পাকিস্তানে টানা কয়েকদিনের ভারী বৃষ্টিপাতের ফলে সৃষ্ট আকস্মিক বন্যায় ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে কমপক্ষে ৩৪৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। শনিবার (১৬ আগস্ট) দেশটির জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। 

রবিবার (১৭ আগস্ট) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে দ্য এক্সপ্রেস ট্রিবিউন। 

সংবাদমাধ্যমটি জানিয়েছে, উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় প্রদেশ খাইবার পাখতুনখোয়ায় প্রবল বৃষ্টিপাত, আকস্মিক বন্যা ও বজ্রপাত ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে। খাইবার পাখতুনখোয়ায় ৩২৪ জনের মৃত্যু খবর নিশ্চিত করেছে এনডিএমএ। আজাদ জম্মু ও কাশ্মীর এবং গিলগিট-বালতিস্তানে আরো কয়েক মানুষ ডজন মারা গেছেন। বন্যা ও ভূমিধসে আহত হয়েছেন কমপক্ষে ১৩৭ জন।

আরো পড়ুন:

পাকিস্তানে আকস্মিক বন্যায় দুইদিনে ২২৫ জনের মৃত্যু

পাকিস্তানকে মোদি: রক্ত আর জল একসঙ্গে বইতে পারে না

উদ্ধারকারী কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ধ্বংসযজ্ঞের ব্যাপকতায় প্রাদেশিক সরকার খাইবার পাখতুনখোয়ার ছয়টি জেলা- বুনের, বাজাউর, সোয়াত, শাংলা, মানসেহরা এবং বটগ্রামকে দুর্যোগ কবলিত ঘোষণা করেছেন। বন্যায় কয়েক হাজার বাড়িঘর ধ্বংস হয়ে গেছে। ভূমিধসের ফলে গুরুত্বপূর্ণ রাস্তাঘাট বন্ধ হয়ে গেছে এবং প্রত্যন্ত অঞ্চলে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে, যা উদ্ধার ও ত্রাণ কার্যক্রমকে জটিল করে তুলেছে।

খাইবার পাখতুনখোয়ার জরুরি উদ্ধার সংস্থার মুখপাত্র বিলাল আহমেদ ফয়জি এক্সপ্রেস ট্রিবিউনকে বলেন, “ভারী বৃষ্টিপাত, ভূমিধস ও ভেসে যাওয়া রাস্তাঘাট উদ্ধার প্রচেষ্টা, বিশেষ করে ভারী যন্ত্রপাতি এবং অ্যাম্বুলেন্স পরিবহনে মারাত্মক ব্যাঘাত ঘটাচ্ছে।”

তিনি বলেন, “দুর্যোগস্থলে পৌঁছানোর জন্য উদ্ধারকর্মীদের দীর্ঘ পথ হেঁটে যেতে হচ্ছে। তারা বেঁচে যাওয়াদের সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে, কিন্তু ধ্বংসস্তূপে আটকা পড়া আত্মীয়স্বজন বা প্রিয়জনদের মৃত্যুর কারণে খুব কম লোকই স্থানান্তরিত হচ্ছে।”

বুনের জেলার ডেপুটি কমিশনার কাশিফ কাইয়ুম খান বলেন, “উদ্ধারকর্মীদের প্রত্যন্ত অঞ্চলে পৌঁছানোর জন্য নতুন উপায় খুঁজে বের করতে হচ্ছে। ধ্বংসস্তূপের নিচে এখনও অনেক মানুষ আটকা পড়ে থাকতে পারে, যা স্থানীয় বাসিন্দারা হাত দিয়ে পরিষ্কার করতে পারছেন না।”

খাইবার পাখতুনখোয়ায় প্রায় দুই হাজার উদ্ধারকর্মী মোতায়েন করা হয়েছে। কর্মকর্তারা সতর্ক করে বলেছেন, প্রত্যন্ত গ্রামগুলোতে এখনও অনেক মানুষ ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকা পড়ে থাকতে পারে।

কেবল শাংলা জেলাতেই ৩৭ জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছেন কর্মকর্তারা। বেশ কয়েকজন এখনও নিখোঁজ রয়েছেন। প্রবল বন্যা, বজ্রপাত ও ভূমিধসে এ অঞ্চলে ঘরবাড়ি ভেঙে পড়েছে এবং জেলাটির সব বাসিন্দা বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। 

কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আজাদ জম্মু ও কাশ্মীরের আরো ১১ জন এবং গিলগিট-বালতিস্তানে আরো ৯ জন নিহত হয়েছেন। শুক্রবার বাজাউর জেলায় ত্রাণ অভিযানের সময় খারাপ আবহাওয়ার কারণে স্থানীয় সরকারের একটি হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়ে পাঁচজন নিহত হয়েছেন।

দেশটির আবহাওয়াবিদরা জানিয়েছেন, উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে ২১ আগস্ট পর্যন্ত ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। নাগরিকদের সতর্ক থাকার, বৃষ্টিপাত এবং বন্যার সময় সতর্কতা অবলম্বন করার এবং ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় অপ্রয়োজনীয় ভ্রমণ এড়াতে অনুরোধ করা হয়েছে। 

এনডিএমএ জানিয়েছে, গত ২৬ জুন বর্ষা মৌসুম শুরু হওয়ার পর থেকে দেশটিতে মুষলধারে বৃষ্টিপাতের ফলে ৬৫০ জনেরও বেশি মানুষ মারা গেছে, ৯০৫ জন আহত হয়েছে। 

জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবের জন্য পাকিস্তান বিশ্বের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর মধ্যে একটি এবং এর ২৪ কোটি বাসিন্দা ক্রমবর্ধমান হারে চরম আবহাওয়ার ঘটনার মুখোমুখি হচ্ছে। ২০২২ সালে বন্যায় পাকিস্তানের এক তৃতীয়াংশ এলাকা ডুবে যায় এবং প্রায় ১ হাজার ৭০০ জন মারা যায়।

ঢাকা/ফিরোজ

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর কর মকর ত র জন র ম ত য ভ ম ধস বন য য়

এছাড়াও পড়ুন:

ভয়াবহ আগুন কলকাতার বড়বাজারে, ঘটনাস্থলে দমকলের ২০ ইঞ্জিন

কলকাতার পুলিশ হেডকোয়ার্টার লালবাজারের কাছে বড়বাজারের এজরা স্ট্রিটের একটি গুদামে ভয়াবহ আগুন লেগেছে। শনিবার ভোর রাতে আগুন লাগলেও সেই আগুন সকাল পর্যন্ত নিয়ন্ত্রণে আনা যায়নি। বরং দ্রুত আগুন ছড়াচ্ছে। ঘটনাস্থলে পৌঁছেছে দমকলের অন্তত ২০টি ইঞ্জিন। ল্যাডারের সাহায্য নিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা চলছে। ঘিঞ্জি এলাকা হওয়ায় বিপুল ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। পরিস্থিতি অনুযায়ী ইঞ্জিনের সংখ্যা আরো বৃদ্ধি করা হতে পারে।

স্থানীয় সূত্রে খবর, শনিবার ভোর ৫টা নাগাদ গুদামে আগুন লেগে যায়। বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি এবং প্রচুর বৈদ্যুতিক তার ছিল গুদামে। মজুত করা ছিল অনেক দাহ্য পদার্থ। ফলে দ্রুত আগুন ছড়িয়ে পড়ে। ভালো করে কেউ কিছু বুঝে ওঠার আগেই আগুনের লেলিহান শিখা গ্রাস করে আকাশ। চারদিক ঢেকে যায় কালো ধোঁয়ায়। কীভাবে এই আগুন লাগল, তা এখনও স্পষ্ট নয়। তবে বৈদ্যুতিক সামগ্রী থেকেই আগুন লেগেছে বলে প্রাথমিকভাবে মনে করা হচ্ছে। কেউ কেউ শর্ট সার্কিটের সম্ভাবনার কথা বলছেন। 

আরো পড়ুন:

ভারত যাচ্ছেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা

চীন সীমান্তের পাশে নতুন বিমানঘাঁটি স্থাপন করেছে ভারত

যদিও ফায়ার সার্ভিসের তরফে সূত্রপাত সম্পর্কে এখনও কিছু নিশ্চিত কিছু জানাতে পারেনি, তারা আগুন নেভাতেই এখনো পর্যন্ত ব্যস্ত। পুলিশ ও দমকল সূত্রে খবর, ভোরে ওই গুদাম থেকে কালো ধোঁয়া বার হতে দেখে স্থানীয়রাই দমকলকে জানান। ঘনবসতি এলাকা হওয়ায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে। গুদাম থেকে পাশের আবাসনেও ছড়িয়ে পড়েছে আগুন। একাধিক বাড়িতে আগুন ছড়িয়ে পড়েছে বলে খবর। ভিতরে কেউ আটকে পড়েছেন কি না, তা এখনও স্পষ্ট নয়।

অন্যদিকে দমকলের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিচ্ছেন স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ। তাদের অভিযোগ, দমকলে খবর দেওয়া হলেও তারা দেরিতে এসেছে। ফলে আগুন আরও ছড়িয়ে পড়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছেন দমকলকর্মীরা। মাথায় হাত ব্যবসায়ীদের।

ঢাকা/সুচরিতা/ফিরোজ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ভয়াবহ আগুন কলকাতার বড়বাজারে, ঘটনাস্থলে দমকলের ২০ ইঞ্জিন