স্বভাবতই আমরা একে অপরের ওপর নির্ভরশীল, তা আমরা অন্তর্মুখী হই বা বহির্মুখী। বন্ধুত্ব আমাদের ঈমান, জীবনের পরীক্ষা মোকাবিলা এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কোরআন ও হাদিসে বন্ধুত্বের গুরুত্ব এবং ভালো বন্ধু নির্বাচনের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। কোরআনে আল্লাহ বলেছেন, ‘মুমিনরা পরস্পর ভাই। সুতরাং তোমরা তোমাদের ভাইদের মধ্যে সম্পর্ক সংশোধন করো এবং আল্লাহকে ভয় করো, যাতে তোমরা রহমত লাভ করতে পারো।’ (সুরা হুজুরাত, আয়াত: ১০)
ইসলামে বন্ধুত্বের মাত্রাইসলামে বন্ধুত্ব কেবল একটি সামাজিক সম্পর্ক নয়, বরং এটি একটি আধ্যাত্মিক দায়িত্ব। মহানবী (সা.
অর্থাৎ, ভালো বন্ধু নির্বাচন আমাদের ঈমান ও জীবনধারায় গভীর প্রভাব ফেলে। তাকওয়া বা আল্লাহভীতিসম্পন্ন বন্ধু আমাদের আল্লাহর পথে চলতে উৎসাহিত করে।
হজরত আলী (রা.) বলেছেন, ‘যতটা সম্ভব সত্যিকারের বন্ধু তৈরি করো। কারণ, তারা সুখের সময়ে সঙ্গী এবং দুঃখের সময়ে আশ্রয়।’ (নাহজুল বালাগাহ, দারুল কুতুব আল-ইলমিয়্যাহ, ২০০৯, পৃ. ৫৬৭)
আরও পড়ুনবন্ধু নির্বাচনে কোরআনের নির্দেশ০২ মার্চ ২০২৪ভালো বন্ধু নির্বাচনের গুরুত্বইসলামে বন্ধু নির্বাচনের ক্ষেত্রে তাকওয়ার ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘ভালো বন্ধু এবং মন্দ বন্ধুর উদাহরণ হলো মিশক (মৃগনাভীর সুগন্ধি) বিক্রেতা এবং লোহার কামারের মতো। মিশক বিক্রেতা হয়তো তোমাকে সুগন্ধি উপহার দেবে বা তুমি তার কাছ থেকে সুগন্ধি কিনবে, অথবা তার কাছ থেকে এমনিই সুগন্ধ পাবে। কিন্তু লোহার কামার হয়তো তোমার কাপড় পুড়িয়ে দেবে বা তুমি তার কাছ থেকে দুর্গন্ধ পাবে।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ২,১০১)
অর্থাৎ ভালো বন্ধু আমাদের জীবনে না চাইলেও ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে, তেমনি মন্দ বন্ধুও নেতিবাচকতা দেবে। একজন খোদাভীরু বন্ধু আমাদের নামাজ, জিকির ও ভালো কাজে উৎসাহিত করবে, এটাই স্বাভাবিক।
আরও পড়ুনমহানবী (সা.)–এর সবচেয়ে প্রিয় বন্ধু আবু বকর (রা.)০৯ জানুয়ারি ২০২৫কীভাবে বন্ধুত্ব গড়ে তুলবেনইসলাম আমাদের ভালো বন্ধুত্ব গড়ে তুলতে উৎসাহিত করে। কয়েকটি পরামর্শ দেওয়া হলো—
১. খোদাভীরু বন্ধু নির্বাচন করুন: এমন বন্ধু নির্বাচন করুন, যাঁরা আল্লাহকে ভয় করেন এবং ভালো কাজে উৎসাহিত করেন।
২. মসজিদ ও ধর্মীয় কার্যক্রমে অংশ নিন: মসজিদে নামাজ বা ধর্মীয় সামাজিক অনুষ্ঠানে অংশ নিলে নতুন বন্ধু তৈরির সুযোগ পাওয়া যায়।
৩. আন্তরিকতা ও সমর্থন প্রকাশ করুন: বন্ধুদের সঙ্গে জীবনের সুখ-দুঃখ শেয়ার করুন এবং তাঁদের পাশে থাকুন।
৪. কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করুন: বন্ধুত্বের মূল্য বুঝুন এবং আল্লাহর কাছে তাঁদের জন্য দোয়া করুন। মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি তার ভাইয়ের জন্য দোয়া করে, ফেরেশতারা তার জন্য দোয়া করে।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ২৭৩৩)
ইসলামে বন্ধুত্ব একটি আত্মিক সম্পদ। এটি আমাদের জীবনের কঠিন মুহূর্তে সমর্থন দেয়, ঈমান শক্তিশালী করে এবং আল্লাহর পথে চলতে উৎসাহিত করে। আমাদের উচিত খোদাভীরু বন্ধুদের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলা এবং জীবনের কঠিন সময়ে তাদের সঙ্গে শেয়ার করা। যেমনটি কোরআনে বলা হয়েছে, ‘ধৈর্যশীল ও সত্যবাদীদের সঙ্গে থাকো।’ (সুরা তাওবা, আয়াত: ১১৯)
আরও পড়ুননেককার বন্ধু কীভাবে গড়বেন১৬ জুলাই ২০২৫উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: উৎস হ ত কর বন ধ ত ব র জ বন র আল ল হ আম দ র বল ছ ন ইসল ম ক রআন
এছাড়াও পড়ুন:
নদীভাঙন রোধে পাটুরিয়ায় ৩ ঘণ্টা সড়ক অবরোধ
মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া ফেরি ও লঞ্চঘাট এবং আশপাশে এলাকা নদীভাঙন থেকে রক্ষা করার দাবিতে সড়ক অবরোধ করেছে এলাকাবাসী। এ সময় তারা বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন করে।
রবিবার (১৭ আগস্ট) দুপুরে তারা পাটুরিয়া ঘাট এলাকায় এ সব কর্মসূচি পালন করেন।
আন্দোলনকারী আজিবার রহমান জানান, পদ্মা নদীতে প্রবল স্রোতের কারণে দুই সপ্তাহের বেশি সময় ধরে পাটুরিয়া ফেরি, লঞ্চঘাট, ঘাটসংলগ্ন ধুতরাবাড়ী ও তেগুরি গ্রামে নদীভাঙন শুরু হয়েছে। গ্রাম দুটিতে কয়েকটি বসতবাড়ি এবং ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান নদীগর্ভে চলে গেছে। এরই মধ্যে লঞ্চঘাট নদীতে বিলীন হয়েছে। নদীভাঙনে ফেরিঘাটও মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।
আরো পড়ুন:
নেত্রকোনায় বিকাশকর্মী হত্যায় জড়িতদের গ্রেপ্তার দাবি
রংপুরে শ্বশুর-জামাই হত্যাকাণ্ডের বিচার চেয়ে মানববন্ধন
তিনি আরো জানান, উপজেলা প্রশাসন, বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) এবং পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) কর্মকর্তাদের ভাঙনের বিষয়টি অবহিত করা হয়। তবে ভাঙনরোধে কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। এর প্রেক্ষিতে আজ রবিবার (১৭ আগস্ট) দুপুরে পাটুরিয়া ঘাটসংলগ্ন শহীদ রফিক চত্বরে উথলী-পাটুরিয়া সড়কে তিন ঘণ্টা অবরোধ করে রাখে এলাকাবাসী।
এর আগে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে পাটুরিয়া ৫ নম্বর ফেরিঘাট থেকে এলাকাবাসী বিক্ষোভ মিছিল বের করে। বেলা ১২টার দিকে মিছিলটি পাটুরিয়া ঘাটের অদূরে শহীদ রফিক চত্বর এলাকায় গিয়ে শেষ হয়। এরপর সেখানে উথলী-পাটুরিয়া সড়ক অবরোধ ও মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে। বিভিন্ন যানবাহন আটকা পড়ে যাত্রী ও পরিবহন-শ্রমিকেরা ভোগান্তিতে পড়ে। খবর পেয়ে বেলা সাড়ে ১২টার দিকে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে এলাকাবাসীকে সড়ক থেকে সরে যেতে অনুরোধ করে। তবে আন্দোলনকারীরা অবরোধ কর্মসূচি পালন করতে থাকে। প্রায় তিন ঘণ্টা পর বেলা ৩টার দিকে সেনাসদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে অবরোধ তুলে নেয়ার অনুরোধ করলে তারা সড়ক থেকে সরে যায়।
অবরোধ চলাকালে নদীভাঙন প্রতিকারের দাবিতে ভুক্তভোগী বেশ কয়েকজন এলাকাবাসী বক্তব্য দেন। তাদের মধ্যে ছিলেন স্থানীয় ব্যবসায়ী মোবারক হোসেন খান (পান্নু), ব্যবসায়ী নূর ইসলাম, স্থানীয় আরুয়া ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য তাপস খান, স্থানীয় বাসিন্দা কবির হোসেন, উত্তম পাল, আরিফ হোসেন ও রানা শিকদার।
বক্তারা বলেন, ‘‘দেশের গুরুত্বপূর্ণ পাটুরিয়া ফেরিঘাট নদীভাঙনে বিলীন হওয়ার উপক্রম হয়েছে। ইতিমধ্যে ঘাট এলাকা ও আশপাশের কয়েকটি গ্রামে অর্ধশতাধিক বসতবাড়ি ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। জীবনের শেষ আশ্রয়স্থল হারিয়ে অনেকে পথে বসেছে। অথচ ভাঙনরোধে একাধিকবার সংশ্লিষ্ট সরকারি দপ্তরের কর্মকর্তাদের জানালেও তারা কার্যকর পদক্ষেপ নিচ্ছে না।’’
নদীভাঙন প্রতিরোধে বক্তারা দাসকান্দি থেকে নয়াকান্দি এলাকা পর্যন্ত স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের দাবি জানান।
এ ব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোর্ডের মানিকগঞ্জের নির্বাহী প্রকৌশলী মুহাম্মদ আক্তারুজ্জামান জানান, ঘাট সংলগ্ন দুই কিলোমিটার এলাকা বিআইডব্লিউটিএর আওতাধীন। এরপরও সরেজমিন পরিদর্শন করে বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জাকির হোসেন জানান, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে পাটুরিয়া ঘাট ও আশপাশে নদীভাঙনরোধে ব্যবস্থা নিতে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় এবং নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়কে জানানো হয়েছে। মন্ত্রণালয় থেকে সিদ্ধান্ত নেয়ার পর ভাঙনরোধে কাজ শুরু করা হবে। তবে ইতোমধ্যে পাটুরিয়া ঘাট এলাকায় ভাঙনরোধে বালুভর্তি জিওব্যাগ ফেলা হচ্ছে।
ঢাকা/চন্দন/বকুল