সন্তানের জন্য কান্না থামছে না মায়ের
Published: 17th, August 2025 GMT
সন্তান জন্ম দিয়ে অচেতন হয়ে পড়েছিলেন রুমা বেগম। জন্মের পাঁচ ঘণ্টা পর সেই নবজাতক পৃথিবী ছেড়ে চলে যায়। সন্তানের মৃত্যুসংবাদ শোনার পর থেকে হাসপাতালের শয্যায় শুয়ে কান্না থামাতে পারছেন না রুমা। তাঁকে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করছেন স্বজনেরা, কিন্তু কোনোভাবেই তাঁকে শান্ত করা যাচ্ছে না।
শরীয়তপুরের ডামুড্যা উপজেলার কনেশ্বর ছাতিয়ানি গ্রামের গৃহবধূ রুমা বেগম গত বৃহস্পতিবার জেলা শহরের চৌরঙ্গী মোড়ের একটি বেসরকারি ক্লিনিকে একটি ছেলেসন্তানের জন্ম দেন। জন্মের কিছুক্ষণ পর নবজাতকের শ্বাসকষ্টসহ শারীরিক জটিলতা দেখা দিলে চিকিৎসকের পরামর্শে তাকে দ্রুত ঢাকায় নেওয়ার প্রস্তুতি নেয় পরিবার। কিন্তু স্থানীয় অ্যাম্বুলেন্সচালক চক্রের একটি অংশ ঢাকাগামী অ্যাম্বুলেন্স আটকে দিলে নবজাতক চিকিৎসা না পেয়ে মারা যায়।
গতকাল শনিবার রাতে শরীয়তপুর সদর হাসপাতাল–সংলগ্ন মেট্রো ক্লিনিকের একটি কক্ষে গিয়ে দেখা যায়, শয্যায় শুয়ে কাঁদছেন রুমা। পাশে বসে আছে তাঁর তিন বছরের মেয়ে, মায়ের কান্নার শব্দে বিভ্রান্ত হয়ে বারবার তাকাচ্ছে তার দিকে। মা শেফালি বেগম আর বোন জায়েদা ইসলাম তাঁকে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করছেন।
কাঁদতে কাঁদতে চাপা কণ্ঠে রুমা বলছিলেন, ‘আমার নিষ্পাপ শিশুটি কী করেছিল যে তাকে জন্মের পাঁচ ঘণ্টার মধ্যেই পৃথিবী থেকে বিদায় নিতে হলো? আমি তো তাকে ছুঁয়েও দেখতে পারলাম না।’
আরও পড়ুনশরীয়তপুরে অ্যাম্বুলেন্স চক্রের কাছে জিম্মি রোগী ও স্বজন৪ ঘণ্টা আগেরুমার মা শেফালি বেগম প্রথম আলোকে বলেন, রুমা তাঁর স্বামীর সঙ্গে ঢাকায় থাকত। সন্তান জন্ম দেওয়ার জন্য এক মাস আগে মায়ের কাছে চলে আসে। প্রসববেদনা উঠলে ক্লিনিকে ভর্তি করানো হয় তাঁকে। ছেলেসন্তানের জন্ম হয়। কিন্তু কিছু সমস্যা দেখা দেওয়ায় চিকিৎসকের পরামর্শে নবজাতককে ঢাকায় নেওয়ার চেষ্টা করেন। রোগী বহন করা অ্যাম্বুলেন্স আটকে দেওয়া দেখে তাঁরা হতবাক হয়ে যান। অনেক অনুনয়-বিনয় করলেও চক্রটি অ্যাম্বুলেন্স ছাড়েনি। ততক্ষণে তাঁর নাতি দুনিয়া ছেড়ে চলে যায়। নাতিকে দাফন করে হাসপাতালে মেয়ের কাছে ফিরলে মেয়ে বারবার সন্তানের কথা জানতে চায়। একসময় মেয়ে জেনে যায়, তাঁর সন্তান আর বেঁচে নেই। এর পর থেকে কান্না আর থামছে না।
স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রুমার স্বামী নূর হোসেন ঢাকায় বিদ্যুতের শ্রমিক হিসেবে কাজ করেন। বৃহস্পতিবার রাতে নবজাতককে নিয়ে ঢাকাগামী অ্যাম্বুলেন্স করে রওনা হন তাঁরা। কিন্তু শহরের চৌরঙ্গী মোড়ে স্থানীয় অ্যাম্বুলেন্সচালক সবুজ দেওয়ানসহ কয়েকজন অ্যাম্বুলেন্সটি আটকে দেন। স্থানীয় অ্যাম্বুলেন্স বাদ দিয়ে কেন ঢাকাগামী অ্যাম্বুলেন্স নেওয়া হচ্ছে, তা নিয়ে তর্ক শুরু হয়। এ সময় ঢাকাগামী অ্যাম্বুলেন্সচালককে মারধর করা হয় এবং দীর্ঘ সময় ধরে গাড়িটি আটকে রাখা হয়।
আরও পড়ুনশরীয়তপুরে অ্যাম্বুলেন্স আটকে রাখার ঘটনায় প্রধান আসামি গ্রেপ্তার১৬ আগস্ট ২০২৫এ ঘটনায় ধস্তাধস্তির মধ্যেই অক্সিজেন মাস্ক খুলে যায় নবজাতকের মুখ থেকে। নূর হোসেন বলেন, ‘অ্যাম্বুলেন্স যখন আটকে দেয় তখন আমার কোলেই ছিল আমার বুকের মানিক। ধস্তাধস্তিতে তার মুখ থেকে অক্সিজেন মাস্ক খুলে যায়। আমরা লাগানোর চেষ্টা করি, কিন্তু অদক্ষ হওয়ায় হয়তো ঠিকমতো লাগাতে পারিনি। তর্ক-বিতর্ক, অনুনয়-বিনয় করতে ৪৫ মিনিট থেকে এক ঘণ্টা কেটে যায়। ততক্ষণে মানিকের প্রাণ পাখি উড়ে যায়। এখন বউকে নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছি। সে সারাক্ষণ কাঁদছে, থামানো যাচ্ছে না।’
এ ঘটনায় গত শুক্রবার রাতে পালং মডেল থানায় মামলা করেছেন নবজাতকের বাবা নূর হোসেন। মামলায় আসামি করা হয়েছে অ্যাম্বুলেন্সচালক সবুজ দেওয়ান, তাঁর বাবা শরীয়তপুর সিভিল সার্জনের গাড়িচালক তাহের দেওয়ান, জাজিরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অবসরপ্রাপ্ত চালক আবদুল হাই ও স্থানীয় চালক বিল্লাল হোসেনকে।
আরও পড়ুন‘বাইরের’ অ্যাম্বুলেন্স আটকে রাখলেন স্থানীয় চালকেরা, ধস্তাধস্তির মধ্যেই নবজাতকের মৃত্যু১৫ আগস্ট ২০২৫পালং মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হেলাল উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, মামলার প্রধান আসামি সবুজ দেওয়ানকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অন্য আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: অ য ম ব ল ন স আটক সন ত ন র য়তপ র
এছাড়াও পড়ুন:
দলের দুই পক্ষের বিরোধ মেটাতে যাচ্ছিলেন সালিস বৈঠকে, পথে দুর্ঘটনায় মৃত্যু বিএনপি নেতার
দলের দুটি পক্ষের মধ্যে হাতিহাতি ও সংঘর্ষের ঘটনায় বিরোধ মীমাংসায় ডাকা হয়েছিল সালিস বৈঠক। সে বৈঠকে যোগ দিতে যাচ্ছিলেন ফেনীর পরশুরামের বিএনপি নেতা পারভেজ মজুমদার (৫৮)। পথে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান তিনি। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন তাঁর এক সহযোগী।
পারভেজ মজুমদার ফেনীর পরশুরাম উপজেলার মির্জানগর ইউনিয়নের নিজকালিকাপুর গ্রামের সাদেক মজুমদারের ছেলে। তিনি উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ছিলেন।
পুলিশ ও নিহত ব্যক্তির পরিবারের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রোববার দুপুরে নিজকালিকাপুর গ্রামে নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনকে কেন্দ্র করে স্থানীয় বিএনপির দুই পক্ষের মধ্যে হাতাহাতি ও মারামারির ঘটনা ঘটে। এই ঘটনায় উভয় পক্ষের চারজন আহত হন। সংঘর্ষের ঘটনাকে কেন্দ্র করে পরশুরাম উপজেলা সদরে সন্ধ্যায় একটি সালিস বৈঠকে উদ্যোগ নেওয়া হয়। সালিসে যোগ দিতে স্থানীয় বিএনপি নেতা পারভেজ মজুমদার ও তাঁর সহযোগী মোহাম্মদ হারুন মোটরসাইকেলে নিজকালিকাপুর থেকে পরশুরাম যাচ্ছিলেন। তাঁদের বহন করা মোটরসাইকেলটি সুবার বাজার-পরশুরাম সড়কের কাউতলী রাস্তার মাথায় পৌঁছালে বিপরীত দিক থেকে আসা একটি ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে মোটরসাইকেল আরোহী দুজন গুরুতর আহত হন।
স্থানীয় লোকজন তাদের উদ্ধার করে প্রথমে পরশুরাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স পরে ফেনীর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যায়। পারভেজের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় চিকিৎসকের পরামর্শে পরিবারের সদস্যরা রাতে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দিলে পথে তাঁর মৃত্যু হয়।
পরশুরাম মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ নুরুল হাকিম মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় বিএনপি নেতা পারভেজ মজুমদারের মৃত্যুর সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, নিহত ব্যক্তির পরিবারের পক্ষ থেকে কোনো অভিযোগ না থাকায় বিনা ময়নাতদন্তে মরদেহ বাড়ি নিয়ে যায় স্বজনরা।