ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে (ডিএনসিসি) বাতি স্থাপনের কাজ ‘খাতিরের’ ঠিকাদারকে দিতে দরপত্রে কারসাজির অভিযোগ উঠেছে।

দরপত্র জমাদানের সময় শেষ হওয়ার মাত্র তিন দিন আগে শর্ত বদলানো হয়। পরে দরপত্র জমার সময় বাড়ানো হয়। শর্ত বদলানোর ক্ষেত্রে কারিগরি কমিটির অনুমোদন নেওয়া হয়নি।

ঢাকার রামপুরা সেতু থেকে কুড়িল মোড় পর্যন্ত সড়কের অংশে বসানোর জন্য খুঁটি, সড়কবাতি (স্মার্ট এলইডি লাইট) ও অন্যান্য বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম কিনতে গত ১ জুন এই দরপত্র ডাকা হয়েছিল।

দরপত্রে সর্বনিম্ন দর আসে ৭ কোটি ৬৪ লাখ টাকা। যদিও ঢাকা ওয়াসার অর্থায়নের এই কাজের প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয় ৯ কোটি টাকার বেশি।

ঢাকার রামপুরা সেতু থেকে কুড়িল মোড় পর্যন্ত সড়কের অংশে বসানোর জন্য খুঁটি, সড়কবাতি (স্মার্ট এলইডি লাইট) ও অন্যান্য বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম কিনতে গত ১ জুন এই দরপত্র ডাকা হয়েছিল।

সবচেয়ে কম দরদাতা প্রতিষ্ঠানের নাম মেসার্স জেএপি ট্রেডিং। প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে ডিএনসিসির প্রকৌশল বিভাগের বিদ্যুৎ শাখার নির্বাহী প্রকৌশলী (অতিরিক্ত দায়িত্ব) সাইফুল ইসলামের যোগসাজশের অভিযোগ উঠেছে।

জানতে চাইলে সাইফুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, দরপত্রের শর্তে বড় কোনো পরিবর্তন হয়নি। কারিগরি কমিটির অনুমোদন ছাড়া এসব শর্তে পরিবর্তন আনা হলেও তাতে কর্তৃপক্ষের সম্মতি রয়েছে।

ঠিকাদারের সঙ্গে খাতির-যোগসাজশের অভিযোগ অস্বীকার করেন সাইফুল ইসলাম। তিনি বলেন, দরপত্রের শর্ত পরিবর্তন না করলে প্রতিযোগিতা কম হতো, ডিএনসিসির খরচ বেড়ে যেত।

যদিও একজন সরকারি ক্রয় বিশেষজ্ঞ বলছেন, এভাবে শর্ত পরিবর্তনের সুযোগ নেই। দরপত্র জমাদানের সময় শেষ হওয়ার মাত্র তিন দিন আগে শর্ত বদল করাটা সন্দেহজনক।

এই কেনাকাটার দরপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন ছিল গত ২৯ জুন। তবে ২৬ জুন শর্ত পরিবর্তনের পর দরপত্র জমার সময় বাড়িয়ে ১০ জুলাই নির্ধারণ করা হয়। দুটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান দরপত্র জমা দেয়। জেএপি দর দেয় ৭ কোটি ৬৪ লাখ টাকা। এসএস রহমান ইন্টারন্যাশনাল দেয় ৮ কোটি ৭ লাখ টাকা।

যে কারিগরি কমিটি স্পেশিফিকেশন তৈরি করেছে, সেটা তাদের অবগত না করে পরিবর্তন করা হয়েছে। এটা ধরে নেওয়া যায়, উদ্দেশ্যমূলকভাবে করা হয়েছে। কাউকে পক্ষপাতিত্ব করার জন্য করা হয়েছে।ফারুক হোসেন, সরকারি ক্রয় বিষয়ে বিশেষজ্ঞশর্তবদল

প্রথম দরপত্র আহ্বানের সময় টিডিএসের (টেন্ডার ডাটা শিট) শর্তে আন্তর্জাতিক মানের প্রতিষ্ঠান থেকে পণ্যের গুণগত নিশ্চয়তার বিভিন্ন সনদ চাওয়া হয়েছিল। সংশোধিত শর্তে ‘আন্তর্জাতিক মান’ বাদ দিয়ে শুধু ‘প্রতিষ্ঠিত সংস্থা’ থেকে সনদ দেওয়ার কথা বলা হয়।

প্রথমে শর্ত ছিল, বাতি, ড্রাইভার, ডিসিইউ (একাধিক বাতি একত্রে সমন্বয়ের ব্যবস্থা) ও সিএমএস (সেন্ট্রাল ম্যানেজমেন্টে সিস্টেম) একই ব্র্যান্ড বা প্রতিষ্ঠানের হতে হবে। পরে তা পরিবর্তন করে শুধু ডিসিইউ ও সিএমএস একই প্রতিষ্ঠানের হতে হবে বলা হয়। আর নতুন করে শর্ত যোগ হয়, সিএমএসের সোর্স কোড সরবরাহ করতে হবে।

কোনো আন্তর্জাতিক বা প্রতিষ্ঠিত কোম্পানি সাধারণত নিজেদের সফটওয়্যারের সোর্স কোড দেয় না। তা ছাড়া সোর্স কোডের মূল্য অনেক ও অত্যন্ত গোপনীয়।

খোদ ডিএনসিসির কর্মকর্তারাই বলছেন, তাঁরা ধারণা করছেন, ঠিকাদার জেএপিকে আগেভাগেই সোর্স কোড দেওয়ার নিশ্চয়তা দিয়েছে স্থানীয় সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান এনার্জি প্লাস।

দরপত্রের কারিগরি বিবরণেও (স্পেসিফিকেশন) একাধিক সংশোধনী আনা হয়। প্রথমে শর্ত ছিল, বাতির ড্রাইভার হতে হবে ফিলিপস জাইটানিয়াম (পোল্যান্ডের তৈরি)। পরে যুক্ত করা হয় এর ‘সমমান বা সমতুল্য’।

একইভাবে প্রথমে বলা হয়েছিল, ইউরোপের যেকোনো দেশের বন্দর থেকে পণ্য আনতে হবে। পরে তা পরিবর্তন করে করা হয়, দরদাতা যে বন্দর উল্লেখ করবে, সেটিই প্রযোজ্য।

তবে শর্তে এসব পরিবর্তনের আগে প্রকিউরমেন্ট এনটিটি (ক্রয়কারী) নির্বাহী প্রকৌশলী সাইফুল ইসলাম কারিগরি কমিটির কোনো অনুমোদন নেননি।

এ বিষয়ে সরকারি ক্রয় বিষয়ে বিশেষজ্ঞ ও সরকারের বাংলাদেশ পাবলিক প্রকিউরমেন্ট অথরিটির (বিপিপিএ) সাবেক মহাপরিচালক ফারুক হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, যে কারিগরি কমিটি স্পেশিফিকেশন তৈরি করেছে, সেটা তাঁদের অবগত না করে পরিবর্তন করা হয়েছে। এটা ধরে নেওয়া যায়, উদ্দেশ্যমূলকভাবে করা হয়েছে। কাউকে পক্ষপাতিত্ব করার জন্য করা হয়েছে।

সবচেয়ে কম দরদাতা প্রতিষ্ঠানের নাম মেসার্স জেএপি ট্রেডিং। প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে ডিএনসিসির প্রকৌশল বিভাগের বিদ্যুৎ শাখার নির্বাহী প্রকৌশলী (অতিরিক্ত দায়িত্ব) সাইফুল ইসলামের খাতির-যোগসাজশের অভিযোগ উঠেছে।নানান ঘাটতি

নির্বাচিত প্রতিষ্ঠান জেএপি এলইডি বাতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ এলভিডি ও আরওএইচএস সনদ জমা দেয়নি। এর মধ্যে আরওএইচএস সনদ পরিবেশে ক্ষতিকর রাসায়নিক উপাদানের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ নিশ্চিত করে। আর এলভিডি সনদ ইউরোপীয় ইউনিয়নের নিরাপত্তামান পূরণের স্বীকৃতি।

সংশোধিত টিডিএসে সড়কবাতি, ডিসিইউ ও সিএমএসের জন্য প্রস্তুতকারকের কাছ থেকে গুণগত মানের সনদ (কোয়ালিটি অ্যাসিওরেন্স সার্টিফিকেট) চাওয়া হয়। তবে জেএপি ডিসিইউ ও সিএমএসের জন্য প্রস্তুতকারীর কোনো স্বীকৃত সনদ জমা দেয়নি। সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান এনার্জি প্লাস শুধু নিজেদের প্যাডে এ-সংক্রান্ত একটি ‘ডিক্লারেশন’ দিয়েছে।

শর্ত অনুযায়ী, বাতির ড্রাইভারে ডাবল আইসোলেশন থাকতে হবে, তা ক্লাস-২ মানের হবে। জেএপি দিচ্ছে চীনা প্রতিষ্ঠানের ড্রাইভার, যা সিঙ্গেল আইসোলেশন ক্লাস-১ মানের।

এ ছাড়া ভোল্টেজ, পাওয়ার ফ্যাক্টর, সিস্টেম লুমেন টলারেন্সের শর্ত পূরণ করতে পারেনি জেএপি।

এলইডি বাতি ও সিএমএস একই কোম্পানির হওয়ার কথা। কিন্তু ট্রেডিং দিচ্ছে চীনা প্রতিষ্ঠান শ্রেডারের এভানতো সিরিজের বাতি এবং এনার্জি প্লাসের সিএমএস, যা পরিচালনায় জটিলতা তৈরি করবে বলে মত ডিএনসিসির প্রকৌশলীদের।

কম দামি বাতি

জেএপি জানিয়েছে, তারা চীনা প্রতিষ্ঠান শ্রেডার লাইটিং ইন্ডাস্ট্রিয়াল কোং লিমিটেডের এভানতো সিরিজের এলইডি বাতি সরবরাহ করবে।

আমদানিকারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এসব বাতির আন্তর্জাতিক মূল্য ৬০-৭০ মার্কিন ডলার। বাংলাদেশি টাকায় তা প্রায় ৭ হাজার ৩০০ থেকে ৮ হাজার ৫০০ টাকা। সব ধরনের শুল্ক ও কর যোগ হলে দেশে প্রতিটি বাতির দাম দাঁড়ায় ১৮ থেকে ২০ হাজার টাকার মধ্যে। অথচ দরপত্রের প্রাক্কলনে উন্নত মানের জন্য প্রতিটি বাতির দাম ধরা হয়েছে এক লাখ টাকার কাছাকাছি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ডিএনসিসির এক প্রকৌশলী প্রথম আলোকে বলেন, নিম্নমানের বাতি দেওয়ার সুযোগ নিয়েই জেএপি প্রাক্কলিত দামের তুলনায় প্রায় ২০ শতাংশ কম দরপ্রস্তাব করেছে।

বিষয়টি তিনি খতিয়ে দেখবেন। দরপত্রপ্রক্রিয়ায় অনিয়ম করে যদি কোনো কাজ দেওয়া হয়ে থাকে, তাহলে তিনি তা বাতিল করবেন। আবার দরপত্র আহ্বান করবেন।মোহাম্মদ এজাজ, ডিএনসিসির প্রশাসকঅন্য অভিযোগ

৪ আগস্ট ডিএনসিসির প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজের কাছে একটি লিখিত অভিযোগ জমা পড়ে। এতে বলা হয়, জেএপির প্রোপাইটর (মালিক) মোর্তজা পারভেজ ও আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য এস এম কামাল হোসেন সম্পর্কে বেয়াই। অতীতে কামাল হোসেনের প্রভাব খাটিয়ে ডিএনসিসির প্রায় ৪০ কোটি টাকার কাজ নিয়েছে জেএপি।

বেয়াইয়ের সম্পর্ক সত্য বলে প্রথম আলোকে জানান মোর্তজা পারভেজ। তবে তিনি বলেন, সম্পর্ক হওয়ার আগে থেকেই তিনি ঠিকাদারি ব্যবসা করছেন। আত্মীয়স্বজন বড় কেউ হয়ে গেলে, তখন এ নিয়ে কাউকে জড়িয়ে কিছু বললে করার কিছু থাকে না। তিনি ঠিকাদার হিসেবে কাজ পেয়েছেন, বেয়াইয়ের ক্ষমতায় কিংবা প্রভাব খাটিয়ে নয়। আর ৪০ কোটি নয়, প্রায় ৩৫ কোটি টাকার কাজ তিনি ডিএনসিসিতে করেছেন।

গত ৬ ফেব্রুয়ারি গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী বরাবর এনার্জি প্লাস, হ্যাভেন্স ও সিবিই—এই তিন প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স, কাজ ও পাওনা বাতিলের লিখিত আবেদন জানায় বাংলাদেশ গণপূর্ত ঠিকাদার সমিতি।

লিখিত অভিযোগে বলা হয়, প্রতিষ্ঠান তিনটির শেয়ারমালিক পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদের আত্মীয়। আগে এসব প্রতিষ্ঠান বেনজীর আহমেদের অবৈধ প্রভাব খাটিয়ে পুলিশ সদর দপ্তরসহ অন্যান্য দপ্তরের কাজ বাগিয়ে নেয়।

ডিএনসিসির প্রশাসকের কাছে দেওয়া অভিযোগেও বিষয়টির উল্লেখ আছে। এতে এনার্জি প্লাসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহ জুবায়েরকে বেনজীর আহমেদের নিকটাত্মীয় বলা হয়।

শাহ জুবায়ের প্রথম আলোকে বলেন, আত্মীয়তা আর টেন্ডার বাগিয়ে নেওয়ার অভিযোগ মিথ্যা, ভিত্তিহীন ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। সাবেক পুলিশপ্রধান বেনজীর আহমেদ তাঁর কোনো আত্মীয় নন। আওয়ামী লীগের আমলে তাঁর প্রতিষ্ঠান কোনো দরপত্রে অংশগ্রহণ করেনি।

দরপত্রে অনিয়মের অভিযোগ সম্পর্কে জানানো হলে ডিএনসিসির প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ প্রথম আলোকে বলেন, বিষয়টি তিনি খতিয়ে দেখবেন। দরপত্রপ্রক্রিয়ায় অনিয়ম করে যদি কোনো কাজ দেওয়া হয়ে থাকে, তাহলে তিনি তা বাতিল করবেন। আবার দরপত্র আহ্বান করবেন।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ড এনস স র প র প রথম আল ক র দরপত র ও স এমএস দরপত র র সরবর হ ড স ইউ প রক শ এন র জ হয় ছ ল র জন য সরক র হওয় র র সময় করব ন

এছাড়াও পড়ুন:

বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় হজের ৩ প্যাকেজ ঘোষণা

বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় হ‌জের তিনটি প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়েছে। সর্ব‌নিম্ন হজের খরচ ধরা হয়েছে ৫ লাখ ১০ হাজার টাকা। যা সাশ্রয়ী হজ প‌্যা‌কে‌জে অন্তর্ভূক্ত। 

গতবা‌রের চে‌য়ে এবার বিমান ভাড়া ক‌মি‌য়ে সবগু‌লো হজ প‌্যা‌কেজ নির্ধারণ করা হ‌য়ে‌ছে। গতবছর দু‌টি হজ পা‌কেজ থাক‌লেও এবার সরকা‌রি ব‌্যবস্থাপনার মতো বেসরকা‌রি ব‌্যবস্থাপনায়ও তিন‌টি হজ প‌্যা‌কেজ ঘোষণা করা হ‌য়ে‌ছে। 

আরো পড়ুন:

শাবিতে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী বহিষ্কার

সরকা‌রিভা‌বে খরচ ক‌মি‌য়ে হ‌জের তিন প‌্যা‌কেজ ঘোষণা

মঙ্গলবার (৩০ সেপ্টেম্বর) ঢাকার নয়াপল্টনে একটি হোটেলে হজ এজেন্সিস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (হাব)-এর মহাসচিব ফরিদ আহমেদ মজুমদার এসব হজ প্যাকেজ ঘোষণা করেন।

এ সময় সভাপতি সৈয়দ গোলাম সারওয়ারও উপস্থিত ছিলেন।

ফ‌রিদ আহ‌মেদ জানান, বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় হজযাত্রীদের জন্য তিনটি হজ প্যাকেজ করা হয়েছে। বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় হজযাত্রীদের জন্য খাওয়া ও কোরবানিসহ বিশেষ হজ প্যাকেজে খরচ ধরা হয়েছে ৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা। সাধারণ প্যাকেজের মাধ্যমে হজ পালনে ব্যয় হবে সর্বমোট ৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা এবং সাশ্রয়ী হজ প‌্যা‌কে‌জের মূল‌্য ধরা হ‌য়ে‌ছে ৫ লাখ ১০ হাজার টাকা।

সরকারি ব্যবস্থাপনায় হজযাত্রীদের খাবার খরচ প্যাকেজের বাইরে থাকলেও বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় উন্নত সার্ভিসের জন্য খাবারের মূল্য প্রতিটি প্যাকেজের অন্তর্ভুক্ত ব‌লেও জানান তি‌নি।

প্রতি সৌদি রিয়াল ৩২ টাকা ৮৫ পয়সা ধরে প্যাকেজের খরচ হিসাব করা হয়েছে জানিয়ে ফ‌রিদ আহ‌মেদ জানান, পরবর্তী সময়ে এ রেটে কোন পরিবর্তন আসলে তা প্যাকেজ মূল্যের সঙ্গে সমন্বয় করা হবে।

হজ এজেন্সিগুলোর জন্য সাধারণ হজ প্যাকেজ ও সাশ্রয়ী হজ প্যাকেজ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। তবে বিশেষ প্যাকেজ থেকে কম-বেশি করে তারা নিজস্ব প্যাকেজ ঘোষণা করতে পারবে বলে জানিয়েছেন হাব মহাসচিব।

৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে প্যাকেজের সব টাকা প‌রি‌শোধ কর‌তে হ‌বে জা‌নি‌য়ে ফরিদ আহমেদ মজুমদার বলেন, “বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় প্রত্যেক হজযাত্রী কমপক্ষে সাড়ে ৩ লাখ টাকা জমা দিয়ে নিবন্ধিত হতে পারবেন। আগামী ১২ অক্টোবর ২০২৫ পর্যন্ত নিবন্ধন চলবে। হজ প্যাকেজের বাকি অর্থ আগামী ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে অবশ্যই নিজ নিজ এজেন্সির ব্যাংক হিসাবে জমা করে বা এজেন্সির অফিসে জমা দিয়ে মানি রিসিট গ্রহণ ও সংরক্ষণ করবেন। কোনোক্রমেই মধ্যস্বত্বভোগীদের কছে কোনো প্রকার লেনদেন করবেন না।” 

কোনো এয়ারলাইন্স এ বছর ডেডিকেটেড ফ্লাইট ছাড়া শিডিউল ফ্লাইটে কোনো হজযাত্রী বহন করতে পারবে না জানিয়ে মহাসচিব বলেন, “প্যাকেজ ঘোষণার পর সৌদি সরকার কোনো খাতে খরচ বাড়ালে তা প্যাকেজ মূল্য হিসেবে গণ্য হবে এবং হজযাত্রীকে এ অর্থ পরিশোধ করতে হবে।”

হাব মহাসচিব বলেন, “গত বছর হজযাত্রীদের বিমান ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছিল এক লাখ ৬৭ হাজার ৮২০ টাকা। এবার ১২ হাজার ৯৯০ টাকা কমিয়ে নির্ধারণ করা হয়েছে এক লাখ ৫৪ হাজার ৮৩০ টাকা। বিমান ভাড়া আরও কমানো হলো প্যাকেজের মূল্য কমানো হবে।”

তিনি বলেন, “এর আগে গত দুই বছর অন্যায়ভাবে ২ লাখ টাকা করে হজযাত্রীদের কাছ থেকে বিমান ভাড়া আদায় করা হয়েছিল। আমরা মনে করি, যেটি হজযাত্রীদের প্রতি জুলুম ছিল, অন্যায় ছিল। হজযাত্রীদের কাছ থেকে এ টাকা লুট করা হয়েছিল বলে আমরা মনে করি। কারণ তখন এক ডলারের দাম ছিল ১০০ টাকা। এখন এক ডলারের বিপরীতে টাকা ১২২ টাকা ৫০ পয়সা, কিন্তু এবার বিমান ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে এক লাখ ৫৪ হাজার ৮৩০ টাকা। হজযাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত প্রায় এক লাখ টাকা আদায় করা হয়েছিল।” 

বিশেষ হজ প্যাকেজ : হাব মহাসচিব জানান, বিশেষ প্যাকেজে হারাম শরীফের বহিঃচত্ত্বর থেকে হোটেলের দূরত্ব ৭০০ মিটারের মধ্যে। মদিনায় মারকাজিয়া (সেন্ট্রাল এরিয়া) এলাকায় আবাসন। মিনার জোন-৫ এ তাঁবুর অবস্থান ও মিনা-আরাফায় 'ডি' ক্যাটিগরি সার্ভিসসহ মোয়াল্লেমের মাধ্যমে খাবার সরবরাহ।

এছাড়া, মক্কার হোটেল বা বাড়ি থেকে বাসযোগে মিনার তাঁবুতে এবং মিনা-আরাফাহ-মুজদালিফা-মিনা বাস/ট্রেনযোগে যাতায়াত; এটাচড্ বাথ সহ মক্কা ও মদিনায় হোটেলের প্রতি রুমে সর্বোচ্চ ৫ জনের আবাসনের ব্যবস্থা থাকবে এ প্যাকেজে।

সাধারণ হজ প্যাকেজ: হারাম শরীফের বহিঃচত্ত্বর থেকে হোটেলের দূরত্ব ৩ কিলোমিটারের মধ্যে। মদিনায় মারকাজিয়া (সেন্ট্রাল এরিয়া) এলাকার বাইরে আবাসন। মিনার জোন-৫ এ তাঁবুর অবস্থান ও মিনা-আরাফায় ‘ডি’ ক্যাটিগরি সার্ভিসসহ মোয়াল্লেমের মাধ্যমে খাবার সরবরাহ করা হবে।

মক্কার হোটেল বা বাড়ি থেকে বাসযোগে মিনার তাঁবুতে এবং মিনা-আরাফাহ-মুজদালিফা-মিনা বাস/ট্রেনযোগে যাতায়াত। অ্যাটাচ বাথসহ মক্কা ও মদিনায় হোটেলের প্রতি রুমে সর্বোচ্চ ৬ জনের আবাসনের ব্যবস্থা থাকবে এ প্যাকেজে।

সাশ্রয়ী হজ প্যাকেজ: এ প্যাকেজে হারাম শরীফের বহিঃচত্ত্বর থেকে হোটেলের দূরত্ব হবে ৬/৭ কিলোমিটারের মধ্যে। মদিনায় মারকাজিয়া (সেন্ট্রাল এরিয়া) এলাকার বাইরে আবাসন হবে। মিনার জোন-৫ এ তাঁবুর অবস্থান ও মিনা-আরাফায় ‘ডি’ ক্যাটিগরি সার্ভিসসহ মোয়াল্লেম থেকে খাবার সরবরাহ করা হবে এ প্যাকেজে।

এছাড়া, মক্কার হোটেল বা বাড়ি হতে বাসযোগে মিনার তাঁবুতে এবং মিনা-আরাফাহ-মুজদালিফা-মিনা বাস/ট্রেনযোগে যাতায়াত; অ্যাটাচ বাথসহ মক্কা ও মদিনায় হোটেলের প্রতি রুমে সর্বোচ্চ ৬ জনের আবাসনের ব্যবস্থা থাকবে সাশ্রয়ী প্যাকেজে।

গতবছর খাবার খরচ যুক্ত করে বেসরকা‌রি ব‌্যবস্থাপনায় সাধারণ হজ প্যাকেজের খরচ ৫ লাখ ২৩ হাজার টাকা এবং বিশেষ হজ প্যাকেজের মূল্য ৬ লাখ ৯৯ হাজার টাকা নির্ধারণ ক‌রে সাধারণ হজ এজেন্সির মালিকরা।

এবার খরচ ক‌মি‌য়ে গত ২৮ সেপ্টেম্বর ধর্ম উপদেষ্টা আ ফ ম খালিদ হোসেন সরকারি ব্যবস্থাপনার ঘোষণা করেন।

প্যাকেজ–১ এর মাধ্যমে হজ পালনে খরচ ধরা হয়েছে ৬ লাখ ৯০ হাজার ৫৯৭ টাকা। এছাড়া, হজ প্যাকেজ-২ এ ৫ লাখ ৫৮ হাজার ৮৮১ টাকা ও হজ প্যাকেজ-৩ এ ৪ লাখ ৬৭ হাজার ১৬৭ টাকা খরচ ধরা হয়েছে।

‘বেসরকারি মাধ্যমের সাধারণ হজ প্যাকেজ’ শিরোনামে একটি প্যাকেজ নির্ধারণ করা হয়েছে। এই প্যাকেজের খরচ ধরা হয়েছে ৫ লাখ ৯ হাজার ১৮৫ টাকা। সরকার অনুমোদিত এ প্যাকেজ নিয়ে এজেন্সিগুলো অতিরিক্ত দুটি প্যাকেজ ঘোষণা করতে পারবে বলেও জানিয়েছেন ধর্ম উপদেষ্টা।

ঢাকা/নঈমুদ্দীন/ইভা 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সরকারি কেনাকাটায় অনলাইনে দরপত্র বাধ্যতামূলক
  • বাংলাদেশে কফি–সংস্কৃতি প্রসারে ‘আমা কফি’
  • দক্ষিণ কোরিয়ায় জিআইএসটি স্কলারশিপ: পূর্ণাঙ্গ বৃত্তি নিয়ে পড়াশোনার সুযোগ
  • রাজশাহীতে আইনি ব্যবস্থা নিন
  • বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় হজের ৩ প্যাকেজ ঘোষণা