সংসদে ১০০ নারী আসন ও সরাসরি নির্বাচনের দাবিতে মানববন্ধন
Published: 16th, August 2025 GMT
জাতীয় সংসদে নারীদের সংরক্ষিত আসন ১০০–তে উন্নীত করা এবং আসনগুলোতে সরাসরি নির্বাচনের দাবিতে মানববন্ধন করেছে নারী সংহতি।
আজ শনিবার রাজধানীর শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে আইন প্রণয়ন ও নীতিনির্ধারণে অর্ধেকের বেশি জনগণের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিতে ‘সংরক্ষিত নারী আসন বৃদ্ধি ও সরাসরি নির্বাচন চাই’ শিরোনামে মানববন্ধন করে নারী সংহতি। এতে বিভিন্ন নারী সংগঠন, অধিকারকর্মী ও রাজনৈতিক দলের নারী প্রতিনিধিরা অংশ নেন।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, দেশের অর্ধেকের বেশি জনগোষ্ঠী নারী হওয়া সত্ত্বেও জাতীয় সংসদ থেকে শুরু করে রাজনীতির সব ক্ষেত্রেই তাদের প্রতিনিধিত্ব অত্যন্ত নগণ্য। তাই জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে আসা সরকারের উদ্দেশ্য হওয়া উচিত নতুন বাংলাদেশ গড়ার পথে নারীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা। এটি না হলে নারী নেতৃত্ব ও গণতান্ত্রিক সংস্কার কার্যকর হবে না। নারী আসনে সরাসরি নির্বাচনের আয়োজন করলে নারী নেতৃত্বে উৎসাহ সৃষ্টি হবে এবং দেশের রাজনীতিতে নারীর প্রভাব এবং অংশগ্রহণ উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পাবে।
মানববন্ধনে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও নারী সংহতির সভাপ্রধান শ্যামলী শীল বলেন, ‘জুলাই আন্দোলনে নারীরা নেতৃত্ব দিয়েছে। আমাদের দাবি, যে নারীরা এই আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছে, তাদের অন্তত একজনকে সরকারের প্রতিনিধিত্বে থাকতে হবে; কিন্তু তা হয়নি। এখনো রাজনৈতিক দলগুলো নারীদের নীতি প্রণয়ন বা নেতৃত্বে দেখতে চায় না। আমরা চাই সংরক্ষিত আসনে সরাসরি নির্বাচন হোক এবং সংখ্যা বৃদ্ধি করে ১০০ করা হোক। নারীরা এ দেশের অর্ধেক জনগোষ্ঠী, তাদের রাজনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে।’
শ্যামলী শীল আরও বলেন, ‘আমাদের দাবি শুধু সংখ্যা নয়, আমরা চাই প্রতিযোগিতামূলক নির্বাচন, যেখানে নারীরা তাদের যোগ্যতা প্রমাণ করতে পারবে।’
গণসংহতি আন্দোলনের রাজনৈতিক পরিষদের সদস্য তাসলিমা আখতার বলেন, ‘সংরক্ষিত আসনের সংখ্যা বৃদ্ধি এবং সরাসরি নির্বাচনের দাবি বাংলাদেশের সমস্ত নারী আন্দোলন কর্মী এবং সচেতন নারীদের যৌথ দাবি। ঐকমত্য কমিশনের প্রস্তাব পুরোনো ৫০ আসনে ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত আমরা প্রত্যাখ্যান করি। ২০২৬ সালের নির্বাচনে ১০০ সংরক্ষিত আসনে সরাসরি নির্বাচন বাধ্যতামূলক করতে হবে। এতে নারীরা উৎসাহিত হবে এবং ভবিষ্যতে আরও বেশি অংশগ্রহণ করবে।’
নারী সংহতির সাধারণ সম্পাদক অপরাজিতা দেব বলেন, সব লিঙ্গ পরিচয়ের মানুষের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে সংসদে আলাদা আসন বরাদ্দ থাকতে হবে। ইতিমধ্যে সংরক্ষিত নারী আসন ধাপে ধাপে বাড়ানো হয়েছে, কিন্তু সরাসরি নির্বাচনের ব্যবস্থা এখনো নেই। আরপিওতে উল্লেখ নেই যে নির্বাচনে কত শতাংশ নারী প্রতিনিধি থাকবেন। এ ধরনের কার্যক্রমকে ‘লোক দেখানো তামাশা’ হিসেবে প্রত্যাখ্যান করছে নারী সংহতি। এ ছাড়া আদিবাসীদের যথাযথ স্বীকৃতি এবং প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে সংরক্ষিত আসন বরাদ্দ দেওয়ার দাবি জানান তিনি।
বাংলাদেশ নারীমুক্তি কেন্দ্রের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক সুস্মিতা রায় বলেন, ঐকমত্য কমিশন যখন দেশের ভবিষ্যৎ সংস্কার নিয়ে আলোচনা করছে, সেখানে নারীর কণ্ঠস্বর এবং নারী প্রতিনিধির উপস্থিতি নেই। নারী সংস্কার কমিশন ৪৩৩টি সুপারিশ রাষ্ট্রের কাছে উপস্থাপন করলেও তা উপেক্ষা করা হয়েছে। দেশের বিভিন্ন আন্দোলনে নারীর ভূমিকা অসামান্য; তাই সংসদে সংরক্ষিত নারী আসন ১০০ করার সঙ্গে সরাসরি নির্বাচন প্রবর্তন করা উচিত। এটি নারীর রাজনৈতিক অংশগ্রহণ নিশ্চিত করবে এবং গণতান্ত্রিক পথকে শক্তিশালী করবে।
মানববন্ধন শেষে প্রতিবাদ মিছিল করা হয়। এতে ‘৭১–এর রক্তে কেনা, দেশটা শুধু পুরুষের না’, ‘২৪–এর রক্তে কেনা, দেশটা শুধু পুরুষের না’, ‘আর নয় সিলেকশন, এবার চাই ইলেকশন’সহ নানান স্লোগান দেওয়া হয়।
মানববন্ধন ও প্রতিবাদ মিছিলে সংহতি জানিয়ে উপস্থিত ছিলেন শিক্ষক ও সাংস্কৃতিককর্মী বীথি ঘোষ, নৃবিজ্ঞানী ও গবেষক সায়েমা খাতুন, ইউপিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও অ্যাকটিভিস্ট মাহ্রুখ মহিউদ্দীন, আমজনতার দল-এর সহসভাপতি সাধনা মহল, শিল্পী-অধিকারকর্মী ওয়ারদা আশরাফ, নারী সংহতি কেন্দ্রীয় কমিটির দপ্তর সম্পাদক নাসরিন আকতারসহ রাজনৈতিক নেতা এবং বিভিন্ন পেশা ও শ্রেণির ব্যক্তিরা।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ন শ চ ত কর র র জন ত র জন ত ক
এছাড়াও পড়ুন:
বরিশালে আন্দোলনরত ছাত্র-জনতার ওপর হামলা, স্বাস্থ্য উপদেষ্টার পদত্যাগ দাবি
স্বাস্থ্যখাত সংস্কারের দাবিতে গত ১৮ দিন ধরে চলমান আন্দোলন এবং বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্রধান ফটকে গত কয়েকদিন ধরে চলা অনশনকারীদের ওপর হামলা ও ধাওয়া দেওয়া হয়েছে। এতে আন্দোলনকারী অন্তত ১৫ জন শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন।
বৃহস্পতিবার (১৪ আগস্ট) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের স্টাফরা এ হামলা চালিয়েছেন বলে অভিযোগ করেন আন্দোলনকারী আহত শিক্ষার্থীরা।
এদিন সকালে হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্সসহ তৃতীয় শ্রেণীর কর্মচারীদের আয়োজনে অযৌক্তিক দাবিতে আন্দোলনের নামে হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা ব্যহত করার অভিযোগে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। ওই মিছিলের পরপরই আন্দোলকারীদের ওপর হামলা চালানো হয়েছে বলে অভিযোগ করেন আহত শিক্ষার্থীরা।
আরো পড়ুন:
নবাব স্যার সলিমুল্লাহ স্মৃতি সংসদের নেতৃত্বে জাহিন-রাফি
রাকসু ফান্ডে জমা ১ কোটি ৮২ লাখ টাকা, হল সংসদের ফান্ড অস্পষ্ট
বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্বাস্থ্যখাত সংস্কার আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার জেরে উভয়পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ায় হাসপাতাল কম্পাউন্ডে উত্তপ্ত পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।
এর আগে, বুধবার (১৩ আগস্ট) সকালে বরিশাল সফরে এসে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের দেওয়া বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়ে বুধবার দিবাগত রাতে বরিশাল নগরীতে মশাল মিছিল করেন আন্দোলনকারী ছাত্র-জনতা। বৃহস্পতিবার আন্দোলনকারী ও অনশনরত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার পরপরই স্বাস্থ্য উপদেষ্টার পদত্যাগের দাবিতে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করার কথা জানিয়েছেন ছাত্র-জনতার আন্দোলনের নেতৃত্বে থাকা সংগঠক মহিউদ্দিন রনি।
তিনি বলেন, “১৩ আগস্ট বরিশালে সফরে এসে ব্যর্থ হয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের উস্কানিমূলক বক্তব্যের কারণে হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্স ও স্টাফসহ সেই পুরনো সিন্ডিকেট দালাল চক্রের সদস্যরা পরিকল্পিতভাবে বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে আমাদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলন কর্মসূচি ও অনশনরত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালিয়েছে। হামলায় অনশনরত শিক্ষার্থীসহ তাদের উদ্ধারে এগিয়ে আসা আন্দোলনরত ছাত্র-জনতার অন্তত ১৫ জন আহত হয়েছেন।”
তিনি আরো বলেন, “বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজসহ দেশের সব সরকারি হাসপাতালের অব্যবস্থাপনা, চিকিৎসা সেবায় অবহেলা এবং স্বাস্থ্যখাত সংস্কারের দাবিতে আমরা ১৮ দিন ধরে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে আসছি। আন্দোলনকারীদের দাবি ছিল স্বাস্থ্য উপদেষ্টা স্ব-শরীরে বরিশালে এসে আন্দোলনকারীদের যৌক্তিক দাবিগুলো শুনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দেবেন। কারণ স্বাস্থ্য উপদেষ্টার পরবর্তী যেসব কর্মকর্তা রয়েছেন, তারা অধিকাংশই বিভিন্ন সিন্ডিকেটের সাথে জড়িত।”
রনি বলেন, “যে কারণে আন্দোলনকারীরা তাদের দাবিগুলো উপদেষ্টার কাছে বলতে চেয়েছেন। সেখানে উপদেষ্টা না এসে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে বরিশালে পাঠিয়েছেন। মহাপরিচালক বরিশালে মতবিনিময় সভা করলেও সেখানে আন্দোলনকারীদের কোনো প্রতিনিধি না রেখে বরং অযৌক্তিক আন্দোলন বন্ধ না হলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী হস্তক্ষেপ করবে বলে উস্কানিমূলক বক্তব্য দিয়ে গেছেন। এ কারণেই হাসপাতালের স্টাফরা আন্দোলনকারী ও অনশনরতদের ওপর হামলা চালাতে সাহস দেখিয়েছেন। আমারা এখন স্বাস্থ্য উপদেষ্টার পদত্যাগের এক দফার আন্দোলনের ঘোষণা করব।”
অপরদিকে বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের একাধিক স্টাফরা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “শান্তিপূর্ণ মানববন্ধন চলাকালে ছাত্ররা আমাদের কটূক্তি করে দালাল বলায় তাদের ধাওয়া করা হয়। এ সময় অযৌক্তিক দাবিতে আন্দোলনকারীরা দৌড়ে পালাতে গিয়ে আহত হয়েছে।”
এর আগে, স্বাস্থ্যখাত সংস্কার আন্দোলনের দাবিকে অযৌক্তিক আখ্যা দিয়ে হাসপাতালের ইন্টার্ন চিকিৎসক, নার্স, টেকনিশিয়ান এবং তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীরা মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করেন।
কর্মসূচি শেষে আন্দোলনরত ছাত্র-জনতাকে হাসপাতাল থেকে শহরে দাঁড়ানোর অনুরোধ জানালে তাদের ওপর হামলা চালানো হয়। এরপর উভয়পক্ষের মধ্যে হাতাহাতি ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে।
এ সময় বেশ কয়েকজন ছাত্র-জনতা আহত হন এবং আন্দোলনরত কয়েকজনকে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীরা অবরুদ্ধ করে রাখেন। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। সর্বশেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে উত্তপ্ত পরিস্থিতি বিরাজ করছে।
ঢাকা/পলাশ/মেহেদী