমরা তোমাদের ভাইদের মধ্যে সম্পর্ক সংশোধন করো এবং আল্লাহকে ভয় করো, যাতে তোমরা রহমত লাভ করতে পারো।’ (সুরা হুজুরাত, আয়াত: ১০)

ইসলামে বন্ধুত্বের মাত্রা

ইসলামে বন্ধুত্ব কেবল একটি সামাজিক সম্পর্ক নয়, বরং এটি একটি আধ্যাত্মিক দায়িত্ব। মহানবী (সা.

) বলেছেন, ‘মানুষ তার বন্ধুর ধর্মের মাধ্যমে প্রভাবিত হয়। তাই তোমরা কার সঙ্গে বন্ধুত্ব করছ, তা সতর্কতার সঙ্গে বিবেচনা করো।’ (সুনানে আবি দাউদ, হাদিস: ৪,৮৩৩)

অর্থাৎ, ভালো বন্ধু নির্বাচন আমাদের ঈমান ও জীবনধারায় গভীর প্রভাব ফেলে। তাকওয়া বা আল্লাহভীতিসম্পন্ন বন্ধু আমাদের আল্লাহর পথে চলতে উৎসাহিত করে।

হজরত আলী (রা.) বলেছেন, ‘যতটা সম্ভব সত্যিকারের বন্ধু তৈরি করো। কারণ, তারা সুখের সময়ে সঙ্গী এবং দুঃখের সময়ে আশ্রয়।’ (নাহজুল বালাগাহ, দারুল কুতুব আল-ইলমিয়্যাহ, ২০০৯, পৃ. ৫৬৭)

আরও পড়ুনবন্ধু নির্বাচনে কোরআনের নির্দেশ০২ মার্চ ২০২৪ভালো বন্ধু নির্বাচনের গুরুত্ব

ইসলামে বন্ধু নির্বাচনের ক্ষেত্রে তাকওয়ার ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘ভালো বন্ধু এবং মন্দ বন্ধুর উদাহরণ হলো মিশক (মৃগনাভীর সুগন্ধি) বিক্রেতা এবং লোহার কামারের মতো। মিশক বিক্রেতা হয়তো তোমাকে সুগন্ধি উপহার দেবে বা তুমি তার কাছ থেকে সুগন্ধি কিনবে, অথবা তার কাছ থেকে এমনিই সুগন্ধ পাবে। কিন্তু লোহার কামার হয়তো তোমার কাপড় পুড়িয়ে দেবে বা তুমি তার কাছ থেকে দুর্গন্ধ পাবে।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ২,১০১)

অর্থাৎ ভালো বন্ধু আমাদের জীবনে না চাইলেও ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে, তেমনি মন্দ বন্ধুও নেতিবাচকতা দেবে। একজন খোদাভীরু বন্ধু আমাদের নামাজ, জিকির ও ভালো কাজে উৎসাহিত করবে, এটাই স্বাভাবিক।

আরও পড়ুনমহানবী (সা.)–এর সবচেয়ে প্রিয় বন্ধু আবু বকর (রা.)০৯ জানুয়ারি ২০২৫কীভাবে বন্ধুত্ব গড়ে তুলবেন

ইসলাম আমাদের ভালো বন্ধুত্ব গড়ে তুলতে উৎসাহিত করে। কয়েকটি পরামর্শ দেওয়া হলো—

১. খোদাভীরু বন্ধু নির্বাচন করুন: এমন বন্ধু নির্বাচন করুন, যাঁরা আল্লাহকে ভয় করেন এবং ভালো কাজে উৎসাহিত করেন।

২. মসজিদ ও ধর্মীয় কার্যক্রমে অংশ নিন: মসজিদে নামাজ বা ধর্মীয় সামাজিক অনুষ্ঠানে অংশ নিলে নতুন বন্ধু তৈরির সুযোগ পাওয়া যায়।

৩. আন্তরিকতা ও সমর্থন প্রকাশ করুন: বন্ধুদের সঙ্গে জীবনের সুখ-দুঃখ শেয়ার করুন এবং তাঁদের পাশে থাকুন।

৪. কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করুন: বন্ধুত্বের মূল্য বুঝুন এবং আল্লাহর কাছে তাঁদের জন্য দোয়া করুন। মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি তার ভাইয়ের জন্য দোয়া করে, ফেরেশতারা তার জন্য দোয়া করে।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ২৭৩৩)

ইসলামে বন্ধুত্ব একটি আত্মিক সম্পদ। এটি আমাদের জীবনের কঠিন মুহূর্তে সমর্থন দেয়, ঈমান শক্তিশালী করে এবং আল্লাহর পথে চলতে উৎসাহিত করে। আমাদের উচিত খোদাভীরু বন্ধুদের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলা এবং জীবনের কঠিন সময়ে তাদের সঙ্গে শেয়ার করা। যেমনটি কোরআনে বলা হয়েছে, ‘ধৈর্যশীল ও সত্যবাদীদের সঙ্গে থাকো।’ (সুরা তাওবা, আয়াত: ১১৯)

আরও পড়ুননেককার বন্ধু কীভাবে গড়বেন১৬ জুলাই ২০২৫

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: উৎস হ ত কর বন ধ ত ব র জ বন র আল ল হ আম দ র বল ছ ন ইসল ম ক রআন

এছাড়াও পড়ুন:

‘এটা তো চাপের খেলা’—বাংলাদেশের বিপক্ষে ম্যাচ নিয়ে ভারত কোচ

বাংলাদেশ-ভারত ম্যাচ ঘিরে উত্তাপ, উত্তেজনা নতুন নয়। তবে এবারের লড়াইটা ভারতের জন্য বাড়তি চাপেরও। প্রতিপক্ষের মাঠ, গ্যালারিভর্তি দর্শক আর হামজা-শমিতে উজ্জীবিত বাংলাদেশের সাম্প্রতিক পারফরম্যান্স—সব মিলিয়ে হয়তো কঠিন পরীক্ষাতেই পড়তে হবে সফরকারীদের। আজ ম্যাচ-পূর্ব সংবাদ সম্মেলনে ভারতের কোচের কণ্ঠেও ফুটে উঠল তেমনটাই।

আগামীকাল জাতীয় স্টেডিয়ামে এশিয়ান কাপ বাছাইয়ের ম্যাচে মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ-ভারত। তার আগে আজ একটি হোটেলে ভারতীয় দলের কোচ খালিদ জামিল বলেন, ‘এটা তো চাপের খেলা’।

এশিয়ান কাপ বাছাইপর্ব থেকে বাংলাদেশ ও ভারত দুই দলেরই বিদায় আগেই নিশ্চিত হয়েছে। তবু বাংলাদেশের দর্শকদের মধ্যে ভারত ম্যাচ নিয়ে ব্যাপক আগ্রহ। যার বড় প্রমাণ অনলাইনে টিকিট ছাড়ার ৬ মিনিটের মধ্যে সব বিক্রি হয়ে যাওয়া।

এর পাশাপাশি প্রতিপক্ষের মাঠে খেলাটা যে সব সময়ই কঠিন, সেই বাস্তবতা জানেন জামিলও। তাঁর দলের ওপর চাপ আছে কি না প্রশ্নে ভারত কোচ বলেন, ‘হ্যাঁ, চাপ আছে। আমাদের তা মানতে হবে। সবাই জানে এটি একটি চাপের ম্যাচ। তবে সে জন্য আমাদের একটি ইতিবাচক ফলের জন্য কঠোর পরিশ্রম করতে হবে।’

গত ২৫ মার্চ শিলংয়ে দুই দলের প্রথম লেগ গোলশূন্য ড্র হয়েছিল। সেই ম্যাচ দিয়ে বাংলাদেশের হয়ে অভিষেক হয়েছিল হামজা চৌধুরীর। ইংলিশ ক্লাব লেস্টার সিটিতে খেলা ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার বাংলাদেশের হয়ে এখন পর্যন্ত ৬ ম্যাচে করেছেন ৪ গোল, যার মধ্যে দুটি করেছেন বৃহস্পতিবার নেপালের বিপক্ষে।

ভারত কোচ অবশ্য একক কোনো খেলোয়াড়কে নিয়ে ভাবতে নারাজ, ‘আমরা শুধু একজন খেলোয়াড়কে বিবেচনায় নিচ্ছি না। বাংলাদেশ দলে অনেক ভালো খেলোয়াড় আছে। এটা খুব সিরিয়াস গেম।’

১৯৭৮ সাল থেকে এখন পর্যন্ত ৩২ বার মুখোমুখি হয়েছে বাংলাদেশ-ভারত। এর মধ্যে ভারত জিতেছে ১৬টিতে, বাংলাদেশ ২টিতে। ড্র বাকি ১৪টি (২০০৩ সাফে বাংলাদেশের গোল্ডেন গোলে জয়ের ম্যাচসহ)।

সম্পর্কিত নিবন্ধ