কুষ্টিয়ায় ছাত্রীর আপত্তিকর ছবি ও ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগে পর্নোগ্রাফি মামলায় শাহিন ইসলাম (৩০) নামে এক শিক্ষককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

শনিবার (১৬ আগস্ট) বিকেলে নোয়াখালী জেলার সুধারাম উপজেলার হাউজিং সেন্টার রোড থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব। 

ওই রাতেই র‌্যাব-১২ কুষ্টিয়া ক্যাম্পের কোম্পানি কমান্ডার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুদীপ্ত সরকার এ তথ্য নিশ্চিত করেন।

শাহিন ইসলাম মেহেরপুর জেলার গাংনী উপজেলার সাহারবাটি গ্রামের শহিদুল ইসলামের ছেলে। তিনি কুষ্টিয়া শহরের র‌্যাবগলিতে অবস্থিত শাহীন ক্যাডেট স্কুলের বিজ্ঞান শিক্ষক। 

র‌্যাব সূত্রে জানা যায়, চলতি বছরের ২৩ এপ্রিল থেকে কয়েক দফায় শিক্ষক শাহিন ইসলাম ৭ম শ্রেণির এক ছাত্রীর আপত্তিকর ছবি ও ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে দেন। 

এ ঘটনায় গত ৭ আগস্ট ওই স্কুলছাত্রীর পক্ষে তার মা বাদী হয়ে কুষ্টিয়া মডেল থানায় পর্নোগ্রাফি আইনে মামলা দায়ের করেন। এরপর থেকে ওই শিক্ষক পলাতক ছিলেন। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে শনিবার বিকেলে র‌্যাব-১২ ও র‌্যাব-১১-এর যৌথদল নোয়াখালী জেলার সুধারাম উপজেলার হাউজিং সেন্টার রোড সংলগ্ন সুরমা ভবনের সামনে অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করে।

মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, ক্যাডেট স্কুলে ভর্তির প্রস্তুতির জন্য ওই ছাত্রী ২০২৩ সালের ৫ ডিসেম্বর শাহীন ক্যাডেট স্কুলের ক্যাডেট কোচিংয়ে ভর্তি হয়। ভর্তির চারমাস পর থেকে বিজ্ঞান শিক্ষক শাহিন তাকে স্কুল শেষে বাইরে যাওয়ার প্রলোভন দিয়ে আসছিল। 

চলতি বছরের ২৫ জানুয়ারি সকাল ১০টার দিকে কোচিংয়ে ক্লাস করতে গেলে শিক্ষক শাহিন ওই ছাত্রীকে শহরতলীর চৌড়হাস ফুলতলা এলাকায় তার ভাড়া বাসাতে নিয়ে যায়। সেখানে ছাত্রীর অমতে তার কিছু ছবি ও ভিডিও ধারণ করে রাখে। এছাড়া ক্যাডেট কোচিংয়ে ভর্তির প্রলোভন দিয়ে ভুল বুঝিয়ে মুঠোফোনে ভিডিও সংগ্রহ করে রাখতো। 

এরপর ওই ছাত্রী বিষয়টি পরিবারকে জানালে তারা প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যানকে বিষয়টি জানায়। এতে শাহিন ক্ষিপ্ত হয়ে নিজের সংগ্রহে থাকা ছাত্রীর আপত্তিকর ছবি ও ভিডিও কয়েক দফায় নিজ ও বিভিন্ন আইডি থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেন।

র‌্যাব-১২ কোম্পানি কমান্ডার সুদীপ্ত সরকার বলেন, “শিক্ষক শাহিন এমন কুরুচিপূর্ণ ও হঠকারী কাজ করে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর মহান সম্পর্ককে হেয় করেছে। নোয়াখালী থেকে র‌্যাব-১১ এর সহযোগিতায় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তারের পর তাকে কুষ্টিয়া মডেল থানায় সোপর্দ করা হয়েছে।”

ঢাকা/কাঞ্চন/এস

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর গ র প ত র কর ইসল ম

এছাড়াও পড়ুন:

৪১ বছর ধরে হেঁটে হেঁটে পত্রিকা বিলি করেন গাইবান্ধার রহিম

গাইবান্ধার পত্রিকা বিক্রেতা আবদুর রহিম। বাড়ি পলাশবাড়ী পৌরসভার নুনিয়াগাড়ি এলাকায়। বয়স ৭১ বছর। এই বয়সেও তিনি ঘুমভাঙা চোখে একনজর পত্রিকার শিরোনাম দেখে নেন। পত্রিকা গুছিয়ে বগলে চেপে ছুটে চলেন পাঠকের কাছে। ‘ভাই, আজকে গরম খবর আছে’ বলেই পাঠকের হাতে এগিয়ে দেন পত্রিকা।

এক পাঠক থেকে আরেক পাঠকের কাছে যান আবদুর রহিম। পত্রিকা বিলি করেন সকাল ৬টা থেকে টানা ৭ ঘণ্টা। বিকেল ৫টা থেকে ৪ ঘণ্টা বিলি করা পত্রিকার টাকা সংগ্রহ করেন। ১১ ঘণ্টার বেশির ভাগ সময় হেঁটে পত্রিকা বিলি ও টাকা সংগ্রহ করেন। দূরের পাঠকের কাছে যান বাইসাইকেলে। প্রতিদিন গড়ে ১০ থেকে ১২ কিলোমিটার হেঁটে বিলি করেন পত্রিকা। এভাবেই দীর্ঘ ৪১ বছর ধরে গাইবান্ধায় পত্রিকা বিলির কাজ করছেন তিনি।

আবদুর রহিম বলেন, ‘সকাল ৬টা থেকে পত্রিকা বিলির কাজ শুরু করি। বেলা ১টার দিকে শেষ হয়। উপজেলা সদরে হেঁটে বিলি করি। তবে সদর থেকে ৬-৭ কিলোমিটার দূরে জুনদহ, কালীতলা, ঢোলভাঙ্গা, হোসেনপুর এলাকায় সাইকেলে যাই। এসব জায়গায় সাইকেল রেখে হেঁটে পত্রিকা বিলি করি। দুপুরে বাড়িতে বিশ্রাম নিই। এরপর পত্রিকা বিক্রির টাকা তোলা শুরু করি। টাকা তুলতে বিকেল ৫টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত সময় লাগে। সব মিলিয়ে প্রতিদিন ১০ থেকে ১২ কিলোমিটার হাঁটাহাঁটি হয়ে যায়। এ রকম ব্যস্ততায় কীভাবে ৪১ বছর কেটে গেল, টেরই পেলাম না! তবে পত্রিকা বিলি করে আনন্দ পাই। অনেক পাঠক আমাকে ভালোবাসেন, খোঁজখবর নেন।’

দীর্ঘ সময় পত্রিকা বিলি করতে সমস্যা হয় কি না, তা জানতে চাইলে আবদুর রহিম বলেন, ‘আমার কোনো অসুখবিসুখ নেই। যত দিন শরীর ভালো থাকবে, তত দিন এই কাজ চালিয়ে যাব।’

ব্যবসার শুরু

রহিমের পৈতৃক বাড়ি রংপুর শহরের আরাজি গুলাল বুদাই এলাকায়। সেখানে তাঁর বাবার ৩ শতাংশ জমিতে বসতভিটা ছিল। এ ছাড়া কোনো সম্পদ ছিল না। বাবা আবেদ আলী অনেক আগেই মারা গেছেন। তিন ভাই ও চার বোনের মধ্যে সবার বড় তিনি। লেখাপড়া করেছেন তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত। ছোটবেলা থেকেই কৃষিকাজ করতেন। ১৯৭৫ সালে বিয়ে করেন একই এলাকায়। তাঁর ছয় মেয়ে ও এক ছেলে। দারিদ্র্যের কারণে সংসার চালানো একসময় কঠিন হয়ে পড়ে।

রহিমের খালাতো ভাই রংপুর শহরে পত্রিকা বিলি করতেন। তাঁর পরামর্শে ১৯৮৪ সাল থেকে রংপুরে স্থানীয় পত্রিকা দিয়ে আবদুর রহিমের এই ব্যবসার যাত্রা শুরু। এরপর তিনি বাসে ফেরি করে বিক্রি করতে থাকেন পত্রিকা। প্রতিদিন রংপুর থেকে বাসে উঠে পলাশবাড়ী পর্যন্ত আসেন। এভাবে তিন বছর কেটে যায়। এরপর পলাশবাড়ীর স্থানীয় এক সাংবাদিকের বাড়িতে থেকে পত্রিকা বিক্রি শুরু করেন। ছয় মাস থাকেন সেখানে। এরপর জমানো ও ঋণের টাকায় নুনিয়াগাড়ি এলাকায় সোয়া ৮ শতাংশ জমি কিনে টিনশেড ঘর বানান। বাড়ি থেকে ব্যবসা করতে থাকেন। পলাশবাড়ী চারমাথা এলাকায় বসে ঢাকা, রংপুর ও বগুড়া থেকে প্রকাশিত দৈনিক পত্রিকা সংগ্রহ করে পলাশবাড়ী উপজেলা সদরে বিক্রি করতে থাকেন।

হকার থেকে এজেন্ট

কয়েক বছর পর আবদুর রহিম নিজের নামে বেশ কিছু পত্রিকার এজেন্সি নেন। পত্রিকার চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় একা সামলাতে পারছিলেন না। তাই চারজন লোক নিয়োগ করেন। তাঁরা এখনো রহিমের কাছে কমিশনে পত্রিকা নিয়ে জীবিকা নির্বাহ করছেন। ব্যবসা শুরুর সময় প্রতিদিন ২০০ থেকে ২৫০ কপি পত্রিকা বিলি করতেন। মাসিক আয় ছিল ১ হাজার ৫০০ থেকে ১ হাজার ৮০০ টাকা। কয়েক বছর পর পাঠকের চাহিদা বেড়ে যায়। সে সময় মাসিক আয় হতো ২২ থেকে ২৫ হাজার টাকা। বর্তমানে ছাপা পত্রিকার পাঠক কমে গেছে। এখন প্রতিদিন ১৫০ থেকে ১৬০ কপি পত্রিকা বিলি করছেন। বর্তমানে তাঁর মাসিক আয় গড়ে ১৬ থেকে ১৭ হাজার টাকা।

আবদুর রহিম প্রথম আলোকে বলেন, ‘পত্রিকার ব্যবসা করে রংপুর থেকে এসে পলাশবাড়ীতে বাড়ি করতে পেরেছি, মেয়েদের বিয়ে দিয়েছি। সততার সঙ্গে চলছি। এতেই আমি সন্তুষ্ট।’

পলাশবাড়ী মহিলা ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ আবু সুফিয়ান সরকার বলেন, ‘আবদুর রহিমকে বহু বছর ধরেই পত্রিকা বিক্রি করতে দেখছি। তাঁকে দেখে মনে হয় না ৭১ বছর বয়স হয়েছে। তাঁর মধ্যে ক্লান্তি দেখা যায় না। দিন-রাত পরিশ্রম করেন। কখনো তাঁকে মিথ্যা বলতে শুনিনি। এলাকার মানুষ তাঁকে ভালোবাসেন।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বাস ধুয়েমুছে চালকের সহকারী ওয়াশরুমে গিয়েছিলেন, ফিরে দেখেন আগুন জ্বলছে
  • ‘বাসটির সঙ্গে একটি ট্রাকের ধাক্কা লাগে, এরপর আর কিছু মনে নেই’
  • রেলের ৭ লাখ টাকার যন্ত্র ২৭ হাজারে বানালেন তিনি
  • রাতে এক ঘণ্টার ব্যবধানে সাভার-ধামরাইয়ে দুই বাসে আগুন
  • জনস্বাস্থ্য নিয়ে গবেষণাই তাঁর নেশা 
  • ইডেনে স্পিন বিষ, ১৫ উইকেটের দিনে উড়ছে ভারত
  • বিচারকের ছেলে হত্যা মামলার আসামি লিমন পাঁচ দিনের রিমান্ডে
  • বিচারকের ছেলে হত্যা: লিমন ৫ দিনের রিমান্ডে
  • ‘তোকে গুলি করে মারব না, ব্লেড দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে মারব’
  • ৪১ বছর ধরে হেঁটে হেঁটে পত্রিকা বিলি করেন গাইবান্ধার রহিম