‘কাজলরেখা’, সেই যে ময়মনসিংহ গীতিকার কাহিনি। রাজার শরীর থেকে প্রতিদিন একটি করে সুচ তুলে আনছিল সেই তরুণী। অবশেষে যেদিন রাজার চোখ থেকে সুচ তুলে নেওয়ার কথা, সেদিনই ঘটল বিপত্তি। কৌশলে দাসী এসে দখল করল কাজলরেখার স্থান।

সংগ্রামী কাজলরেখাকে নিয়েই এবার শিল্পকর্ম করলেন দেশের নারী চিত্রশিল্পীরা। ‘কাজলরেখার দেশে’ নামে তাঁদের যৌথ শিল্পকলা প্রদর্শনী শুরু হলো গতকাল শনিবার ধানমন্ডির ৪ নম্বর সড়কের সফিউদ্দীন শিল্পালয়ে।

এ ছাড়া রাজধানীর বিভিন্ন গ্যালারিতে চলছে শিল্পকলার বিভিন্ন মাধ্যমের প্রদর্শনী। এতে আছে ভাস্কর্য ও আলোকচিত্র। শিল্পকলার এসব আয়োজনের মাধ্যমে ফুটে উঠেছে ঋতুপ্রকৃতি, সামাজিক বাস্তবতা, মানুষের জীবনসংগ্রাম এবং শিল্পীর শিল্পবোধ ও উপলব্ধির নান্দনিক প্রকাশ।

‘কাজলরেখার দেশে’

প্রদর্শনী আয়োজন করেছে নারী শিল্পীদের সংগঠন ‘কন্যা’। এটি কন্যার দশম একক প্রদর্শনী। গতকাল সন্ধ্যায় প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন মুক্তিযোদ্ধা শিল্পী অধ্যাপক আবুল বার্‌ক্‌ আলভী। বিশেষ অতিথি ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক শিল্পী কামাল উদ্দীন, আর সভাপতিত্ব করেন বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক লুভা নাহিদ চৌধুরী।

কন্যার সভাপতি শাকিলা খান জানান, অনলাইনের মাধ্যমে ২০১৮ সালে দেশে ও বিদেশে অবস্থানকারী নারী শিল্পীদের নিয়ে কন্যার যাত্রা শুরু। পরের বছর ছিল তাদের প্রথম একক প্রদর্শনী। নারী শিল্পীরা অনেকেই বিভিন্ন পেশায় যুক্ত, পাশাপাশি রয়েছে সাংসারিক দায়িত্বও। ফলে অনেকের পক্ষেই নিয়মিত শিল্পচর্চা চালিয়ে যাওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। এসব বিবেচনা করেই নারী শিল্পীদের শিল্পচর্চায় উৎসাহিত করতে সাংগঠনিকভাবে কাজ করছে কন্যা। অংশগ্রহণকারী শিল্পীদের মধ্যে বক্তব্য দেন নাসিমা মাসুদ।

এস এম রাকিবুল হাসানের বাঁশি বাদনের মধ্য দিয়ে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শুরু হয়। সম্প্রতি প্রয়াত বরেণ্য ভাস্কর অধ্যাপক হামিদুজ্জামান খানের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। সঞ্চালনা করেন কাজী বসিরুল আলম।

প্রদর্শনীতে ২৪ শিল্পীর মোট ৪৮টি শিল্পকর্ম রয়েছে। এর মধ্যে দুটি ভাস্কর্য ছাড়া সবই চিত্রকলা। অধিকাংশ শিল্পীই অ্যাক্রিলিক ব্যবহার করেছেন, দুয়েকটি ছাপচিত্রও রয়েছে। শিল্পীরা প্রধানত বাস্তব ধারায় অবয়বধর্মী কাজ করেছেন। নারী, অর্থাৎ কাজলরেখাকেই এঁকেছেন শিল্পীরা মনের মাধুরী মিশিয়ে। তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে সুখপাখির উপস্থিতি। কোথাও পাখিটি পিঞ্জিরাবদ্ধ, কোথাও আবার মুক্ত, যা হয়ে উঠেছে নারীর মুক্তির আকাঙ্ক্ষার প্রতীকী বাস্তবতা। ছবির নেপথ্যে অরণ্য, ফুল, লতা-গুল্মের বিন্যাস প্রদর্শনীকে দিয়েছে ভিন্ন মাত্রা। এ প্রদর্শনী চলবে ১৯ আগস্ট পর্যন্ত, প্রতিদিন বেলা ১১টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত খোলা থাকবে।

কলাকেন্দ্রে ‘পাথরের বৈভব’

লালমাটিয়ার কলাকেন্দ্রে চলছে ভাস্কর ময়নুল ইসলাম পলের ‘পাথরের বৈভব’ নামের একক প্রদর্শনী। এটি আজ শেষ হবে। বিকেল ৪টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত খোলা থাকবে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের শিক্ষক পল দীর্ঘদিন ধরে ভাস্কর্যচর্চায় নিবেদিত।

তিনি নিত্যদিনের সাধারণ বিষয় কিংবা সামাজিক-রাজনৈতিক বাস্তবতাকে ভিন্ন রূপে উপস্থাপন করেন। শুরুর দিকে কাঠ ব্যবহার করলেও ধীরে ধীরে তিনি পাথরে কাজ শুরু করেন। যদিও বাংলাদেশে পাথর দুষ্প্রাপ্য ও ব্যয়বহুল, তবুও রাজশাহীতে তাঁর বসবাসের কারণে পাথরপ্রাপ্তি কিছুট সহজলভ্য হয়ে উঠেছে।

এ প্রদর্শনীর ভাস্কর্যগুলোতে তিনি পাথর মসৃণ করে একসঙ্গে তুলে ধরেছেন পাথরের বস্তুগত কাঠিন্য ও লাবণ্যময় অনুভূতি। কোথাও তিনি পাথরের নিয়ন্ত্রণে, কোথাও আবার তিনি নিজেই পাথরকে নিয়ন্ত্রণ করে সৃষ্টির যাত্রা সম্পন্ন করেছেন। তিনি কাজ করেন প্রধানত বিমূর্ত রীতিতে। আকার-আকৃতির বৈচিত্র্য, তল, কোণ, রেখা মিলিয়ে ভারসাম্য সৃষ্টির পাশাপাশি নীরব সামাজিক ইঙ্গিত তাঁর শিল্পকে করেছে সমৃদ্ধ। ২০ বছর পর আয়োজিত এই একক প্রদর্শনী শুধু শিল্পীর ব্যক্তিগত যাত্রাকেই নয়, বরং রাজধানীকেন্দ্রিক শিল্পচর্চার ভেতরে প্রান্তিক পর্যায়ের ভাস্কর্যের গুরুত্বকেও সামনে এনেছে।

বর্ষায় নগরজীবন

আলিয়ঁস ফ্রঁসেজের দ্য লা গ্যালারিতে চলছে আলোকচিত্রী ও শিক্ষক আবির আবদুল্লাহর একক আলোকচিত্র প্রদর্শনী ‘ট্রাবলিং রেইন’। প্রতিদিন বেলা ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত খোলা থাকবে প্রদর্শনী। চলবে ২৩ আগস্ট পর্যন্ত।

এতে রয়েছে গত দুই দশকে তোলা তাঁর ৩৩টি ছবি। ছবিগুলোয় ধরা পড়েছে ঢাকার বর্ষাকালীন চিত্র। নগরবাসীর দুর্ভোগ, জলাবদ্ধতা, যাতায়াতের বিড়ম্বনার পাশাপাশি বর্ষার সৌন্দর্য ও আবেগও স্থান পেয়েছে এসব আলোকচিত্রে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ক জলর খ র ভ স কর য

এছাড়াও পড়ুন:

চাশতের নামাজের ওয়াক্ত কখন হয়

চাশতের নামাজ, যা সালাতুদ দুহা নামে পরিচিত, একটি অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ নফল নামাজ। এই নামাজ মুমিনের জন্য আল্লাহর নৈকট্য অর্জন, গুনাহ মাফ এবং আধ্যাত্মিক শান্তি লাভের একটি বিশেষ মাধ্যম। রাসুল (সা.) নিজে এই নামাজ আদায় করতেন এবং সাহাবিদের এটি পড়তে উৎসাহিত করেছেন।

চাশতের নামাজের সময়

চাশতের নামাজের সময় সূর্যোদয়ের পর থেকে শুরু হয় এবং জোহর নামাজের সময় শুরু হওয়ার আগ পর্যন্ত চলে। এটি সাধারণত সকালের প্রথমাংশে আদায় করা হয়। বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করা হলো:

শুরুর সময়: সূর্যোদয়ের প্রায় ১৫-২০ মিনিট পর, যখন সূর্যের লাল আভা চলে যায় এবং সূর্য কিছুটা উপরে উঠে। এই সময়টি নিষিদ্ধ নামাজের সময়ের বাইরে।

শেষের সময়: সূর্য মাথার উপরে মধ্যাহ্নে পৌঁছানোর ঠিক আগে, অর্থাৎ জোহরের ওয়াক্ত শুরু হওয়ার আগ পর্যন্ত।

সর্বোত্তম সময়: হাদিস অনুযায়ী, সকালের মাঝামাঝি সময়, যখন সূর্য বেশ উঁচুতে উঠে যায় এবং দিনের তাপ বাড়তে শুরু করে, তখন চাশতের নামাজ পড়া উত্তম। আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণিত হাদিসে চাশতের নামাজ সকালে সূর্য উঁচু হওয়ার পর পড়ার কথা বলা হয়েছে। (সুনান তিরমিজি, হাদিস: ৪৭৪)

বাংলাদেশে সূর্যোদয় যদি সকাল ৫:৩০ এ হয় এবং জোহরের ওয়াক্ত দুপুর ১২:০০ টায় শুরু হয়, তবে চাশতের নামাজের সময় সকাল ৫:৫০ থেকে ১১:৫০ পর্যন্ত। সর্বোত্তম সময় হতে পারে সকাল ৮:০০ থেকে ১০:০০ এর মধ্যে।

আরও পড়ুনসালাতুল হাজত নামাজের নিয়ম১১ আগস্ট ২০২৫চাশতের নামাজের নিয়ম

চাশতের নামাজ দুই থেকে বারো রাকাত পর্যন্ত আদায় করা যায়, তবে সাধারণত দুই বা চার রাকাত পড়া হয়। নিচে এর নিয়ম দেওয়া হলো:

নিয়ত করা

নামাজ শুরু করার আগে মনে মনে চাশতের নামাজের নিয়ত করতে হবে। উদাহরণ:
“আমি দুই/চার রাকাত সালাতুদ দুহা নফল নামাজ আল্লাহর জন্য আদায় করছি।”
নিয়ত মনে মনে করা যথেষ্ট।

নামাজ আদায়

রাকাত সংখ্যা: সর্বনিম্ন দুই রাকাত এবং সর্বোচ্চ বারো রাকাত। প্রতি দুই রাকাতে সালাম ফিরিয়ে পড়া উত্তম।

পড়ার পদ্ধতি: সাধারণ নফল নামাজের মতোই পড়তে হবে। প্রথম রাকাতে সূরা ফাতিহার পর সুরা কাফিরুন এবং দ্বিতীয় রাকাতে সুরা ইখলাস পড়ার কথা কোথাও কোথাও বর্ণিত হয়েছে। তবে যেকোনো সুরা পড়া যায়।

আরও পড়ুনইশরাকের নামাজের সময়সূচি ও বিধান০৬ আগস্ট ২০২৫চাশতের নামাজের ফজিলত

চাশতের নামাজের ফজিলত সম্পর্কে হাদিসে বর্ণিত আছে। প্রতিদিন তোমার শরীরের প্রতিটি জোড়ার জন্য সদকা দেওয়া উচিত। আর চাশতের দুই রাকাত নামাজ এই সদকার পরিবর্তে যথেষ্ট।” (সহিহ বুখারি, হাদিস: ১৯৮২)

মনে রাখতে হবে

সূর্যোদয়, সূর্যাস্ত এবং মধ্যাহ্নের সময় চাশতের নামাজ পড়া যাবে না।

নামাজে মনোযোগ বজায় রাখা, যাতে এর আধ্যাত্মিক উপকার পাওয়া যায়।

চাশতের নামাজ নিয়মিত পড়ার অভ্যাস গড়ে তোলা, কারণ এটি আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের মাধ্যম।

আরও পড়ুন‘সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহি’ একটি ফজিলতপূর্ণ তাসবিহ২৬ জুলাই ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ