এদিকে ক্যানসারের ব্যথায় আম্মা ভীষণ কাতরাতে থাকেন। পরে অ্যাম্বুলেন্সে আম্মা ও ছোট বোনকে সঙ্গে নিয়ে ঢাকার দিকে রওনা দিই। ওই সময় অ্যাম্বুলেন্স শাটডাউনের আওতামুক্ত ছিল। আমরা নরসিংদীর মনোহরদী এলাকায় পৌঁছালে আন্দোলনকারী ছাত্র-জনতা অ্যাম্বুলেন্স ছেড়ে দেয়। তবে আমার প্রাইভেট কারের ড্রাইভার একটু ভয় পেয়ে অন্য রাস্তা ধরে যেতেই উত্তেজিত ছাত্র–জনতা গাড়িটি ভাঙচুর করে। আমি তখন আম্মার সঙ্গে অ্যাম্বুলেন্সের ভেতরে ছিলাম। ওরা মনে করেছিল, আমার প্রাইভেট কারটি বোধ হয় অ্যাম্বুলেন্সবহরের বাইরে। পরে ভাঙা গাড়ি আর অ্যাম্বুলেন্স নিয়েই ঢাকার দিকে ছুটলাম। জায়গায় জায়গায় মানুষ আর মানুষ। ঘড়িতে তখন ১০টার মতো বাজে। রাস্তায় খুব একটা গাড়ি নেই। জরুরি কিছু অ্যাম্বুলেন্স আর প্রাইভেট কার।
আমাদের গাড়ি আর অ্যাম্বুলেন্স যখন ৩০০ ফিটের দিকে, তখন আত্মীয়স্বজন ফোন করে জানাল দেশে জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছে। বুঝতে পারছিলাম না কী করব! এদিকে আম্মা ব্যথায় অস্থির! তখন সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নিলাম, হাসপাতাল পর্যন্ত যাওয়া যায় কি না, চেষ্টা করে দেখি। শেষ পর্যন্ত অনেক ভয় আর উৎকণ্ঠার মধ্য দিয়ে রাত সাড়ে ১২টার দিকে ধানমন্ডিতে বাংলাদেশ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে পৌঁছালাম। রাস্তা তখন বলা যায় জনমানবহীন। জায়গায় জায়গায় আগুনের কুণ্ডলী আর ধোঁয়া উড়ছে।
আমি ২০০০ সালে বুয়েটে ভর্তির পর অনেক আন্দোলন দেখেছি, কিন্তু জুলাই আন্দোলনের মতো এত তেজোদ্দীপ্ত আর বুলেটের সামনে ছাত্রদের বুক চিতিয়ে দেওয়া সাহসী আন্দোলন আর দেখিনি। কেন যেন আমার মনে বিশ্বাস জন্মেছিল যে এবার বুঝি ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার পতন হবে! আন্দোলনকারীদের হাতে আমার গাড়ি ভাঙচুরে মনে কোনো কষ্ট পাইনি। তবে আমি মনে করেছি, দেশের জন্য এটা আমার কন্ট্রিবিউশন। আম্মার ক্যানসারের কারণে জুলাই আন্দোলনে আমি সশরীর যোগ দিতে পারিনি। জরুরি অবস্থার দিনগুলোতে আম্মা হাসপাতালে ছিলেন।
সকালে বেশির ভাগ খাবারের দোকান ও হোটেল বন্ধ থাকায় ঠিকমতো নাশতা পাওয়া যেত না। পাশের ইবনে সিনা হাসপাতাল থেকে লাইন ধরে নাশতা আনতে হতো। ইন্টারনেট স্লো থাকায় আত্মীয়স্বজনের কাছ থেকে আপডেট নিতাম। যখনই ইন্টারনেট পেয়েছি, ফেসবুকে ফ্যাসিস্ট সরকারের বিরুদ্ধে অনেক লিখেছি। আম্মার হাসপাতাল গণভবনের খুব কাছে ছিল। ওই এলাকায় সেনাবাহিনীর টহল ছিল বেশি। সন্ধ্যা হতেই তারা ট্যাংক নিয়ে টহল দিত। ২৮ জুলাই সবাইকে অথই সাগরে ভাসিয়ে আম্মা আমাদের ছেড়ে চলে যান! ওই সময় আমাদের মানসিক অবস্থা ভয়াবহ খারাপ ছিল।
আমরা যে যেখানেই ছিলাম, সবার একটাই লক্ষ্য ছিল, তা হলো খুনি হাসিনার পতন! আম্মা হাসপাতালে নিয়মিত পেপার পড়তেন, তিনি রাজনীতিসচেতন মানুষ ছিলেন। সব সময় আমাদের বলতেন, একদিন হাসিনার নির্মম পতন হবে। তাই হলো! ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে গেলেন। আর ক্যানসারের সঙ্গে যুদ্ধ করে অপরিসীম কষ্ট করে আম্মা চলে গেলেন স্রষ্টার ডাকে, পরপারে। আফসোস, তিনি ফ্যাসিস্ট হাসিনার পতন দেখে যেতে পারলেন না!
লেখক: প্রকৌশলী সালাহউদ্দিন আহমেদ রায়হান, ঢাকা
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
নবীন শিক্ষার্থীদের পদচারণে মুখর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, র্যাগিং করলে ব্যবস্থা
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০২৪–২৫ শিক্ষাবর্ষের স্নাতক প্রথম বর্ষের ক্লাস শুরু হয়েছে। আজ রোববার বিভিন্ন বিভাগ ও ইনস্টিটিউটে পরিচিতি (ওরিয়েন্টেশন) ক্লাসের মধ্য দিয়ে নবীন শিক্ষার্থীদের বরণ করে নেওয়া হয়।
নবীনদের বরণ করতে রঙিন আলপনা, ফুল ও সৃজনশীল সাজসজ্জায় বিভাগগুলো বর্ণিল করে তোলা হয়। নবীন শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দেওয়া হয় ফুল, কলম, কারিকুলামসহ বিভিন্ন শিক্ষাসামগ্রী। পরিচিতি ক্লাসে শিক্ষকেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মশৃঙ্খলা মেনে চলার পরামর্শ দেন। এদিকে নবীনদের র্যাগিং করলে বিধি অনুযায়ী শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছে প্রক্টরিয়াল বডি।
ক্যাম্পাস ঘুরে দেখা যায়, নবীন শিক্ষার্থীদের পদচারণে মুখর মতিহারের সবুজ চত্বর। বিশ্ববিদ্যালয়ের শামসুজ্জোহা চত্বর, বুদ্ধিজীবী স্মৃতিফলক চত্বর, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার, ইবলিশ চত্বর, টুকিটাকি চত্বর ও আমতলায় নতুন–পুরোনো শিক্ষার্থীদের আড্ডা বসেছে। হাতে ফুল নিয়ে নতুন বন্ধুদের সঙ্গে দল বেঁধে ক্যাম্পাস ঘুরে বেড়াচ্ছেন অনেকে। প্যারিস রোডসহ ক্যাম্পাসের বিভিন্ন জায়গা ও স্থাপনার সামনে দাঁড়িয়ে ছবি তুলছেন তাঁরা। নবীন শিক্ষার্থীদের সঙ্গে অনেক অভিভাবকও এসেছেন।
পরিচিতি ক্লাস শেষে মমতাজউদ্দিন একাডেমিক ভবনের সামনে কথা হয় অর্থনীতি বিভাগের নবীন শিক্ষার্থী মোছা. তাসনিয়ার সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘এত সুন্দর আয়োজনের মাধ্যমে আমাদের বরণ করে নেবে, সত্যি ভাবিনি। ক্লাসের নতুন বন্ধু ও সিনিয়র ভাইয়েরা সবাই আন্তরিক। মনে হচ্ছে, আমি আজ এক নতুন পরিবার পেয়েছি।’
নবীন শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দেওয়া হয় ফুল, কলম, কারিকুলামসহ বিভিন্ন শিক্ষাসামগ্রী। পরিচিতি ক্লাসে শিক্ষকেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মশৃঙ্খলা মেনে চলার পরামর্শ দেন