ইরানের তেল নাকি ইসরায়েলের প্রযুক্তি, আন্তর্জাতিক রাজনীতি নিয়ে এক থ্রিলার
Published: 17th, August 2025 GMT
ইরান ও ইসরায়েল দুই দেশই ভারতের মিত্র। ইরান থেকে তেল কেনে ভারত, ইসরায়েল থেকে নেয় প্রযুক্তি। কিন্তু ইরান ও ইসরায়েল যখন দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়ে, তখন কার পক্ষ নেবে ভারত? নাকি ‘নীরবতা’ বেছে নেবে? আন্তর্জাতিক রাজনীতির এই জটিল আর ধূসর দুনিয়ায় আলো ফেলেছে অরুণ গোপালনের থ্রিলার সিনেমা ‘তেহরান’।
জন আব্রাহাম অভিনীত থ্রিলারটি দর্শককে নিয়ে যায় এমন এক দুনিয়ায়, যেখানে নৈতিকতা ও বাস্তবতার মধ্যে সূক্ষ্ম সীমারেখা আঁকা হয়েছে। বাস্তব ঘটনার ছায়া ধরে তৈরি এই সিনেমা শুধু অ্যাকশন নয়, বরং একটি রাজনৈতিক ও মানবিক গল্পের উপাখ্যান।
‘তেহরান’ সিনেমার গল্পের মূল উৎস ২০১২ সালে নয়াদিল্লিতে ঘটে যাওয়া একটি হামলা, যেখানে ইসরায়েলি কূটনীতিকের গাড়িতে বোমা বিস্ফোরণ হয়।
আরও পড়ুনদুর্দান্ত এই থ্রিলার আপনাকে নাড়িয়ে দেবে১০ জুলাই ২০২৫একই দিনে জর্জিয়া ও থাইল্যান্ডেও ইসরায়েলি কূটনীতিকদের গাড়িতে একই ধরনের হামলার ঘটনা ঘটেছিল। ইসরায়েল তখনই ইরানকে সন্দেহ করেছিল। এই রাজনৈতিক বাস্তবতা থেকেই তৈরি হয়েছে ‘তেহরান’।
সিনেমার নায়ক এসিপি রাজীব কুমার (জন আব্রাহাম) একটি বিশেষ পুলিশ ইউনিটের নেতৃত্ব দেন। তাঁর লক্ষ্য, হামলার মূল উৎস খুঁজে বের করা। দিল্লিতে হামলার পর যখন তাঁকে সেই তদন্তভার দেওয়া হয়, তিনি নিতে চাননি। তবে তাঁকে নাড়িয়ে দেয় এক পথশিশুর মৃত্যু। রাস্তায় ফুল বিক্রি করত মেয়েটি। আসা-যাওয়ার পথে রাজীব নিজেও কতবার ফুল কিনেছেন। হাসপাতালে রাজীবের চোখের সামনেই মৃত্যু হয় মেয়েটির, ছোট ভাইটির ফ্যাকাশে চোখ রাজীবের ভেতরটা দুমড়ে–মুচড়ে দেয়। শুরু হয় তদন্ত। রাজীব দ্রুতই বুঝতে পারেন, এই হামলার সঙ্গে সামরিক বাহিনীর যোগ আছে।
‘তেহরান’ সিনেমার পোস্টার থেকে। আইএমডিবি.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
বাণিজ্য আলোচনায় অংশ নিতে ভারতে আসছে না মার্কিন প্রতিনিধিদলপ্রতিনিধিদল
২৫ থেকে ২৯ আগস্ট পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের যে প্রতিনিধিদলের ভারত সফরের করার কথা ছিল, তা বাতিল করা হয়েছে। ফলে প্রস্তাবিত দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যচুক্তি নিয়ে আলোচনা আপাতত স্থগিত হলো। বিষয়টি সম্পর্কে ওয়াকিবহাল সূত্রের বরাতে এনডিটিভি এই সংবাদ জানিয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই চুক্তি নিয়ে আলোচনার বর্তমান পর্বটি অন্য কোনো সময় হতে পারে। ফলে ২৭ আগস্ট থেকে ভারতীয় পণ্যের ওপর আরোপিত অতিরিক্ত শুল্ক স্থগিত বা প্রত্যাহারের সম্ভাবনা আপাতত ভেস্তে গেল; যদিও বিষয়টি রয়টার্স তাৎক্ষণিকভাবে যাচাই করতে পারেনি।
চলতি আগস্ট মাসে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ভারতীয় পণ্যের ওপর অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেন। রাশিয়ার তেল আমদানির শাস্তি হিসেবে ট্রাম্প এই শুল্ক আরোপ করে।
২৭ আগস্ট থেকে এই শুল্ক কার্যকর হলে কিছু ভারতীয় পণ্যের ওপর শুল্ক ৫০ শতাংশে উন্নীত হবে। চলমান বাণিজ্যযুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের যত শুল্ক আরোপ করেছে, তার মধ্যে এটি অন্যতম সর্বোচ্চ হার।
ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বাণিজ্য আলোচানায় যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম প্রধান দাবি ছিল ভারতের বিশাল কৃষি ও দুগ্ধ খাত উন্মুক্ত করা। কিন্তু ভারত এ বিষয়ে একেবারে অনড়। নিজের কৃষকদের স্বার্থ রক্ষায় তারা এই ছাড় দিতে চায় না। এ ছাড়া আরও কিছু কারণে দেশ দুটির মধ্যে চুক্তি হলো না।
এমনকি ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপের পরও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেছেন, ভারতের কৃষক ও মজুরের স্বার্থ রক্ষায় একবিন্দু ছাড়া দেওয়া হবে না। সে জন্য হয়তো তাঁকে ব্যক্তিগতভাবে বড় মূল্য দিতে হবে, কিন্তু তিনি সে জন্য প্রস্তুত। এ পরিস্থিতিতে খবর এল, যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিদল ভারতে আসছে না। ফলে বাণিজ্যচুক্তির ভবিষ্যৎ অনেকটা ঝুলে গেল বলেই ধারণা করা হচ্ছে।
রয়টার্সের সংবাদে সাবেক মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধি মার্ক লিন্সকট বলেন, একসময় দুই পক্ষই চুক্তি স্বাক্ষরের খুব কাছাকাছি ছিল। কিন্তু প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও প্রধানমন্ত্রী মোদির মধ্যে সরাসরি যোগাযোগ না হওয়া মূল বাধা হয়ে দাঁড়ায়। তবে হোয়াইট হাউসের একজন কর্মকর্তা বলেন, অন্যান্য দেশের সঙ্গে চুক্তি হয়েছে সরাসরি ফোন ছাড়াই।
ভারতের এক কর্মকর্তা বলেন, মোদি ফোন করতে চাননি। কেননা, তাঁর আশঙ্কা ছিল, তিনি ট্রাম্পের একতরফা কথার ফুলঝুরির মধ্যে পড়তে পারেন।
ওয়াশিংটনের একটি সূত্র জানায়, ট্রাম্প ভারতের কাছ থেকে বড় কিছুর আশা করছিলেন। যেমন তাঁর আশা ছিল, ভারতের বাজার আরও উন্মুক্ত হবে, বিনিয়োগ ও বড় ক্রয়ের প্রতিশ্রুতি আসবে। কিন্তু ভারতের এক কর্মকর্তা স্বীকার করেন, ভারত তেমন ছাড় দিতে প্রস্তুত ছিল না। দক্ষিণ কোরিয়া চুক্তির আগে ৩৫ হাজার কোটি ডলারের বিনিয়োগ ও জ্বালানি আমদানির প্রতিশ্রুতি এবং চাল ও গরুর মাংস আমদানিতে ছাড় দিয়ে ১৫ শতাংশ শুল্ক আদায় করে। কিন্তু ভারত তেমন কোনো চমকপ্রদ ছাড়ের কথা বলেনি, বরং তারা নিজেদের স্বার্থ রক্ষায় কট্টর অবস্থানে ছিল। যে বিষয়ে ট্রাম্পও বলেছেন, ভারত আলোচনার সময় অত্যন্ত কঠোর।
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন রাশিয়ার পণ্য কেনা চালিয়ে যাচ্ছে, অথচ রাশিয়ার তেল কেনার জন্য শুধু ভারতকে আলাদাভাবে শাস্তি দেওয়া হচ্ছে।