Prothomalo:
2025-10-03@02:41:06 GMT

জুলাই স্মৃতি ও আম্মার মৃত্যু

Published: 17th, August 2025 GMT

এদিকে ক্যানসারের ব্যথায় আম্মা ভীষণ কাতরাতে থাকেন। পরে অ্যাম্বুলেন্সে আম্মা ও ছোট বোনকে সঙ্গে নিয়ে ঢাকার দিকে রওনা দিই। ওই সময় অ্যাম্বুলেন্স শাটডাউনের আওতামুক্ত ছিল। আমরা নরসিংদীর মনোহরদী এলাকায় পৌঁছালে আন্দোলনকারী ছাত্র-জনতা অ্যাম্বুলেন্স ছেড়ে দেয়। তবে আমার প্রাইভেট কারের ড্রাইভার একটু ভয় পেয়ে অন্য রাস্তা ধরে যেতেই উত্তেজিত ছাত্র–জনতা গাড়িটি ভাঙচুর করে। আমি তখন আম্মার সঙ্গে অ্যাম্বুলেন্সের ভেতরে ছিলাম। ওরা মনে করেছিল, আমার প্রাইভেট কারটি বোধ হয় অ্যাম্বুলেন্সবহরের বাইরে। পরে ভাঙা গাড়ি আর অ্যাম্বুলেন্স নিয়েই ঢাকার দিকে ছুটলাম। জায়গায় জায়গায় মানুষ আর মানুষ। ঘড়িতে তখন ১০টার মতো বাজে। রাস্তায় খুব একটা গাড়ি নেই। জরুরি কিছু অ্যাম্বুলেন্স আর প্রাইভেট কার।

আমাদের গাড়ি আর অ্যাম্বুলেন্স যখন ৩০০ ফিটের দিকে, তখন আত্মীয়স্বজন ফোন করে জানাল দেশে জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছে। বুঝতে পারছিলাম না কী করব! এদিকে আম্মা ব্যথায় অস্থির! তখন সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নিলাম, হাসপাতাল পর্যন্ত যাওয়া যায় কি না, চেষ্টা করে দেখি। শেষ পর্যন্ত অনেক ভয় আর উৎকণ্ঠার মধ্য দিয়ে রাত সাড়ে ১২টার দিকে ধানমন্ডিতে বাংলাদেশ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে পৌঁছালাম। রাস্তা তখন বলা যায় জনমানবহীন। জায়গায় জায়গায় আগুনের কুণ্ডলী আর ধোঁয়া উড়ছে।

আমি ২০০০ সালে বুয়েটে ভর্তির পর অনেক আন্দোলন দেখেছি, কিন্তু জুলাই আন্দোলনের মতো এত তেজোদ্দীপ্ত আর বুলেটের সামনে ছাত্রদের বুক চিতিয়ে দেওয়া সাহসী আন্দোলন আর দেখিনি। কেন যেন আমার মনে বিশ্বাস জন্মেছিল যে এবার বুঝি ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার পতন হবে! আন্দোলনকারীদের হাতে আমার গাড়ি ভাঙচুরে মনে কোনো কষ্ট পাইনি। তবে আমি মনে করেছি, দেশের জন্য এটা আমার কন্ট্রিবিউশন। আম্মার ক্যানসারের কারণে জুলাই আন্দোলনে আমি সশরীর যোগ দিতে পারিনি। জরুরি অবস্থার দিনগুলোতে আম্মা হাসপাতালে ছিলেন।

সকালে বেশির ভাগ খাবারের দোকান ও হোটেল বন্ধ থাকায় ঠিকমতো নাশতা পাওয়া যেত না। পাশের ইবনে সিনা হাসপাতাল থেকে লাইন ধরে নাশতা আনতে হতো। ইন্টারনেট স্লো থাকায় আত্মীয়স্বজনের কাছ থেকে আপডেট নিতাম। যখনই ইন্টারনেট পেয়েছি, ফেসবুকে ফ্যাসিস্ট সরকারের বিরুদ্ধে অনেক লিখেছি। আম্মার হাসপাতাল গণভবনের খুব কাছে ছিল। ওই এলাকায় সেনাবাহিনীর টহল ছিল বেশি। সন্ধ্যা হতেই তারা ট্যাংক নিয়ে টহল দিত। ২৮ জুলাই সবাইকে অথই সাগরে ভাসিয়ে আম্মা আমাদের ছেড়ে চলে যান! ওই সময় আমাদের মানসিক অবস্থা ভয়াবহ খারাপ ছিল।

আমরা যে যেখানেই ছিলাম, সবার একটাই লক্ষ্য ছিল, তা হলো খুনি হাসিনার পতন! আম্মা হাসপাতালে নিয়মিত পেপার পড়তেন, তিনি রাজনীতিসচেতন মানুষ ছিলেন। সব সময় আমাদের বলতেন, একদিন হাসিনার নির্মম পতন হবে। তাই হলো! ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে গেলেন। আর ক্যানসারের সঙ্গে যুদ্ধ করে অপরিসীম কষ্ট করে আম্মা চলে গেলেন স্রষ্টার ডাকে, পরপারে। আফসোস, তিনি ফ্যাসিস্ট হাসিনার পতন দেখে যেতে পারলেন না!

লেখক: প্রকৌশলী সালাহউদ্দিন আহমেদ রায়হান, ঢাকা

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আম দ র আম ম র

এছাড়াও পড়ুন:

ফ্লোটিলা বহরে ভেসে চলা একমাত্র জাহাজ ম্যারিনেট কোথায়

ফিলিস্তিনের গাজা অভিমুখে যাত্রা করা ত্রাণবাহী নৌবহর ‘গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা’-এর একটি মাত্র নৌযান এখনো আটক করতে পারেনি ইসরায়েলি বাহিনী। এই নৌযানটি হলো দ্য ম্যারিনেট।

পোল্যান্ডের পতাকাবাহী এই নৌযানে ছয়জন আরোহী রয়েছেন ।

ফ্লোটিলার লাইভ ট্র্যাকার অনুযায়ী, ম্যারিনেট আন্তর্জাতিক জলসীমায় ভেসে চলেছে। এর গতি ঘণ্টায় প্রায় ২.১৬ নট (ঘণ্টায় প্রায় ৪ কিলোমিটার) , গাজার আঞ্চলিক জলসীমা থেকে ম্যারিনেটের দূরত্ব  প্রায় ১০০ কিলোমিটার।

বৃহস্পতিবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশিত এক ভিডিওতে জাহাজটির ক্যাপ্টেন বলেন, ম্যারিনেটের ইঞ্জিনে সমস্যা হচ্ছিল। এটি  এখন সারানো  হয়েছে।

ফ্লোটিলা আয়োজকেরা বলছেন, ম্যারিনেট নৌযান এখনো স্টারলিঙ্কের মাধ্যমে সংযুক্ত। এটি যোগাযোগের আওতার মধ্যেই রয়েছে। লাইভস্ট্রিমও সক্রিয় আছে।  

ইনস্টাগ্রামে দেওয়া এক পোস্টে গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা জানিয়েছে, অন্য জাহাজগুলো আটক করলেও ম্যারিনেট এখনো ভেসে চলছে।

ম্যারিনেট ফিরে যাবে না বলেও ওই পোস্টে জানানো হয়েছে।  পোস্টে বলা হয়েছে, ‘ম্যারিনেট শুধু একটি জাহাজ নয়। ম্যারিনেট হলো ভয়, অবরোধ ও সহিংসতার বিরুদ্ধে দৃঢ়তা।’

ফ্লোটিলা আয়োজকরা আরও লিখেছেন, ‘গাজা একা নয়।’ ‘ফিলিস্তিনকে কেউ ভুলে যায়নি। আমরা কোথাও যাচ্ছি না।’

ফ্লোটিলা বহরের প্রায় সব নৌযানে থাকা অধিকারকর্মীদের আটক করেছে ইসরায়েল। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন সুইডিশ অধিকারকর্মী গ্রেটা থুনবার্গ। ইসরায়েলের এমন পদক্ষেপকে ‘সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড’ উল্লেখ করে নিন্দা জানিয়েছে অনেক দেশ। বিভিন্ন দেশে বিক্ষোভও হয়েছে।

আরও পড়ুনগাজা অভিমুখী নৌবহরে ইসরায়েলি সেনাদের আক্রমণ, ধরে নেওয়া হলো অধিকারকর্মীদের৬ ঘণ্টা আগে

সম্পর্কিত নিবন্ধ