এইচএসসি পরীক্ষা ২০২৫: অর্থনীতি প্রথম পত্রে ভালো নম্বর পেতে হলে
Published: 17th, August 2025 GMT
এইচএসসি পরীক্ষা জীবনের গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। সামনে রয়েছে তোমাদের অর্থনীতি পরীক্ষা। বিষয়টি শুধু মুখস্থ না করে, বুঝে প্রাসঙ্গিক উদাহরণ ও সূচি আকারে কিংবা চিত্রের সাহায্যে উপস্থাপন করাই ভালো নম্বর পাওয়ার মূল চাবিকাঠি। সাফল্যের এই পরীক্ষায় ভালো ফল অর্জনের জন্য আবশ্যক সঠিক পরিকল্পনা, রিভিশন ও মানসিক প্রস্তুতি।
তোমাদের জন্য পরামর্শ হলো—
১.
২. প্রশ্নের নম্বর অনুযায়ী সময় ভাগ করে নেবে।
৩. প্রতিটি অধ্যায়ের চিত্রগুলো আঁকার অভ্যাস করো। অর্থনীতিতে সমীকরণ, সূচি ও চিত্রের ব্যবহার উত্তরকে অনেক শক্তিশালী করে তোলে।
৫. চিত্র অঙ্কনের ক্ষেত্রে 2B অথবা 4B পেনসিল ব্যবহার করবে।
৬. দীর্ঘ অনুচ্ছেদে পুরো উত্তর না লিখে, প্যারা আকারে লেখার চেষ্টা করবে। গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট থাকলে তা স্পষ্ট করবে, যেন পরীক্ষকের নজরে আসে।
৭. উপযুক্ত উদাহরণ, চিত্র ইত্যাদি দেওয়ার চেষ্টা করবে। উত্তর দীর্ঘ করার জন্য অপ্রাসঙ্গিক আলোচনা করবে না।
৮. উত্তরের শেষে সংক্ষিপ্ত উপসংহার লিখবে। এতে লেখার ধারাবাহিকতা বজায় থাকে। উপসংহার ছাড়া উত্তর অসম্পূর্ণ থেকে যায়।
৯. নিজের ভাষায় লিখবে, বই মুখস্থ করে নয়। এতে পরীক্ষকের কাছে তুমি ভালো মূল্যায়ন পাবে।
১০. বানান ও ভাষার দিকেও খেয়াল রাখবে। পরিষ্কার হাতের লেখা ও সুশৃঙ্খল উপস্থাপন নম্বর বাড়াতে সাহায্য করে।
নির্বাচিত ছয়টি অধ্যায় থেকে তোমাদের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। যেখানে মোট ১১টি সৃজনশীল প্রশ্ন থাকবে, সাতটি প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে, নম্বর থাকবে ৭০। এতে প্রতি অধ্যায় থেকে প্রায় দুটি করে সৃজনশীল প্রশ্ন থাকছে। অন্যদিকে ৩০ নম্বরের ৩০টি বহুনির্বাচনি প্রশ্ন থাকবে, যেখানে প্রতি অধ্যায় থেকে প্রায় পাঁচটি করে বহুনির্বাচনি প্রশ্ন থাকবে। বহুনির্বাচনিতে ভালো নম্বর পেতে অবশ্যই ছয়টি অধ্যায়ের সব কটির ওপর ভালো প্রস্তুতি নিতে হবে।
প্রথম অধ্যায়
অর্থনীতির প্রথম অধ্যায় থেকে অর্থনীতির সংজ্ঞা, মৌলিক অর্থনৈতিক সমস্যা, দুষ্প্রাপ্যতা ও নির্বাচন সমস্যা, উত্পাদন সম্ভাবনা রেখা ও সুযোগ ব্যয়, অর্থনৈতিক ব্যবস্থাসমূহ, ব্যষ্টিক ও সামষ্টিক অর্থনীতির বিষয়গুলো পড়বে।
দরকারি টিপস
১. ওপরের ধারণাগুলো এমনভাবে আয়ত্ত করো, যেন উদাহরণসহ নিজের ভাষায় ব্যাখ্যা করতে পারো।
২. কাল্পনিকভাবে কিংবা সংখ্যাসূচক তথ্যের আলোকে PPC অঙ্কন এবং এ রেখার সাহায্যে সুযোগ ব্যয়ের ধারণাটি অনুশীলন করবে।
আরও পড়ুনএসএসসি পরীক্ষা: পুনর্নিরীক্ষণেই ধরা পড়ে এত ভুল, দাবি পুনর্মূল্যায়নের৭ ঘণ্টা আগেদ্বিতীয় অধ্যায়
অর্থনীতির দ্বিতীয় অধ্যায় থেকে মোট, প্রান্তিক উপযোগ ও গড় উপযোগ, ক্রমহ্রাসমান প্রান্তিক উপযোগ বিধি, চাহিদা বিধি (সূচি ও রেখাচিত্রে প্রকাশ), চাহিদার নির্ধারকসমূহ, চাহিদা অপেক্ষক (স্বাধীন ও নির্ভরশীল চলক), চাহিদা সমীকরণ গঠন (চলক, ধ্রুবক ও ঢাল), যোগান বিধি (সূচি ও রেখাচিত্রে প্রকাশ), যোগানের নির্ধারকসমূহ, যোগান অপেক্ষক (স্বাধীন ও নির্ভরশীল চলক), যোগান সমীকরণ (চলক, ধ্রুবক ও ঢাল), দাম, আয় ও আড়াআড়ি স্থিতিস্থাপকতা ও পরিমাপ, চাহিদা ও যোগানের সাহায্যে দাম ও পরিমাণ নির্ধারণ, চাহিদা ও যোগান পরিবর্তনে ভারসাম্যের ওপর প্রভাব বিষয়গুলো পড়বে।
দরকারি টিপস
১. এ অধ্যায়ের পরিধি বড় হলেও যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। এ অধ্যায়ের ধারণাগুলো সূচি বা চিত্রনির্ভর। সুতরাং চিত্র অঙ্কন করার কৌশলগুলো অনুশীলন করবে।
২. গাণিতিক সমস্যাগুলো অনুশীলন করবে।
৩. সমীকরণ থেকে সূচি তৈরির কৌশলগুলোও চর্চা করবে, যেমন : চাহিদা রেখা অঙ্কন।
৪. চাহিদা ও যোগান সমীকরণ ও রেখার সাহায্যে ভারসাম্য দাম ও পরিমাণ নির্ধারণের গাণিতিক সমস্যা অনুশীলন করো।
আরও পড়ুননেদারল্যান্ডসে বিনা মূল্যে পড়াশোনা, আবেদন স্নাতকোত্তরে১৬ আগস্ট ২০২৫তৃতীয় অধ্যায়
অর্থনীতির তৃতীয় অধ্যায় থেকে উত্পাদন অপেক্ষক, মোট উত্পাদন, গড় উত্পাদন ও প্রান্তিক উত্পাদন, উত্পাদনের সূত্রগুলো, উপকরণের পরিবর্তন ও উত্পাদন, মাত্রাগত উত্পাদন, উত্পাদন ব্যয়, মোট ব্যয়, গড় ব্যয় ও প্রান্তিক ব্যয়, আয়, মোট আয়, গড় আয়, প্রান্তিক আয় ভালোভাবে পড়বে।
দরকারি টিপস
১. TP, AP ও MP–এর মধ্যে সম্পর্ক ও পার্থক্য যেন তুলে ধরতে পারো, সেভাবে প্রস্তুতি নেবে।
২. TP, AP ও MP তিনটির যেকোনো একটি সূচক দেওয়া থাকলে অপর দুটি মান নির্ণয় এবং তা থেকে চিত্র অঙ্কনের ভালো প্রস্তুতি নিয়ে রাখবে।
৩. বিভিন্ন প্রকারের ব্যয় রেখা সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা নিয়ে রাখবে। যেন সূচি থেকে কিংবা সূচি ব্যতীত চিত্র আঁকতে পারো, যেমন TFC, TVC, AFC, AVC, TC, AC, MC ইত্যাদি।
৪. আয় অংশ থেকে মূলত TR, AR ও MR—এ তিনটি বিষয় সম্পর্কে ভালো ধারণা রাখবে। এ ক্ষেত্রে পূর্ণ প্রতিযোগিতা এবং অপূর্ণ বা একচেটিয়া বাজারের রেখাগুলোর যে পার্থক্য রয়েছে, তা সম্পর্কে পূর্ণাঙ্গ ধারণা রাখবে। যেমন পূর্ণ প্রতিযোগিতায় AR ও MR রেখাদ্বয় ভূমি অঙ্গের সমান্তরাল। অন্যদিকে অপূর্ণ বা একচেটিয়া বাজারে AR ও MR রেখাদ্বয় ডান দিকে নিম্নগামী এবং AR > MR।
চতুর্থ অধ্যায়
অর্থনীতির চতুর্থ অধ্যায় থেকে বাজারের শ্রেণিবিভাগ ও বৈশিষ্ট্যসমূহ, পূর্ণ প্রতিযোগিতা ও বাজারের মধ্যে পার্থক্য, পূর্ণ প্রতিযোগিতা বাজারে দাম নির্ধারণ (স্বল্পকালীন বা দীর্ঘকালীন), অপূর্ণ প্রতিযোগিতা বা একচেটিয়া বাজারে দাম নির্ধারণ (স্বল্পকালীন বা দীর্ঘকালীন) সম্পর্কে ভালো ধারণা রাখবে।
দরকারি টিপস
১. প্রতিযোগিতার ভিত্তিতে বিভিন্ন বাজারের শ্রেণিবিভাগ অনুশীলন করবে, যেন বাজারগুলোর মধ্যে পার্থক্য তৈরি করতে পারো।
২. মুনাফা সর্বোচ্চকরণের শর্তের আলোকে চিত্রের সাহায্যে কীভাবে পূর্ণ বা অপূর্ণ—উভয় বাজারের স্বল্পকালীন ও দীর্ঘকালীন ভারসাম্য অর্জিত হয়, তা অনুশীলন করবে।
নবম অধ্যায়
অর্থনীতির নবম অধ্যায় থেকে সামগ্রিক আয়ের ধারণা: জিডিপি, জিএনআই, এনএনআই, সামগ্রিক ব্যয়: ভোগ, সঞ্চয় ও বিনিয়োগ, সরকারি ব্যয়; আবদ্ধ অর্থনীতিতে ভারসাম্য আয় নির্ধারণ (গাণিতিক ও চিত্রভিত্তিক ব্যাখ্যা) সম্পর্কে ভালো ধারণা রাখবে।
দরকারি টিপস
১. জাতীয় আয়ের বিভিন্ন ধারণা, যেমন GDP, GNP, NDP, NNP, PI, DC ইত্যাদি সম্পর্কে সঠিক ধারণা নেবে।
২. ভোগ ও সঞ্চয় অপেক্ষক, সূচি ও চিত্র অঙ্কনের বিষয়টি ভালোভাবে আয়ত্ত করবে।
৩. সঞ্চয় ও বিনিয়োগের সমতার ভিত্তিতে জাতীয় আয় নির্ধারণ এবং বদ্ধ অর্থনীতিতে ভারসাম্য জাতীয় আয় নির্ধারণের গাণিতিক সমস্যা অনুশীলন করবে।
আরও পড়ুনব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সমিতি এইচএসসি ও বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের বৃত্তি দেবে৮ ঘণ্টা আগেদশম অধ্যায়
অর্থনীতির দশম অধ্যায় থেকে মুদ্রার কার্যাবলি, মুদ্রার পরিমাণ তত্ত্ব (ফিশার ও ক্যামব্রিজ সমীকরণ), কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও এর কার্যাবলি, বাণিজ্যিক ব্যাংক ও এর কার্যাবলি, বাণিজ্যিক ব্যাংকের ঋণ সৃজন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও বাণিজ্যিক ব্যাংকের মধ্যে পার্থক্য, অনলাইন ব্যাংকিং ও মোবাইল ব্যাংকিংয়ে গুরুত্ব দেবে।
দরকারি টিপস
১. এ অধ্যায় থেকে বিভিন্ন প্রকার মুদ্রা ও মুদ্রার কার্যাবলি সম্পর্কে সম্পূর্ণ ধারণা নেবে।
২. মুদ্রার পরিমাণ তত্ত্ব, বিশেষ করে ফিশার ও ক্যামব্রিজ সমীকরণের ওপর ভালো প্রস্তুতি রাখবে, যেন সাংখ্যিক মান দেওয়া থাকলে সূত্রের আলোকে ফলাফল নির্ণয় করতে পারো।
৩. কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও বাণিজ্যিক ব্যাংকের সংজ্ঞা, কার্যাবলি ও পার্থক্য অনুশীলন করবে।
অর্থনীতি প্রথম পত্রের ছয়টি অধ্যায়ের প্রতিটি থেকেই ভালো নম্বর পাওয়া সম্ভব। কারণ, প্রতিটি অধ্যায়েই সূচি, সমীকরণ, চিত্র ইত্যাদি যুক্ত করার সুযোগ রয়েছে। এ উপাদানগুলোর একমাত্র সঠিক প্রয়োগই ভালো নম্বর পেতে ভূমিকা পালন করে। অর্থনীতি একটি যুক্তিনির্ভর বিষয়, তাই বুঝে বুঝে পড়লে এটি সহজেই আয়ত্ত করা সম্ভব। মনে আত্মবিশ্বাস রাখো আর ভালোভাবে রিভিশন দাও।
লেখক: শেখ আবু সাঈদ আবদুল্লাহ্, প্রভাষক, ভাষা সৈনিক অজিত গুহ মহাবিদ্যালয়, কুমিল্লা
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র ক র য বল ত ক সমস য ভ রস ম য প রস ত ত পর ক ষ পর ম ণ দরক র প রথম
এছাড়াও পড়ুন:
গাজা নিয়ে ট্রাম্পের বিশ দফা যেন বিশটি ‘বিষের বড়ি’
গাজা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুসারে, ২০২৫ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এই যুদ্ধে ৬৬ হাজার ফিলিস্তিনি নিহত, ১ লাখ ৬৮ হাজার জন আহত এবং কয়েক হাজার শিশু অনাহারে মারা গেছে। সর্বশেষ গাজা সিটি দখল করতে স্থল অভিযান শুরু করেছে ইসরায়েলে।
এই নির্মম চক্র ‘ভাঙতে’ মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের একাধিক প্রস্তাব ব্যর্থ হয়েছে। এমনকি গত ফেব্রুয়ারিতে তিনি একটি এআই-জেনারেটেড ভিডিও পোস্ট করে গাজাকে মার্কিন দখলে নিয়ে ‘মধ্যপ্রাচ্যের রিভিয়েরা’ বানানোর স্বপ্নের কথাও জানান দিয়েছিলেন তিনি।
নতুন করে আবারও তিনি ২০ দফা পরিকল্পনা প্রকাশ করেছেন। যেখানে হামাসকে উচ্ছেদ করে ‘টেকনোক্র্যাটিক ফিলিস্তিনি কমিটি’ গঠনের কথা রয়েছে। সেই কমিটিকে তদারক করার জন্য একটি ‘শান্তি পরিষদ’ গঠন করা হবে সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ারের নেতৃত্বে। তবে চেয়ারম্যান প্রধান থাকবেন ট্রাম্প নিজেই।
সোমবার হোয়াইট হাউস এই পরিকল্পনা প্রকাশের আগে চলমান জাতিসংঘের ৮০তম অধিবেশনের ফাঁকে আরব নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন ট্রাম্প। এরপর তিনি নেতানিয়াহুর সম্মতি গ্রহণ করেন এবং হামাসকে হুমকি দিয়েছেন, ‘মেনে নাও, নইলে যুদ্ধ চলবে।’
কিন্তু এই ‘শান্তি পরিকল্পনা’ কি শান্তি আনবে, নাকি ফিলিস্তিনিদের জন্য এটা হবে একটা নতুন শৃঙ্খল? ফিলিস্তিনি-আমেরিকান বিশ্লেষক ওমর বদ্দার এই পরিকল্পনাকে আখ্যা দিয়েছেন ‘পয়জন পিল’ বলে। তিনি আল–জাজিরাকে বলেছেন, কিছু ইতিবাচক দিক থাকলেও এর মূল উপাদান ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকে অস্বীকার করা হয়েছে। গাজার বাসিন্দা ইবরাহিম জুদেহ বলেন, ‘এটি অবাস্তব—যুদ্ধ চলবে।’
বিষাক্ত স্বপ্নের সূচনা যেভাবে হয়ট্রাম্পের বর্তমান পরিকল্পনা মূলত তার ফেব্রুয়ারি ২০২৫-এর ‘গাজা রিভিয়েরা’ প্রস্তাবেরই ছায়া। সে সময় তার ‘গাজা রিকনস্ট্রাকশন, ইকোনমিক অ্যাকসিলারেশন অ্যান্ড ট্রান্সফরমেশন ট্রাস্ট (GREAT) প্রকল্পে গাজাকে দুবাই-স্টাইলের রিসোর্টে রূপান্তরের কল্পনা করা হয়, যেখানে থাকবে স্কাইস্ক্র্যাপার, কৃত্রিম দ্বীপ, ‘ট্রাম্প রিভিয়েরা’ এবং ‘ইলন মাস্ক স্মার্ট ম্যানুফ্যাকচারিং জোন’।
৫ লাখ ফিলিস্তিনিকে ৯ হাজার ডলারের ‘রিলোকেশন প্যাকেজ’ দিয়ে ‘স্বেচ্ছায়’ অন্য দেশে সরানোর পরিকল্পনা ছিল। পরে আরব রাষ্ট্রনেতারা ও জাতিসংঘ এটিকে ‘পাগলামি’ বলে প্রত্যাখ্যান করে। এমনটি ইসরায়েলে জনপ্রিয় দৈনিক হারেৎজ ‘ট্রাম্পিয়ান গেট-রিচ-কুইক স্কিম’ বলে উপহাস করে।
পরে প্রকাশ পায় যে, এই প্রস্তাবের নেপথ্যে ছিলেন সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ার। ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের তদন্তে উঠে আসে, ব্লেয়ারের ‘টনি ব্লেয়ার ইনস্টিটিউট ফর গ্লোবাল চেঞ্জ’ (টিবিআই) ইসরায়েলি ব্যবসায়ী ও বিসিজির সঙ্গে মিলে ‘গাজা ইকোনমিক ব্লুপ্রিন্ট’ তৈরি করে এবং ইসরায়েল পরিচালিত ‘গাজা হিউম্যানিটেরিয়ান ফাউন্ডেশনের (জিএইচএফ) নিরাপত্তা প্রধান সাবেক সিআইএ কর্মকর্তা ফিল রিলে সে সময় ব্লেয়ারের সঙ্গে লন্ডনে সাক্ষাৎ করে প্রজেক্ট পিচ করেন।
সেই ‘রিভিয়েরা’র ছায়াই ট্রাম্পের বর্তমান পরিকল্পনায় ফিরে এসেছে। ধারণা করা হয়, সে কারণেই বর্তমান পরিকল্পনায় ব্লেয়ার ‘ট্রানজিশনাল অথরিটি’র পরিচালক হিসেবে প্রস্তাব করা হয়েছে।
আরও পড়ুনট্রাম্পের ২০ দফা পরিকল্পনা: নেতানিয়াহুর পরাজয় নাকি হামাসের আত্মসমর্পণ২১ ঘণ্টা আগেব্লেয়ারের বিতর্কিত ভূমিকাপরিকল্পনার কেন্দ্রে রয়েছে গাজার শাসন একটি ‘অস্থায়ী টেকনোক্র্যাটিক ফিলিস্তিনি কমিটি’, যা ‘শান্তি পরিষদ’–এর তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হবে। কিন্তু কমিটির সদস্য কে নির্বাচন করবে? প্রক্রিয়া কী? এর কোনো উত্তর পাওয়া যায় না। ব্লেয়ারকে বলা হয় ২০০৩-এর ইরাক যুদ্ধের ‘স্থপতি’। চিলকট রিপোর্ট প্রমাণ করে, ব্লেয়ার শান্তিপূর্ণ বিকল্প চূড়ান্ত না করে যুদ্ধে যান, যা লাখ লাখ জীবন ধ্বংস করেছে।
ওমর বদ্দার বলেন, ‘ব্লেয়ার ও ট্রাম্পের রেকর্ড অপরাধমূলক। ব্লেয়ার ইরাক আক্রমণের মিথ্যার অজুহাতের নায়ক ছিলেন; আর ট্রাম্প হলো পশ্চিম তীরের অবৈধ বসতি স্থাপন, গোলান মালভূমি দখল, জেরুজালেম ইসরায়েলের হাতে ছেড়ে দেওয়ার সমর্থক।’
জাতিসংঘের আবাসন বিশেষজ্ঞ বালাকৃষ্ণান রাজাগোপাল আল–জাজিরাকে বলেছেন, ‘ব্লেয়ারের নেতৃত্বে ‘ট্রানজিশনাল অথরিটি’ মাধ্যমে স্থায়ী বাফার জোন তৈরি গাজার ভূমি দখলের একটি ঘৃণ্য প্রচেষ্টামাত্র।’ অস্ট্রেলিয়ান সিনেটর ডেভিড শুব্রিজ বলেছেন, ‘ব্লেয়ার গাজায় কেন, তার তো ইরাক যুদ্ধের জন্য বিচারের কাঠগড়ায় থাকা উচিত।’ লেবার পার্টির সাবেক নেতা জেরেমি করবিনের মতে, ‘ব্লেয়ার মধ্যপ্রাচ্যে থাকা উচিত নয়—তার ইরাক সিদ্ধান্ত হাজার হাজার জীবন কেড়েছে।’
২০০২ সালে ইসরায়েল-ফিলিস্তিন শান্তিপ্রক্রিয়াকে এগিয়ে নিতে, বিশেষ করে দ্বিরাষ্ট্র সমাধানের লক্ষ্যে ‘কোয়ার্টেট অন দ্য মিডল ইস্ট’ নামের একটি আন্তর্জাতিক গ্রুপ গঠিত হয়েছিল। ব্লেয়ার ছিল এই গ্রুপের প্রতিনিধি। ব্লেয়ারের দায়িত্ব ছিল ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের (পিএ) প্রতিষ্ঠান গঠনে সহায়তা, অর্থনৈতিক প্রকল্প তত্ত্বাবধান এবং ইসরায়েল-ফিলিস্তিন শান্তি আলোচনায় সহযোগিতা করা। কিন্তু ফিলিস্তিনিদের অভিযোগ, তিনি তখন অবৈধ ইসরায়েলি বসতি রোধ করতে কোনো ভূমিকা রাখেননি, বরং ইসরায়েলের পক্ষ নিয়েছেন। এমনকি ২০১৪ সালে ইসরায়েল গাজায় অভিযান চালালেও ব্লেয়ার নীরব থাকেন।
হামাসকে নিরস্ত্র করা নাকি স্থায়ী দখলের চেষ্টাপরিকল্পনায় বলা হয়েছে, হামাস অস্ত্র ছাড়লে ইসরায়েল ‘মান, অগ্রগতি ও সময়সীমা’ বিবেচনা করে সেনা প্রত্যাহার করবে। কিন্তু কোনো টাইমলাইন নেই। গাজা ‘সন্ত্রাসমুক্ত’ না হওয়া পর্যন্ত ইসরায়েল একটা ‘নিরাপত্তাবেষ্টনী’ দিয়ে রাখবে। কিন্তু কে ঠিক করবে যে ‘সন্ত্রাসমুক্ত’ হয়েছে কি না?
ওমর বদ্দার বলেন, ‘ইসরায়েল অনির্দিষ্টকাল দখল চালাবে, প্রত্যাহারের কোনো গ্যারান্টি নেই। ফিলিস্তিনিরা বন্দি জীবন যাপন করবে।’ ফিলিস বেনিস বলেন, ‘কোনো নিশ্চয়তা নেই যুদ্ধ শেষ হবে। ইসরায়েল জিম্মি ফিরিয়ে নিয়ে বলতে পারে, ‘সহযোগিতা পাচ্ছি না, যুদ্ধে ফিরব।’ হোয়াইট হাউসের মানচিত্রে দেখানো হয়েছে, তৃতীয় ধাপে ইসরায়েল ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে ‘নিরাপত্তা বাফার জোন’ ধরে রাখবে।
একটি ‘অস্থায়ী আন্তর্জাতিক শান্তি বাহিনী’ (আইএসএফ) নিরাপত্তা দেখবে। কিন্তু কোন দেশ? ম্যান্ডেট কী? ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট প্রাবোয়ো সুবিয়ান্তো হাজার হাজার শান্তিরক্ষী পাঠানোর প্রস্তাব দিয়েছেন, আবার তিনি জাতিসংঘের অধিবেশনে শিগগিরই ইসরায়েলকে ইন্দোনেশিয়া ‘স্বীকৃতি’ দেওয়ার ইচ্ছাও ব্যক্ত করেছেন।
তা ছাড়া এই বাহিনীকে কি ইসরায়েলের বিরুদ্ধে লড়াই করার ক্ষমতা দেওয়া হবে? সাবেক ইসরায়েলি কূটনীতিক অ্যালন পিনকাস বলেন, ‘এটি একটি সিমুলেশন গেম—জটিল, বিতর্কিত। নেতানিয়াহু চুক্তি ব্যর্থ করতে সময় কিনবেন। হামাস ৭২ ঘণ্টায় বন্দী মুক্তি দেবে না।’
হোয়াইট হাউসে বৈঠকের পর সোমবার যৌথ সংবাদ সম্মেলন করেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু (বাঁয়ে) ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প