ভূমিকা

১৯৮৫ সালের ১০ জুলাই কবি আহসান হাবীব মারা গেলেন। কবির মৃত্যুর কিছু দিন পর তাঁর ছেলে মঈনুল আহসান সাবের বাবার অগ্রন্থিত লেখা উদ্ধারের উদ্যোগ নেন। আমার কাছে লেখা উদ্ধার কাজটির প্রস্তাব আসে। আমি তখন ব্যক্তিগত ও পারিবারিকভাবে নিদারুণ অর্থকষ্টে আছি। প্রস্তাব পাওয়ামাত্র কাজটি লুফে নিই।

      কিন্তু অর্থকড়ি ছাপিয়ে কাজটি নানাভাবে ধীরে ধীরে অর্থপূর্ণ হয়ে ওঠে। কাজটি আমি করছিলাম মূলত বাংলা একাডেমির লাইব্রেরিতে বসে। আহসান হাবীবের অসংকলিত কবিতা, অনুবাদ, গল্প ও অন্যান্য লেখার খোঁজে দিনের পর দিন আমি ১৯৪০-এর দশক থেকে ১৯৭০-এর দশক পর্যন্ত বাংলা ভাষায় প্রকাশিত যাবতীয় পত্রপত্রিকা উল্টে যেতে থাকি। স্পেনের কবি হুয়ান রামোন হিমেনেথের ‘প্লাতেরো ও আমি’ কাব্যগ্রন্থ আর শাহেদ সোহ্‌রাওয়াদীর কবিতার অনুবাদ ছাড়াও আহসান হাবীবের বিচিত্র লেখার সন্ধান পেতে থাকি। কিন্তু পূর্ব বাংলার সমাজের এক লুপ্ত সময়ের অবয়ব চোখের সামনে যেভাবে স্পষ্ট এক আকার নিতে থাকে, তা আমার নেশা ধরিয়ে দেয়।

      সেসবেরই মধ্যে বিভিন্ন পত্রিকায় ছড়িয়ে থাকা কবি শামসুর রাহমানের বহু কবিতার সন্ধান পাই। বোঝাই যায়, এই কবিতাগুলো কবি হিসেবে শামসুর রাহমানের গড়ে ওঠার সময়পর্বে রচিত। কারণ, কবিতাগুলো তিনি তাঁর কোনো বইয়ে অন্তর্ভুক্ত করেননি। কবিতাগুলোর গুরুত্ব তাই বলে কোনোভাবেই কমে যায় না। কারণ, এসব কবিতায় পাওয়া যাচ্ছে একজন কবির তৈরি হয়ে ওঠার পথরেখা। শুধু কি তা-ই? এসব কবিতায় এমন কিছু লক্ষণ দেখা যাবে—যেমন নিখুঁত ছন্দের প্রতি তাঁর ঝোঁক, পাশ্চাত্য পুরাণের অবাধ ব্যবহার, ব্যক্তির শূন্যবোধের আধুনিকতাবাদী প্রবণতা ইত্যাদি—পরবর্তী সময়ে যা তাঁর কবিতার একান্ত মুদ্রা হয়ে উঠবে।

    কোন কবিতা কোন পত্রিকায় ছাপা হয়েছিল, বয়সের চপলতায় সে সময় তার তথ্য সংগ্রহ করে রাখা হয়নি। এই অপূর্ণতা থেকেই গেল। তবু এত দিন পরে যে কবিতাগুলো আলোর মুখ দেখল, তার আনন্দই-বা কম কী!

সাজ্জাদ শরিফ

.

..... ...... ......

শামসুর রাহমানের কবিতাশামসুর রাহমান (২৩ অক্টোবর ১৯২৯—১৭ আগস্ট ২০০৬)

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আহস ন

এছাড়াও পড়ুন:

নদীভাঙন রোধে পাটুরিয়ায় ৩ ঘণ্টা সড়ক অবরোধ

মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া ফেরি ও লঞ্চঘাট এবং আশপাশে এলাকা নদীভাঙন থেকে রক্ষা করার দাবিতে সড়ক অবরোধ করেছে এলাকাবাসী। এ সময় তারা বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন করে।

রবিবার (১৭ আগস্ট) দুপুরে তারা পাটুরিয়া ঘাট এলাকায় এ সব কর্মসূচি পালন করেন।

আন্দোলনকারী আজিবার রহমান জানান, পদ্মা নদীতে প্রবল স্রোতের কারণে দুই সপ্তাহের বেশি সময় ধরে পাটুরিয়া ফেরি, লঞ্চঘাট, ঘাটসংলগ্ন ধুতরাবাড়ী ও তেগুরি গ্রামে নদীভাঙন শুরু হয়েছে। গ্রাম দুটিতে কয়েকটি বসতবাড়ি এবং ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান নদীগর্ভে চলে গেছে। এরই মধ্যে লঞ্চঘাট নদীতে বিলীন হয়েছে। নদীভাঙনে ফেরিঘাটও মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। 

আরো পড়ুন:

নেত্রকোনায় বিকাশকর্মী হত্যায় জড়িতদের গ্রেপ্তার দাবি

রংপুরে শ্বশুর-জামাই হত্যাকাণ্ডের বিচার চেয়ে মানববন্ধন

তিনি আরো জানান, উপজেলা প্রশাসন, বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) এবং পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) কর্মকর্তাদের ভাঙনের বিষয়টি অবহিত করা হয়। তবে ভাঙনরোধে কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। এর প্রেক্ষিতে আজ রবিবার (১৭ আগস্ট) দুপুরে পাটুরিয়া ঘাটসংলগ্ন শহীদ রফিক চত্বরে উথলী-পাটুরিয়া সড়কে তিন ঘণ্টা অবরোধ করে রাখে এলাকাবাসী।

এর আগে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে পাটুরিয়া ৫ নম্বর ফেরিঘাট থেকে এলাকাবাসী বিক্ষোভ মিছিল বের করে। বেলা ১২টার দিকে মিছিলটি পাটুরিয়া ঘাটের অদূরে শহীদ রফিক চত্বর এলাকায় গিয়ে শেষ হয়। এরপর সেখানে উথলী-পাটুরিয়া সড়ক অবরোধ ও মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে। বিভিন্ন যানবাহন আটকা পড়ে যাত্রী ও পরিবহন-শ্রমিকেরা ভোগান্তিতে পড়ে। খবর পেয়ে বেলা সাড়ে ১২টার দিকে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে এলাকাবাসীকে সড়ক থেকে সরে যেতে অনুরোধ করে। তবে আন্দোলনকারীরা অবরোধ কর্মসূচি পালন করতে থাকে। প্রায় তিন ঘণ্টা পর বেলা ৩টার দিকে সেনাসদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে অবরোধ তুলে নেয়ার অনুরোধ করলে তারা সড়ক থেকে সরে যায়। 

অবরোধ চলাকালে নদীভাঙন প্রতিকারের দাবিতে ভুক্তভোগী বেশ কয়েকজন এলাকাবাসী বক্তব্য দেন। তাদের মধ্যে ছিলেন স্থানীয় ব্যবসায়ী মোবারক হোসেন খান (পান্নু), ব্যবসায়ী নূর ইসলাম, স্থানীয় আরুয়া ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য তাপস খান, স্থানীয় বাসিন্দা কবির হোসেন, উত্তম পাল, আরিফ হোসেন ও রানা শিকদার।

বক্তারা বলেন, ‘‘দেশের গুরুত্বপূর্ণ পাটুরিয়া ফেরিঘাট নদীভাঙনে বিলীন হওয়ার উপক্রম হয়েছে। ইতিমধ্যে ঘাট এলাকা ও আশপাশের কয়েকটি গ্রামে অর্ধশতাধিক বসতবাড়ি ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। জীবনের শেষ আশ্রয়স্থল হারিয়ে অনেকে পথে বসেছে। অথচ ভাঙনরোধে একাধিকবার সংশ্লিষ্ট সরকারি দপ্তরের কর্মকর্তাদের জানালেও তারা কার্যকর পদক্ষেপ নিচ্ছে না।’’ 

নদীভাঙন প্রতিরোধে বক্তারা দাসকান্দি থেকে নয়াকান্দি এলাকা পর্যন্ত স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের দাবি জানান।

এ ব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোর্ডের মানিকগঞ্জের নির্বাহী প্রকৌশলী মুহাম্মদ আক্তারুজ্জামান জানান, ঘাট সংলগ্ন দুই কিলোমিটার এলাকা বিআইডব্লিউটিএর আওতাধীন। এরপরও সরেজমিন পরিদর্শন করে বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জাকির হোসেন জানান, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে পাটুরিয়া ঘাট ও আশপাশে নদীভাঙনরোধে ব্যবস্থা নিতে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় এবং নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়কে জানানো হয়েছে। মন্ত্রণালয় থেকে সিদ্ধান্ত নেয়ার পর ভাঙনরোধে কাজ শুরু করা হবে। তবে ইতোমধ্যে পাটুরিয়া ঘাট এলাকায় ভাঙনরোধে বালুভর্তি জিওব্যাগ ফেলা হচ্ছে।

ঢাকা/চন্দন/বকুল

সম্পর্কিত নিবন্ধ