ইসরায়েলের দীর্ঘমেয়াদি অবরোধ ও বিধ্বংসী হামলার কারণে ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজায় কমপক্ষে ১০ লাখ নারী ও কিশোরী চরম অনাহারের মুখে পড়েছে। শনিবার (১৬ আগস্ট) এ তথ্য জানিয়েছে জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা (ইউএনআরডব্লিউএ)। খবর সিনহুয়ার।

শনিবার (১৬ আগস্ট) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ এক বিবৃতিতে সংস্থাটি জানায়, গাজার নারী ও মেয়েরা ব্যাপক অনাহার, সহিংসতা ও নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। এখানে ক্ষুধা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে.

.. নারী ও মেয়েরা জীবন বাঁচাতে ক্রমেই বিপজ্জনক কৌশল নিতে বাধ্য হচ্ছেন- যেমন খাবার ও পানি খুঁজতে বাইরে এমন স্থানে যেতে হচ্ছে যেখানে গুলি বা হামলায় নিহত হওয়ার আশঙ্কা সবচেয়ে বেশি।

২০ লাখেরও বেশি মানুষের আবাসস্থল গাজায় ইসরায়েলি অবরোধ তুলে নেওয়া এবং ‘ব্যাপক পরিমাণে’ মানবিক সহায়তা পৌঁছে দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘের সংস্থাটি।

আরো পড়ুন:

গাজাবাসীদের ভিসা স্থগিত করল যুক্তরাষ্ট্র

গাজার ২০ শতাংশের বেশি শিশু অপুষ্টিতে ভুগছে: ইউএনআরডব্লিউএ

শনিবার গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় গত ২৪ ঘণ্টায় অনাহার ও অপুষ্টিতে এক শিশুসহ আরো ১১ জনের মৃত্যুর খবর প্রকাশ করার পর ইউএনআরডব্লিউএ এই মন্তব্য করেছে। গাজায় ক্ষুধাজনিত মৃত্যুর মোট সংখ্যা ২৫১ জনে দাঁড়িয়েছে, যার মধ্যে ১০৮ জন শিশু।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মতে, ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে ইসরায়েলি হামলায় নিহতের মোট সংখ্যা ৬১ হাজার ৯০০ ছাড়িয়ে গেছে এবং আরো ১ লাখ ৫৫ হাজারেরও বেশি মানুষ আহত হয়েছেন।

বৃহস্পতিবার, ১০৮টি বেসরকারি সংস্থা (এনজিও) একটি যৌথ বিবৃতিতে উল্লেখ করেছে, চলতি বছরের ২ মার্চ থেকে বেশিরভাগ প্রধান আন্তর্জাতিক এনজিওগুলো গাজায় মানবিক সাহায্য প্রবেশে ইসরায়েলি নিষেধাজ্ঞার কারণে এক ট্রাকও জীবন রক্ষাকারী সহায়তা সরবরাহ করতে পারেনি। কেবল গত মাসেই, ইসরায়েলের যুক্তিতে ‘তারা সাহায্য প্রদানের জন্য অনুমোদিত নয়’ বলে কয়েক ডজন এনজিওর ৬০টিরও বেশি অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে।

শুক্রবার, জাতিসংঘের মানবাধিকার অফিস জানিয়েছে, ২৭ মে থেকে ১৩ আগস্টের মধ্যে, গাজায় সাহায্য চাইতে গিয়ে কমপক্ষে ১ হাজার ৭৬০ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে ৯৯৪ জন ইসরায়েল সমর্থিত ত্রাণকেন্দ্র জিএইচএফের আশেপাশে এবং ৭৬৬ জন বিভিন্ন ত্রাণ সরবরাহ রুটে নিহত হয়েছে। এই হত্যার অধিকাংশ ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর হাতে ঘটেছে।

এর আগে চলতি মাসের শুরুতে জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি সতর্ক করে বলেছিল, গাজার মোট ২৪ লাখ মানুষের মধ্যে এক-তৃতীয়াংশ কয়েকদিন ধরে কোনো খাবার পাচ্ছে না।

জাতিসংঘ-সমর্থিত বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলেছেন, গাজায় ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ দেখা দিতে পারে, ইসরায়েল মানবিক সাহায্যের পরিমাণ ব্যাপকভাবে হ্রাস করেছে।

ঢাকা/ফিরোজ

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ইসর য় ল ইসর য় ল অন হ র ইসর য

এছাড়াও পড়ুন:

জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতি মোকাবিলার বরাদ্দ অর্থের বেশিরভাগ পাচ্ছে উষ্ণায়নে দায়ী দেশগুলো

বৈশ্বিক উষ্ণায়নের জন্য যে দেশগুলো বেশি দায়ী সেই দেশগুলোই জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ক্ষতি মোকাবিলায় বরাদ্দকৃত অর্থ পেয়েছে। এই দেশগুলোর মধ্যে বৃহৎ অর্থনীতির দেশ চীন এবং সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের মতো ধনী পেট্রো দেশগুলো রয়েছে।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান এবং কার্বন ব্রিফ জাতিসংঘে জমা দেওয়া তথ্য এবং অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও উন্নয়ন সংস্থার সরবরাহ করা তথ্য বিশ্লেষণ করেছে। তাতে দেখা গেছে, কীভাবে জনসাধারণের কোটি কোটি ডলার বিশ্বব্যাপী উষ্ণায়নের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে খরচ করা হচ্ছে।

তদন্তে একটি ব্যাপকভাবে কার্যকর ব্যবস্থা পাওয়া গেছে যা ধনী দূষণকারীদের থেকে দুর্বল দেশগুলোতে মূলধন স্থানান্তর করে, তাদের অর্থনীতি স্বচ্ছ করতে এবং একটি উষ্ণ বিশ্বের সাথে খাপ খাইয়ে নিতে সহায়তা করে।

কিন্তু আরো দেখা গেছে যে, তহবিলের বৃহত্তম অংশের বিতরণে কোনো কেন্দ্রীয় তদারকি ছিল না। এই বিতরণ সম্পূর্ণরূপে আলাদা আলাদা দেশগুলোর বিবেচনার ভিত্তিতে ছিল। তাই এটি রাজনৈতিক স্বার্থের বিষয় ছিল এবং সবসময় যেখানে এই তহবিল যেখানে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন সেখানে বরাদ্দ হয়নি।

অবশ্য সরকারি তথ্য জলবায়ু তহবিলের সব প্রাপকের সন্ধান করার জন্য যথেষ্ট বিস্তৃত নয়। তবে গার্ডিয়ানের বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ২০২১ ও ২০২২ সালে তহবিলের প্রায় এক পঞ্চমাংশ বিশ্বের ৪৪টি দরিদ্রতম দেশে গেছে, যা স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) হিসাবে পরিচিত। এর বেশিরভাগই ছিল অনুদানের পরিবর্তে ঋণের আকারে।

কিছু স্বল্পোন্নত দেশ তাদের জলবায়ু তহবিলের দুই-তৃতীয়াংশেরও বেশি ঋণের আকারে পেয়েছে, যার পরিশোধের শর্ত সরকারকে আরো ঋণের ফাঁদে ঠেলে দিতে পারে। বাংলাদেশ ও অ্যাঙ্গোলার ক্ষেত্রে ঋণের অংশ ৯৫ শতাংশ বা তার বেশি বেড়েছে।

বিশ্বের বেশিরভাগ উন্নত দেশ উন্নয়নশীল দেশগুলিতে জলবায়ু কর্মকাণ্ডকে সমর্থন করার জন্য দ্বিপাক্ষিকভাবে এবং উন্নয়ন ব্যাংকের মতো বহুপাক্ষিক সংস্থাগুলোর মাধ্যমে অর্থ প্রদান করে। ২০০৯ সালে কোপেনহেগেনে জাতিসংঘের এক শীর্ষ সম্মেলনে ধনী দেশগুলো জলবায়ু বিপর্যয়ের জন্য তাদের বৃহত্তর দায়িত্ব পালন এবং সমাধানের জন্য তহবিল সরবরাহের ক্ষমতার স্বীকৃতিস্বরূপ ২০২০ সালের মধ্যে প্রতি বছর ১০০ বিলিয়ন ডলার সংগ্রহ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল।

কিন্তু সাম্প্রতিক জমা দেওয়া তথ্যের বিশ্লেষণে দেখা গেছে,  ২০২১ ও ২০২২ সালে কোপেনহেগেনের লক্ষ্যমাত্রা বিলম্বিতভাবে পূরণ করা হয়েছিল। ওই সময় ২০ হাজারেরও বেশি বৈশ্বিক প্রকল্পের আওতায় বিপুল পরিমাণ অর্থ দেওয়া হয়েছে পেট্রো ডলারের দেশগুলোর কাছে, সেইসাথে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ চীনের কাছে।

ফ্রান্স ও কানাডার সমান মাথাপিছু জিডিপিসহ জীবাশ্ম জ্বালানি রপ্তানিকারক সংযুক্ত আরব আমিরাত জাপান থেকে ১ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি ঋণ পেয়েছে যা জলবায়ু অর্থায়ন হিসেবে নথিভুক্ত করা হয়েছিল। প্রকল্পগুলোর মধ্যে রয়েছে আবুধাবিতে একটি অফশোর বিদ্যুৎ সঞ্চালন প্রকল্পের জন্য ৬২৫ মিলিয়ন ডলার এবং দুবাইতে একটি বর্জ্য পোড়ানোর যন্ত্রের জন্য ৪৫২ মিলিয়ন ডলার।

বিশাল তেলক্ষেত্র এবং আরামকোর বেশিরভাগ মালিকানাধীনতার কারণে শীর্ষ ১০ কার্বন নির্গমনকারী দেশগুলোর মধ্যে একটি হচ্ছে সৌদি আরব। এই দেশটি জাপান থেকে প্রায় ৩২৮ মিলিয়ন ডলার ঋণ পেয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে তার বিদ্যুৎ কোম্পানিকে ২৫০ মিলিয়ন ডলার এবং একটি সৌর খামারের জন্য ৭৮ মিলিয়ন ডলার।

বলকান অঞ্চলের ছয়টি দেশ যারা ইইউতে যোগদানের আশা করছে তারা জলবায়ু অর্থায়নে ৩ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি ঋণ পেয়েছে। অর্থের সিংহভাগ সার্বিয়ায় গেছে, যা মাথাপিছু ভিত্তিতে স্বল্পোন্নত দেশগুলোর তুলনায় ১০ গুণ বেশি অর্থ পেয়েছে।

প্রতিবেদনের সময়কালে ভারত ছিল এককভাবে বৃহত্তম অর্থ গ্রহণকারী, যেটি প্রায় ১৪ বিলিয়ন ডলার পেয়েছে। একইসময় চীন পেয়েছে ৩ বিলিয়ন ডলার, যা বেশিরভাগই বহুপাক্ষিক ব্যাংক থেকে।

 ওভারসিজ ডেভেলপমেন্ট ইনস্টিটিউটের জলবায়ু পরিচালক সারা কোলেনব্র্যান্ডার বলেন, “এর ফলে ইসরায়েল, কোরিয়া, কাতার, সিঙ্গাপুর এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের মতো দেশগুলো - যারা গত ৩০ বছরে প্রচুর পরিমাণে কার্বন পদচিহ্নের কারণে ধনী দেশ হয়ে উঠেছে - তাদের আন্তর্জাতিক দায়িত্ব এড়িয়ে যেতে বাধ্য করছে। এটা হাস্যকর যে এই জাতীয় দেশগুলো টোগো, টোঙ্গা এবং তানজানিয়ার মতো দেশগুলোর মতো একই বিভাগে রয়ে গেছে।”

বিশ্বের কিছু দরিদ্রতম দেশ তাদের জলবায়ু তহবিলের দুই-তৃতীয়াংশেরও বেশি ঋণের আকারে পায়, যদিও সতর্ক করা হয়েছে যে অনেকেই শর্তাবলী এবং সুদ পরিশোধ করতে পারে না।

আন্তর্জাতিক পরিবেশ ও উন্নয়ন ইনস্টিটিউটের জলবায়ু অর্থায়ন পরিচালক ঋতু ভরদ্বাজ বলেন, “জলবায়ু অর্থায়নের লুকানো গল্প প্রতিশ্রুতির পরিমাণে নয় বরং এর আকারে। জলবায়ু অর্থায়ন দরিদ্র দেশগুলোর উপর আর্থিক বোঝা বাড়িয়ে দিচ্ছে। দান করা অর্থ যদি একটি ছাড়ের ঋণও হয়, তবুও সেই ঋণগুলোর এমন শর্তও থাকে যা গ্রহীতার চেয়ে ঋণদাতাকেই বেশি লাভবান করতে পারে।”
 

ঢাকা/শাহেদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ইন্দোনেশিয়ায় ভূমিধসে নিহত ১৮, নিখোঁজ অনেক
  • নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহের দাবিতে আশুগঞ্জ সার কারখানায় সমাবেশ 
  • সৌদিতে বাস-ট্যাংকার সংঘর্ষ, ৪২ ভারতীয় হজযাত্রীর মৃত্যুর আশঙ্কা
  • ২ কেন্দ্রে নেওয়া হবে রুয়েটে ভর্তি পরীক্ষা
  • গ্রিস থেকে গ্যাস আমদানিতে সম্মত ইউক্রেন: জেলেনস্কি
  • ভিজিটিং লেকচারার নিয়োগ দেবে বাংলাদেশ মেরিন একাডেমি
  • ইউক্রেনের হামলা: নভোরো-সিয়েস্ক বন্দরের তেল রপ্তানি বন্ধ করল রাশিয়া
  • কাশ্মীরের শ্রীনগরে থানায় বিস্ফোরণ, নিহত ৯
  • চাঁদাবাজি বন্ধে সরকারকে কঠোর হতে হবে
  • জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতি মোকাবিলার বরাদ্দ অর্থের বেশিরভাগ পাচ্ছে উষ্ণায়নে দায়ী দেশগুলো